somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**কালোজাদু*--০১

২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সেলিব্রেটি বাবার মেয়ে।বিয়ের আগে বাবা এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না।বিয়ের পরে আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগলো। খেলার পারফর্মেন্স ভাল হতে

লাগল।বিভিন্ন কোম্পানী থেকে এডের অফার আসতে লাগলো।হুট করেই বাবা অনেক টাকাপয়সা দেখতে লাগলেন।আমার দাদি আমার মাকে এসবের জন্য অনেক

ভালোবাসতে লাগলেন। তার কাছে মা ঘরের লক্ষ্ণী ছিলেন। বিয়ের বছরখানেকের মাথায় আমার জন্ম। আমাদের পরিবারে আনন্দের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু

আমাদের সেই জোয়ারে ভাটা নামতে দেরী হল না। বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। মা বাবাকে ছেড়ে গেলেন ।কিংবা বাবা মাকে চলে যেতে দিলেন ।আমি রয়ে

গেলাম বাবা আর দাদীর সঙ্গে। কেন গেলেন , কিভাবে সব ঘটে গেল আমি কিছু জানি না।জানার চেষ্টা করিনি তা কিন্তু না।মিডিয়াতে অনেক গুজব ছিল বলে

শুনেছি।আমি একটু বড় হবার পর জানার চেষ্টা করেছি।কিন্তু যারা জানত তারা কেউ জানায় নি। একটা সময় আমিও হাল ছেড়ে দিয়েছি ।
হয়ত প্রকৃতিই চায় না আমি জানি। কিছু জিনিস না জানাই ভালো।আমার দিনগুলো চলে যাচ্ছিল। বন্ধুবান্ধব ছিল অনেক। তাদের নিয়ে হইহুল্লোড় করে। আর

পড়াশুনা করে। পড়াশুনায় আমি বরাবরই ভালো ছিলাম।অনেক ভালো। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে আমি থাকাকালীন সময়ে আমাদের স্কুলে আমার চেয়ে

মেধাবী আর কেউ ছিল না। বাসায় আমার সময় কাটানোর কিছু ছিল না। তাই সময় কাটানোর জন্যে ধুমসে পড়াশুনা করতাম। বাবা বেশির ভাগ সময় বাইরেই

সময় কাটাতেন । দেশবিদেশে খেলতে যেতেন ।আর এদিকে একাউন্টে টাকার পাহাড় জমতে শুরু করল। অনেক অনেক টাকা । কিন্তু খরচ করার মানুষের অভাব।

আমাদের অনেকগুলো গাড়ি কেনা হল। আমার জন্য একটা ।বাবার জন্য কয়েকটা । এমনকি দাদীর জন্য ও একটা যাতে তিনি কিছুদিন পরপর গ্রামের বাড়িতে

দাদাজানের কবর জেয়ারতে যেতে পারেন।
অনেক বেশি ধনী বাবার মেয়েরা যাদের শাসন করার কেউ নেই তারা বখে যায় । আমি বখে গেলাম না। বন্ধুরা বাসায় আসতে চাইত। বাবার

অটোগ্রাফ নিতে চাইত।কিন্তু আমি আনতাম না।বাসার জগতটা একান্তই আমার ছিল। আমি এবং আমার বইয়ের জগত।আমার গাড়ির ড্রাইভার চাচা বেশ পড়াশুনা

জানা লোক ছিলেন। কেন যে সব ছেড়েছুড়ে ড্রাইভারী করতে এসেছিলেন কে জানে! তার হাতধরেই আমার পুরনো বইয়ের জগতে আসা। আমার একাউন্টে প্রতি

মাসে এত টাকা জমা হত যে তা দিয়ে একটা করে বইয়ের দোকান কিনে ফেলা যেত হয়ত। তবুও আমি পুরনো বইয়ের দোকানে যেতাম। গন্ধটা আমার খুব

ভালো লাগত।বইপড়ার মত একটা নিষ্পাপ অভ্যাস থেকে হুটকরে আমি একদিন ব্ল্যাকম্যাজিকের জগতে ঢুকে পড়লাম। পড়তে পড়তেই একটা মলাট ছেড়া বই আমার

হাতের কাছে এল। প্রেতসাধনার ইতিবৃত্ত। লেখক স্বয়ং কামরূপ কামাখ্যা থেকে এই বিদ্যা শিখে এসেছেন বলে দাবি করেছেন বইটাতে। বইটা পড়ে এই ব্যাপারগুলো

নিয়ে আমি আগ্রহী হয়ে উঠলাম। কিন্তু পুরো নীলক্ষেত খুঁজে আমি আর এই বিষয়ে কোন বই পেলাম না। অদ্ভুত! বন্ধুবান্ধব কারো কাছে এ বিষয়ের কোন বই

পেলাম না। একজন আমার আগ্রহের আতিশয্য দেখে পরামর্শ দিল আমাজন ডট কমে দেখতে। আমাজনে নতুন পুরাতন প্রচুর বইএর সম্ভার। আমার একাউন্টের প্রচুর

টাকা এবার কাজে লাগলো। আমি গোগ্রাসে পড়তে লাগলাম। কিন্তু ঠিক বিশ্বাস করতাম না । বরং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটা মাঝামাঝি জায়গায় ছিলাম।


বাবা এতদিন একাই ছিলেন । মাঝে মাঝে দুই-একজন সেলিব্রেটি নায়িকা বা উঠতি মডেল আর বাবা কে নিয়ে যে ট্যাবলয়েড

গুলো কাহিনি লিখতো না তা নয়। কোনটাই বেশি দিন টিকত না। এবার একটু ব্যতিক্রম হচ্ছিল। বেশ কয়েকমাস ধরেই মাঝবয়সী একনায়িকা আর বাবার খবর

ছাপা হচ্ছিল। বাবা বিশ্বকাপ থেকে আসার পরপরই এই কাহিনির শুরু। একই সঙ্গে বাবার খেলার ফর্ম ও খারাপ হতে লাগলো। আমি আর দাদি খুব একটা পাত্তা

দিচ্ছিলাম না এসব কাহিনি। কিন্তু হুট করেই একদিন বাবা অই মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে এলেন। ব্যাপা্রটা আমার জন্য খুব বেশি কস্টের ছিল না। বরং আমি

মনে মনে হয়ত একটু খুশিই হয়েছিলাম । ভেবেছিলাম এখন হয়ত বাবা বাসায় বেশি সময় থাকবে। কিন্তু দাদি ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারেন নি। তার

ভাষ্যমতে ' সিনেমায় নাচগান করা ,পরপুরুষের সামনে তলপেট দেখিয়ে বেড়ানো ' মেয়ে তার ঘরের বউ হতে পারে না। দাদির কাছে ঘরের বউ বলতে আমার

মায়ের মত কারো ছবিই ভেসে উঠে( মায়ের একটা ছবি দাদির আলমারিতে লুকানো আছে, আমি দেখেছি)। দাদির দৃঢ় বিশ্বাস অই মহিলা আমার বাবাকে তাবিজ

করেছে। বছরখানেক আগে হলেও আমি হয়ত ব্যাপারগুলো হেসে উড়িয়ে দিতাম।কিন্তু এখন কেন জানি অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। আমার প্রতি বাবার স্নেহ

কিংবা মাসে মাসে একাউন্টে জমা হওয়া টাকার পরিমাণ কোনটাই কমে নি। কিন্তু তবুও অই মহিলার কিছু আচরণ আমাকে বাধ্য করে ওকে ঘৃণা করতে। আমার

মনে হতে লাগলো আমাদের তিনজনের সংসারে উনি অনাহূত । উনি আমার ব্যক্তিগত জীবনে নাকগলাতে শুরু করলেন। আমার রুম, বইপত্র , জামাকাপড় সব

কিছুতেই মতামত দিতে লাগলেন। এতগুলো বছর নিজের মত করে চলার পরে এসব আমার কাছে খুব অসহ্য লাগতে লাগল ।মনে হতে লাগলো এই মহিলাই আমার

মায়ের জায়গাটা কেড়ে নিচ্ছে।ঠিক করলাম এর প্রতিশোধ নিতে হবে ।আমার বাবার নায়িকা স্ত্রীই হবে আমার প্রথম শিকার। আমার কালোজাদুর হাতেখড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:১৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×