কেয়া পাতায় নৌকা ভাসানোর দিনগুলো
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পিতল মাজা ঝকঝকে দুপুর গ্রামের এক বিয়ে বাড়ি , কলাগাছ কেটে বানানো বিয়ের গেট , বর যাত্রী আসবার সময় হয়েছে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কনের চাচা , রোদ এর তীব্রতায় দূরে দেখতে সমস্যা হচ্ছে চোখের উপর হাত দিয়ে চেষ্টা করছেন দেখতে কতদূর , পাশে পাঞ্জাবীর এক কোনা ছোট্ট হাত এর মুঠোয় চেপে পায়ের কাছে দাড়িয়ে আছে বাবা র সাথে একটি মেয়ে , তার সমস্ত মনোযোগ বাবার মুখে , কি করেন বাবা ...।
আমার শৈশব সবচাইতে প্রিয় স্মৃতি এটা , এই দৃশ্য ছাড়া ওই সময় এর আর কোন স্মৃতি নেই .
শৈশব এর সুরু টা ছিল পদ্মার পাড় লৌহজং এর হসপিটাল আবাসন এ , নিজস্ব সম্পদ এর মাঝে সিলভার এর একটা ছোট পানির কলস ছিল , পদ্মার জল আনতে যাবার আনুমতি ছিল না , পানি আনতে যেতাম টিউব ওয়েল এ , ভীষণ ভয় পেতাম পাশে ছিল ব্যাচেলর ডাঃ দের আবাস , পানি আনতে গেলেই মজা করে আমার কলসি কেড়ে নিত , আর আমিও ওদের কাউকে দেখলেই কলসি ফেলেই দে ছুট ।।
হসপিটাল এর নির্মাণ কাজ এর জন্য একপাশে কিছু লাল ইট স্তূপ করে রাখা ছিল, আশে পাশে কোথাও আমাকে খুজে না পেলে ,মা - সবার আগে ওখানে খুজতেন ,যথারীতি দেখা যেত কেউ দেখে ফেলার আগে, যতটা সম্ভব মুখে পুরে লাল ইট কড়মড় করে খাচ্ছি
একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় আপুদের কে পেলাম না এক ছুটে বাইরে এসে দেখি সবাই গল্প করছিল আমি যেতে আমাকে দেখিয়ে মা বললেন ওর ঘুমানোর বালিশ এর সমান , জিজ্ঞেস করলাম কি ? পাশের চাচী মজা করে বললেন, তুমি জানো না, তোমার জন্য এনেছে দেখে এসো , আমি দৌড়ে গেলাম যেয়ে দেখি লম্বায় আমার আব্বুর সমান একটা মাছ ধরে এনেছে জেলেরা , সেটার ডিম এর সাইজ আমার পিলো র সমান , সেই মাছ কলোনির সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছিল ।
পদ্মা পাড় থেকে আব্বা মানিকগঞ্জ ট্রান্সফার হলেন, আমাদের বাসা টা ছিল স্কুল এর খেলার মাঠ শেষ সীমানায় বড় ভাই বোন কে দেখতাম ক্লাস এর ঘণ্টা বাজলে এক দৌড়ে চলে যেত , আমাদের ছিল দুইটা তিতির মুরগী , একদিন রাতে শিয়াল একটাকে নিয়ে যায় অনেক কেঁদেছিলাম তিতির এর জন্য ।
মানিকগঞ্জ এর আমার জীবন অনেক অনেক সপ্নের কিছু ছবি আঁকা আছে , যা আমার ধূসর সময়গুলো কে রঙধনু তে বদলে দেয়
আমি আর আমার মেজো বোন ছিলাম পিঠা পিঠে বয়স এর ,সারাদিন দুইজন ঘুরে বেড়াতাম সাথে থাকতো আমার চাইতে অল্প ছোট পাসের বাসার একমাত্র ছেলে, আপুর স্কুল এর কোন এক বন্ধু তাকে বলেছে, ওর বাসায় না গেলে, চির জন্মের আড়ি , বন্ধু হারানো চলবে না, কোন দিকে বাসা সেটা জানে, কিন্তু কোথায় বাসা সেটা জানা নাই তাই বলে তো থেমে থাকা চলবে না, সকালে খেলতে নেমে আমরা যাত্রা শুরু করলাম ...
হাঁটতে হাটতে অনেক দূর চলে গেলাম, বাসা খুজে না পেয়ে তিন জন বাড়ির পথ ধরলাম কিছুক্ষন চলার পর দেখলাম আমাদের সাথে ধীরে ধীরে একটা রিকশা চলছে ,আমাদের নাম শুনতে পেলাম, ভাল করে খেয়াল করে দেখি রিকশা তে ওই পিচ্চির মামা আর আমার ভাইয়া বসে আছেন , হারান বিজ্ঞপ্তি তে মাইকে আমাদের কে খোঁজা হচ্ছে
পরের দৃশ্য নাই বা বললাম
চুমকি আপু রা ছিলেন ৩ বোন এক ভাই ওদের বাসার ৪নং মেয়ে ছিলাম আমি,আপু র কাছেই আমার হাতে খরি হয়েছিল অ, আ, ক, খ এর , এই মমতাময়ী কে আমি একদিন অনেক কাঁদিয়েছিলাম , ১৬ এর কুচকাওয়াজ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন উনার পুতুল কে সাজিয়ে , আচল ধরা আমি , কোথায় দেখলাম গোলাপি রঙ এর চকলেট বিতরণ করছে সবাই কে ,এর পর পা এর সাথে পা মিলিয়ে চলে গিয়েছিলাম অন্য এক এলাকায় ।
আমার তিতির গুলো এখন আমাকে কর্কশ কণ্ঠে তাদের ভালবাসা প্রকাশ করে ,আমার গোলাপি ,লাল চিনির চকলেট গুলো মোহনীয় রঙ এর যাদুতে অচেনা কোথাও হারাবার ষড়যন্ত্র করতে ইশারা দেয় ।
আমার লাল ইট এর পুরনো বাসা আমাকে টানে , অনেক দিন আমি চোখ বুজে হারিয়ে যাই স্কুল এর খোলা সবুজ মাঠ এ ।
আমার আব্বা ছিলেন গান পাগল , কোন দিন সন্ধায় হয়ত আমাদের বাসায় সবাই বসে যেতেন , কিরন চন্দ্র রায় ছিলেন বয়সে বেশ কিছু ছোট আব্বা র চাইতে , আর উদাত্ত কণ্ঠের " মনে যারে চায় গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরতাম .".. প্রান ভরে ঘুমাতাম, শক্তি সঞ্চয় এর করে নিতাম পরদিন সকাল জীবন যুদ্ধে র জন্য ।সমস্ত দিন খেলা, যুদ্ধের চাইতে কম তো নয়
[sb]আহ শৈশব আমার আমার কেয়া পাতায় নৌকা ভাসানোর দিন গুলো [/sb]
৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন