somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার ডিম পাড়া হাঁস

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সোনার ডিম পাড়া হাঁসের গল্প জানেন না, এমন লোক খুব একটা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তাই, এই অতি কথিত পুরনো গল্প বলে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানোর ঝুঁকি নেয়ার দুঃসাহস দেখাতে চাই না।

আমি সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে মেরে না ফেললে কি হতে পারত, সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি। কিন্তু, এত ভেবেও কোন কূলকিনারা করতে পারিনি যে, কি হতে পারত।

তবে পার্বত্য চট্রগ্রামের অপহরনের ঘটনাবলীর দিকে খেয়াল করলে মনে হয়, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এই যুগেও সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মালিক বনে গেছে । শুধু তাই নয়, হাঁসটির কর্তৃত্ব যাতে হাতছাড়া না হয়, সে ব্যাপারে শুধু সচেতন বললে কম বলা হবে, বরং সর্বদাই সর্ব শক্তি নিয়োগের মাধ্যমে সচেষ্ট। তাই, বিনিময়ে, তাদের সোনার ডিমের অভাব হচ্ছে না। প্রতিটা অপহরণ থেকে যে পরিমাণ টাকা আসে, কে জানে হয়ত সোনার ডিম বিক্রি করেও এত উপার্জন করা যেত না।

যেমন ধরুন, পার্বত্য চট্রগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অপহরনের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। শেল তেল কোম্পানীর বিদেশী কর্মকর্তাদের অপহরণ করে, ১৯৮৪ সালেই শান্তি বাহিনী পেয়েছিলঃ

২২ কেজি সোনা।
প্রায় এক কোটি নগদ অর্থ (ডলার, পাউন্ড আর টাকায়)
১ টি রঙ্গিন টেলিভিশন।
১ টি ব্যাটারি চার্জার।
১ টি অত্যাধুনিক তাবু (সব আবহাওয়ার উপযোগী)।
১ টি ১৬ মিঃমিঃ মুভি ক্যামেরা।
১টি ডুপ্লিকেটিং মেশিন।
আমি অবশ্য জানার চেষ্টা করিনি, ঐ আমলে সোনার কেজি কত করে ছিল !

যদিও এর পরের এমন অসংখ্য ঘটনা আছে, তবে এত বড় সোনার ডিম পার্বত্য চট্রগ্রামে আর কেউ কখনো পায়নি।

যেমন, ২০০১ সালে এক ব্রিটিশ আর দুই ডেনিশ নাগরিক কে অপহরণ করে ৯ কোটি টাকা মুক্তিপন দাবী করেছিল। এই তিনজন অবশ্য তেল অনুসন্ধানে নয় বরং ডেনমার্কের অর্থায়নে নির্মিত এক রাস্তার কাজ দেখতে এসেছিলেন। কত টাকা দেয়া হয়েছিল, সেটা অবশ্য জানা যায়নি, কখনো।

উদাহরণ টেনে, লেবু কচলে তেঁতো বানানোর চেষ্টায় ক্ষান্ত হচ্ছি। কারণ, প্রায় প্রতিদিনই পাহাড়ে অপহরণ হচ্ছে, এর কিছু কিছু সংবাদে হয়ত কারো চোখে পড়ে থাকতে পারে। তাই, সাম্প্রতিক এক উদাহরণে চলে যাচ্ছি।

গত মার্চ মাসে এক মোবাইল ফোন কোম্পানীর চার টেকনিশিয়ানকে অপহরণ করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে, চার কোটি টাকার বিনিময়ে তাদের কে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যদিও, এখানেও টাকার অংক নিশ্চিত করার কোন উপায় নেই।

রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য বা শাস্তি স্বরূপ ধর্ষণ ও হত্যা ইত্যাদির উদ্দেশ্যেও অপহরণ করা হয়ে থাকে। এ যেন অনেকটা সোনার ডিমের সাথে বাড়তি হিসেবে বোনাস প্রাপ্তির মত।

কে নেই এই অপহরনের নাগালের বাইরে? মোসুমী ফল ব্যবসায়ী, ছাত্রী, শিক্ষক, মটর সাইকেল চালক, সাধারণ গ্রামবাসী, সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের কনট্রাক্টর, এন জিও কর্মী, মোবাইল রিচার্জ ব্যাবসায়ী, জন প্রতিনিধি, এমনকি পর্যটকও এই অপহরনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এই সকল অপহরনের পরে, মুক্তিপন ছাড়া তেমন কেউই মুক্তি পাননি – যদিও ভুক্তভোগীদের বেশীরভাগই এ নিয়ে কথা বলতে চান না। আর, অনেক সময়ই সব অপহরনের সংবাদ জাতীয় দৈনিকগুলোতে দেখা যায় না।

অপহরনের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের কথা বলা হলেও, মুলত চাদাবাজির কারণেই অপহরণ করা হয় বলে জানা গেছে। আরো জানা গেছে যে, তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। এই টাকা তারা সংগঠনের নেতা – কর্মীদের ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন ধরণের সমাজসেবা মুলক কাজ, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের ঘুষ, দেশ-বিদেশে বাঙালিবিদ্বেষী প্রচারণা এবং অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে।

এক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পরে পাহাড়ী বাঙ্গালী মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ অপহরণের ঘটনার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পাহাড়িদের সংখ্যাই বেশি আর আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতেই সবচেয়ে বেশি অপহরণ হয়েছে। প্রতিনিয়তই অপহরণ, হত্যা বা ধর্ষণের মতো অপরাধের শিকার হচ্ছে নিরীহ পাহাড়িরা। কিন্তু ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পায় না কখনই। তাই এই সব ঘটনার বেশির ভাগই রয়ে যায় সকলের অজ্ঞাতে। এসব অপহরণের কথা, অপহরণের পর হত্যার কথা মিডিয়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব একটা আলোচিতও হয় না।

গল্পে বর্ণিত কৃষকের হাঁসটি প্রতিদিন একটি করে সোনার ডিম পাড়ত। আর, যে হারে অপহরণ হচ্ছে, যার বেশির ভাগই মুক্তিপনের সাথে সম্পর্কিত; তা দেখে মনে হচ্ছে, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরও যেন ‘অপহরণ’ নামক এক সোনার ডিম পাড়া হাঁস আছে। যে হাঁসও নিয়মিতভাবেই সোনার ডিম উপহার দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকের সাথে পার্থক্য একটাই, অতি লোভে কেউ হাঁসটাকে মেরে ফেলছে না। বরং, একজনের স্থলে এখন চারজনে সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে দেখভাল করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×