সামনে রাস্তা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷ শহরে এমন রাস্তা আর দেখেনি মুনতাসীর ৷ আজকেও প্রতিদিনের মত রাতে হাঁটতে বেরিয়েছে ৷ বন্ধুদের ফোন করে পাইনি তাই একলাই হাঁটা হচ্ছে ৷ হাঁটার মধ্যে আলাদা এক আনন্দ পাই সে ৷ বিশেষ করে রাতের বেলায় কানে হেডফোনটা লাগিয়ে গান শুনাটা ৷ সাথে যদি রাতের ঠান্ডা হাওয়া একটু বেশি করে ছোঁয়া দেয় ৷ কবি কবি অনুভব করে তখন সে ৷ অর্থহীন ছন্দ মিলাতে মিলাতে গানের সুরে হেঁটে যাওয়া বালকের কবিতা ৷ ভাবে আর হাসে সে ৷ শুনতে পাইনা রাস্তার পাশের কুকুরটা হইতো নিশাচরকে দেখে অল্প সন্দিহান হয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল ৷ তবে আজ একটু আলাদা ৷ আশে পাশে বিল্ডিং এর সংখ্যা কমতে কমতে নেই হয়ে গেছে অনেক আগেই ৷ তবুও হাঁটছে মুনতাসীর ৷ একেবারে আলো না থাকার পরও এই অন্ধকারের হাতে নিজেকে অর্পন করে হাটছে ৷ হটাৎ কিছু একটা গায়ে ধাক্কা খেল ৷ কান থেকে আগেই হেডফোন সরিয়ে নিয়েছে এত অন্ধকারে কিছু দেখবেনা বলে ৷ কিন্তু সামনে থেকে যে কিছু আসছে তার কোন শব্দই পাইনি সে ৷ দ্রুত মোবাইল বের করে ফ্লেশটা অন করল ৷ অন করে তো অভাক ৷ এই তো সাক্ষাত একটা মেয়ে ৷ ( খাইছে আজকে গেছি ) কথাটা মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে গেল ৷ কিন্তু তাকে অভাক করে দিয়ে মেয়েটি কিছু বললই না ৷ বরং হা করে তাকিয়ে থাকল ৷ আর একটু পর চলতে শুরু করল ৷ মুনতাসীর কি বলবে কিছু না বুঝে দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেল ৷ মুনতাসীর মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে গেল অদ্ভুত ভাবে ৷ অনেকটা রোবটের মত করে মেয়েটিও দাড়িয়ে গেল ৷ কি বলবে বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে সে আবারো ৷ হটাৎ মেয়েটি কি যেন বলে উঠল অদ্ভুত গলায় ৷ এলোমেলো সব কথা ৷ মুনতাসীর মনে হল তার বন্ধু মাহি তাকে রাগানোর জন্য আবারো ইতালীয়ান ভাষায় কথা বলছে ৷ কিছু বুঝতে না পেরে মুনতাসীরই এবার ক্ষমা চাওয়ার জন্য মুখ খুলল ৷
"দেখেন আসলে অন্ধকারে আপনাকে দেখিনি তাই ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে ৷ কিছু মনে করবেন না " ৷
মেয়েটি কিছু বুঝেনা এমন ভাবে আবারো তার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ এবার গল্পের বই এ পড়া ভূতের কথা মনে পড়ে যায় তার ৷ মেয়েরা নাকি পেত্নী হয় সে জানে ৷ কিন্তু এই মেয়েকে দেখে অন্তত পেত্নী মনে হচ্ছেনা ৷ অন্যসময় হলে হইতো মেয়েটা অনেক সুন্দর এটা মাথায় আসত কিন্তু এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঠিক করতে পারছে না কি বলবে আর কি ভাববে ৷ কিন্তু ভয় যে পেতে শুরু করেছে এবং পাচ্ছে এখন তা পরিষ্কার বুঝতে পারছে ৷ হটাৎ করেই তারমনে খটকা লাগল আশেপাশের পরিবেশ আর অবস্থা দেখে ৷ হটাৎ করেই মনে হাজারটা প্রশ্ন আসতে থাকল ৷ নাহ এবার মনে হয় শুধু ক্ষমা প্রার্থনা দিয়েই কথার শেষ হবে না ৷ কিন্তু বেশি কথা বলবে কি করে ? সবছেয়ে বড় কথা মেয়েটি দেখতে তার সমানই সামান্য বড় হবে হইতো ৷ তবুও এবার কথা বলল মুনতাসীর ৷ হাতে অনেকক্ষন ফ্লাশলাইট ধরে রেখে ব্যাথা হয়ে গেছে হাত ৷
"আচ্ছা আপু আপনি কোথাই যাচ্ছিলেন এদিকে ? কোথা থেকে আসছিলেন ? আর আপনি কথাই বা এরকম এলোমেলো বলছেন কেন ? "
প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে মুনতাসীর আর মেয়েটি এখনো হা করে তাকিয়েই আছে ৷ মাথাই ঘুরাঘুরি করা রহস্য বিষয়ক প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হটাৎ করে কেন যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুনতাসীর ৷ কিন্তু মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ৷ মুনতাসীর এত ব্যস্ত হয়ে উঠল যে মেয়েটিকে বলল " আপু আপনার সমস্যা হলে আসেন আমরা বসে কথা বলি কোথাও ৷ তারপর সে নিজেই হাতটেনে আলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটিকে ৷ নিজের সাহস আর এহেন কান্ড দেখে নিজেই অভাক মুনতাসীর ৷ হটাৎ কি মনে হতে আবার একবার সে ঘুটঘুটে অন্ধকার জায়গাটা দেখে আসার জন্য পেছনে এল একলা ৷ মোবাইলের ফ্লেশ জ্বালিয়ে একটু ভালভাবে দেখেনিল আশেপাশের সবকিছু ৷ এবং মনের সন্দেহ বেড়ে যায় এমন আরো কিছু জিনিস দেখল ৷ মনে মনে সামান্য হিসাব মিলিয়ে কিছু একটা ধারনা পাকাপোক্ত করল ৷ আবার পেছনে মেয়েটির কাছে ফিরে যাচ্ছে এমন সময় আম্মুর কল আসল ৷ সাথে সাথে রিসিভ করে বাসা থেকেযে দুরে আছে তা বলল আর কিছু বকা কপালে জুটল ৷ এরপর তারাতারি বাসায় যাওয়ার নির্দেশ প্রদানের পরে আম্মু ফোন রেখে দিল ৷ কিন্তু আগের জায়গাই গিয়ে দেখে মেয়েটি নেই ৷ এবার হটাৎ করেই খুব বেশি ভয় পেয়ে বসল সে ৷ কিন্তু অল্প চোখ ঘুরাতেই কোন বাসার জানালার ফাঁক দিয়ে আসা অল্প আলোতে তাকে দেখতে পেল ৷ যাক মন থেকে ভয়টা সরল ৷ তবে গায়ে যে কাঁটা দিল তা যেতে সময় নিচ্ছে ৷ দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেল সে এবার ৷ হটাৎ করে মেয়েটি কথা বলে উঠল নিজে থেকে ৷ মুনতাসীর কে প্রশ্ন করল সে কে ? মুনতাসীর এতক্ষন ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলল মেয়েটিকে ৷ মেয়েটি শুনে অভাব হল কিন্তু রাগ করল বলে মনে হল না ৷ তারপর মেয়েটি নিজে থেকেই বলল " আমার বাসা একটু পরেই ৷ তোমাকে আগে দেখিনি এদিকে ৷ কি করছ এখানে ? " মুনতাসীর হাঁটার কথাটা আবার মনে করিয়ে দিল মেয়েটিকে ৷
- আচ্ছা ঠিক আছে ভাল ৷ এখন কয়টা বাজে ?
- মুনতাসীর মোবাইলে টাইমটা দেখে বলল ১০ টা বাজতে ৩ মিনিট বাকি ৷
- এত রাত হয়ে গেছে ? আচ্ছা আমি যাচ্ছি ৷ আমার নাম তানজিন ৷ পরের লাইনে ৩ নাম্বার বাসায় থাকি ৷
মুনতাসীর অভাক ৷ এতক্ষন যে মেয়ে একটা কথা ঠিক মত বলল না সে এখন হাসি হাসি মুখ করে অদ্ভুত ভাবে নিজের নাম ঠিকানা বলছে অপরিচিত একজনকে ৷ তাও এই রাতের দশটা বাজে একলা রাস্তাই ৷
তবুওসে তার পরিচয় বলল আর ভবিষ্যেতে দেখা হবে এমন বলে বিদায় নিল ৷ মেয়েটিও হাসিহাসি মুখ করে তাকে বিদায় দিয়ে বাম পাশের গলি ধরে হাঁটা শুরু করল ৷ পেছনে ফিরে মুনতাসীর খেয়াল করল মেয়েটির কাঁধের সাথে একটি ব্যাগ ঝুলে আছে যা তার কোমর পর্যন্ত নেমে গেছে ৷ এটাতো আগে দেখিনি ৷ নিজেকেই বলল সে ৷
সবকিছু অদ্ভুত ঠেকছে তার কাছে ৷ এভাবে আজব ঘটনা !! বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না যে এইসব একটু আগে ঘটেগেছে ৷ আর মেয়েটি একটু আগেই তার চোখের সীমার বাইরে চলে গেছে আরেকটা বাক নিয়ে রাস্তাই ৷ বাকিটা পথ এইসব চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে পৌছল ৷
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৪