somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি আয়াতের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ- আল-কোরআন, ৩ : ২৭

৩০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Scientific analysis of an ayat (Al-Quran, 3:27)
আল-কোরআন (Al-Quran-
(৩ : ২৭) তূলিজ্বুল্লাইলা ফিন নাহা-রি অতূলিজ্বুন নাহা-রা ফিল্লাইলি, অ তুখরিজ্বুল হাইয়্যা মিনাল মাইয়্যিতি অ তুখরিজ্বুল মাইয়্যিতা মিনাল হাইয়্যি, অ তারযুক্কু মান তাশা- উ বিগ্বাইরি হিছা-ব।
(৩ : ২৭) অর্থ- তুমি রাতকে দিনে, দিনকে রাতে পরিবর্তন কর, এবং তুমিই মৃত্যু-বরণকারী বা মৃতের মধ্য হতে জীবন্তকে বের করে আন অর্থাৎ জীবনের উন্মেষ ঘটাও, আবার জীবন্তের মধ্য থেকে মৃত্যু-বরণকারী বা মৃতকে বের করে আন। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।
(3 : 27) You change the night by the day and change the day by the night, and bring forth the living from the dead and bring forth the dead from the living, and provide needs or elements of life whomsoever You please with out reckoning.

মহান আল্লাহতায়ালা আল-কোরআনের ৩ নং সূরা-আল-ই ইমরাণ-এর ২৭ নং আয়াতে অত্যন্ত সূহ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অবতারনা করেছেন। এই আয়াতটিতে ব্যবহৃত- ( মাইয়িতুন )- এই আরবী শব্দটির অর্থ-মৃত্যুবরণকারী বা মৃত- (‘কোরআনের অভিধান’- মুনির উদ্দীন আহমদ )। এখানে মৃত্যু বরণকারী বা মৃত বলতে এমন কিছুকে বোঝানো হয়েছে যার মাঝে এক সময় জীবনীশক্তি বিকাশমান অবস্থায় ছিল অর্থাৎ তা জীবন্ত ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই জীবনীশক্তি আর বিকাশমান অবস্থায় নেই। কোন জীব মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গে জড় পদার্থে পরিণত হয় না। এর জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। সদ্য মৃত্যু-বরণকারীর মাঝে জীবনীশক্তি যতক্ষণ সুপ্ত অবস্থায় থাকে ততক্ষণ সেই মৃত তাজা থাকে। ধীরে ধীরে জীবনীশক্তি যখন নিঃশেষ হয়ে যায় তখন তা পচতে শুরু করে এবং অবশেষে পচে-গলে জড় পদার্থে পরিণত হয়। আর এই জড় পদার্থ হলো এমন একটি অবস্থা যার মাঝে জীবনীশক্তি বিকাশমান বা সুপ্ত কোন অবস্থাতেই বিদ্যমান থাকে না। সুতরাং মৃত্যু বরণকারী বা মৃত-কে জীবীত ও জড় পদার্থের মধ্যবর্তী অবস্থা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। আমরা জানি যে, জড় পদার্থ অর্থাৎ মাটি ও পানির সংমিশ্রিত সার নির্যাস থেকে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার পরশে বিকাশমান জীবন অর্থাৎ অণুজীব সহ সকল জীবকোষ এবং অসংখ্য জীবকোষের সমন্বয়ে বহুকোষী জীবসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বংশ রক্ষার জন্য প্রজননগত কতিপয় প্রকৃতিক নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। এই আয়াতটিতে সম্ভবত (প্রকৃত জ্ঞান তো আল্লাহতায়ালার নিকটে) প্রজনন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ইংগিত প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞানের সহায়তায় আমরা জেনেছি যে, জীবন্ত জীবের প্রজনন-তন্ত্রে মিয়োসিস কোষ-বিভাজন প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত কোষ থেকেই হেমিক্রোমসোমধারী অর্থাৎ অর্ধ সংখ্যক ক্রোমসোমধারী শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূ সৃষ্টি হয়। যেমন মানবকোষে ৪৬টি ক্রোমসোম থাকে এবং মানব প্রজনন-তন্ত্রে এই ৪৬টি ক্রোমসোমের অর্ধেক অর্থাৎ ২৩ টি ক্রোমসোমধারী শুক্রাণু ও ডিম্বাণূ সৃষ্টি হয়। এই শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূগুলোকে সরাসরি জীবন্ত বলা যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষণ করলে এগুলোকে নব জীবনের আবির্ভাব ঘটানোর জন্য ব্যবহৃত সুপ্ত-জীবনীশক্তি বহনকারী সত্ত্বা অর্থাৎ মৃত্যুবরণকারী বা মৃত হিসেবে ধরে নেয়াই যুক্তিযুক্ত হবে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণূগুলোর মধ্যে এই সুপ্ত-জীবনীশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাজা থাকে এবং এই তাজা থাকার উপরেই একজনের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা কতখানি বা আদৌ আছে কিনা তা অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন মানুষের ক্ষেত্রে প্রজনন তন্ত্রের স্বাভাবিক পরিবেশে শুক্রাণূর তাজা অবস্থায় থাকার মেয়াদ সর্বোচ্চ প্রায় ৭২ ঘন্টার মত এবং ডিম্বাণূর জন্য এই মেয়াদ সর্বোচ্চ প্রায় ৪৮ ঘন্টার মত। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে, শুক্রাণূ হিমশীতল অবস্থায় (Frozen sperm ) বহুকাল সংরক্ষণ করা অর্থাৎ তাজা রাখা সম্ভব এবং আল্লাহতায়ালা চাইলে কয়েক কাল পরেও তা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ব্যবহার করে অর্থাৎ ডিম্বাণূর সাথে মিলন ঘটিয়ে সন্তান জন্ম দেয়া যেতে পারে। আমরা জানি যে, ‘জীব’ হলো এমন একটি স্বত্তা যার মাঝে জীবনীশক্তি বিকাশমান অবস্থায় থাকে এবং তা নুতন সমজাতীয় জীবন্ত অস্তিত্ব জন্ম দিতে সক্ষম। এই শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূ কিন্তু কখনই এককভাবে বিকশিত হতে পারে না এবং সমজাতীয় নুতন জীবন্ত সত্ত্বাও জন্ম দিতে পারে না অর্থাৎ শুক্রাণূ থেকে শুক্রাণূর অখবা ডিম্বাণূ থেকে ডিম্বাণূ জন্ম হয় না। সূরা ইমরাণ-এর ২৭নং আয়াতের মধ্য অংশের বক্তব্য- (আবার জীবন্তের মধ্য থেকে মৃত্যু-বরণকারী বা মৃতকে বের করে আন।) অনুসারে ধরে নেয়া যায় যে, জীবের প্রজনন তন্ত্রে সৃষ্ট এই ‘শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূগুলো' বিকাশমান জীবন্ত অস্তিত্ব নয়। বরং এগুলোকে জীবন্তের মধ্য থেকে বের করে আনা অর্থাৎ জীবদেহের প্রজনন-তন্ত্রে আল্লাহতায়ালার বেঁধে দেয়া বিশেষ নিয়মে সৃষ্ট (মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত) সুপ্ত-জীবনীশক্তি বহনকারী সত্ত্বা অর্থাৎ ‘মৃত্যু-বরনকারী বা মৃত’ হিসেবে ধরে নেয়াই যুক্তিসঙ্গত। এ কারণেই ‘শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূ-কে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করলে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাজা অর্থাৎ কার্যকর রাখা যেতে পারে এবং সূরা ইমরাণ-এর ২৭ নং আয়াতের প্রথম অংশের বক্তব্য- (এবং তুমিই মৃত্যু-বরণকারী বা মৃতের মধ্য হতে জীবন্তকে বের করে আন অর্থাৎ জীবনের উন্মেষ ঘটাও,) অনুসারে অনেককাল পরে এগুলো ব্যবহার করা হলে ও আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে জীবন্ত অস্তিত্ব গঠিত হয় অর্থাৎ জীবনের উন্মেষ ঘটে। আমরা পূর্বেই দেখেছি যে, স্বাভাবিক অবস্থায় শূক্রাণূ ও ডিম্বাণূ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাজা থাকে। এই সময়ের পর এগুলো ধীরে ধীরে পচতে থাকে। ফলে সুপ্ত-জীবনীশক্তি ধারণ করার ক্ষমতাও লোপ পায় এবং একেবারে পচে গেলে তা থেকে প্রকৃতিগত স্বাভাবিক প্রজনন অথবা কৃত্রিম কোন উপায়েই নুতন জীবন্ত সত্ত্বা গঠন করা সম্ভব নয়।

যদিও শুক্রাণূ motile বা সচল, এগুলো স্পিন্দত হয় এবং এরা জলীয় মাধ্যমে পথ পাড়ি দিয়ে ডিম্বানুর কাছে পৌছাতে পারে। এদের শক্তির প্রয়োজন হয়, শুক্রানুর ক্ষেত্রে তা আসে মাইটোকড্রিয়া থেকে, আর ডিম্বানুর ক্ষেত্রে এগ ওভাম বা কুসুম থেকে। বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায় যে কতিপয় রাসায়নিক ক্রিয়া ও মাইটোকন্ড্রিয়া হতে শক্তি নির্গত হওয়ার কারণেই এগুলোকে আপাত প্রতীয়মান motile বা সচল বলে মনে হয়। (Strictly speaking, sperm and ova are not human life. They do contain human DNA, but they are not actually alive; they do not grow; they do not reproduce by themselves.) Click This Link তেমনি পাশাপাশি যদি চিন্তা করে দেখেন যে, জাহাজও তো পানিতে সচল। জ্বালানী হতে শক্তি সঞ্চয় করে নাবিকের পরিচালনায় নিজ গন্তব্যে পৌছতে পারে। ইন্জিন চালু হলেই এগুলোর মাঝেও তো স্পন্দন শুরু হয়। তাছাড়া আমরা যে সব যানবাহনে চড়ে চলাচল করি, তাদের দশাও তো একই। কিন্তু তাই বলে তো শুধুমাত্র motility বা সচল হবার কারনে এগুলোকে জীবন্ত বা জীব ভাবা ঠিক নয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষণ করলে শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূগুলোকে সদ্য মৃত বা তাজা ( small package of spirited substance) ভাবাই তো যুক্তিযুক্ত। স্পিরিট বলতে এখানে প্রাণ শক্তিকে বোঝাতে চেয়েছি, যা জীবিত স্বত্ত্বা তথা একটি পূর্ণাঙ্গ জীব সৃষ্টির মূল উৎস। আর শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূর প্রত্যেকটি হলো সেই প্রাণ শক্তির অর্ধেক অংশ বহনকারী সদ্য-মৃত বা তাজা কিছু। (তাজা কিছু = যা পঁচে জড় পদার্থে পরণিত হওয়ার পূর্বাবস্থা)। আল্লাহর নির্ধারিত স্বাভাবিক পরিবেশে এগুলো প্রায় ৭২ ঘন্টা তাজা থাকে। আর জীবন্ত নয় বলেই শুক্রাণূকে বিশেষ উপায়ে অর্থাৎ হীমায়িত অবস্থায় দীর্ঘকাল তাজা রাখা বা সংরক্ষণ করা যায়। জাহাজের সাথে এর পার্থক্য হলো এটি সম্পুর্ণরূপে জড় দিয়ে গঠিত আর শুক্রাণূ, ডিম্বাণু জড় নয়, বরং জীব থেকে সৃষ্ট তাজা কিছু যা প্রতিকুল পরিবেশে পঁচে জড়পদার্থে পরিণত হয়। জীবন্ত জিনিস তো সরাসরি পচে না। জীব আগে মরে ও কিছু সময় তাজা থাকে এবং তারপর পচে এবং জড় পদার্থে পরিণত হয়। সুতরাং বিশেষ ব্যবস্থায় জীবকে নয়, মৃত কোন কিছুকে তাজা রাখার সময়টাকে বৃদ্ধি করার ক্ষমতা মানুষ অর্জন করেছে।

কোন বিকাশমান জীবন্ত সত্ত্বাকে (জীবকে) কিন্তু কখনই অর্থাৎ কোন বিশেষ উপায়েই অনির্দিষ্টকাল জীবন্ত রাখা সম্ভব নয়। একদিন নয়ত একদিন অর্থাৎ নির্দিষ্ট আয়ুকাল অনুসারে তার মৃত্যু অনিবার্য। কোন কোন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত স্বাভাবিক যৌন প্রজনন ছাড়াও অজৌন জনন যেমন অঙ্গজ জননের মাধ্যমে কর্তীত অঙ্গের জীবন্ত কোষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জন্ম নিতে পারে। সুতরাং সূরা ইমরাণ-এর ২৭ নং আয়াতের শেষ অংশের বক্তব্য- (তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।) অনুসারে বলা যায় যে, এই সমস্ত উদ্ভিদের মাঝে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিকাশমান জীবনীশক্তি অনেক বেশী পরিমাণে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করা হয়েছে। আর এই কারণেই এদের কর্তীত অঙ্গকে মাটিতে বোনা হলে এটার জীবন্ত উদ্ভিদকোষ থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ও পরিবেশে আপনা আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জন্ম নিতে পারে। এক্ষেত্রে তেমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে জীব-জন্তুর ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত (জীব) কোষকে ক্লোনিং-পদ্ধতিতে অর্থাৎ বিশেষ উপায়ে সেই কোষ দানকারী জীবের জরায়ুতে বিকশিত করার ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত প্রতিরূপ জীব জন্ম দেয়া সম্ভব হয়েছে। সুতরাং একটি জীবন্ত জীবকোষের মাঝে আল্লাহ প্রদত্ত বিকাশমান জীবনীশক্তি যতক্ষণ বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ এটিকে বিশেষ উপায়ে পূর্ণাঙ্গরূপে বিকশিত করবার বিষয়টি বেশ কঠিন ও চমকপ্রদ হলেও অসম্ভব নয় বৈকি।

কোন জীব যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সেটার দেহ কিছু সময় তাজা থাকে। সদ্য মৃত্যু-বরণকারী সেই তাজা মৃতকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আংশিকভাবে কাজে লাগান যায় বটে, তবে তা কখনই এককভাবে বিকশিত হতে এবং সমজাতীয় নুতন জীবন্ত অস্তিত্ব জন্ম দিতে পারে না। যেমন যারা চক্ষু দান করেন, মৃত্যুর পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের চক্ষু সংগ্রহ করে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেই চোখের বিভিন্ন তাজা অংশকে মানবকল্যাণে অর্থাৎ অন্ধত্ব দূরীকরণে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে। তবে একেবারে পচে গেলে অর্থাৎ তার সুপ্ত-জীবনীশক্তি ধারণ করার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেলে তা অবশেষে সুপ্ত-জীবনীশক্তি বিহীন জড় পদার্থে পরিণত হয়। এই অবস্থা থেকে জীবনের উন্মেষ ঘটানো আর কোন উপায়েই সম্ভব নয়। শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তা কখনই ঘটেনি এবং ঘটবেও না। একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাই যেমন করে প্রথমবার আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে এই ধুলিকণা থেকে শেষ বিচারের ক্ষণে তিনি যে পূণরায় আমাদেরকে সৃষ্টি করবেন তা সূরা ইয়াসীন-এর ৭৮, ৭৯ ও ৮২ নং আয়াত থেকে সহজেই বুঝে নেয়া যায়।
আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা ইয়াসীন- (36.Ya-Seen // Ya-Seen) -আয়াত নং-৭৮, ৭৯ ও ৮২
(৩৬ : ৭৮) অর্থ- মানুষ আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অদ্ভুত কথা রচনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভূলে যায়; এবং বলে, ‘অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে ? যখন তা পচে গলে যাবে ?
(36 : 78) And he says for Us a similitude and has forgotten his creation. He said, 'who will give life to the bones when they are totally rotten?'
(৩৬ : ৭৯) অর্থ- বল, ‘ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সমস্ত কিছুর সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত।
(36 : 79) Say you, He will give life to them, Who made them the first time. And He Knows every creation.
(৩৬ : ৮২) অর্থ- তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন শুধু বলেন ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।
(36 : 82) For Him is this only that whenever He intends any thing, then He says to it, 'Be' and it becomes at once.

আমরা জানি যে, অণুজীব ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকে শুরু করে কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি, উদ্ভিদ ও আমরা এবং জীবের পূর্ণঙ্গ জীবকোষও এক একটি বিশেষ নিয়মে সমজাতীয় সত্ত্বা (Same individual) জন্ম দিতে সক্ষম। উপরের আলোচনা থেকে আমরা এটাও জেনেছি যে, একটি শুক্রাণূ বা ডিম্বাণূ কখনও কোন পরিবেশে এককভাবে বিকশিত হতে পারে না অথবা অপর একটি শুক্রাণূ বা ডিম্বাণূ জন্মও দিতে সক্ষম নয়। বরং শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূর মধ্যে নিহিত অল্লাহ্ প্রদত্ত সুপ্ত-জীবনীশক্তি আল্লাহতায়ালার বেঁধে দেয়া স্বাভাবিক যৌন জনন প্রক্রিয়ায় কাজে লাগে এবং কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে সংকরণ, টেস্টটিউব-বেবি উৎপাদন ইত্যাদি বিশেষ উপায়ে কাজে লাগান যায়। এক্ষেত্রে শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূর মিলনের ফলে যে নুতন জীবন্ত অস্তিত্ব অর্থাৎ জীবকোষের (Structural & functional unit of the body) গঠন সম্পন্ন হয় তা থেকে আল্লাহতায়ালার বেঁধে দেয়া বিশেষ নিয়মে ( অর্থাৎ মাইটোসিস কোষ-বিভাজন প্রক্রিয়ায় ) পূণরায় নুতন জীবকোষ গঠিত হতে পারে এবং বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াতেই তাদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সাধিত হয়। অতঃপর অবারও তাদের প্রজনন-তন্ত্রে শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূর সৃষ্টি হয়।

আমরা বিজ্ঞানের সহায়তায় জেনেছি যে, কিছু কিছু অণূজীব যেমন ভাইরাস তাদের জনন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে। এদের ব্যাকটেরিওফাজ বলে। ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করলে ব্যাকটেরিওফাজের ‘ডি এন এ' ব্যাকটেরিয়ার কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু এর প্রোটিন আবরণ কোষের বাহিরে থাকে। ফাজের ‘ডি এন এ' ব্যাকটেরিয়ার কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ব্যাকটেরিয়ার কোষের সকল বিপাকীয় কার্যাবলী নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। ফলে ব্যাকটেরিয়ার কোষের ‘ডি এন এ' উৎপাদন ও অন্যান্য কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে ফাজের (ভাইরাসের) ‘ডি এন এ' দিয়ে চালিত হয়ে এগুলো আবার কাজ শুরু করে।
তখন ব্যাকটেরিয়ার কোষের অভ্যন্তরে ব্যাকটেরিওফাজের (ভাইরাসের) ‘ডি এন এ’ এর (মাঝে বেধে দেয়া সৃষ্টিকর্তার) নির্দেশ অনুযায়ী ভাইরাসের প্রোটিন তৈরী হয় এবং নুতন ফাজ গঠন করতে আরম্ভ করে। আক্রমণের আধ ঘন্টারমধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার কোষের অভ্যন্তরে কয়েকশ’ নুতন ফাজের (ভাইরাসের) সৃষ্টি হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার কোষ ফেটে যায়। ফলে পূর্ণাঙ্গ ফাজগুলো (ভাইরাসগুলো) বাহিরে বেরিয়ে আসে এবং আবারও অন্য ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে।

উপরে বর্ণীত আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত বিশেষ নিয়মে ও ব্যাকটেরিওফাজের ‘ডি এন এ' -তে নিহিত আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ শক্তির প্রভাবে তাদের জনন কার্য সম্পাদিত হয় এবং একটি ফাজ থেকে সমজাতীয় শত শত ফাজ জন্ম নেয়। এক্ষেত্রে ফাজের ‘ডি এন এ' -এর মধ্যে নিহিত আল্লাহ্ প্রদত্ত নির্দিষ্ট মাত্রার জীবনীশক্তির প্রভাবেই ব্যাকটেরিয়ার কোষের বিপাকীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ ও সমজাতীয় ফাজের জন্মদান সম্ভ^ব হয়। তেমনি অন্যান্য এককোষী জীবের ক্রোমসোমে যে পরিমাণ ‘ডি এন এ' থাকে তার মধ্যে নিহিত এবং বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে জীবকোষসমূহের মধ্যে যে পরিমাণ ‘ডি এন এ' থাকে তার মধ্যে নিহিত একটি নির্দিষ্ট মাত্রার সম্মিলিত জীবনীশক্তির কারণেই বিপাকের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিকশিত করবার মত ও সমজাতীয় সত্ত্বা জন্ম দেয়ার মত শারীরিক ও মানসিক শক্তি অর্জনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। যদি বার্ধক্য, রোগ, আঘাত ইত্যাদি যে কোন কারণে এই নির্দিষ্ট মাত্রার জীবনীশক্তির পরিমাণ কিছুটা কমে যায় অথবা সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে তবে বিকাশ সাধন আংশিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর আল্লাহতায়ালার নির্দেশমত বার্ধক্য, রোগ, আঘাত ইত্যাদি যে কোন কারণে এই নির্দিষ্ট মাত্রার জীবনীশক্তি যদি এমন পরিমাণে কমে যায় যে অবশিষ্ট শক্তি দ্বারা বিপাকের মাধ্যমে শারীরিক শক্তি উৎপাদন এবং বিশেষ বিশেষ অঙ্গ বা তন্ত্রের যেমন হৃদপিন্ড, মস্তিষ্ক ইত্যাদির কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে সস্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়, তবে সেই জীবটি তখন আর সামগ্রীকভাবে বিকশিত হতে পারে না। ফলে মৃত্যুবরণ করে। সদ্য-মৃত্যুবরণকারীর কোষের মধ্যে কিন্তু তখনও কিছুটা শক্তি কিছু সময়ের জন্য সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা সেই মৃতের বিপাকীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, দেহকে সচল ও বিকশিত করবার জন্য যথেষ্ট নয়। ধীরে ধীরে এই সুপ্ত-শক্তিও নিঃশেষ হয়ে গেলে মৃত্যুবরণকারীর দেহটিও পচে-গলে অবশেষে জড় পদার্থে পরিণত হয়। আর এই মৃত্যুর স্বাদ যে সকলকেই গ্রহণ করতে হবে তা আল-কোরআনের বাণী থেকে সহজেই বুঝে নেয়া যায়।
আল-কোরআন(Al-Quran)-

সূরা আল ইমরাণ-(03.Aal-E-Imran // The Family Of 'Imran)-আয়াত নং-১৮৫
(০৩ : ১৮৫) অর্থ:- প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
(03 : 185) Every soul is to taste the death;
সূরা নূহ্-(71.Nooh // Nooh )-আয়াত নং-১৭ ও ১৮
(৭১ : ১৭) অর্থ:- আল্লাহ্ তোমাদেরকে উদ্ভূত করেছেন মাটি থেকে।
(71 : 17) "’And Allah has arisen you from the earth growing (gradually),
(৭১ : ১৮) অর্থ:- অতঃপর ওতে তিনি তোমাদেরকে প্রত্যাবৃত করবেন ও পরে পুনরুত্থিত করবেন।
(71 : 18) Then He will cause you to return there to and will bring you forth for the next time.

সুতরাং এ বিষয়টি তো এখন স্পষ্টরূপেই বোঝা গেল যে, প্রতিটি অণূজীব থেকে শুরু করে জীব জগতের প্রত্যেকে এবং বহুকোষী জীবের প্রত্যেকটি জীবকোষই এক একটি জীবন্ত সত্ত্বা। একদিন নয়ত একদিন এদের মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর প্রতিটি মৃতদেহই পচে-গলে ধূলিকণায় পর্যবসিত হয় অর্থাৎ জড় পদার্থে পরিণত হয়। শুক্রাণূ ও ডিম্বাণূ -কে কিন্তু সরাসরি জীবন্ত হিসেবে মেনে নেয়া যায় না, আবার সরাসরি জড় পদার্থও বলা যায় না। বরং বংশগত সীমানির্দের্শিত বিবর্তনের ধারা রক্ষার্থে মহান আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন সুপ্ত জীবনীশক্তি বহনকারী বিকাশহীন সত্ত্বা অর্থাৎ সদ্য মৃত্যুবরণকারী বা মৃত হিসেবে ধরে নেয়াই যুক্তিসঙ্গত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×