সাভারে ভবন ধসে বহু মানুষ মারা গেলো। ১৭ দিন পর শুধু রেশমা জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হলো। কি আচানক কাহিনী!।
নিশ্চয়ই রেশমার মধ্যে বাতেনী এলেম রয়েছে বিধায় সৃষ্টিকর্তা কেবল তাঁর প্রতিই সহায় হয়েছেন। আসুন আমরা রেশমার মুরিদ হই। তাঁহার পড়া পানি পান করি। এতে অশেষ নেকী হাসেল হওয়ার পাশাপাশি রোগবালাই এবং বালা-মুসিবতও হয়তো দুর হবে। রেশমা যদি একটু ভেগ ধরেন তবে ব্যবসাও হবে বেশ।
রেশমাকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনার পর বহু মানুষ যেন নতুন করে ঈমান ফিরে পেয়েছেন। পথেঘাটে, বাসে, ব্লগে, ফেসবুকে বহু মানুষ ঘটনাটিকে অলৌকিক অ্যাখ্যা দিয়ে এবং ঈশ্বরের কুদরতের কথা ভেবে পাগলপাড়া হয়ে পড়ছেন। বাসে যাতায়াতের সময় উত্তেজিত কোনো কোনো যাত্রীর কণ্ঠ থেকে আক্রোশমূলক বচন ঝড়ে পড়তে দেখেছি। কি? ‘এরপরও যদি কেও অবিশ্বাস করে...সে কি মানুষ? এদের উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত’।
হঠাৎ করে ঈমানের তেজ অনেকের এতোটাই বেড়ে গেছে যে, মনে হয় কোনো অবিশ্বাসীকে কাছে পেলে ওই যাত্রী নগদে হত্যা করবেন।
যতদূর জানি, আটকে পড়া অবস্থায় রেশমার জন্য আসমান থেকে খাবার নাজিল হয়নি। পরিস্থিতির কারনে রেশমা বেঁচে গেছেন। এখানে অলৌকিকতার প্রসঙ্গ আনাটা অর্থহীন। বিশ্বাস জিনিসটা সাটিফিকেটধারী তথাকথিত অনেক শিক্ষিত লোককেও যুক্তিশুন্য করে ফেলেছে। বিশ্বাসের যথাথ অযৌক্তিক যুক্তি মিশিয়ে জগাখিচুরি বানালে ধর্মকেই অপমান করা হয়। বিশ্বের বড় বড় ভবন ধস বা খনি ধসের পর এরকম দুই একজনের সৌভাগ্য হয় ব্যতিক্রম পরিস্থিতিতে পড়ার। এতোবড় একটা আরসিসি পিলার বিশিষ্ট ভবন ধসের ঘটনায় এরকম পরিস্থিতি একজন না পড়াটাই বরং অস্বাভাবিক ছিল। ধার্মিকদের অনুরোধ করি, আপনারা অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ করবেন না।এতে করে ধর্মই বরং অপমানিত হবে।
রেশমার ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ যেভাবে রেশমার ঘটনাকে অলৌকিক আখ্যা দিচ্ছেন তাতে একটা বিষয়ই পরিস্কার হয় দেশে ঈমানদার ব্যক্তি নেই বললেই চলে। মনে হয় যেন তারা নতুন করে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পেয়েছেন। আগে পাননি বা আগে বিশ্বাসের ঘাটতি ছিল।
অথবা বলা যেতে পারে একজন বিশ্বাসীর মধ্যেও অবিশ্বাস থাকে। এ কারনেই তারা রেশমার বেঁচে থাকাকে অলৌকিক বলে আখ্যা দিয়ে সান্তনা খুঁজতে চান। প্রকৃত ঈমানদার কখনো যুক্তি খুঁজে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে চাইবে না। নিজেদের ঈমান ঠিক করুন। মূলত এই সব আবাল কিসিমের লোকজনই ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং নিজেদের খেলো করছে। নাস্তিকদের আগে এদের বিচার হওয়া উচিত।
অটল বিশ্বাস স্থাপন করার পর কেন আমি অবান্তর যুক্তি খুঁজবো?
রেশমার উদাহরণ দিয়ে যারা সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ দেখাতে চান তাঁদের ঈমান নেই । সৃষ্টিকর্তাকে মানতে হলে বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু যারা সৃষ্টিকর্তাকে মানার জন্য বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে অবান্তর যুক্তির আশ্রয় নেন তারা ধার্মিক তো ননই , ছাগল ছাড়া কিছু নন।
একটা বিষয় পরিস্কার, একজন ধার্মিকের মধ্যে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস দুই-ই বিদ্যমান। তাঁদের অবচেতন মনে অবিশ্বাসটাও কাজ করে সাঙ্ঘাতিকভাবে। যে কারনে তারা জাগতিক ব্যাখ্যা না খুঁজে অযৌক্তিক-যুক্তি খুঁজে সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ করতে যান। তারা একটা বিষয় বোঝে না যে, সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ করতে চাওয়া মানেই তাঁর মধ্যে অবিশ্বাস রয়েছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে থেকে ভণ্ডামি করার অর্থ কি? হয় বিশ্বাসী হোন। না হয় অবিশ্বাসী হোন। তাহলে ভণ্ডামি থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




