somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডোরা অবজারভেটরি (Dora Observatory)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব অন দ্য ওয়ে টু ডিএমজেড (DMZ)

ডোরা পর্বতের চুড়ায় ডোরা অবজারভেটরি অবস্থিত।
দক্ষিন কোরিয়ার যে স্বল্প কয়েকটি স্থান থেকে উত্তর কোরিয়াকে কাছে এবং ভালোভাবে দেখার সুযোগ আছে, এটি তাদের অন্যতম। এখানে অডিটোরিয়ামের বাইরে পাশেই টুরিস্টদের জন্যে আলাদা জায়গা রাখা হয়েছে - DMZ এবং উত্তর কোরিয়া দেখার জন্যে। ব্রিফিং শেষ হতেই আমরা টুরিস্টদের জন্যে নির্ধারিত ভিউ পয়েন্টে চলে এলাম। প্রথমেই কিছু দুর্বোধ্য শব্দ কানে ধাক্কা দিল - কিছুক্ষনের মধ্যেই জেনে গেলাম যে এটা উত্তর কোরিয়ার প্রপাগান্ডা, যা কিনা ২৪/৭ চলতে থাকে।

এখান থেকে সামনের DMZ এর অনেকখানি এলাকা পরিস্কারভাবে দেখা যাচ্ছে।
এমনকি, DMZ পেরিয়ে আরো দূরে উত্তর কোরিয়ার কিছু কিছু স্থাপনা চোখে পড়ছে। টুরিস্টদের সুবিধার্থে কিছু দূরবীনও রাখা আছে। পরে টের পেয়েছি যে এগুলো বেশ ক্ষুধার্ত, কিছুক্ষণ পর পরই কয়েন খেতে চায়।

দূরবীনের সারি। এর চেয়ে কাছে গিয়ে ছবি তোলা নিষেধ। ছবিঃ গুগল @ A Petranoff Abroad

সারিবদ্ধ দুরবীনের পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে একটা যুতসই জায়গায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকালাম।
ছোট-বড় নাম না জানা অনেক গাছপালার মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া, যার পাশ ঘেঁষেই রাস্তা। দেখেই বোঝা যায় যে, বাফার জোনে সৈন্যদের টহল ছাড়া এই রাস্তাগুলোর আর কোন উপযোগিতা নেই। কাঁটাতার ঘেঁষেই কিছুটা দূরত্ব পর পর ছোট এক ধরণের বিল্ডিং। বিল্ডিং এর প্যাটার্ন আর লাগোয়া বিশেষ ধরণের এন্টেনা দেখে বুঝতে বাকী রইল না যে, এগুলো ডিউটি পোস্ট। এই রকম পোষ্টের কিছু গল্প ইতিমধ্যে বাসে বসে গাইডের কাছে শুনেছি।

বলা তো যায় না, আমার মত কোন বেকুব টুরিস্ট যদি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার ছবি তুলে ব্যক্তিগত ব্লগে পোষ্ট করে ফেলে – এই ভয়েই হয়ত বা হলুদ লাইন টেনে ছবি তোলার স্থান নির্দিষ্ট করা আছে। সমস্যা হল, এই দাগের ভিতরে থেকে ছবি তোলার তেমন ওয়াইড এঙ্গেল পাওয়া যায় না। সহজাত প্রবণতায় ছবি তোলার একটা ভালো এঙ্গেল পাওয়ার আশায় শেষ মাথায় গিয়ে দেয়ালের দিকে ঝুঁকে কয়েকটা ছবি তুললাম।

দাগের ভিতরে ফিরতে না ফিরতেই দক্ষিন কোরীয় এক সৈন্য এসে আমার ক্যামেরা নিয়ে নিল।
প্রচন্ড রেগে আছে দেখে কিছু বলার সাহস পেলাম না।
ছবিগুলো ডিলিট করে আবার ক্যামেরা ফেরত দিল। তার রাগের মাত্রা বিবেচনা করে, ক্যামেরা ফেরত পেয়ে যারপরনাই খুশী হলাম। ভেবেছিলাম, এই সাধের ক্যামেরা হয়ত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে।

আমাকে একটু সবক দিয়ে জানালো যে, সে অনেক দিন ধরেই এখানে তার দায়িত্ব পালন করছে।
যখনই কেউ লাইনের বাইরে গিয়ে ছবি তোলে, সে ঠিকই টের পায়। সুতরাং, তাকে বোকা ভাবার কিছু নেই। বরং, তার সাথে চালাকি করা বোকামি। সে চলে যাওয়ার পরে অনেকক্ষণ চিন্তা করেও বের করতে পারিনি, সে কোথায় ছিল?
আশে পাশে সৈন্যবাহিনীর কাউকে না দেখেই তো দাগের বাইরে গিয়ে ছবি তোলার চান্স নিয়েছিলাম !

হালকা কুয়াশা থাকার পরেও DMZ এর প্রায় অপর প্রান্তে উত্তর কোরিয়ার ভিতরে অনেক উঁচুতে তাদের পতাকা উড়তে দেখলাম। পরে জানতে পেরেছিলাম যে, প্রথমে নিজেদের অংশে দক্ষিন কোরিয়া ৯৮ মিটার উঁচু এক পতাকা স্ট্যান্ড তৈরি করেছিল। মুলত এর জবাবে দক্ষিন কোরীয়দেরটা তৈরির পর পরই, অতি দ্রুততার সাথে উত্তর কোরীয়রা ১৬০ মিটার উঁচু পতাকা স্ট্যান্ড তৈরি করে। অবশ্য, বেশ কিছুদিন এটাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পতাকা স্ট্যান্ড।

উত্তর কোরিয়ার পতাকা, যা Dora Observatory থেকে দেখা যায়। ছবিঃ গুগল,@atlasobscura.

উত্তর কোরীয়ার পতাকা যে এলাকায়, তার আসল নাম Kijong-dong এবং উত্তর কোরিয়ায় এটি Peace Village নামে পরিচিত। তবে পশ্চিমা বিশ্বের বদৌলতে এটা Propaganda Village নামেই দুনিয়াব্যাপী পরিচিত। বাস্তবে, এই গ্রামে জনবসতি নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে এক বা দুজন লোক দেখা যায়। তবে এর মূল বৈশিস্ট্য হল, এখান থেকে অবিরত শক্তিশালী স্পিকার দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গান, উদ্ভট শব্দ বা তাদের নেতার স্তুতিমুলক কথাবার্তা, কিংবা ভাষণ প্রচার করা হয়। প্রত্যুত্তরে দক্ষিন কোরিয়া তাদেরকে বেশির ভাগ সময়ই জনপ্রিয় পপ সঙ্গীত বা কখনো কখনো আবহাওয়ার সংবাদ শোনায়। দুই গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রচুর ল্যান্ড মাইন ছড়িয়ে আছে। কৃষকেরা মাঠে কাজ করার সময় প্রায়ই মাইনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়।

আর দক্ষিন কোরিয়ার পতাকাটি Freedom Village এ অবস্থিত। DMZ এর এই প্রান্তে অবস্থিত গ্রামটি টেকনিক্যালি দক্ষিন কোরিয়ার সরকারের এখতিয়ারের বাইরে। তাই এই গ্রামের অধিবাসীরা কোন ধরণের ট্যাক্স দেয় না। ফলশ্রুতিতে, এরা কোরীয় উপদ্বীপের অন্যতম ধনী হিসেবে বিবেচিত। বাড়তি হিসেবে, এখানকার পুরুষদের অন্য দক্ষিন কোরীয়দের মত বাধ্যতামুলক সামরিক সেবা প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই। সব মিলিয়ে, এই এলাকার পুরুষদের বিয়ে করার জন্যেও কিছু মহিলা উদগ্রীব থাকে বলে শুনলাম। অবশ্য গাইড আমাদের সাথে মজা করার জন্যেই শেষের তথ্যটা শেয়ার করেছে কিনা – আমি এখনো সন্দিহান।

DMZ এ মাইন ফিল্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। ছবিঃ গুগল।

বিগত প্রায় ৬৫ বছর ধরে DMZ এর বেশীরভাগ স্থানেই মানুষের চলাচল নেই। প্রচুর ল্যান্ড মাইনের কারনে কৃষক এমনকি সৈন্যরাও অনেক এলাকা এড়িয়ে চলে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই গাছপালা ঘেরা প্রায় ১০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাটি এখন পশুপাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাখি প্রেমীরা ইতোমধ্যেই ডজন খানেক বিলুপ্তপ্রায় পাখি এখানে খুঁজে পেয়েছে। শুরুর ব্রিফিং এ এলাকাটিকে Wildlife paradise হিসেবে পরিচিত করিয়ে বলেছিল যে, এখানে প্রায়শই বড় সাদা সারস, ঈগল এবং পাহাড়ি ছাগল দেখা যায়। আর, কপাল ভালো থাকলে হরিণ বা ভালুকের দেখা মিলতে পারে। আমাদের গাইড অবশ্য বলেছিল যে, এখানে নাকি বাঘও আছে; যদিও কোরিয়ার অন্যান্য অংশে বাঘ ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ডোরা পর্বতের উপর থেকে কাছেই উত্তর কোরিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে কেমন যেন অদ্ভুত এক অনুভূতি টের পাচ্ছিলাম। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে আমরা যত কমই জানি না কেন, সবই ব্যতিক্রমী, অদ্ভুত আর ভয় জাগানিয়া। এত কাছে দাড়িয়েও বিন্দুমাত্র ধারনা করতে পারছি না, কাটাতারের বেড়ার ঐ পাশের মানুষেরা আসলেই কেমন বা বাকী দুনিয়ার ব্যাপারে তারা কি মনে করে! তারা কি জানে যে তাদের প্রতিবেশিদের অনেকেই এখনো পুনঃএকত্রিকরণের আশায় বুক বেঁধে আছে - কোরীয় উপদ্বীপে দুই দেশ থাকবে না, সবাই একত্রে এক দেশের বাসিন্দা হিসেবে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৯
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×