somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবী ঃ মুভি রিভিউ

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। ভেবেছিলাম আর কোথাও বের হব না। কিন্তু দেবী মুভিটা দেখার ইচ্ছে অনেকদিন ধরেই। যখন থেকে প্রথম টিজার দেখি সে সময়ই ঠিক করেছিলাম মুভিটা হলে গিয়ে দেখব। কিন্তু ওরা শেষমেশ এমন সময়ে মুভিটা মুক্তি দেবার সময় ঠিক করল যে তার মাত্র দশদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। তবুও নিজের মনকে আর বুঝ না দিতে পেরে আজ বিকেলে চলে গেলাম বলাকায়। এক একাই। পরীক্ষা বলে রুমমেটরা কেউ আর যেতে রাজি হচ্ছিল না। বলাকায় নিচের তালার টিকেটই রাখছিল দুইশ করে। সাড়ে ছয়টায় শো শুরু হল। দেবী হুমায়ুন আহমেদের বহুল পঠিত এবং জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। কাহিনি আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। এই জানা এবং পছন্দের কাহিনিটা নিয়ে ওরা কি করে সেটা দেখার জন্যেই বেশ আটঘাট বেঁধে বসলাম চিপ্স ,কোল্ডড্রিংক্স এসব নিয়ে। মুভির শুরু ১৭৭৫ সালের । একটু থামুন। মনে করার ট্রাই করছেন যে বইতে এরকম কোন দৃশ্য ছিল কিনা? না ছিলনা বোধহয় । যারা হার্ডকোর হুমায়ুন ভক্ত এবং যারা বইয়ের কাহিনির হুবহু চিত্রায়ন দেখার আশা করে যাবেন তারা হয়ত একটু আশাহতই হবেন। কিন্তু একটা ভাল বাংলা মুভি দেখার ইচ্ছে নিয়ে যদি যান তাহলে বোধহয় আশাহত হবেন না। মুভির কেন্দ্রবিন্দু রানু অর্থাৎ জয়া আহসান। ৪৬ বছর বয়সে( না ভুল পড়েন নি, গুগল করে বয়সটা ঠিক করে নিয়েছি) কিভাবে এফরটলেসলি ২৬ বছরের চরিত্র করা যায় এটা বোধহয় বাংলা সিনেমায় জয়াই প্রথম দেখালো। জয়ার কস্টিউম ডিজাইন থেকে শুরু করে অভিনয় সব কিছু জাস্ট পারফেক্ট। জয়া যখন স্ক্রিনে আসে তখন ওকে বাদ দিয়ে আর কিছুই চোখে পড়বে না। এটা নিশ্চিত। এবছর বেশ কয়েকটা পুরষ্কার যে জয়ার ঘরে যাচ্ছে সেটা অনুমান করা যায়। এবার আসা যাক চঞ্চল চৌধুরী ওরফে মিসির আলীর কথায়। চঞ্চল চৌধুরী একজন অনবদ্য অভিনেতা এটা তো আর নতুন করে বলে দেবার কিছু নেই। আমাদের জেনারেশনে কেউ যদি মিসির আলির চরিত্র ফুটিয়ে তোলার সক্ষমতা রাখে সেটা একমাত্র চঞ্চল চৌধুরী। কিন্তু আমরা যারা মিসির আলির একদম ভীষন রকমের ভক্ত তারা বোধহয় পুরোপুরি তৃপ্তি পাইনি চঞ্চল কে দেখে। মিসির আলির ঘর, তার চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলো যতটা পারা যায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েচে। এবং সেটা খুব ভাল ভাবেই এসেছে। যা একটু হালকা পাতলা অসঙ্গতি এসেছে সেটা এসেছে টাইম গ্যাপটাকে মিটমাট করতে গিয়ে। মিসির আলির গল্প গুলো হুমায়ুন আহমেদ লিখে গেছেন নব্বইয়ের প্রেক্ষাপটে। সেটাকে ২০১৮ র ঢাকায় আনাটা বেশ কষ্ট ছিল। তবুও চিঠির বদলে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ব্যবহারটা নিতে একটু কষ্ট হয়েছে। স্পেশালি আজকালকার যুগে কেউ একটা ফেক আইডির সাথে ডেটে চলে যায়, তাও আবার ঢাকা ভার্সিটির একটা মেয়ে - এটাবোধহয় একটু খাপছাড়া ছিল। সিনেমার প্রয়োজনে হাতির ঝিলের হালকা পাতলা ব্যবহার ভালই ছিল। মিসির আলির ঘরের ডিজাইনটা ও ভালই লেগেছে। জয়ার স্বামীর চরিত্রে অনিমেশ আইচ ভালভাবেই উৎরে গেছেন। মুভির সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলতে গেলে বলা যায় যে কিছু দুর্দান্ত দৃশ্য আছে মুভিটায়। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত। কিন্তু হরর দৃশ্যগুলোয় সাউন্ড নিয়ে আরো কাজ করা যেত। এক্ষেত্রে পরিচালক বোধহয় মূল বইটাকে ফলো করলেই ভাল করতেন। শবনম ফারিয়া নিলু চরিত্রে মানিয়ে গেছে। কিন্তু তার সাইকো প্রেমিক চরিত্রে ইরেশ জাকের কে আসলেই বেমানান লেগেছে। মূল বইতেই লেখা ছিল যে লোকটা খুব হ্যান্ডসাম টাইপ। মুভির প্রথম অংশ টা খুব ভাল। কিন্তু কেন জানি শেষের দিকটায় এটা খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। যারা বইটা পড়েন নি তাদের জনয একটু বোঝা কষ্ট হয়ে যাবে যে ইরেশ জাকের কেন হুট করে নিলু কে মারতে গেছে। সে যে একটা সাইকোপ্যাথ একটা বোধহয় আরো স্পষ্ট করে বলে দেয়া যেত। পুরো মুভি তে সবচেয়ে হতাশার জায়গাটা বোধহয় এর ক্লাইম্যাক্স। আমাদের কল্পনার ক্লাইম্যাক্সটা এর চেয়ে আরো অনেক ভাল ছিল। মুভিতে প্রয়োজনীয় কমিক রিলিফ ছিল। এবং সেগুলো যথার্থই ছিল। মন্দিরের দৃশ্য, অনুপমের গান , নদীতে গোসলের দৃশ্যগুলো বেশ ভালই ছিল। মমতাজের গানটা বোধহয় মুভিতে ব্যবহার করা যেত। তাহলে আরো কিছুটা রিলিফ মিলত। সাধারণ বাংলা মুভির দর্শকদের জন্য মাঝে মাঝে একটু ভারি লাগতে পারে।
সবশেষে যদি বলতে হয় তবে বলব , দেবী মুভিটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবজায়গায় পরিচালক অনম বিশ্বাসের চেষ্টা ছিল দর্শক কে একটা ভাল মুভি উপহার দেয়ার যেটা সবাই বন্ধুবান্ধব , পরিবার পরিজন সবাই নিয়ে দেখতে যেতে পারবে এবং একটা তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে। আর আমার চোখে তিনি সেই প্রচেষ্টায় আশিভাগ সফল।
তাই আর দেরি কেন, চলে যান নিজের সবচেয়ে কাছে হলটায়। দেখে ফেলুন দেবী।
আমরা যদি না দেখি তাহলে বাংলা মুভির সুদিন কি এমনি এমনি আসবে।
কবি তো বলেছেনই' আমরা যদি না জাগি মা , ক্যামনে সকাল হবে? '
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×