somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্রগ্রামে সেনাবাহিনী ও বাঙালী কেন এলো ?

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ রাঙ্গামাটির ভূমিধ্বসের পরে এক পাহাড়ি পরিবারকে ধসে যাওয়া রাস্তা হতে সাহায্য করছে সেনা সদস্যরা। ২০ জুন ২০১৭ তারিখের ঢাকা ট্রিবিউন হতে সংগৃহীত।

পার্বত্য চট্রগ্রামের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, কিছু কিছু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি শুধুমাত্র পাহাড়িদের বঞ্চনা এবং অত্যাচারিত হওয়ার নির্বাচিত অংশ বিশেষের উপর আলোকপাত করেন এবং কোন এক অজানা কারণে পুর্ণাঙ্গ সত্য এড়িয়ে যান। এতে হয়তো, পাহাড়িদের প্রতি সহানুভূতি আদায় করা সহজ হয়; কিন্তু প্রকৃত সত্য আড়ালের দায় এড়ানো যায় না। পাহাড়িদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বা অন্য বিশেষ কোন কারণে কেউ কেউ এমন করতে গিয়ে হয়ত ভুলে যান যে, কিছু লোকের জন্যে সহানুভূতি আদায়ের এই পদ্ধতি অন্য অনেক লোকের প্রতিও এক ধরনের বঞ্চনার সৃষ্টি করছে। সর্বোপরি, সত্য গোপনের দায়ভারও কিন্তু তার উপর বর্তায়।

কোন সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের অন্য যে কোন অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য চট্রগ্রামে অস্বাভাবিক বেশী সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তেমনি এটাও সত্যি যে, আশির দশকে দেশের অন্যান্য স্থান থেকে বাঙ্গালীদেরকে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

ছবিঃ পার্বত্য চট্রগ্রামের এক গুচ্ছগ্রামে নিজ ঘরের ভিতরে গবাদি পশুর সাথে সন্তানসহ ঘুমোচ্ছে এক বাঙ্গালী মাতা। পার্বত্য নিউজ হতে সংগৃহীত।

নতুন প্রজন্মের পাহাড়ীরদের কাছে বা পাহাড়ের ব্যাপারে যারা তেমন বেশী খোঁজ খবর রাখার সুযোগ পান না, তাদের কাছে এই দুই বাস্তবতার আলোকে মনে হতেই পারে যে, পাহাড়িদের দুর্দশার জন্যে বাংলাদেশ সরকারই দায়ী। কারণ, সেনা মোতায়েন আর বাঙ্গালী পুনর্বাসন সরকারের গৃহীত নীতিমালার বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

পার্বত্য চট্রগ্রামের ব্যাপারে যথাযথ ধারনা লাভের জন্যে এই দু’টি বাস্তবতার আংশিক নয় বরং সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এবং এর সাথে জড়িত তৎকালীন পাহাড়ি নেতাদের ভূমিকা খাটো করে দেখার অবকাশ রয়েছে বলে মনে হয় না।

প্রকৃতপক্ষে, পাহাড়ি নেতাদের ভুমিকাই অনেকাংশে এই বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে । দেশের বৃহৎ স্বার্থের পরিবর্তে কিছু লোকের ক্ষুদ্র স্বার্থ বড় করে দেখতে গিয়ে, এই নেতারা তাদের স্বগোত্রের সাধারণ মানুষের জন্যে বয়ে এনেছেন দুর্ভোগ। যদিও, অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে, তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে খারাপ কিছু ছিল না, কিন্তু তাদের অদূরদর্শীতা সমগ্র জাতির জন্যে বঞ্চনা আর দুর্দশা নিশ্চিত করেছে।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় পাহাড়ের কোন নেতাই পার্বত্য চট্রগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ছিলেন না। বরং অনেক নেতাই যারপরনাই চেষ্টা করেছিলেন ভারতে অন্তর্ভুক্তির জন্যে। এমনকি পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্রিটিশ সিদ্ধান্তের পরেও, তৎকালীন জনসমিতির সাধারণ সম্পাদক স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে প্রকাশ্যে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় পাহাড়ী পুলিশদেরকে সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্যে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি “গ্রামস্থ বহু পাহাড়ীকেও বন্দুক প্রভৃতি আগ্নেয়াস্ত্র লইয়া উপস্থিত হইতে নির্দেশ প্রদান” করেন। অবশ্য সশস্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা জানতে পেরে গভর্নর জেনারেল বলেছিলেন, “হিন্দুস্তান ভুক্তির চেষ্টা পরিহার করুন, অন্যথা শুধু শক্তির অপব্যয় করা হইবে এমন নহে, ইহাতে তোমরা বিশেষ কষ্টে পতিত হইবে” (দেওয়ান, ১৯৭০)।

পরবর্তীতে, পাহাড়ী নেতৃবৃন্দের সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যর্থ করে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট ২১ আগস্ট ভারতের পতাকা নামিয়ে ফেলে। “এরপর পাকিস্তান সরকার ঢালাওভাবে উপজাতীয়দের প্রো-ইন্ডিয়ান বা ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে। এবং সেই থেকে শুরু হয় তাদের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ প্রদর্শনের পালা।” (খীসা, ১৯৯৬, p. 34)। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট ছিল যে, “পাকিস্তানের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিষয়ে সব সময় সন্দেহ করা হত” (চাকমা, ১৯৯৩, p. 7)।

এদিকে, পতাকা নামালেও পাহাড়ি নেতারা দমে যাননি, অপরপক্ষে ভারতীয় নেতারাও তাদের দেশবিভাগপূর্ব সেন্টিমেন্ট বজায় রাখেন। যার প্রকাশ ঘটে দেশ বিভাগের প্রায় দুই বছর পরে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরদার প্যাটেল পূর্ব পাকিস্তানী সংখ্যালঘূদের খুশী করার জন্যে যখন বলেন যে, “শুধুমাত্র একটা দাগের অন্যপাশে আছে বলেই যারা আমাদের রক্ত এবং মাংস, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকে লড়াই করেছে, হঠাৎ করে তারা আমাদের কাছে বিদেশী হতে পারে না।” (চৌধুরী, ২০০৬, p. 40)।

তাই পাহাড়ি নেতাদের সাথে ভারতীয় নেতাদের যোগাযোগের বিষয়টি বুঝতে পেরে, পাকিস্তান সরকার স্বাভাবিকভাবেই তা বন্ধ করার চেষ্টা করেন। পাকিস্তান সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে বাঙ্গালীদের প্রবেশের জন্যে খুলে দেয়া অন্যতম। যার ধারাবাহিকতায়, ১৯৬২ সালের সংবিধানে পার্বত্য চট্রগ্রামকে ‘এক্সক্লুডেড এলাকা’ হতে ‘ট্রাইবাল এলাকা’র মর্যাদা দেয়া হয়। এমনকি ১৯৬৪ সালে, ‘ট্রাইবাল এলাকা’র বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে এই অঞ্চলে বাইরের অধিবাসীদের প্রবেশ, বসবাস এবং জমি অধিগ্রহণ এর উপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

অপরপক্ষে, ১৯৬০ হতে ১৯৭০ সালে, এই অঞ্চল হতে বেশীরভাগ পাহাড়ী সরকারী কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করে দিয়ে শুধুমাত্র প্রধানত বাঙ্গালিদেরকেই এখানে সরকারী প্রশাসনের দায়িত্বে রাখা হয়। একই সময়, সোভিয়েত ব্লক ও ভারতের বিপক্ষে আমেরিকাকে সমর্থনের অংশ হিসেবে পাকিস্তান পার্বত্য অঞ্চলে ভারতের নাগা ন্যাশনাল আর্মি এবং মিজো গেরিলাদের সাহায্য করে।

এরই পাশাপাশি, এই এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে ‘ট্যাক্স ফ্রি জোন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। একই লক্ষ্যে, ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা ও এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৯৫৭ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

ছবিঃ ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময়কালের স্বাধীন দেশীয় রাজ্য সমূহ, যার প্রায় সবই পরবর্তীতে স্বাধীনতা হারায়। গুগল হতে সংগৃহীত।

এই সমস্ত কিছু করা হয় প্রধানত পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পরে জম্মু ও কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, গোয়া, সিকিম, জুনাগর ইত্যাদির ভাগ্যের দিকে তাকালে পাকিস্তানের এহেন ভারতভীতি থাকা মোটেও অস্বাভাবিক মনে হয় না।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটা ক্ষুদ্র অংশ যখন বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছিল, তখন তাদের একটা বড় অংশ পাকিস্তানী বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তা করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। “উপজাতীয় যুবকদের কিছু সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও অধিকাংশই পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক গঠিত ‘সিভিল আর্মড ফোর্স’ বা ‘সিএএফ’ (রাজাকার বাহিনী হিসেবে পরিচিত) এ যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় অংশ নেয়।” (ইব্রাহিম, ২০১১, p. ৭৭)

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য অঞ্চলে তিনজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন; এরা হলেন, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এম এন লারমা কোন পক্ষাবলম্বন করেননি। কিন্তু অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। অপরদিকে, তৎকালীন তিন সার্কেল চীফ বা প্রথাগত রাজাদের মধ্যে একমাত্র মং সার্কেলের রাজা মংপ্রু সাইন তাঁর সবকিছু বিলিয়ে দিয়েই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখেন। বোমাং রাজা এবং চাকমা রাজা দুজনই পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন।

বস্তুত, তৎকালীন রাজাকার বাহিনীতে তুলনামুলকভাবে চাকমাদের সংখ্যাই ছিল বেশী। এর মূল কারণ, চাকমাদের রাজার পাকিস্তানপন্থী সক্রিয় ভুমিকা। তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সার্কেলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যে প্রচারনার পাশাপাশি গ্রামের হেডম্যান ও কারবারীদের নির্দেশ প্রদান করেন লোকদেরকে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করানোর জন্যে। অবশ্য বেতন ও অস্ত্রের লোভেও অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। পাহাড়ি যুবকেরা বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পাকিস্তানী ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র চালনা, ওয়্যারলেস সেট চালনা ইত্যাদির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পাহাড়ি রাজাকারের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুল পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, পার্বত্য চট্রগ্রামে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ২৯ জানুয়ারিতে রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগ নেতা চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যখন উপজাতিদের জন্যে পৃথক সাংবিধানিক রক্ষাকবচের দাবী জানান, তখন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশ্বাস দিয়েছিলেন যে,

- সরকারী চাকরীতে উপজাতীয়দের ন্যায্য অংশ প্রধান করা হবে।
- উপজাতীয়দের ঐতিহ্য ও কৃস্টি পুরোপুরিভাবে সংরক্ষন করা হবে।
- উপজাতীয়রা তাদের ভূমির অধিকার পূর্বের মতই ভোগ করতে থাকবেন।

এর কিছুদিন পরেই, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মং প্রু সাইন এর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল চার দফা দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। অন্যান্যদের মধ্যে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, এম এন লারমা এবং ত্রিদিব রায়ের মাতা বিনীতা রায়। ‘বাংলাদেশের ভাবি সংবিধানে উপজাতীয়দের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষনের জন্যে’ এই প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করে, যে স্মারকলিপির শেষান্তে উল্লেখ করা হয়ঃ

১। পার্বত্য অঞ্চল একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে এবং এর নিজস্ব আইন পরিষদ থাকবে।
২। উপজাতীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষনের জন্য ‘১৯০০ সালের পার্বত্য চট্রগ্রাম শাসনবিধি’র ন্যায় অনুরূপ সংবিধি ব্যবস্থা (Sanctuary Provision) শাসনতন্ত্রে থাকবে।
৩। উপজাতীয় রাজাদের দফত্র সংরক্ষণ করা হবে।
৪। পার্বত্য চট্রগ্রামের জনগণের মতামত যাচাই ব্যতিরেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিষয় নিয়ে কোনো শাসনতান্ত্রিক সংশোধন বা পরিবর্তন যেন না হয়, এরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকবে। (খীসা, ১৯৯৬)

নব্য স্বাধীনতালব্ধ একটি দেশে যে কত ধরনের সমস্যা থাকতে পারে, তা জানতে আমাদের বেশী দূর যেতে হবে না। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ের দিকে খেয়াল করলেই বরং বুঝতে সহজ হবে। এই রকম একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সমস্যা-সঙ্কুল দেশের প্রেক্ষাপটে, বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তনের তিন সপ্তাহের মধ্যেই কারা এমন দাবী করেছিল? যাদেরকে পাকিস্তান আমল থেকেই সন্দেহের চোখে দেখা হত এবং যাদের একটা বড় অংশ স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করেছিল। অথচ, বঙ্গবন্ধু নিজস্ব প্রজ্ঞা আর মহানুভবতা দিয়ে কালক্ষেপণ ব্যতিরেকেই তাদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রাসঙ্গিক কারণেই, প্রায় সমসাময়িক আরো কিছু ঘটনা প্রবাহের দিকে দৃস্টি দেয়া অপরিহার্য। সহায়তার জন্যে বিশিষ্ট পার্বত্য গবেষক আতিকুর রহমান রচিত, পার্বত্য তথ্য কোষের (১ম খণ্ডের) কিছু তথ্য প্রনিধাণযোগ্য। উক্ত গবেষকের মতে, পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্রগ্রামে ভারতের মিজো স্বাধীনতাকামীরা আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের পরে এম এন লারমা ও তার সহযোগীরা পাহাড়ী রাজাকার ( সিএএফ) এবং মিজো বাহিনীকে বাংলাদেশ, মায়ানমার ও ভারতের সীমান্তের সংযোগস্থলের কাছাকাছি রাইংক্ষ্যং সীমান্তবর্তী এলাকায় আত্নগোপনে পাঠিয়ে দেয়।

পরবর্তীতে, ভারতীয় বাহিনীর ভয়ে মিজোরা সেখান থেকে সরে গেলেও পাহাড়ি রাজাকাররা রয়ে যায়। যারা লারমা বাহিনী নামে পরিচিতি পায়। এর পর, পাকিস্তানী বাহিনীর পরিত্যক্ত ও লুকিয়ে রাখা অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে ট্রেনিং শুরু হয়, শক্তি বৃদ্ধির জন্যে নতুন নিয়োগও চলতে থাকে। “এই সশস্ত্র লারমা বাহিনী পরিশেষে শান্তিবাহিনী নাম ধারণ করে এবং তার পরিচালক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জন সংহতি সমিতি গঠিত হয়। উভয়ের জন্ম হয় আগে পরে ১৯৭২ সালেই।“ একই গবেষকের তথ্য মতে, স্থানীয় রাজাকার ও সিভিল ফোরসের সংখ্যা ছিল ১৮৩০ জন, তন্মধ্যে ৩০০ জনের মত আত্নসমর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধ শেষে। অবশিষ্ট ১৫০০ জনকে নিয়ে শান্তিবাহিনী গঠন করা হয়। (রহমান, ২০০৭)

এর পরের ইতিহাস হয়ত কেউ কেউ কিছুটা জানেন। শান্তি বাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার উষাতন তালুকদার ওরফে মলয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে গোলাম মোর্তোজা জানিয়েছেন, “শান্তিবাহিনীর জোয়ারের সময় ছিল ১৯৭২-৭৬ পর্যন্ত। এই সময় চোখে সপ্ন আর রোমাঞ্চ নিয়ে অসীম সাহসী পাহাড়ী যুবকেরা যোগ দিয়েছে শান্তিবাহিনীতে। সাধারণ পাহাড়িদের ব্যাপক সমর্থন তো ছিলই। তখন পার্বত্য চট্রগ্রামের জঙ্গলের রমরমা অবস্থা। কঠিন জীবন। ঘুম নেই। ঠিকমতো খাওয়া নেই। কঠোর পরিশ্রম, প্রশিক্ষণ। …… গভীর জংগলের পাহাড়ে পাহাড়ে তখন চলছে শান্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ। (মোর্তোজা, ২০০০, পৃ. 40)

ছবিঃ গোলাম মোর্তোজা রচিত ‘শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন’ বইয়ে শান্তি বাহিনীর শুরুর কথা।

অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ, পাহাড়ে সশস্ত্র পাহাড়িদের আনাগোনা বাড়তে থাকে, শুরু হয় চাঁদাবাজি ও হুমকি। স্বাভাবিকভাবেই, সরকারেরও জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করার বাধ্যবাধকতা চলে আসে।

“১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে শান্তিবাহিনী বিলাইছড়ি আর্মড পুলিশ ক্যাম্প অ খাগড়াছড়ির বেতছড়ি গ্রামে পুলিশের নৌকায় সফল হামলার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র কার্যকলাপের সুচনা করে। (খীসা, ১৯৯৬, পৃ. 103)“। যার পরিণতিতে, বাংলাদেশের সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্বত্য চট্রগ্রামে দেশের অন্য স্থান হতে সেনাবিহিনী আনতে শুরু করে। (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 165) ।

সেনাবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে তাতিন্দ্রলাল চাকমা ওরফে মেজর পেলের উদ্ধৃতি দিয়ে, গোলাম মোর্তোজা তার ‘শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন, “অপরিচিত জঙ্গল আর পাহাড়ি পরিবেশে শান্তিবাহিনীর এম্বুশে পড়ে অসহায়ভাবে নিহত হতে থাকে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। ফলে এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রমণ বাড়াতে থাকে শান্তিবাহিনী। (মোর্তোজা, ২০০০, পৃ. 62)“

সামরিক পন্থার পাশাপাশি তৎকালীন সরকার পার্বত্য সমস্যার সমাধানের বিকল্প অনুসন্ধান করছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এরই ধারাবাহিকতায়, বাঙ্গালী পুনর্বাসন করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বাঙ্গালী পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট সংখিপ্তাকারে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, এই ভাবে, “অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক সমাধান প্রচেস্টা এবং পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সামরিক, আধাসামরিক, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মোতায়েনের পরও শান্তিবাহিনীর তৎপরতা বন্ধ না হওয়ায় সরকার পার্বত্য চট্রগ্রামে পাহাড়ী এবং বাঙ্গালী জনসংখ্যার অনুপাতে ভারসাম্য আনয়নের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মূল শক্তিকে দুর্বল করার চিন্তাভাবনা করেন।" মূলত, এই লক্ষ্যেই ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন দফায় সর্বমোট ৫৫,৫৭১ টি বাঙ্গালী পরিবারকে পার্বত্য চট্রগ্রামে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল, যদিও তন্মধ্যে ২৩,৫১১টি পরিবার ধীরে ধীরে পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে চলে যায়। (ইব্রাহিম, ২০১১, পৃ. 148-149)।

আজ যাদের চোখে পাহাড়ে সেনাবাহিনী চক্ষুশূল, তাদের জন্যে বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য, ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি শান্তি বাহিনী গঠিত হলেও, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকেই । ১৯৭৩ – ১৯৭৪ সালে শান্তিবাহিনীর রিক্রুটিং এর সময় হাজার হাজার উপজাতীয় যুবক শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৭৬ সালে শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে (মোর্তোজা, ২০০০)।

ছবিঃ গোলাম মোর্তোজা রচিত ‘শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন’ বইয়ে শান্তি বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের সুত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৭২ সালেই অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল।

অনন্যোপায় হয়ে, বাংলাদেশের সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্বত্য চট্রগ্রামে দেশের অন্য স্থান হতে সেনাবিহিনী আনতে শুরু করে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে সরকারের কোন বিকল্প ছিল কিনা সেটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। দুনিয়ার কোন দেশে, কোন কালেও ছিল না।

যারা বাঙ্গালীদের কে পাহাড়ের সমস্যার মূল কারণ বলে মনে করেন, তাদের হয়তো জানা নেই যে, সরকারী ভাবে বাঙ্গালীদের পুনর্বাসন শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 148)। স্মরণযোগ্য, শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার তিন বছর পরে। অর্থাৎ, শান্তি বাহিনী যদি সৃস্টি না হত, তাহলে নিশ্চয় পাহাড়ে এতো সেনা মোতায়েনের প্রশ্নই উঠত না। আর, সেনা মোতায়েনের পরেও যখন শান্তি বাহিনী সাফল্য লাভ করছিল শুধুমাত্র স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে শান্তি বাহিনীর আশ্রয় লাভের সুযোগ প্রাপ্তি এবং অন্যান্য সহযোগিতার জন্যে ( যার বহুবিধ কারণ রয়েছে, তন্মধ্যে ভীতি প্রদর্শন একটি মাত্র) - তখন জনসংখ্যায় ভারসাম্য আনতে সরকারকে বাধ্য হয়েই বাঙ্গালী পুনর্বাসনের পথ বেছে নিতে হয়েছে।

সহজ ভাষায়, পাহাড়ে সেনা মোতায়েন এবং পরবর্তীতে বাঙ্গালী পুনর্বাসন করতে তৎকালীন সরকারকে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে যেটা ছিল সময়ের দাবী। অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে পৃথিবীর বহু দেশে অনেক ধরণের নৃশংসতা চালানো হয়েছে, যার ভুরি ভূরি উদাহরণ চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও সরকার দেশের বিচ্ছিন্নতাকামী মানুষদের প্রতিও অমানবিক কিছু ঘটতে দিতে চায়নি। যার প্রতিফলন ঘটেছে, পরবর্তী সরকার সমুহের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী পুনর্বাসনের আরেকটি দিকের কথা বলেছেন, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, পার্বত্যনিউজের সম্পাদক ও পার্বত্য গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ। তিনি বলেছেন, "আদিকাল থেকে সেখানে বাঙালীদের যাতায়াত ও বসবাস ছিল। অত:পর বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নেয়া হয়েছে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটাতেই বাঙালিরা সেখানে বসবাস করতে গিয়েছে। গিয়ে মশা, ম্যালেরিয়া ও সাপের কামড়ে, শান্তিবাহিনীর আক্রমণে অনেকেই জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। পাহাড়কে আবাদ করেছে, মানুষের বাসযোগ্য করেছে, পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করেছে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করেছে।"

লেখক আরো উদ্ঘাটন করেছেন, "জিয়াউর রহমান এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে সেখানে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিপুল উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করেন। কিন্তু পাহাড়িরা এই কাজে অভ্যস্ত বা অভিজ্ঞ ছিল না। ফলে উন্নয়ন কাজ সমাধা করার জন্য বাঙালি প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও শ্রমিক প্রয়োজন হয়। শ্রমিকদের পক্ষে গহীন পাহাড় অরণ্যে কাজ করে দিনে দিনে ফিরে আসা সম্ভব ছিলনা। ফলে নিকটবর্তী স্থানে তাদের বসতি গড়তে হয়। কোনো পাহাড়ি শ্রমিক সরকারের কাজে সহায়তা করতে চাইলেও পারতো না শান্তিবাহিনীর হুমকির মুখে। কারণ পাহাড়িরা সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন বিরোধী ছিল।"

তিনি মন্তব্য করেছেন, " শ্রমিক ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব ছিল না। কাজেই আজকে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্য দেখে দেশি বিদেশি পর্যটকরা মুগ্ধ হন তার পেছনে রয়েছে বাঙালির শ্রম, ঘাম, রক্ত ও আত্মদান। এখানেই শেষ নয়; শিক্ষা, বৃক্ষরোপণ, উন্নত চাষাবাদ ও নাগরিক জীবনের অভিজ্ঞতাও পাহাড়িরা পেয়েছে বাঙালির কাছ থেকেই।" (পার্বত্য নিউজ, ১৫ মে, ২০১৪)।

নিরপেক্ষভাবে যদি দেখার সুযোগ থাকে, তাহলে ভেবে দেখা যেতে পারে, অন্তত একবার হলেও। সেটা এই যে, কোন দেশের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই যদি ঐ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের সহায়তা করে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরেই যদি আবার তারাই তাদের নির্দিষ্ট ভুখন্ডের জন্যে নিজস্ব আইন পরিষদসহ স্বায়ত্তশাসন দাবী করে বসে – তাহলে ঐ জনগোষ্ঠীর প্রতি নব্য স্বাধীন রাস্ট্রের আচরণ কেমন হওয়া উচিত ছিল?

একই সাথে, সেটা ও ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো, এই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী পরবর্তীতে কীভাবে এই দেশের প্রতি তার প্রতিদান দিয়েছিল? এমনকি, এখনো বাংলাদেশের প্রতি এই অঞ্চলের কিছু লোকের মনোভাব কি সেটা বুঝতে হলে নিচের স্ক্রিন শটটি দেখে নিতে পারেন।

ছবিঃ ভারতের কাছে ক্রিকেট ম্যাচে হারার পরে এক পাহাড়ির ফেসবুক স্ট্যাটাস।

সাধারণ পাহাড়ীদের এমন বাংলাদেশ বিদ্বেষী মনোভাবের পিছনে সেনাবাহিনী আর বাঙ্গালীকে দোষারোপ করা যেতেই পারে। কিন্তু, মূল কারণ চিহ্নিত না করলে, অতীতের মত আবারো কোন ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হলে – তার দায়ভার গ্রহনের জন্য সেনাবাহিনী আর বাঙ্গালীকে বলির পাঠা বানানোর সুযোগ থাকবে না।

সেনাবাহিনীর উপস্থিতি আর বাঙ্গালী পুনর্বাসনকে পাহাড়ের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে যারা পাহাড়িদের বঞ্চনা এবং অত্যাচারিত হওয়ার গল্পে কান্না করতে ভালোবাসেন, বাস্তবে তারা পার্বত্য চট্রগ্রামের নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার কারণে সাধারণ জনগণের উপর আরোপিত দুর্দশার পুরো ব্যাপারটিকে আড়ালে রাখতে সচেষ্ট। বর্তমানে চলমান সশস্ত্র দলের কোন্দল, চাঁদাবাজি, হত্যা আর অপহরণের ঘটনা তেমনি ইঙ্গিত বহন করে।

ঐতিহাসিক বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যায় যে, দেশের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে এই নেতারা তাদের সমাজ ও গোত্রের সাধারণ মানুষের জন্যে বয়ে এনেছেন দুর্ভোগ। যদিও তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত খারাপ কিছু ছিল না বলে প্রতীয়মান হতে পারে, কিন্তু তাদের অদূরদর্শীতা সমগ্র জাতির জন্যে বঞ্চনা আর দুর্দশা নিশ্চিত করেছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি এই যে, এখনকার নেতৃবৃন্দগণও কেন জানি তাদের পূর্বপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে বদ্ধ পরিকর – যেখানে আবার আমাদের দেশেরই কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী যোগ দিয়েছেন। তাই এক অজানা আশংকায় বুক কেঁপে উঠে। কারণ, এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি পছন্দ করে।

তথ্যসুত্রঃ
১। মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিম, বীর প্রতিক, (২০১১). পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ- পরিস্থিতির মূল্যায়ন. ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স।
২। প্রদীপ্ত খীসা, (১৯৯৬). পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা. ঢাকা। : সাহিত্য প্রকাশ।
৩। জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, (১৯৯৩). ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য স্থানীয় সরকার পরিষদ. রাঙামাটি: স্থানীয় সরকার পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
৪। চৌধুরী মোঃ নাজমুল হাসান. (২০০৬, অক্টোবর - ডিসেম্বর). The Resistance Movement in the Chittagong Hill Tracts: Global and Regional Connections. এশিয়ান এফেয়ারস, ২৮(৪), ৩৬-৫১।
৫। বিরাজ মোহন দেওয়ান, (২০০৫). চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত. রাঙ্গামাটি: উদয় শঙ্কর দেওয়ান।
৬। শ্রী কামিনী মোহন দেওয়ান, (১৯৭০). পার্বত্য চট্রলের এক দীন সেবকের জীবন কাহিনী . রাঙামাটি : দেওয়ান ব্রাদার্স এন্ড কোং।
৭। গোলাম মোর্তোজা, (২০০০ ). শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন. ঢাকা: সময় প্রকাশন।
৮। মেহেদী হাসান পলাশ, (২০১৪, মে ১৫). পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩. ঢাকা: http://parbattanews.com. প্রকাশ মে ১৫, ২০১৪, Retrieved জুলাই ৪, ২০১৮।
৯। আতিকুর রহমান, (২০০৭). পার্বত্য তথ্য কোষ (Vol. তৃতীয় খণ্ড). সিলেট: পর্বত প্রকাশনী।


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:১১
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×