somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবানে ঘুরা-ফিরা

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাহাড় আর পাহাড়, কোথাও শ্যামল-সবুজ, কোথাও দুসর নীল। নীলাভ পাহাড়গুলো যেন চাঁদের বুড়ির মতো দীর্ঘকায় চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে আকাশের বুকে। কি গভীর তাদের মিতালী কি নিস্পাপ-শুভ্র সেই মেঘেদের বাড়ী, বাংলাদেশের পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান। জেলা ও বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বান্দরবান জেলার অবস্থান। এই অঞ্চলের অন্য দুইটি জেলা হচ্ছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। একবার ঘুরতে গিয়ে এতোটাই মুগ্ধ হলাম যে, ভাবলাম ভ্রমনের একটা নোট এই জীবনে না রেখে গেলেই নয়।

দর্শনীয় স্থান

নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাত, মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড়, বগালেক, প্রান্তিক লেক, ঋজুক জলপ্রপাত প্রভৃতি।বিস্তারিত বলছি..

নীলগিরি

বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলাস্থ নীলগিরি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচুতে অবস্থানের কারণে সর্বদা মেঘমণ্ডিত থাকে আর এটাই এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তারাই এর পরিচালনা করে থাকেন। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এ পর্বতের পাশেই রয়েছে উপজাতী সম্প্রদায় ম্রো পল্লী’র বসবাস। বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি’র সৌন্দর্য কয়েকগুন বেড়ে যায়, তখন পর্যটকদের হাতের নাগালে মেঘ ধরা দেয়। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য একটি অপার্থিব প্রাকৃতিক দান।

বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপষ্টেশন থেকে থানছিগামী জীপ বা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছানো যায়। এজন্য ৫সিটের ছোট জীপ ২৩০০ টাকা বা ৮সিটের বড় জীপ ২৮০০ টাকা করে ভাড়া রাখতে পারে।

স্বর্ণমন্দির

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরবর্তি উপশহর বালাঘাটাস্থ পুলপাড়া নামক স্থানে স্বর্ণমন্দিরের অবস্থান। স্থানীয়ভাবে এটি বুদ্ধ ধর্মালম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত । এই প্যাগোডাটি দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় বিশেভাবে উল্লেখযোগ্য। সুউচ্চ প্যাগোডা থেকে বান্দরবানের বালাঘাটা উপশহর ও এর আশপাশের নৈস্বর্গিকদৃশ্য দেখা যায়। স্বর্ণমন্দির, পুজারীদের জন্য সারাদিন উন্মুক্ত থাকে এবং দর্শনার্থীদের জন্য বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়।

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র

বান্দরবান-কেরাণীহাট সড়কের পাশেই পার্বত্য জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, নৌকা ভ্রমনের সুবিধা, ঝুলন্ত সেতু এবং অস্থায়ী অবস্থানের জন্য একটি রেষ্টহাউস।

শৈল প্রপাত

শৈল-প্রপাত বান্দরবান রুমা সড়ক থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এটি মূল সড়কের পাশে থাকায় এখানে পর্যটকদের ভীড়টাও লক্ষ্যনীয় পর্যায়ের। হীম-শীতল, টলটলে ঝর্ণার পানি’র জন্য পর্যটকেরা এখানে বেড়াতে আসে।শৈল প্রপাতের আশ-পাশ জুড়ে আদিবাসী বম সম্প্রদায় বসবাস করে।বান্দরবান শহর থেকে চাঁন্দের গাড়ীতে করে ৪৫০-৫০০ টাকা ভাড়ায় শৈল প্রপাতে যাওয়া যায় ।

মিলনছড়ি

শৈল-প্রপাত কিংবা চিম্বুক পাহাড়ে যেতে মিলনছড়ি পথে পড়ে। মিলনছড়িতে সুদূর পাহাড়ের রাস্তার পাশে দাড়িয়ে অবারিত সবুজের খেলা আর পাহাড়ের বুক ছিড়ে বেরিয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী’র অপার্থিব দৃশ্য চোখে লেগে থাকার মতো।

চিম্বুক

জেলা শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে অবস্থিত বাংলার দার্জিলিং খ্যাত ‘চিম্বুক পাহাড়’-এর পরিচিত অনেক পুরনো। সমুদ্র পৃষ্ট হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৫০০ ফুট। চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল। ঘরগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরি। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের ফাঁকদিয়ে সূর্যের আলো গলে পড়ছে অন্য পাহাড়ে। বান্দরবান শহর থেকে চাঁন্দের গাড়ীতে করে ৪৫০-৫০০ টাকা ভাড়ায় চিম্বুকে যাওয়া যায়।

বগালেক

বান্দারবান জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বগালেকের অবস্থান। পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এই লেকের অবস্থান। এ পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। স্থানীয়ভাবে কথ্য আছে এই লেক দুইশ' থেকে আড়াইশ' ফুট গভীর। বগালেক থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া নামে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপ ষ্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা ব্রীজ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকাযোগে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বান্দরাবন থেকে রুমা উপজেলা কিংবা রুমা থেকে বগালেক যেতে খরচ হবে জন প্রতি ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত।

প্রান্তিক লেক

জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী প্রান্তিক লেক বান্দরবান-কেরাণীহাট সড়কের হলুদিয়ার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ী রির্জাভ ৭০০-৮০০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে।

ঋজুক জলপ্রপাত

পাহাড়ী পানির এই জলপ্রপাতটি জেলা সদর হতে ৬৬ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে রুমা উপজেলায় অবস্থিত। নৌ-পথে রুমা থেকে থানচি যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদীর তীরে ৩০০ ফুট উচু থেকে এই জলপ্রপাতটির রিমঝিম শব্দে পানি পড়তে দেখা যায়। রুমা বাজার থেকে নৌকা ভাড়া করে ঋজুক যাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা’র মতো লাগবে।

যাতায়াত

ঢাকা থেকে রেল অথবা সড়কপথে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান, নয়তো সরাসরি সড়কপথে বান্দরবান যাওয়া যায়। ফকিরাপুল বা কমলাপুর রেলষ্টেশনের বিপরীত পাশের কাউন্টার অথবা গাবতলী, পান্থপথ বা কলাবাগান থেকেও ঢাকা টু বান্দরবান ডিরেক্ট নন এসি বাসে ভাড়া ৫০০-৭২০ টাকা করে জনপ্রতি (ফেব্রুয়ারি, ২০১২)। বাস বা পরিবহন কোম্পানি’র উপর নির্ভর করে ভাড়া বাড়তে বা কমতে পারে। সেন্টমার্টিন পরিবহন, এস আলম, হানিফ, ডলফিন, ইউনিক, শ্যামলি, সৌদিয়া সহ আরও বেশ কিছু বাস পাওয়া যায় এখান থেকে।

আর ঢাকা টু চট্টগ্রাম এসি বাসে- ৯০০-১৫০০ টাকা কিংবা নন এসিতে- ৫০০-৭০০ টাকা করে মাথাপিছু ভাড়া গুনতে হয়।

বাস, টিকেট এসব নিয়ে খুব বেশী ঝামেলা পোহাতে না চাইলে (অনলাইনে বাসের টিকিট বুকিং দিতে) হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে অর্থাৎ নির্ধারিত ভ্রমন সূচি’র বেশ কিছুদিন আগেই ব্রাউজ করুন http://busbd.com.bd

আরেকটা সহজ রাস্তা আছে বাস, লঞ্চ কিংবা হোটেল বুকিং দিতে ব্রাউজ করতে পারেন https://www.shohoz.com

রেলপথে ঢাকা টু চট্টগ্রাম এসি সিট- ৭৩০ টাকা, নন-এসি সুলভ- ১৬০ টাকা, শোভন- ২৬৫ টাকা, শো. চেয়ার- ৩২০ টাকা, ১ম সিট- ৪২৫ টাকা, ১ম বার্থ- ৬৩৫ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য আপনাকে বহদ্দারহাট টার্মিনালে আসতে হবে।এখান থেকে পূরবী, পূর্বাণী সহ আরও কয়েকটি বাস আধা-ঘণ্টা পর পর বান্দরবানের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া পরে জনপ্রতি ৮০-৯০ টাকা করে।

আবাসন

বান্দরবান বাস স্টপের পাশে ‘হোটেল থ্রী স্টার’ রয়েছে। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-৩৫০০ টাকা, এসি-৫০০০ টাকা।

তাছাড়া চিম্বুক রোডে ‘হোটেল গ্রীনল্যান্ডের’ কিছু আবাসন প্যাকেজ হল -
সুপার ডিলাক্স (এসি, ডাবল বেড ও সিঙ্গেল বেড সহ)- ২৫০০ টাকা
ডিলাক্স (এসি, স্ট্যান্ডার্ড ডাবল বেড ও সিঙ্গেল বেড সহ)- ২০০০ টাকা
৩ টি সিঙ্গেল বেড (এসি)- ২০০০ টাকা
নন-এসি, ডাবল ও সিঙ্গেল বেড- ১২০০ টাকা
যৌথ রুম- প্রতি বেড- ২০০ টাকা।

‘হোটেল থ্রী স্টার’ এবং ‘হোটেল গ্রীনল্যান্ড’ উভয় জায়গায় রুম বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন একই নম্বরে +৮৮০১৮৫৬৬৯৯৯১০ কিংবা +৮৮০১৮৫৬৬৯৯৯১১। এছাড়াও ‘হোটেল পূরবী’ বা ‘ভেনাস রিসোর্ট’-এর বিভিন্ন প্যাকেজ ও আবাসন ব্যাবস্থা সম্পর্কেও জানতে পারেন উপরের দু’টি নাম্বারে যোগাযোগ করে।


- মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন
https://www.facebook.com/EsoNotun
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×