somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আংকারা টু ইস্পারটা – এ জার্নি বাই বাস (পর্ব – ২ )

২১ শে মে, ২০১৮ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম অংশ আংকারা টু ইস্পারটা – এ জার্নি বাই বাস

কিছুক্ষন আগেই আফিয়নকারাহিসার বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছেছে, আমাদের বাস।
প্রায় ৩০ মিনিটের এক যাত্রা বিরতিতে অন্য সবার মতই আমিও নেমে পড়েছি, বাস থেকে।
নেমেই কিচুক্ষন উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক হেটে, পরে সোজা টার্মিনাল বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে পরলাম।

ভিতরে বেশ কয়েকটা মিস্টির দোকান। থরে থরে মিষ্টি সাজানো, নানা কিছিমের, নানা পদের - যেমনি তাদের বাহারী রঙ আর তেমনি হরেক রকম সাইজ আর আকৃতি। সারা দুনিয়া যাকে চিনে টার্কিশ ডিলাইট নামে। কিছু রাখা আছে সাধারন মানের প্যাকেটে আর কিছু অতীব সুন্দরভাবে প্যাকেট করা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এগুলো উপহার হিসেবেই যাত্রীরা কিনে নিয়ে যায়।

মিষ্টিগুলো দেখে কেনার লোভ হচ্ছিল।
তবে বেশ দাম দিয়েই অনেকগুলো চকলেট আংকারাতে ইতিমধ্যেই কিনে ফেলেছি বলে, কেনার প্রচন্ড ইচ্ছে হওয়া সত্বেও এগিয়ে আসা সেলস গার্লের কৌতুহল মিশ্রিত হাল্কা হাসি উপেক্ষা করতে সক্ষম হলাম। তার হাসির প্রত্যুত্তরে আমিও হালকা হেসে, আরো কিছুক্ষণ মিস্টিগুলো দেখে হাটতে হাটতে যাত্রীদের অপেক্ষার জায়গায় চলে এলাম।

কোনায় একটা চেয়ারে বসে মানুষের ব্যস্ততা দেখছিলাম।
আমার সামনে কাচের অপরপাশে একটা ক্যাফে, সেখানে প্রচুর ভীড়। বেশিরভাগ লোকই চা খাচ্ছে, ছোট টার্কিশ বারদাকে (চায়ের কাপের স্থানীয় নাম) রঙ চা; সামনে চিনির কিউব দেয়া আছে, যার যে কয়টা প্রয়োজন মিশিয়ে নিচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরেই, কি মনে করে উঠে গেলাম, টার্কিশ ডিলাইট কেনার জন্যে।
আসলে আমি নিজে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারছিলাম না।
বিপত্তি বাঁধল দাম দিতে গিয়ে। আমি কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখি কোন এক অজ্ঞাত কারণে দোকানের মেশিন আমার কার্ড একসেপ্ট করছে না। পকেটে দাম দেয়ার মত লিরা নেই, আর দোকানের মেয়েটি ডলার নিবে না। এমন প্রবলেমে এর আগে একবার পড়েছিলাম আংকারায়, তখন ফিক্রির মোবাইল থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকের নাম্বারে ফোন করলে কিছুক্ষন পরেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত এখন ফোন করার উপায় নেয়, কারণ আমার কাছে মোবাইলের সিম নেই আর সাথে ফিক্রিও নেই।

আরো কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন কার্ড দিয়ে কাজ হল না, যতটা না অসহায় ফিল করছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি লজ্জা পেলাম। চোখ-মুখ কালো করে অসহায়ের মত দোকান থেকে চলে আসার সময় খেয়াল করলাম সেই স্কার্ফ পড়া তরুণী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে।
তার সাথে মধ্য বয়সী এক লোক। মেয়েটি ঐ লোকটিকে কি যেন বলল – আমার দিকে তাকিয়ে। মনে হলো, পুরো ঘটনাটা দেখেছে তারা দুজনেই। এরপর, এগিয়ে এসে মিষ্টির প্যাকেটটা কিনে আমাকে নেয়ার জন্যে অনুরোধ করল লোকটি। আমি রাজী হচ্ছিলাম না দেখে, এবার তরুণী নিজেই এগিয়ে এসে আবার অনুরোধ করল। কিছুটা ইতস্তত করে হলেও, নিয়ে নিলাম।
কারণ, তুর্কীদের অতিথিপরায়নতা এবং পরোপকারী গুণাবলির সাথে এর আগেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তাদের সাথে পরিচিত হলাম।
মেয়েটির নাম সিবেল, আর লোকটি তার বাবা, নাম মুস্তফা।
বেশী কিছু বলার আগে মেয়েটিই এবার বলল,
- তোমার বাস ছাড়তে আরো কিছুক্ষণ সময় লাগবে। আমরা চা খেতে বসছি, তুমি চাইলে আসতে পার।

যারা একটু আগেই আমাকে স্বেচ্ছায় নিজেদের টাকায় মিষ্টি কিনে দিয়েছে, তাদের কথা তো আর ফেলা যায় না।
সর্বোপরি, সিবেলের কিছুটা হলেও সান্নিধ্যের আকাঙ্ক্ষায় পুলকিত হলাম। এ যেন, মেঘ না চাইতেই বৃস্টি !
তাদের সাথে ক্যাফের একটা টেবিল দখল করলাম।
চা খেতে খেতেই জানতে পারলাম যে, সিবেল আংকারাতে পড়াশোনা করে।
ছুটিতে বাবা-মার সাথে সময় কাটাতে এসেছে।
তার বাবা এখন অবসর জীবন যাপন করছে এই শহরে, রাজধানী হতে আগত মেয়েকে বাসস্ট্যান্ড থেকে নেয়ার জন্যে এসেছে এখানে। বাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতে আরো প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো লাগবে। তাই, বাড়ির পথে রওয়ানা হওয়ার আগে মেয়েটি একটু বিরতি নিয়ে নিল। আর, এই ফাকে বাবা-মেয়ে একত্রে চায়ের কাপের উপর দিয়ে কিছুটা কোয়ালিটি টাইমও পার করছে।

আমি সংক্ষেপে আমার কথা বললাম, শুধু যাত্রার প্রথম দিকের টয়লেটের ঘটনাটা একটু বিস্তারিত বললাম, ইচ্ছে করেই।
আমার ব্যাখ্যা শুনে দুজনেই সশব্দে হেঁসে ফেলল। আমি খুব কাছে বসে সিবেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।
শুধু আকর্ষণীয়, তাই নয় বরং অনেক নিষ্পাপ, নির্ভার এবং প্রাণবন্ত সেই হাঁসি।
তাদের দুজনের হাঁসিমাখা মুখ দেখে আমার খুব ভালো লাগলো – ‘দুজন সুখী মানুষের মুখচ্ছবি’ শিরোনামে বাধাই করে রাখার মত।

একই টেবিলে বসে চা খেতে খেতেই আমি জেনে গেছি যে, সিবেলের যাত্রা পথের এখানেই সমাপ্তি।
বাস থেকে নামার সময় অন্য যাত্রীদের সাথে সেও নেমেছিল। কিন্তু যাত্রা শেষ করে সে একেবারে নেমে যাচ্ছে, তখন বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম, আমার মতই হয়ত হাটতে নামছে।

এখন তার হাঁসি দেখে উপলব্ধি করলাম, এই সহযাত্রীকে হারিয়ে ফেলেছি, ইতোমধ্যেই।
তবে নিঃসন্দেহে, বন্ধ টিভি স্ক্রিন এর উপর দেখা এক প্রতিচ্ছবির চেয়ে, চোখের সামনের স্কার্ফে মোড়ানো একটি আকর্ষণীয় মুখের প্রাণবন্ত আর নিষ্পাপ হাঁসির সুবাস হারাতে হয়ত সময় লাগবে, যে কারোরই।

প্রকৃতপক্ষে, স্বদেশ থেকে অনেক দূরে এক বিদেশি তরুণী আর তার বাবার সাথের এই ক্ষণিকের সংস্পর্শ আমাকে মানব জীবনের কিছু মহামূল্যবান শিক্ষা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিল। আপাতদৃষ্টিতে অদৃশ্য হলেও মানবিক গুনাবলির উপস্থিতি মানুষের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, আন্তরিকতা যেমন দৃঢ় সম্পর্কের চাবিকাঠি, ঠিক তেমনি ভুমিকা হৃদয়ের পবিত্রতা আর বাহ্যিক সৌন্দর্যের। সর্বোপরি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা মানব সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ। বাসের আকর্ষণীয়া এক তরুণীর নির্বিকার মুখচ্ছবি হতে টার্মিনালের হাঁসি মুখের সিবেলের এই রূপান্তরের মাঝেই পাঠ গুলো ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হয়েছে।

শেষ পর্ব : আংকারা টু ইস্পারটা – এ জার্নি বাই বাস (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×