গত ১৫ই ডিসেম্বর,২০১২ তারিখে বিজয় দিবসের পূর্ব বিকেলে সামুতে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম।শিরোনাম ছিল “যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অপমৃত্যু” Click This Link. প্রেক্ষাপট ঐ পোষ্টেই আছে।আজ শাহবাগের ধ্বনিতে পুরো দেশ কেঁপে উঠেছে।জাতির সাথে সরকারের প্রতারণার ফসল আজকের শাহবাগ আন্দোলন।জীবিকার তাড়নায় সংসারে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারি না। গতকাল সন্ধ্যায় স্বস্ত্রীক শাহবাগ মোহনায় পা রাখতেই হাজার হাজার প্রাণের উচ্ছ্বলতায় মনে হল সংসার ছাড়াও আমাদের আরেকটা দায়িত্ববোধ আছে।
সরকার কি করছে তা যদি আগে থেকেই সবাই বুঝতো তাহলে আজ শাহবাগ পরিস্থিতির জন্ম হ’ত না। সরকার তার রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ট্রাইব্যুনালকে একের পর এক বিতর্কিত করে যাচ্ছে।কেউ কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করে আসছেন।এই সত্যভাষীদের তখন রাজাকারের তক্মাও দেওয়া হ’ত।লোক মুখে একটা কথা আছে “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।” স্বার্থবাদের একটা মন্ত্র আছে “যুদ্ধ শেষে যোদ্ধা বাড়ে”।আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক আমাদের সামু পরিবারের গর্বিত সন্তান ইমরান এইচ সরকার।তিনি কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক,পেশায় চিকিত্সক এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা। কিন্তু দলের স্বার্থের বাহিরে এসে নিজ ও ভিন্ন মতাদর্শী প্রায় ১০০ ব্লগার ও অনলাইট অ্যাকটিভিস্টকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। শাহবাগ পেরিয়ে তরঙ্গের সে ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ পেরিয়ে বিশ্বময়।কুর্নিশ করি সামুর গর্ব ইমরান সাহেবকে জাতির অন্তরের কথাকে অধিকারে রুপান্তরের জন্য।
ইমরান এইচ সরকার
শাহবাগের এই গণজাগরণ রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বহীন আন্দোলন। এটা যে শুধু ব্যতিক্রম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তাই-ই নয়, প্রযুক্তিও পালন করছে বিপ্লবী ভূমিকা। শাহবাগে আগত ছাত্রী, গৃহবধূ, কর্মজীবী, সক্রিয় নারী কর্মী ও মায়েদের মধ্যেও আমি বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ দেখতে পাচ্ছি। শাহবাগ আন্দোলনের পরিচিত মুখ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক লাকি আক্তার সেই স্ফুলিঙ্গের প্রাণ ভোমরা।
শাহবাগের উচ্চহিত কন্ঠ লাকি আক্তার
ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনভাবে কাজ করলে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লার ফাঁসিও হতে পারত।এটা আন্দোলনকারীদের বক্তব্য।কিন্তু ট্রাইব্যুনালের রায়ে কাদের মোল্লা মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে যান। তখন তাকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। সেই দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গিই জনরোষকে উস্কে দিয়ে জনতাকে আজ এক কাতারে নিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার কারণে
রায়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন করছেন কাদের মোল্লা
বিএনপির অবস্থান ছিল-ধরি মাছ,নাহি ছুঁই পানি”অবস্থা।সেইসঙ্গে দলটির এতবেশি সমর্থক শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এতে অংশগ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প বিএনপি'র ছিল না।গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু হলেও শাহবাগের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে তারা আট দিন পর।
বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার তাগিদে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যেখানে নিয়োগ পান সরকারেরই আস্থাভাজন কিছু বিচারপতি ও প্রসিকিউটর। সিবিলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ দাঁড় করানো খুবই কঠিন এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসম্ভব।সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে যুদ্ধাপরাধ থেকে লাইনচ্যুত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে নেমে পড়ে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি ওখান থেকেই শুরু।মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে পড়ে সরকারের হলেন্ডার রাজনীতির চারণভূমি।অসহায় বিচারপতি বলে ফেলেন “গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়।”এটা কেবল হলেন্ডার(দ্রুত বর্ধনশীল)মনোভাবেই সম্ভব।
আসলে বিডিআর হত্যাকান্ড,ডঃ ইউনুছ ইস্যু,কুইক রেন্টাল,সাগর রুনি হত্যাকান্ড,সুরনজিত সেনের কলঙ্ক, ইলিয়াস আলী গুম,সীমান্তে বিএসএফের তান্ডব,নতজানু পররাষ্ট্র নীতি,বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড,অনিয়ন্ত্রিত ছাত্রলীগ, পদ্মা সেতু,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইত্যাদি প্রভৃতি ইস্যুতে দেশের অবস্থা এমনিতেই বিস্ফোরণ্মুখ ছিল।সকল জিঘাংসার জবাব আজকের শাহবাগ।রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বহীন শাহাবাগে কাদের মোল্লা একটি উপলক্ষ মাত্র।সুলতানা কামাল যথার্থই বলেছেন -“জনমত থাকার কারণে শাহবাগ থেকে ফাঁসির দাবি জানানো হচ্ছে। যেকোনো বিচারে অসন্তুষ্ট হতে পারি, তবে তাতে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না,বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা ভালো নয় ।”
Click This Link
এই মহুর্তে রাজনীতি ও সন্ত্রাসে আওয়ামীগের একাধিপত্য।অগণতান্ত্রিকভাবে শিবির শায়েস্তা করতে গিয়ে সরকার বিশ্বজিতের ফাঁটা বাঁশে আটকে গিয়েছিল।মনে হচ্ছে কাদের মোল্লার ইস্যুতে সরকার শাহাবাগের চিপায়ও ফেঁসে যাচ্ছে।সামনে রয়েছে সাঈদী,কামরুজ্জামান,নিজামি,গোলাম আযম।রয়েছে সাকা চৌধুরী। শাহাবাগের মতো বহু চত্ত্বরও ফাঁকা রয়েছে।নির্বাচন এখনও বেশ বাকি।কিন্তু এসবের সুবাস কি নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া যাবে?
আইন সংশোধন হলে বিচার প্রক্রিয়া হাসির বস্তুতে পরিণত হবে: এইচআরডব্লিউ
যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার দাবিতে সমপ্রতি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং বিচারের রায় দেবার পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া অযথা শক্তি প্রয়োগ ও অস্ত্র ব্যবহার না করার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নির্যাতন ও গুরুতর অপরাধের শিকার হয়েছেন তাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়া জরুরি। কিন্তু তাই বলে আদালতের দেয়া রায় অপছন্দ হবার কারণে সরকার তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত। আইন সংশোধন করা হলে পুরো বিচার প্রক্রিয়া একটি হাসির বস্তুতে পরিণত হবে।”
জানুয়ারির ২১ তারিখ এবং ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখে যথাক্রমে আবুল কালাম আজাদ এবং আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষিত হয়। আবুল কালাম আজাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কাদেরের রায় ঘোষণার পরেই সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ দলের সদস্য এবং অসংখ্য মানুষ রায়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশেষত তরুণ সমাজ ঢাকার শাহবাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
Click This Link
Click This Link
16 Feb 2013 11:20:39 AM Saturday BdST
আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন না করার আহ্বান অ্যামনেস্টির
ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধন করা থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকারভিত্তিক সংগঠনটি শনিবার একটি বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে দোষীদের মৃত্যুদ-ের দিকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ রেখে আইনের যে সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা পাশ করা সরকারের উচিত হবে না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ অংশের গবেষক আব্বাস ফয়েজের মতে, বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সরকার বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদ-ের দিকে ঠেলে দিতে এই সংশোধনীর সুযোগ নেবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে চাপের মুখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ মৃত্যুদ- একটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক সাজা। এবং সরকারের উচিত এই সাজা বিলুপ্ত করা, এর পক্ষে ডাক দেওয়া বা সুযোগ তৈরি করা নয়।
ফাইয়াজ আরও বলেন, স্রেফ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে আইন পাশ করে তার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মৃত্যুদ- চাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা সরকারের মোটেই উচিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংগঠিক মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে ওই অপরাধের শিকার মানুষগুলোর সুবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে বিচার ব্যবস্থায় অভিযুক্তদের মানবাধিকারও রক্ষা করতে হবে।
ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। কোনো আন্দোলনের চাপ বা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ভিত্তিতে যেনো তারা কোনো বিচারের রায় দিতে বাধ্য না হন সেটিও সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরও জানায়, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করার কারণে কেউ কেউ চাপের মুখে পড়েছেন। তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তারা সহিংসতার শিকার হতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন।
ট্রাইব্যুনালের ওইসব সমালোচকদের সুরক্ষা দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের মতামত প্রকাশের সুযোগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় দিয়েছে। এর মধ্যে এক জনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। অপরজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ-। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রেখে এরই মধ্যে আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। রোববার সংশোধনী প্রস্তাবটি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার কথা রয়েছে। রোববার জাতীয় সংসদে আইনটি সংশোধনের বিল পাশ হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিলটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে কারাদ-াদেশের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- চেয়ে আপিল করার করার বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৩
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




