somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায়, ডাচ ফুটবলের রাজপুত্তুর

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তিনি ছিলেন ডাচ ফুটবলের অবিসংবাদিত রাজপুত্র । মাঠে তাঁর অবিশ্বাস্য সব কারিকুরিতে রীতিমতো ‘হা’ করে দিতে পারতেন ফুটবল পিয়াসীদের । ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ‘টোটাল ফুটবল’ নামক অনবদ্য এক কৌশলে মুগ্ধ-বিমোহিত করে গেছেন ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ কে ।

কোচ রাইনাস মিশেলের মস্তিস্ক-প্রসূত টোটাল ফুটবলকে মাঠে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি । এবং বিশ্ব ফুটবল দেখল অসাধারণ এক কূশলী ফুটবল । সবাই একসাথে আক্রমণে, একই সাথে মধ্যমাঠে, এবং একই সাথে রক্ষণে । যেন সবে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ ।
পশ্চিম জার্মানীর কাছে ’৭৪ এর ফাইনালে হেরে সোনালী ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি নেদারল্যান্ডের এই রাজপুত্রের । পারেননি, ’৭৮ এ-ও । আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে, মারিও ক্যাম্পাসের কাছে হেরে সেবারও হলো না । বিশ্ব ফুটবলও যেন হতাশায় কাতরে মরলো তাঁর না-পাওয়ার দুঃখে । বিশ্বকাপটারও যে বড় আশা ছিল, একদিন ডাচ-রাজপুত্রের স্পর্শে ধন্য হবে !

বিশ্বকাপ না-পাওয়ার দুঃখ নিয়েই বিদায় বলে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে । তবে ক্লাব ফুটবলে জিতেছিলেন একের পর এক ট্রফি । আয়াক্সের হয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজত্ব-ই করেছিলেন, এই রাজপুত্র । টানা তিনবার হয়েছিলেন ইউরোপ-সেরা, আর ডাচ-লিগ তো নিজেদের সম্পত্তিই যেন বানিয়ে ফেলেছিলেন । সৌন্দর্য্যের পূজারী ছিলেন বলেই হয়তো আয়ক্সের পর শত প্রলোভনের থোড়াই কেয়ার করে পাড়ি দিয়েছিলেন বার্সালোনায় । সেখানেও উড়িয়েছেন তাঁর জয়ের কেতন । সুন্দর ফুটবলে মোহিত ও ধন্য করেছেন স্প্যানিশ ও বিশ্ব ফুটবলকে ।

বার্সালোনায় পরে কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন, জানান দিয়েছিলেন তাঁর কোচিং প্রতিভারও । বিধ্বস্ত বার্সালোনায় ফিরিয়ে এনেছিলেন স্প্যানিশ-সিংহাসন । গড়ে তুলেছিলেন গার্ডিওলাদের নিয়ে ‘ড্রীম টিম’ । সাথে বার্সালোনার ক্লাব কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন ফুটবল গড়ে তোলার এক রুপরেখা । তাঁর থিউরী মেনেই ‘লা মাসিয়া’ তৈরী হয়েছে । সেখান থেকে উঠে এসেছে, একের পর এক দুর্দান্ত সব ফুটবলার । স্পেন পেয়েছে ‘টিকি টাকা’ নামক এক ফুটবল সৌন্দর্য্য ! জাভি, ইনিয়েস্তা, ফ্যাব্রিগাস, মেসি... অনবদ্য সব ফুটলারের কারখানা-ই যেন ‘লা মাসিয়া’ । যার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন আমাদের আজকের এই রাজপুত্তুরই ।

ক্যান্সার ধরা পড়েছিল তাঁর ফুসফুসে । বলেছিলেন ক্যান্সারকে তিনি ২-০ গোলে হারিয়ে দিবেন । পারলেন না হারাতে, উলটো নিজেই হেরে গেলেন । শরীরের সব জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সেই ক্যান্সার এবং তাকে নিয়ে গেছে ওপারের অচেনা জগতে ।

চিরন্তন ফুটবল-সৌন্দর্য্যের পূজারী তিনি, আপোষ করেন নি কখনো অসুন্দরের সাথে । তিনি দেখতে যেমন রাজপুত্র ছিলেন, মাঠেও ছিলেন তেমনি । তাঁর এক ড্রিবলিংয়ে ডিফেন্ডাররা এতটাই বোকা বনে যেতেন যে, সেটার নাম-ই হয়ে গিয়েছিল ‘ক্রুইফস টার্ন’ । তিনবার ব্যালন ডি অর কিংবা তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ অথবা ১০ বার ঘরোয়া লিগ জেতা, সবকিছুর চেয়েও যিনি ফুটবলের সৌন্দর্য্যকেই হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন, অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন । তাই হয়তো অকপটে বলতে পেরেছিলেন ‘ফুটবল খেলাটা সহজ কিন্তু সহজ ফুটবল খেলাটাই কঠিন’ ।

হেনড্রিক ইয়োহানেস ক্রুইফ (২৫এপ্রিল ১৯৪৭-২৪ মার্চ ২০১৬) যাকে সবাই চেনে ইয়োহান ক্রুইফ নামে । দৈহিক কোন আকৃতিতে হয়তো আর আমাদের মাঝে নেই । তবে তিনি থাকবেন, তাঁর ফুটবলে, তাঁর সুন্দর ফুটবলের চেতনায়, তাঁর দর্শনে, তাঁর অনবদ্য সব সৃষ্টিতে, তাঁর টোটাল ফুটবল এ ।

‪শান্তিতে থাকুন ক্রুইফ‬
‪RIP Johan Cruyff‬
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×