somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভ্র বিজয় সমোঝতোর পেছনের ঘটনা

২৫ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক কালে অমিক্রনল্যাব এবং আনন্দ কম্পিউটার্সের মাঝে একটি সমঝোতা নিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং তাদের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এই সুযোগে কেউ কেউ তিলকে তাল আর তালকে কাঁঠাল বর্ণনা করা প্রয়াস পাচ্ছেন। অনেকেই আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। আমি গত কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর যা যা জানতে পেরেছি তা একটু সাজিয়ে লিখবার চেষ্টা করছি।

১.
কপিরাইট অফিস থেকে পাঠানো নোটিশে উত্তর দেয়া সময়সীমা ছিল সাতদিন।

২.
নোটিশ পাবার পর যোগাযোগ করা হয় ড. কামাল হোসেন অ্যাসোসিয়েটস এর আইনজীবী কামরুজ্জামান মাহবুব-এর সাথে। সেখান থেকে পরামর্শ দেয়া হয় উত্তর দেবার সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য আবেদন করার।

৩.
কামরুজ্জামান মাহবুব-এর কাছ থেকে সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদনপত্রটি নিয়ে জমা দেয়া কপিরাইট অফিসে এবং কপিরাইট অফিস আরো চৌদ্দ (১৪) দিন সময়সীমা বৃদ্ধি করে।

৪.
ড. কামাল হোসেন অ্যাসোসিয়েটস থেকে সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদনপত্রটি নিয়ে কপিরাইট অফিসে জমা দেয়ার ঠিক পরদিনই হঠাৎ করে ড. কামাল হোসেন অ্যাসোসিয়েটস একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে "অনিবার্য কারণবশত" তারা এই আইনি পরামর্শ দেবার কাজ চালিয়ে যেতে অপারগ। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোন পূর্বাভাষও পাওয়া যায়নি বা এর বেশি ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি।

৫.
এরপর যোগাযোগ করা হয় ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলমের সাথে (ইনি সম্ভবত বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের খসড়া প্রস্তুতকারকদের একজন)। তিনি ঘটনাটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে অভিমত দেন, যেহেতু 'অভ্র' বাংলাদেশে কপিরাইট করা সফটওয়্যার নয় এবং এটি বিনামূল্যে বিতরণ হয়, বিক্রী করা হয় না, সেহেতু কপিরাইট অফিস এর বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান কিংবা শুনানি আহবান করতে পারেন না। যদি কারো এই ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকে তাহলে তাকে সরাসরি উচ্চ-আদালতে (মানে হাইকোর্টে) অভিযোগ জানাতে হবে। পরবর্তীতে তার এই বক্তব্যই কপিরাইট অফিসে জমা দেয়া হয় (কেন ইউনিবিজয় পাইরেটেড না বা মিল-অমিল কোথায় এইসব কোন কিছু লেখা হয় নি)।

৬.
কপিরাইট অফিসে জবাব জমা দেয়ার পর কপিরাইট অফিস অত্যন্ত তৎপরতার সাথে ওইদিনই শুনানির তারিখ ধার্য করে দেয়। তবে পরবর্তীতে শুনানির তারিখ দুইবার পিছিয়েছে।

৭.
এর মাঝে একদিন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রারার মঞ্জুরুর রহমান, মেহদী হাসান খানকে 'সৎ পরামর্শ' দিতে গিয়ে বলেছেন, যেহেতু রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন কেউ বদলে দিয়ে নিজের কবিতা দাবি করতে পারে না অতএব ইউনিবিজয় আটটি বোতাম বদলে দিলেও সেটা বিজয় লেআউট থেকে আলাদা হয়ে যাবে না। এই বিষয়ে কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছেই। এটি আইনে টিকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

৮.
এর মাঝে 'অভ্র'-শুভাকাঙ্ক্ষী বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ অমিক্রনল্যাবকে বুদ্ধি-পরামর্শ এবং সাহস দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু তাদের বেশিরভাগই কোন না কোন সংগঠনের সাথে জড়িত তাই তারা প্রকাশ্যে কিছু বলেন নি বা অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

৯.
শুনানিতে কোন সমঝোতা না হওয়ায় পরবর্তী পথ ছিল উচ্চ-আদালত।

১০.
এখন ব্যরিস্টার তানজীব-উল আলম এর মতে বাংলাদেশের কপিরাইটের উপর বিশেষজ্ঞ কোন বিচারক নেই। এই ক্ষেত্রে আদালত এই বিষয়ে কোন একজন বিশেষজ্ঞকে তলব করবেন এবং তার মতামতের উপর ভিত্তি করে রায় দেবেন।

১১.
উচ্চ-আদালতে এই বিষয় গেলে সহজ অনুমান হচ্ছে, উচ্চ-আদালত মামলা নিষ্পত্তি হবার আগ পর্যন্ত অভিযোগকৃত পণ্য ('অভ্র') এর সকল প্রকার বিতরণের উপর স্থগিতাদেশ দেবেন।

১২.
শুনানি, বিশেষজ্ঞ তলব, বিশেষজ্ঞের অভিমত গ্রহণ, পুনরায় শুনানি তারপর মামলাটি নিষ্পত্তি এই প্রক্রিয়া শেষ হবার সময়সীমা যেহেতু নির্দিষ্ট নয়, সেহেতু স্থগিতাদেশের সময়সীমাও অনির্দিষ্ট।

১৩.
বিশেষজ্ঞ হিসেবে "কাকে" ডাকা হবে এবং তিনি "কি" অভিমত দেবেন কিংবা রায় কি হবে সেটি অনুমান করা সম্ভব নয়।

১৪.
অভ্র থেকে ইউনিবিজয় বাদ হলে কেবল মাত্র এর একটি লেআউট বাতিল হচ্ছে এবং পরবর্তী ভার্সনে কমপক্ষে আর দুটো লেআউট (প্রভাত এবং মুনির) ডিফল্ট হিসেবে আসার সিদ্ধান্ত হয়েই আছে। অভ্র-এর মূল অংশ এর অভ্র-ফোনেটিক। পক্ষান্তরে বিজয়ের লেআউটটিই এর মূল অংশ। অভ্র বিনে পয়সায় বিতরণ হয় এবং বিজয় একটি ব্যবসায়িক পণ্য। অতএব, বাদী এবং বিবাদীর অবস্থানও এখানে সমান নয়।

১৫.
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে 'অভ্র' বিতরণ বন্ধ হয়ে গেলে অভ্র ব্যবহারকারীদের সবাই ভুক্তভোগী হচ্ছেন। অপরদিকে, ইউনিবিজয় বাদ দিলে কিছু ব্যবহারকারীর সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।

এইরকম পরিস্থিতিতে অমিক্রনল্যাব শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে পরামর্শ করে আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তাবে রাজি হয়। সমঝোতা প্রস্তাবটি প্রথমে মোস্তফা জব্বার রিফাত-উন নবীকে ফোন করে দিয়েছিলেন। তখন অমিক্রনল্যাব তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয় নি। পরে পরিস্থিতি বিচার করে রাজি হয়েছিল।

এবার আলোচনার টেবিলে কি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি সেটা একটু বলি:

ক।
আলোচনা বৈঠকে বিডিওএসএনের মুনির হাসান, রায়ানস আর্কাইভের প্রধান নির্বাহী আহমেদ হাসান, আনন্দ কম্পিউটার্সের স্বত্তাধিকারী মোস্তফা জব্বার, আমাদের গ্রাম উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পের পরিচালক রেজা সেলিম, প্রথম আলোর পল্লব মোহাইমেন-সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

খ।
অমিক্রনল্যাব থেকে প্রস্তাব করা হয় আনন্দ কম্পিউটার্স যদি বিজয় লেআউটটি মুক্ত করে দেয় তবে অমিক্রনল্যাব অভ্র-র দুটো ভার্সন বের করবে। একটি কমার্সিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য, যেখানে বিজয় লেআউট থাকবে না। অন্যটি হোম ইউজারদের জন্য, যেখানে বিজয় লেআউট থাকবে এবং যথাযথ কৃতজ্ঞতা স্বীকারপূর্বক নোটিশ থাকবে যে এটি শুধুমাত্র অলাভজনক কাজে ব্যবহারের জন্য। (উভয় সংস্করণই বিনা পয়সায় বিতরণ হবে)।

গ।
এই প্রস্তাবের পক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ অত্যন্ত জোরালো সমর্থন জানান।

ঘ।
এক পর্যায়ে মোস্তাফা জব্বার অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং জানান যে অভ্রের সমর্থকরা তাকে যে অকথ্য ভাষায় অপমান করেছে তিনি তা কোনমতেই ভুলতে পারছেন না। এর ফলে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা এরপরে আর খুব জোর দিয়ে কিছু বলার মত কোন সুযোগই পান নি।

ঙ।
আরো কিছু আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে অভ্র ২০ আগস্টের মধ্যে অভ্র থেকে ইউনিবিজয় প্রত্যাহার করে নেবে এবং মোস্তাফা জব্বার তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন এবং ভবিষ্যতে অভ্র সম্পর্কে কটুক্তি করবেন না।

======
ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের পর টুকরো টুকরো তথ্য জোড়া লাগিয়ে এ পোস্টটি লিখছি। অতএব, ঘটনাগুলো হুবহু এই ক্রমেই ঘটেছে বা কিছু বাদ পড়ে নাই তা বলা যাচ্ছে না। আর ভাষায় নিরপেক্ষভাব বজায় রাখার রীতিমত কসরৎ করতে হল। এই কসরৎ করতে গিয়ে লাইনগুলো ছোট ছোট করে আনতে হয়েছে। বোঝার অসুবিধা হলে অগ্রিম দুঃখিত প্রকাশ করে রাখলাম।
লেখাটি লিখেছেন আমাদের প্রযুক্তি ফোরামের উন্মাতাল তারুণ্য ভাই যার মুল লিংক Click This Link


এই সম্পর্কিত পোস্ট দুটি
অবশেষে অভ্র থেকে সরিয়ে নেয়া হলো ইউনিবিজয় লেআউট

এবং অভ্রের নতুন ভার্সনে ইউনিবিজয় ব্যবহার করবেন যেভাবে !! উনার অনুমতিক্রমে আমি প্রকাশ করেছি যাতে আসলে কি ঘটেছিল তা সবাই জানতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১:৩৫
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×