somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই সব সোনার মানুষেরা : ০১

৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসুন আজ একটা জিনিস ভেবে দেখি । আরবের লোকগুলো প্রকৃতিগত কারণেই রুক্ষ-খটখটে, মায়া-দয়াহীন ছিল । সেই তাঁরা হঠাৎ অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্য এত দরদ অনুভব শুরু করেছিল কেন ? অসভ্য, বর্বর জাতিটা হঠাৎ এত সভ্যতা-ভব্যতা কোন জাদুবলে শিখে নিয়েছিল ? বলতে পারেন ?
প্রাক-ইসলাম যুগে, হযরত উমর (রাঃ) ও আবু জেহেলের মধ্যে কোন পার্থক্যই ছিল না । অথচ কি আশ্চর্য্য দেখুন, ইসলাম গ্রহনের পর একজন সোনার মানুষ হয়ে গেলেন আর অন্যজন সেই অসভ্য-বর্বরই রয়ে গেলেন । কিন্তু কেন ?

একবার কি হলো, পারস্যের মহা শক্তিধর সম্রাট খসরুর কাছে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একজন দূত পাঠালেন । সাথে একটা পত্র । সেই দূত যখন, সম্রাটকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন । তা সম্রাটের ‘ইগো’ তে লাগল । বুঝতেই পারছেন, অতবড় সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতির দেমাগ, ভাব-সাব ঠাঁট-বাঁট তো অন্য লেভেলের হবেই । তিনি বলে উঠলেন, ‘তোমাদের এত্ত বড় স্পর্ধা ! তোমরা সম্রাট খসরুর দরবারে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে এসেছো ? তোমরা তো অত্যন্ত নীচু, মূর্খ, নির্বোধ প্রজাতির লোক ।’
আল্লাহর রাসূলের দূত কি এই কথায় রেগে গেলেন ? মোটেই না । বরং সহাস্য বলে উঠেন, ‘হ্যাঁ, আমরা অত্যন্ত নীচ ছিলাম, নির্বোধ-অজ্ঞ ছিলাম । অতঃপর আমাদের মাঝে একজন মহামানব, একজন মহানবী এলেন । তিনি আমাদের সত্যের সন্ধান দিলেন । আমরা উন্নত হয়ে উঠলাম ।’
লক্ষ্য করেন, কি বিনয় ! অকপটে সত্যকে কিভাবেই না মেনে নিলেন ! অন্ধকার অতীত কে অস্বীকারের কোন চেষ্টাই নেই, আবার উন্নত চিত্তের কি নিঃসংকোচ প্রকাশ ! ভাবা যায় !

পরশ পাথরের স্পর্শে যেমন সব সোনা হয়ে যেত । ঠিক তেমনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যেন ছিলেন ‘পরশ মানব’ । যার স্পর্শে অসভ্য, বর্বর, নীচ, বদ, পাষন্ড, অমানুষ, যুদ্ধবাজ, জুয়াড়ী, ফূর্তিবাজ, নারীবাজ, মাতাল, ভোগী... সব মানুষেরা হয়ে উঠলেন এক-একজন সোনার মানুষ । দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম মানুষ ।
তাই খলিফা আবু বকর (রাঃ) দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিতে পারেন, “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সাঃ) হুকুমের সকল অবাধ্য লোককে অবনত করতে, আমি একা হলেও যুদ্ধ করে যাব ।” আহা, কি আনুগত্য !
সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হযরত উমর (রাঃ) খলীফা অবস্থায়, একজন রাজা আর ভৃত্যের মধ্যে বিচার করতে গিয়ে অনায়াসে বলে উঠেন, ‘তোমরা দু’জনেই মুসলমান এবং আল্লাহর চোখে দুজনেই সমান ।’ অর্ধ-বিশ্বের শাসনভার যার হাতে তিনি ছেলেকে একটা কাপড় কিনে দিতে পারেন না । বরং ছেলেকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর সময় বলে উঠেন, ‘যাও বাবা, যা আছে তা পরেই বিদ্যালয়ে যাও । আমাদের তো আর অনেক টাকা-পয়সা নাই । আমি খলীফা হলেও ধন-সম্পদ তো সব জনসাধারণের !’ আহা, রাষ্ট্রনায়ক ! আহা, শাসক !

এই জন্যেই বুঝি, সেই ইন্টারনেট-মোবাইল, স্যাটেলাইট বিহীন যুগেও মরুর আরব থেকে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ জুড়ে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে । এইসব সোনার মানুষরা ছিলেন বলেই হয়তো, অর্ধ-বিশ্ব অধীনস্ত হতে তেমন সময়-ই লাগেনি ।
আহা, কি সব সোনার মানুষ ছিলেন তাঁরা ! যুদ্ধের ময়দানে ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়েও পানির পেয়ালা এগিয়ে দেন, আরেক ভাইয়ের দিকে । অবলীলায় মেনে নেন, সেনাপ্রধান থেকে সিপাহীর কাতারে নিজের অবনমন । রাজপ্রাসাদের জাঁকজমক, সুন্দরী ললনা, হাজার হাজার দিনার নিমিষেই পায়ে ঠেলেন । রাতের আঁধারে আল্লাহর ভয়ে যেন চোখে বসিয়ে দেন অবিরাম ঝর্ণাধারা !
আহা, কি সব মানুষ ! যেন সোনায় মোড়ানো এক-একটি চরিত্র, এক-একজনের জীবন !

উম্মাহর নক্ষত্ররাজি
Know Your Heroes
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×