ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।মাত্র কয়েকটি শব্দে একটি বাক্য।কিন্তু অর্থ ব্যাপক।ধর্মবিরোধী কাজ করলে বলি ধর্মদ্রোহী,রাষ্ট্রবিরোধী হলে রাষ্ট্রদ্রোহী।আমরা ভারতীয়রা কম বেশি ধর্মের পূজারী।তাই আমার এ লেখা কারও ধর্মানুভূতিতে বিন্দুমাত্র আঘাত করলে আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। জনগণকে ওয়াদা দিয়ে সে ওয়াদা পালনের সৌভাগ্য ও হিম্মত সবার হয় না।আর দশজন মানুষের মতো আমিও এ বিচারের স্পষ্টতা ও সাফল্য কামনা করি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানি চলছে।সেখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার ২০টি ঘটনার অভিযোগ আনা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর লুট করাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। পরে এসব লোকজন সর্বস্ব হারিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। আর যারা যেতে পারেননি তাদের সাঈদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেন। তাদের নিয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তেন। তাদের মুসলমান নামও দেন তিনি।(Click This Link)
সাঈদীর ধর্মান্তরিতকরণ ব্যবসা স্বাধীনতার পরেও থেমে থাকেনি।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে করেছেন জোর করে।আর পরে করেছেন ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে।সারারাত কনকনে শীত উপেক্ষা করে সাঈদীর ওয়াজ শুনে নওমুসলিম হয়ে বাড়ী ফেরা।এমন অবিশ্বাস্য সম্মোহনী শক্তিও সাঈদী অর্জন করে ফেলে!
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সর্বস্ব হারানো মানুষের অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে ধর্মান্তরিতকরণ অথবা কারও দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে চাকুরী,ব্যবসা,অর্থের টোপ দিয়ে ধর্মান্তরিতকরণ বাহাদুরীর কিছু নেই বরং অপরাধ।মানুষ হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়ে হিন্দু হয়,মুসলমানের ঘরে মুসলমান।ধর্ম যার যার হলেও এখানে তার তার নয়।কেবল বাবার ধর্মই সন্তানের ধর্ম হয়ে যায়।কোন কঠিন পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা করা যে কোন জীবেরই স্বভাবগত অধিকার। কিন্তু যুগ যুগ ধরে কেউ আত্মবিস্মৃত হোক তা তো বিশ্বাস করা যায় না।নিজে না হয় কোন কঠিন পরিস্থিতিতে ধর্মান্তরিত হলাম কিন্তু তা সন্তান পেরিয়ে বংশ পরস্পরায় প্রবাহিত হয় কোন দূর্বার আকর্ষনে?পিতামাতার উপর অমানুষিক নির্যাতনের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে বলপ্রাপ্ত হয়ে সে নির্যাতনের বদলা নেয় না এমন কুলাঙ্গার সন্তান কি দুনিয়ায় আছে? আধুনিক বিশ্বে দিন মজুরের ছেলে দিন মজুর হয় না। ডাক্টার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পিতামাতার গর্বের মুখটাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। জ্ঞানে আসে অগাধ পরিবর্তন।সে যুগে মূর্খ বাবার শিক্ষিত সন্তান বাবার ধর্ম মেনে চলে কি জোর করে ধর্মান্তরিতকরণের স্মৃতি বয়ে? আরব দেশে মুসলমানদের পূর্ব ইতিহাস ঘাটলে ইহুদী-খ্রিষ্টান-পৌত্তলিক চলে আসে।ভারতবর্ষের মুসলমানদের নাক টিপলে হিন্দুর গন্ধ পাওয়া যায়।আমি নিজেও মুসলমান পিতার সন্তান।আমার পূর্ব পুরুষের ভূলটাকে শূধরে আবার তাদের ধর্মে ফিরে যাবার বিবেকের তাড়া আমি এখনও পাইনি।ইসলাম আমার সেই বিবেকটাকে ভোঁতা করে রেখেছে।আমি সত্যই ধন্য।ধর্ম প্রসঙ্গে শিশুদের ওপর জোর খাটানো যাবে না। ভারতের মুম্বাইয়ের উচ্চ আদালত এক মামলায় এ রায় দিয়েছে।(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম,রবিবার, ৯ ডিসেম্বর,২০১২)।
Click This Link
আমাদের জাতীয় নেতাদের ডাকে যখন তখন রাজপথে লক্ষ লক্ষ জনতা নেমে আসে।কিন্তু কেউ ধর্মান্তরিত হয়ে বাড়ী ফেরে না।এমন ঐশী ক্ষমতা কোন রাজনৈতিক নেতার নেই।আমও যায় তো সাথে বস্তাও যায়। সাঈদীর জালসা শুনে নওমুসলিমদের এমন অবস্থা হয়!কারও কোন অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই।ছোট কালে জাদু দেখার নেশা ছিল।একদিন স্কুল মাঠে বিকেলে জাদু দেখে জাদুকরের বানানো জাদুর মিষ্টি নিয়ে আনন্দে বাড়ী ফিরি।মুরব্বীদের পরামর্শে মিষ্টিগুলি রান্না ঘরের শিঁকেয় তুলে রাখি।সকালে দেখি সব মাটি হয়ে গেছে। সাঈদীর জাদুর ওয়াজে মোহিত নওমুসলিমরা এমন অভিযোগ করেছেন বা পরে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দিয়েছেন এমন কথা শুনিনি।
সাঈদীর অপরাধ কর্মের বিচার চলছে। বিচারের রায় কি হবে সেটা মাননীয় আদালত ঠিক করবেন। কিন্তু সাঈদী একটা নস্যি মাত্র। ইসলাম কোন জাদুর ফসল নয় বা ঐশী কোন মোজেজাও নয়। কেবল বিবেক ও সত্যের তাড়নায় মানুষ দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসেছে ও আজও আসছে। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু প্রধান র্ধম।এখানকার মুসলমানেরা স্বর্গ থেকে আগত কোন জাতি নয়।পূর্ব পুরুষেরা হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে নিজেদের ধন্য করেছিল। কারও হাত পা বাঁধা নেই। পিতৃপুরুষ মুসলমান হয়েছিল বলেই নিজেকে মুসলমান হয়ে থাকতে হবে ? বিবেক যদি ঠায় না দেয় অথবা এমনটি যদি মনে হয় যে কোন জাদুকরের জাদুর টানে আপনার এই সর্বনাশ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তবে দ্বিধাদ্বন্দ,জড়তা ফেলে বলে ফেলি “আবার তোরা হিন্দু হ।"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




