somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উড়ো চিঠি

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







চিঠি !!!
খামে ভরা এক চিলতে রোদ্দুর
কখনো বা বর্ষণ!!!!!!
কিংবা কাগজের টুকরাতে বেঁধে রাখা অনন্ত আবেগের ঢেউ
কিছু নিশীথের দীর্ঘশ্বাস মাখা বিবর্ণ অক্ষরের বোঝা ;
সংকোচে লজ্জার লালিমায় রাঙানো কাঁপা হাতের আলপনা
আবার কখনো বা পূর্ণতা প্রাপ্তির যুগল বন্দি।


অপচয় হয়ে যাওয়া কিছু চিঠি'র ও আলদা কিছু গল্প আছে , খেয়ালি সময়ের কানাগলিতে অজস্র নিশ্চুপ কান্না চিঠির ভাঁজে গুমরে কাঁদতে দেখেছি আমি । শব্দে শব্দে কিভাবে হাহাকার লুকায় ,অক্ষরের অক্ষরে পাঁজর ভাঙার আর্তনাদ ও ।

কৈশোরে পাশের বাসার রোজি আপা রা যখন বাসা পাল্টালেন আমাদের রান্না ঘরের মাটির চুলার পাশে স্তুপ করা কিছু চিঠি আর শুভেচ্ছা কার্ড পেয়েছিলাম ;সপ্তম শ্রেণীর আমি অধিকাংশ কথার ই মানে বুঝতে পারি নি ,কেবল কিছু লেখা মনে রয়ে যাওয়ায় এখন বুঝতে পারি রবীন নামের একজনের নিঃস্ব হবার ,লুটপাট হবার গল্প ছড়িয়ে ছিলো সে সব চিঠির পরতে পরতে।

চমৎকার সব ফুল আর কারুকার্য ময় কিছু কার্ড সাথে শুভ কামনা'র ডালি ;
“শুন্য ফুলদানীর হাহাকার যেন
আমার হৃদয়ের মত ;তোমাকে স্পর্শ না করে
রোজি কে রবীন “


সেসব কার্ড চিঠি আমাদের বেশ উপকারে এসেছিলে বর্ষায় চুলোর আগুন জ্বালাতে !

ইচ্ছে হয় রাবীন নামের হৃদয় ভাঙা সেই যুবক কে খুঁজে পেতে এনে উনাকে বলি “আপনি ভাগ্যবান আপনার প্রেমিকা যথেষ্ট হৃদয়বতী যে ডাস্টবিনের ময়লায় না ফেলে আমারদের আগুন জ্বালানো সহজ করে দিয়েছিলেন" আপনার শুন্য ফুলদানীর হাহাকার আমাদের অগ্নি শালকা হয়ে অন্ন ব্যাঞ্জন সাজিয়েছে।

অপচয় দেখেছি রোকেয়া হল এর মেইন বিল্ডিং এর সিঁড়ি গোঁড়ায় পড়ে থাকা অজস্র উড়ো চিঠি’র ভাগ্য নিয়ে আসা অসমাপ্ত ঠিকানা সহ অসংখ্য চিঠি’র ।দূর প্রবাস পড়তে গিয়ে বিছিন্ন হওয়া কেউ ,মধ্যপ্রাচ্যে চলে আসা স্বজন যাদের জানা র মাঝে ছিলো মরূদ্যান হয়ে উঠা প্রিয়ার নাম আর রোকেয়া হল এর নাম।অযত্নে অবহেলায় কিছুদিন পড়ে থাকত তারপড় দারওয়ান রা কোথায় নিয়ে ফেলে দিতো নিরুদ্দেশ হত ঠিকানা।মাঝে মাঝে দেখতাম কিছু মেয়ে দুষ্টামি করে চিঠি খুলে মজা করছে ,তবে বেশির ভাগ ই কোমল হাতের স্পর্শ বঞ্চিত হয়ে অবহেলায় থাকত ।

অযাচিত অবহেলায় সেখানে ফেলে রাখা পোষ্ট কার্ড গুলো নিজেকে মেলে ধরত অপরূপ স্নিগ্ধতায় ;
অক্ষর ,শব্দগুলো যেন উপচে পরা বন মল্লিকা ‘র সাজি ।আঙুলে আঙুলে কলমের দাগে বোনা নকশি কথা ,রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা রজনীগন্ধা। ঠিক ঠাক প্রাপকের হাতে গেলে হয়ত তার কপালে জুটত অযাচিত চুমুর বন্যা ,শ্রেয়সীর ঘুঘু বুকের ওম ,আর বাঁধভাঙা অশ্রুর শুদ্ধতা ।হয়ত রাতে’র পর রাত সাজিয়ে দিত সেই কয়েক ছত্র নির্ঘুম বালিকার চরণে ।

“ অপেক্ষায় থেকো আমি ফিরছি “এমন কিছু শব্দের অপেক্ষায় থেকে থেকে ভাঙা হৃদয়ে তরুণী ‘র ছুটিতে বাড়ি যেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছেঃ অথচ তার হৃদয় শীতল করা শব্দগুলো প্রেরকের অসাবধানতায় ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে “উড়ো চিঠির “ বদনাম কুড়িয়েছে কেবল । রোদের মাঝে রোদ হয়ে ছড়িয়ে থাকার কথা ছিল যে অক্ষরের সে শুধু ধূসর ছাই হয়েই রইলো ।


আর মাত্র ক’টা দিন ;
এভাবে দিন গুনে গুনে ফিরে আসা যুবক একটা সমস্তদিন রোকেয়া হল এর গেটে দাঁড়িয়ে থেকে ,ফিরে গেছে ভাঙা মন নিয়ে।সে হয়ত কোনদিন জানতে ও পারে নি তার’ই ভুলে তার লেখা মহুয়া পাপড়িগুলো উড়ে গেছে উড়োচিঠি হয়ে ।


হাতের ঢেউ এ মেঘ সরানোর ম্যাজিক দিনগুলো তে মেঘের ভেলায় ভেসে কেমন করে যেন এক উড়ো চিঠি’র মালিক হয়েছিলাম । আশে পাশে ই সবাই থাকায় ,আমার নামে চিঠি আসা ছিলো প্রায় শুন্যের কোঠায়। তাই নিজে ‘র নামে একটা চিঠি পেয়ে আগ্রহ উৎসাহ ডিবডিব কোন কিছুর ই কমতি ছিলো না।পড়ে বুঝলাম চিঠিটার প্রাপক ,আমি নই অন্য কোন কেউ।
ঠিকানা ঠিক ছিলো ঠিকই কেবল প্রাপক টাই আলাদা।

বি এম এ লং কোর্স , ভাটিয়ারী জি সি ক্যাডেট নাম্বার সহ চিঠিতে উল্লেখ করে দিতেন শোয়েব নামে একজন ক্যাডেট ।
কতটা সকালে উঠতে হয় , স্টাফদের যন্ত্রণা,সিনিয়রদের পাঙ্গা ,মাঝ রাতে’র কান্না সমস্তদিনের দিনলিপি এমন সব কিছুই থাকত তাতে।

প্রাপক যেহেতু আমি নই ,উওরের দায় ও আমার নয় ;
বেশ কয়েকটা চিঠি জমে যাওয়াতে সিনিয়র রুমমেট এর পরামর্শে লিখে দিলাম,তার ভুল দড়জায় কড়া নাড়ার গল্প। তাতেও বিপত্তি ক্যাডেট শোয়েব ভাবলেন ইচ্ছে করেই তাকে বোকা বানানোা হচ্ছে “ এমন টা হতেই পারে না। এতটা কাকতালীয় অসম্ভব!!!!!!!!!!! চিঠির পর চিঠি ,হলুদ খামের ইষ্টিকুটুমের ডাকা ডাকি ;দোয়েল শালিকের জীবনে কার অত সময় থাকে ;উড়ো চিঠির কদর করার।
আমি ও ভুলে গেলাম উনি ও চিঠি পাঠানো বন্ধ করে দিলেন ।

অনেক বছর পর সেই চিঠির আসল প্রাপক “মনিরা”র সাথে দেখা হয়েছিল,হয়েছিলো কিছু কথা বিনিময় ও
কেবল জানা হয় নি “ পেয়েছিলো কি শোয়েব তাকে খুঁজে !!!! হয়েছিলো কি উড়ো চিঠি হয়ে যাওয়া ,ভুল বোঝার গল্প বিনিময় !!! অথবা সেই কি আজ তার পাশে হয়ে আছে ছায়া !!!!!!

নাম আর রুম নাম্বার এক হলেও বিল্ডিং নাম্বারের ভুলে উনাদের দু জনের মাঝে কেমন করে আমি হয়ে রইলাম “মধ্যবর্তিনী “
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩১
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×