somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবে মে'রাজ- (পর্ব-৬/৬)

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্বাপর)
-বরইবহুল দেশের সীমান্তবর্তি এক বাসিন্দা বরইর মওসুমে-,
অর্থাৎ বরই বাগান যখন বরই ফলে আচ্ছাদিত থাকে এমন মৌসুমে অনুরূপ কোন এক ব্যক্তিও ‘তাকে’ দেখেছেন। তিনিও বিভ্রান্ত নন, লক্ষচ্যুত নন, মনগড়া কথা বলেন না; বরং তিনিও অনুরুপ আল্লাহর বাণীপ্রাপ্ত।
এই মহামানব হযরত মুহাম্মদ নন; কারণ তিনি বরইবহুল দেশের বা সীমান্তের বাসিন্দা ছিলেন না। আর হযরত মুহাম্মদের পরিচয় বিক্ষিপ্ত দু’একটি আয়াতই নয় বরং সমগ্র কোরান।
ইসলামিক ফাউন্ডেসন অনুদিত কোরানে ফুটনোটে লেখা আছে যে, ‘রাছুলুল্লাহ (সাঃ) দ্বিতীয়বার মে’রাজ এ জিব্রাইল (আঃ) কে দেখেছিলেন তার পূর্ণ অবয়বে ৬ বা ৭ম আসমানে কূল বৃক্ষের নিকটে। কুল বৃক্ষটি আল্লাহর নূর দ্বারা আচ্ছাদিত। (কোরান, ই. ফা. ফুটনোট নং-৩১১, ৩১৩)
ফুটনোটগুলি আজব কল্পনা প্রসূত; শরিয়ত মতেই জিব্রাইল অহি আদান-প্রদানে রাছুলের সাথে দিন নেই রাত নেই শত-হাজার বার সাক্ষাৎ হয়েছে; বিশেষ করে কথিত মে’রাজ কালে রাছুলের পাশাপাশি সঙ্গী-সাথী ছিলেন। সেই জিব্রাইলকে ২য় মে’রাজে ৬/৭ম আসমানে বরই বাগানের প্রান্তে পূর্ণ অবয়বে দেখার বর্ণনা স্ব বিরোধী ও হাস্যকরই নয় বরং বিভ্রান্তকর! তা’ছাড়া উক্ত বর্ণনায় পূর্ণ অবয়বে দেখেননি, দেখেছিলেন ধনুকের অবয়বে। ১ নং ধারায় পরিস্কার লেখাই আছে যে ‘স্বরূপ’ বা নিজ আকৃতি দেখেছিলেন! এখানে জিব্রাইল দেখা বা দ্বিতীয় মে’রাজ ইত্যাদি কল্পনা করা এবং তা আল্লাহর কোরানের ফুটনোটে লেখা ঘোর আপত্তিকর!
৭ম আসমানে অবস্থিত বরই গাছ! মটকীর মত বরই ফলে! কিন্তু খায় কারা! তার কোন সদুত্তর নেই!
হযরত মুহাম্মদ বালুময় খেজুরবহুল দেশের বাসিন্দা ছিলেন, প্রধানতঃ খেজুর খেতেন! সুতরাং খেজুর গাছ ছেড়ে বরই গাছ নূরে আচ্ছাদিত করার তাৎপর্য অস্পষ্ট! বরই গাছ আচ্ছাদিত থাকে বরই ফলে, আম গাছ জাম ফলে আচ্ছাদিত থাকে না, কল্পিত আল্লাহর নূরেও নয়! বরই গাছের সঙ্গে মে’রাজ, নূর, জিব্রাইল বা ধর্মের কোন সম্পর্ক আছে বলে প্রমান নেই! অতএব আয়াতগুলি নতুন করে একমাত্র কোরানের আলোতেই ব্যাখ্যা-অনুবাদ করা উচিৎ যে, সেখানে কি আকার ইঙ্গিত দিচ্ছে!
বালুরদেশ, ভূস্বর্গ, ডলারেরদেশ, নদীমাতৃকদেশ, পাহাড়ীদেশ, মাছ-ভাতেরদেশ, দারুচিনিরদেশ ইত্যাদির মতই ‌'সীমান্তবর্তি বরইরদেশ;' সহজ সরল ইংগিতপূর্ণ ঠায়-ঠিকানা খুবই সুশোভিত, সহজবোধ্যের জন্য আলোকিত বা নূর মন্ডিত এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
ঘ. ১ ও ৩ নং আয়াতে স্পষ্ট প্রমান মিলে যে, ব্যক্তিগণ ভিন্ন; ৪ নং আয়াতে অনুরূপ আর এক ব্যক্তির পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলে রাখা ভালো যে, শরিয়ত ‘শবে মে’রাজ-১’সহ উপর-নীচে বর্ণিত আয়াতের বরাতে রাছুলের অন্তত ৩ বার মে’রাজ হওয়ার দাবি অনাআসেই করতে পারতো এবং উচিৎ ছিল; কিন্তু কেন করলো না! তা একান্তই ভাববার বিষয়!
আয়াতটির শুরুতেই অনুদিত আছে যে:
‘নিশ্চয়ই এই কোরান সন্মানিত বার্তাবাহকের বাণী।’
বাক্যে ব্যবহৃত ‘এই’ (হাজা) ও ‘কোরান’ (পাঠ্য) শব্দদ্বয়ের অস্তিত্ত্ব নেই, এমনকি ‘সন্মানিত’ শব্দটিও নেই; ব্যবহৃত সর্বনাম ‘হু’র অনুবাদ করা হয়েছে ‘এই কোরান;’ কিন্তু কওল, কালা, কেরাত, একরা থেকেই ‘কোরান’ শব্দের উৎপত্তি, অর্থ বলা, পড়া, আবৃতি, পাঠ্য বা বাণী ইত্যাদি। এতদ্বর্থে আয়াতে ‘কওল’ শব্দটিই স্বয়ং উল্লেখ থাকতে ‘এই কোরান’ (মূল আয়াতে নেই) শব্দদ্বয় টেনে আনার কোনই হেতু নেই। ‘হু’ অর্থ তার, ইহা ‘গায়েবুন’ (থার্ড পারসন) বা নাম পুরুষ, অর্থাৎ অনুপস্থিত ব্যক্তি/বস্তু এবং সম্বন্ধবাচক সর্বনাম; সুতরাং ‘হু’ নাম পুরুষকে মধ্যম পুরুষ অর্থাৎ উপস্থিত ‘এই কোরান’ অনুবাদ কেবল অসঙ্গতই নয় বরং বিভ্রান্তকর। উপরন্তু ‘রাছুল’ বলতেই যে একমাত্র ‘মোহাম্মদ রাছুল’ তা’ও সঙ্গত নয়।
পুনশ্চুঃ
ইন্না হু লাকাউলু রাছুলিহীল কারীম; শব্দার্থ: ইন্না=অবশ্যই, হু=তার; কওল= বাণী; রাছুল=বার্তাবাহক; করিম= দাতা।
অতএব প্রচলিত মতেই অর্থ হওয়া উচিৎ ছিল: ‘অবশ্যই ইহা দয়ালু রাছুলের/ বার্তাবাহকের বাণী।’ কিন্তু শরিয়ত যেহেতু ‘রাছুলের বাণী’ বলে আলাদা লক্ষ লক্ষ হাদিছ রচনা করে কোরানকে রাছুল থেকে ভিন্ন করে রেখেছে, সেহেতু উল্লিখিত অনুবাদটি গ্রহণের যুক্তি/সাহস পায়নি, আর এজন্যই অহেতুক ‘এই কোরান’ বাক্যটি জুড়ে দিয়েছে।
‘রাছুল’ শব্দের সূক্ষ্ম অর্থ প্রেরণাপ্রাপ্ত, বার্তাবাহক নয়। বার্তাবাহক হলেন স্বয়ং যিনি শুণ্যে/সামনে ধনুকের ব্যাসার্ধে প্রকাশ হয়ে খবরাখবর বহন করেছেন, তিনি জ্যোতি বা নূরদেহ, যাকে কাল্পনিক জিব্রাইল বলা হয় (স্ব স্ব দেহে স্ব স্ব আকৃতিতে বিরাজমান)। এই বার্তাবাহক (জ্যোতিদেহ) যেখানে খবর পৌঁছান তা হলো চিঠির বাক্স, প্রাপক অথবা রেকর্ড, সিডি, ক্যাছেট বা কম্পিউটার অর্থাত দেহটি; ইহা জ্যোতিদেহের খবরের রক্ষক ও অবিকল প্রকাশক; সেখানে রদ-বদল, সংযোগ-বিয়োগ করার কোনই ক্ষমতা নেই। সহজ কথায় নূরদেহের প্রেরণায় যিনি প্রেরণাপ্রাপ্ত হন তিনিই রাছুল-নবি; কেহ দাবি/প্রকাশ করুক বা না করুক। কারণ প্রকাশ করা/না করা তাদের ইচ্চাধীন নয় (১৪: ১১; ৪০: ৭৮)।
সুতরাং আয়াতটির মূলার্থ হওয়া উচিৎ:
‘অবশ্যই তার (জ্যোতিদেহের) প্রদত্ত্ব (দাতা/বাহিত) বাণীই প্রেরণাপ্রাপ্তের (রাছুলের বাণী)।’
১ ও ৩ নং ধারায় বর্ণিত ব্যক্তিগণের মত ইনিও তাঁকে (নূরদেহকে) দর্শন করেছেন; তিনিও বিশ্বস্থ, পাগল নন; তার বাণী শয়তাণের বাণী নয়, অথচ তোমরা এমন লোকদেরকে গ্রহণ না করে কেন অন্য পথে চলছো!
প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে (হৃদয়ে) এই জ্যোতিদেহ আছেন (দ্র: ৮: ২৪; ২৪: ৩৫)। মানুষ তার নিরলস নামাজ বা ধ্যান-সাধনায় চাইলেই তিনি (নূরদেহ) দর্শন দেন, বাণী দেন; এতে সংশয়, সন্দেহ করার কিছু নেই; কারণ ‘অজানা (অদৃশ্য) জ্ঞান দানে তিনি মোটেই কৃপণ নন (৪ নং ধারা) যে, চাইলেও তিনি আর কাকেও কখনও দর্শন দেন না বা দেবেন না। সুতরাং ৩টি ছুরায় অনুরূপ ৪টি ইঙ্গিত বা পরিচয় একজনের নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির।
ঙ. অন্য আর একজনের ইঙ্গিত দেয়া আছে বর্ণিত ৫ নং ধারায়। সেখানেও অনুরূপ সাক্ষি দেয়া হয়েছে যে, তিনিও নূর দেহপ্রাপ্ত; তিনি কবি, গণক নন; নিজে যদি কিছু রচনা করতেন,তবে তার ঘাড়ের শিরা কেটে দিতেন।
উপরন্তু পুনঃ স্মরণীয় যে:
৪ নং ধারায় সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য ঘোষনা দেয়া হয়েছে যে, তিনি `কৃপণ নন এবং সহজ-সরল পথে যারাই চলতে চায় তারাই তার দেখা পায়।' ঘোষনাটি নিম্ন বর্ণিত আয়াতে পুনঃ নিশ্চিৎ করা হয়েছে:

অ মা কানা- হাকিম। [ ২৪: ৩৫; ৪২: ৫২] অর্থ: -আমি ইহাকে করেছি জ্যোতি যা দ্বারা আমি আমার বান্দাগিগের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ঐ জ্যোতির পথ-নির্দেশ করি-।
সুতরাং জনসাধারণের উচিৎ কথিত এবং স্বঘোষিত নেতা, ইমাম আল্লামা, শায়েখ বা দল-উপদলকে অন্ধ অনুসরণ না করে স্ব স্ব জ্যোতিদেহ আবিস্কারে রত হওয়া এবং অনুরূপ জ্যোতিদেহধারীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বের করে সমাজের সকল দায় দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে দিয়ে বিশ্বস্থতার সহিত তাদের বাধ্য হয়ে থাকা। এমন কম-বেশি জ্ঞান প্রাপ্ত লোক সব জাতির মধে এবং সবসময়ই থাকেন। নিরপেক্ষ, নিঃস্বার্থ, সহজ-সরল লোকদের পক্ষে তাদের খুঁজে বের করা কঠিন নয়। (শেষ পর্ব)
বিনীত।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×