somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল-কোরআনে সৃষ্টি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার তাগিদ

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আল-কোরআনের আলোকে জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হলে মানুষ ধীরে ধীরে অলীক কল্পনা ও মিথ্যার মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসে। সত্যের স্বচ্ছ জ্যোতিতে তার জ্ঞানচক্ষু হয় শাণিত ও উন্মোচিত। সুদূরপ্রসারী চিন্তাশক্তির সহায়তায় প্রচলিত মতবাদগুলোর মধ্য থেকে প্রকৃত সত্যটি সে সহজেই খুঁজে ও বুঝে নিতে পারে। এটি নিছক কোন বিজ্ঞানের বই নয়। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ত্বত্ত্বগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ঐশী ইংগিত দেয়া হয়েছে মাত্র। মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একজন ইমানদার মানুষ যখন গভীর চিন্তা-গবেষণায় রত হয়, তখন পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে জগৎসমূহের স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। জ্ঞানী মানুষেরা যেন আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে সেজন্য বার বার তাগিদ দেয়া হযেছে। তাই তো আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

আল-কোরআন-
সূরা ইউনুস-আয়াত নং-০৫
(১০:০৫) অর্থ:- তিনিই তো সূর্যকে (দিয়া) তেজোদ্দীপ্ত বা জলন্ত প্রদীপের আলো ও চাঁদকে (নূর) আলো (অন্যের আলোয় আলোকিত হওয়ার কারণে যে আলো বা উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়) করে বানিয়েছেন এবং তার জন্য অবস্থানগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যেন তোমরা বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব ঠিকমত জানতে পার; আল্লাহ এসব অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। যারা জানতে চায় তাদেরকে তিনি এই নিদর্শন বা আয়াতগুলোর বিশদ বিবরণ জানিয়ে দেন।
(১০:০৬) অর্থ:- নিঃসন্দেহে দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মাঝে আল্লাহতায়ালা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই সমস্ত আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো তাদের জন্য যারা (আল্লাহকে) ভয় করে।
(১০:১০১) অর্থ:- বল, "আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার প্রতি ল্ক্ষ্য কর।" কিন্তু যারা বিশ্বাস করে না তাদের জন্য এসব আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো ও সতর্ককারীরা কোন কাজেই আসে না।
সূরা রাদ- আয়াত নং-০৩
(১৩:০৩) অর্থ:- তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং তাতে স্থাপন করেছেন পাহাড় ও নদনদী। আর যে সব ফল বানিয়েছেন তাদের দুটিতে মিলে এক জোড়া। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আবৃত করেন। নিঃসন্দেহে এসবের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে।
সূরা আম্বিয়া -আয়াত নং-৩০
(২১ : ৩০) অর্থ:- যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
সূরা আনকাবুত-আয়াত নং-১৯ ও ২০
(২৯ : ১৯) অর্থ:- ওরা কি ল্য করেনা, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পূণরায় সৃষ্টি করেন? নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ।
(২৯ : ২০) অর্থ:- বল, “পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর কিভাবে তিনি সৃষ্টিকে আরম্ভ করেছেন ? অতঃপর আল্লাহ্ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
সূরা জাসিয়া-আয়াত নং-৩
(৪৫ : ০৩) অর্থ- নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।

খাঁটি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি পার্থিব জ্ঞান অর্জন করলে বোধের উন্মেষ ঘটে। অন্তর হয় আলোকিত। এই শাণিত অন্তর্চক্ষুর সহায়তায় ভাল ও মন্দের মধ্য থেকে ভালকে চিনে নেয়া ও গ্রহণ করা সহজ হয়। মহান স্রষ্টা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতিকে শান্তি ও কল্যাণ দানের জন্যই আলোকবর্তিকা স্বরূপ ‘পবিত্র কোরআন’ প্রেরণ করেছেন। এই মহাগ্রন্থে উল্লেখিত তথ্যসমূহের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণে সময় উপযোগী যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ফলপ্রসূ হতে বাধ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা অর্থাৎ মুসলমানদের মধ্যে বেশির ভাগ অংশই আজ এই জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থখানা বুঝে পড়ার পরিবর্তে না বুঝে পড়ার দিকেই ঝুকে পড়েছি। আবার অনেকে খন্ডিতভাবে এর কিছু অংশ বোঝার চেষ্টা করে এবং বাকী অংশটুকু এড়িয়ে যাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রই বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফলে মহান স্রষ্টা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির জন্য যে মহামূল্যবান সংবাদ প্রেরণ করেছেন তা প্রকৃত অর্থে অজানাই থেকে যাচ্ছে। তাই একজন মুসলমানকে সর্বপ্রথমে অবশ্যই ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। আল-কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার প্রতিটি বিষয়ের উপর স্বচ্ছ-ধারণা নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপনের জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে। একজন মুসলমানের প্রতিটি পদক্ষেপই যে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত তা প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ রাখতে হবে। এরপর যদি কেউ মনমত কোন বিষয়কে বেছে নিয়ে সেটার উপর গবেষণা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে চান তবে সেই বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আল-কোরআনের তথ্যগুলোকে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিয়েই তাকে সামনে এগোতে হবে। তাহলেই কেবল সঠিক শিক্ষা অর্জিত হবে এবং সার্বজনীন কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেয়া এবং দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব হবে।

মানুষ যত বেশী জ্ঞান অর্জন করবে, তার জ্ঞানের পরিধি হবে তত বিস্তৃত ও স্বচ্ছ এবং মহামান্বিত প্রতিপালকের মহত্ব অনুধাবনের সাথে সাথে ইমানও হবে সুদৃঢ়। খাঁটি ইমান ও স্বচ্ছ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষেরা একদিকে যেমন এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছেই মাথানত করবে না। অপরদিকে তেমনি মানব তথা সকল সৃষ্টিকুলের কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসবে।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×