চিঠি !!!
খামে ভরা এক চিলতে রোদ্দুর
কখনো বা বর্ষণ!!!!!!
কিংবা কাগজের টুকরাতে বেঁধে রাখা অনন্ত আবেগের ঢেউ
কিছু নিশীথের দীর্ঘশ্বাস মাখা বিবর্ণ অক্ষরের বোঝা ;
সংকোচে লজ্জার লালিমায় রাঙানো কাঁপা হাতের আলপনা
আবার কখনো বা পূর্ণতা প্রাপ্তির যুগল বন্দি।
অপচয় হয়ে যাওয়া কিছু চিঠি'র ও আলদা কিছু গল্প আছে , খেয়ালি সময়ের কানাগলিতে অজস্র নিশ্চুপ কান্না চিঠির ভাঁজে গুমরে কাঁদতে দেখেছি আমি । শব্দে শব্দে কিভাবে হাহাকার লুকায় ,অক্ষরের অক্ষরে পাঁজর ভাঙার আর্তনাদ ও ।
কৈশোরে পাশের বাসার রোজি আপা রা যখন বাসা পাল্টালেন আমাদের রান্না ঘরের মাটির চুলার পাশে স্তুপ করা কিছু চিঠি আর শুভেচ্ছা কার্ড পেয়েছিলাম ;সপ্তম শ্রেণীর আমি অধিকাংশ কথার ই মানে বুঝতে পারি নি ,কেবল কিছু লেখা মনে রয়ে যাওয়ায় এখন বুঝতে পারি রবীন নামের একজনের নিঃস্ব হবার ,লুটপাট হবার গল্প ছড়িয়ে ছিলো সে সব চিঠির পরতে পরতে।
চমৎকার সব ফুল আর কারুকার্য ময় কিছু কার্ড সাথে শুভ কামনা'র ডালি ;
“শুন্য ফুলদানীর হাহাকার যেন
আমার হৃদয়ের মত ;তোমাকে স্পর্শ না করে
রোজি কে রবীন “
সেসব কার্ড চিঠি আমাদের বেশ উপকারে এসেছিলে বর্ষায় চুলোর আগুন জ্বালাতে !
ইচ্ছে হয় রাবীন নামের হৃদয় ভাঙা সেই যুবক কে খুঁজে পেতে এনে উনাকে বলি “আপনি ভাগ্যবান আপনার প্রেমিকা যথেষ্ট হৃদয়বতী যে ডাস্টবিনের ময়লায় না ফেলে আমারদের আগুন জ্বালানো সহজ করে দিয়েছিলেন" আপনার শুন্য ফুলদানীর হাহাকার আমাদের অগ্নি শালকা হয়ে অন্ন ব্যাঞ্জন সাজিয়েছে।
অপচয় দেখেছি রোকেয়া হল এর মেইন বিল্ডিং এর সিঁড়ি গোঁড়ায় পড়ে থাকা অজস্র উড়ো চিঠি’র ভাগ্য নিয়ে আসা অসমাপ্ত ঠিকানা সহ অসংখ্য চিঠি’র ।দূর প্রবাস পড়তে গিয়ে বিছিন্ন হওয়া কেউ ,মধ্যপ্রাচ্যে চলে আসা স্বজন যাদের জানা র মাঝে ছিলো মরূদ্যান হয়ে উঠা প্রিয়ার নাম আর রোকেয়া হল এর নাম।অযত্নে অবহেলায় কিছুদিন পড়ে থাকত তারপড় দারওয়ান রা কোথায় নিয়ে ফেলে দিতো নিরুদ্দেশ হত ঠিকানা।মাঝে মাঝে দেখতাম কিছু মেয়ে দুষ্টামি করে চিঠি খুলে মজা করছে ,তবে বেশির ভাগ ই কোমল হাতের স্পর্শ বঞ্চিত হয়ে অবহেলায় থাকত ।
অযাচিত অবহেলায় সেখানে ফেলে রাখা পোষ্ট কার্ড গুলো নিজেকে মেলে ধরত অপরূপ স্নিগ্ধতায় ;
অক্ষর ,শব্দগুলো যেন উপচে পরা বন মল্লিকা ‘র সাজি ।আঙুলে আঙুলে কলমের দাগে বোনা নকশি কথা ,রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা রজনীগন্ধা। ঠিক ঠাক প্রাপকের হাতে গেলে হয়ত তার কপালে জুটত অযাচিত চুমুর বন্যা ,শ্রেয়সীর ঘুঘু বুকের ওম ,আর বাঁধভাঙা অশ্রুর শুদ্ধতা ।হয়ত রাতে’র পর রাত সাজিয়ে দিত সেই কয়েক ছত্র নির্ঘুম বালিকার চরণে ।
“ অপেক্ষায় থেকো আমি ফিরছি “এমন কিছু শব্দের অপেক্ষায় থেকে থেকে ভাঙা হৃদয়ে তরুণী ‘র ছুটিতে বাড়ি যেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছেঃ অথচ তার হৃদয় শীতল করা শব্দগুলো প্রেরকের অসাবধানতায় ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে “উড়ো চিঠির “ বদনাম কুড়িয়েছে কেবল । রোদের মাঝে রোদ হয়ে ছড়িয়ে থাকার কথা ছিল যে অক্ষরের সে শুধু ধূসর ছাই হয়েই রইলো ।
আর মাত্র ক’টা দিন ;
এভাবে দিন গুনে গুনে ফিরে আসা যুবক একটা সমস্তদিন রোকেয়া হল এর গেটে দাঁড়িয়ে থেকে ,ফিরে গেছে ভাঙা মন নিয়ে।সে হয়ত কোনদিন জানতে ও পারে নি তার’ই ভুলে তার লেখা মহুয়া পাপড়িগুলো উড়ে গেছে উড়োচিঠি হয়ে ।
হাতের ঢেউ এ মেঘ সরানোর ম্যাজিক দিনগুলো তে মেঘের ভেলায় ভেসে কেমন করে যেন এক উড়ো চিঠি’র মালিক হয়েছিলাম । আশে পাশে ই সবাই থাকায় ,আমার নামে চিঠি আসা ছিলো প্রায় শুন্যের কোঠায়। তাই নিজে ‘র নামে একটা চিঠি পেয়ে আগ্রহ উৎসাহ ডিবডিব কোন কিছুর ই কমতি ছিলো না।পড়ে বুঝলাম চিঠিটার প্রাপক ,আমি নই অন্য কোন কেউ।
ঠিকানা ঠিক ছিলো ঠিকই কেবল প্রাপক টাই আলাদা।
বি এম এ লং কোর্স , ভাটিয়ারী জি সি ক্যাডেট নাম্বার সহ চিঠিতে উল্লেখ করে দিতেন শোয়েব নামে একজন ক্যাডেট ।
কতটা সকালে উঠতে হয় , স্টাফদের যন্ত্রণা,সিনিয়রদের পাঙ্গা ,মাঝ রাতে’র কান্না সমস্তদিনের দিনলিপি এমন সব কিছুই থাকত তাতে।
প্রাপক যেহেতু আমি নই ,উওরের দায় ও আমার নয় ;
বেশ কয়েকটা চিঠি জমে যাওয়াতে সিনিয়র রুমমেট এর পরামর্শে লিখে দিলাম,তার ভুল দড়জায় কড়া নাড়ার গল্প। তাতেও বিপত্তি ক্যাডেট শোয়েব ভাবলেন ইচ্ছে করেই তাকে বোকা বানানোা হচ্ছে “ এমন টা হতেই পারে না। এতটা কাকতালীয় অসম্ভব!!!!!!!!!!! চিঠির পর চিঠি ,হলুদ খামের ইষ্টিকুটুমের ডাকা ডাকি ;দোয়েল শালিকের জীবনে কার অত সময় থাকে ;উড়ো চিঠির কদর করার।
আমি ও ভুলে গেলাম উনি ও চিঠি পাঠানো বন্ধ করে দিলেন ।
অনেক বছর পর সেই চিঠির আসল প্রাপক “মনিরা”র সাথে দেখা হয়েছিল,হয়েছিলো কিছু কথা বিনিময় ও
কেবল জানা হয় নি “ পেয়েছিলো কি শোয়েব তাকে খুঁজে !!!! হয়েছিলো কি উড়ো চিঠি হয়ে যাওয়া ,ভুল বোঝার গল্প বিনিময় !!! অথবা সেই কি আজ তার পাশে হয়ে আছে ছায়া !!!!!!
নাম আর রুম নাম্বার এক হলেও বিল্ডিং নাম্বারের ভুলে উনাদের দু জনের মাঝে কেমন করে আমি হয়ে রইলাম “মধ্যবর্তিনী “
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩১