somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিমিরে তানজিন ( গল্প ) - পর্ব ১

০২ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামনে রাস্তা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷ শহরে এমন রাস্তা আর দেখেনি মুনতাসীর ৷ আজকেও প্রতিদিনের মত রাতে হাঁটতে বেরিয়েছে ৷ বন্ধুদের ফোন করে পাইনি তাই একলাই হাঁটা হচ্ছে ৷ হাঁটার মধ্যে আলাদা এক আনন্দ পাই সে ৷ বিশেষ করে রাতের বেলায় কানে হেডফোনটা লাগিয়ে গান শুনাটা ৷ সাথে যদি রাতের ঠান্ডা হাওয়া একটু বেশি করে ছোঁয়া দেয় ৷ কবি কবি অনুভব করে তখন সে ৷ অর্থহীন ছন্দ মিলাতে মিলাতে গানের সুরে হেঁটে যাওয়া বালকের কবিতা ৷ ভাবে আর হাসে সে ৷ শুনতে পাইনা রাস্তার পাশের কুকুরটা হইতো নিশাচরকে দেখে অল্প সন্দিহান হয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল ৷ তবে আজ একটু আলাদা ৷ আশে পাশে বিল্ডিং এর সংখ্যা কমতে কমতে নেই হয়ে গেছে অনেক আগেই ৷ তবুও হাঁটছে মুনতাসীর ৷ একেবারে আলো না থাকার পরও এই অন্ধকারের হাতে নিজেকে অর্পন করে হাটছে ৷ হটাৎ কিছু একটা গায়ে ধাক্কা খেল ৷ কান থেকে আগেই হেডফোন সরিয়ে নিয়েছে এত অন্ধকারে কিছু দেখবেনা বলে ৷ কিন্তু সামনে থেকে যে কিছু আসছে তার কোন শব্দই পাইনি সে ৷ দ্রুত মোবাইল বের করে ফ্লেশটা অন করল ৷ অন করে তো অভাক ৷ এই তো সাক্ষাত একটা মেয়ে ৷ ( খাইছে আজকে গেছি ) কথাটা মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে গেল ৷ কিন্তু তাকে অভাক করে দিয়ে মেয়েটি কিছু বললই না ৷ বরং হা করে তাকিয়ে থাকল ৷ আর একটু পর চলতে শুরু করল ৷ মুনতাসীর কি বলবে কিছু না বুঝে দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেল ৷ মুনতাসীর মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে গেল অদ্ভুত ভাবে ৷ অনেকটা রোবটের মত করে মেয়েটিও দাড়িয়ে গেল ৷ কি বলবে বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে সে আবারো ৷ হটাৎ মেয়েটি কি যেন বলে উঠল অদ্ভুত গলায় ৷ এলোমেলো সব কথা ৷ মুনতাসীর মনে হল তার বন্ধু মাহি তাকে রাগানোর জন্য আবারো ইতালীয়ান ভাষায় কথা বলছে ৷ কিছু বুঝতে না পেরে মুনতাসীরই এবার ক্ষমা চাওয়ার জন্য মুখ খুলল ৷
"দেখেন আসলে অন্ধকারে আপনাকে দেখিনি তাই ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে ৷ কিছু মনে করবেন না " ৷

মেয়েটি কিছু বুঝেনা এমন ভাবে আবারো তার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ এবার গল্পের বই এ পড়া ভূতের কথা মনে পড়ে যায় তার ৷ মেয়েরা নাকি পেত্নী হয় সে জানে ৷ কিন্তু এই মেয়েকে দেখে অন্তত পেত্নী মনে হচ্ছেনা ৷ অন্যসময় হলে হইতো মেয়েটা অনেক সুন্দর এটা মাথায় আসত কিন্তু এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঠিক করতে পারছে না কি বলবে আর কি ভাববে ৷ কিন্তু ভয় যে পেতে শুরু করেছে এবং পাচ্ছে এখন তা পরিষ্কার বুঝতে পারছে ৷ হটাৎ করেই তারমনে খটকা লাগল আশেপাশের পরিবেশ আর অবস্থা দেখে ৷ হটাৎ করেই মনে হাজারটা প্রশ্ন আসতে থাকল ৷ নাহ এবার মনে হয় শুধু ক্ষমা প্রার্থনা দিয়েই কথার শেষ হবে না ৷ কিন্তু বেশি কথা বলবে কি করে ? সবছেয়ে বড় কথা মেয়েটি দেখতে তার সমানই সামান্য বড় হবে হইতো ৷ তবুও এবার কথা বলল মুনতাসীর ৷ হাতে অনেকক্ষন ফ্লাশলাইট ধরে রেখে ব্যাথা হয়ে গেছে হাত ৷

"আচ্ছা আপু আপনি কোথাই যাচ্ছিলেন এদিকে ? কোথা থেকে আসছিলেন ? আর আপনি কথাই বা এরকম এলোমেলো বলছেন কেন ? "

প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে মুনতাসীর আর মেয়েটি এখনো হা করে তাকিয়েই আছে ৷ মাথাই ঘুরাঘুরি করা রহস্য বিষয়ক প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হটাৎ করে কেন যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুনতাসীর ৷ কিন্তু মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ৷ মুনতাসীর এত ব্যস্ত হয়ে উঠল যে মেয়েটিকে বলল " আপু আপনার সমস্যা হলে আসেন আমরা বসে কথা বলি কোথাও ৷ তারপর সে নিজেই হাতটেনে আলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটিকে ৷ নিজের সাহস আর এহেন কান্ড দেখে নিজেই অভাক মুনতাসীর ৷ হটাৎ কি মনে হতে আবার একবার সে ঘুটঘুটে অন্ধকার জায়গাটা দেখে আসার জন্য পেছনে এল একলা ৷ মোবাইলের ফ্লেশ জ্বালিয়ে একটু ভালভাবে দেখেনিল আশেপাশের সবকিছু ৷ এবং মনের সন্দেহ বেড়ে যায় এমন আরো কিছু জিনিস দেখল ৷ মনে মনে সামান্য হিসাব মিলিয়ে কিছু একটা ধারনা পাকাপোক্ত করল ৷ আবার পেছনে মেয়েটির কাছে ফিরে যাচ্ছে এমন সময় আম্মুর কল আসল ৷ সাথে সাথে রিসিভ করে বাসা থেকেযে দুরে আছে তা বলল আর কিছু বকা কপালে জুটল ৷ এরপর তারাতারি বাসায় যাওয়ার নির্দেশ প্রদানের পরে আম্মু ফোন রেখে দিল ৷ কিন্তু আগের জায়গাই গিয়ে দেখে মেয়েটি নেই ৷ এবার হটাৎ করেই খুব বেশি ভয় পেয়ে বসল সে ৷ কিন্তু অল্প চোখ ঘুরাতেই কোন বাসার জানালার ফাঁক দিয়ে আসা অল্প আলোতে তাকে দেখতে পেল ৷ যাক মন থেকে ভয়টা সরল ৷ তবে গায়ে যে কাঁটা দিল তা যেতে সময় নিচ্ছে ৷ দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেল সে এবার ৷ হটাৎ করে মেয়েটি কথা বলে উঠল নিজে থেকে ৷ মুনতাসীর কে প্রশ্ন করল সে কে ? মুনতাসীর এতক্ষন ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলল মেয়েটিকে ৷ মেয়েটি শুনে অভাব হল কিন্তু রাগ করল বলে মনে হল না ৷ তারপর মেয়েটি নিজে থেকেই বলল " আমার বাসা একটু পরেই ৷ তোমাকে আগে দেখিনি এদিকে ৷ কি করছ এখানে ? " মুনতাসীর হাঁটার কথাটা আবার মনে করিয়ে দিল মেয়েটিকে ৷

- আচ্ছা ঠিক আছে ভাল ৷ এখন কয়টা বাজে ?
- মুনতাসীর মোবাইলে টাইমটা দেখে বলল ১০ টা বাজতে ৩ মিনিট বাকি ৷
- এত রাত হয়ে গেছে ? আচ্ছা আমি যাচ্ছি ৷ আমার নাম তানজিন ৷ পরের লাইনে ৩ নাম্বার বাসায় থাকি ৷

মুনতাসীর অভাক ৷ এতক্ষন যে মেয়ে একটা কথা ঠিক মত বলল না সে এখন হাসি হাসি মুখ করে অদ্ভুত ভাবে নিজের নাম ঠিকানা বলছে অপরিচিত একজনকে ৷ তাও এই রাতের দশটা বাজে একলা রাস্তাই ৷
তবুওসে তার পরিচয় বলল আর ভবিষ্যেতে দেখা হবে এমন বলে বিদায় নিল ৷ মেয়েটিও হাসিহাসি মুখ করে তাকে বিদায় দিয়ে বাম পাশের গলি ধরে হাঁটা শুরু করল ৷ পেছনে ফিরে মুনতাসীর খেয়াল করল মেয়েটির কাঁধের সাথে একটি ব্যাগ ঝুলে আছে যা তার কোমর পর্যন্ত নেমে গেছে ৷ এটাতো আগে দেখিনি ৷ নিজেকেই বলল সে ৷

সবকিছু অদ্ভুত ঠেকছে তার কাছে ৷ এভাবে আজব ঘটনা !! বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না যে এইসব একটু আগে ঘটেগেছে ৷ আর মেয়েটি একটু আগেই তার চোখের সীমার বাইরে চলে গেছে আরেকটা বাক নিয়ে রাস্তাই ৷ বাকিটা পথ এইসব চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে পৌছল ৷

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×