somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌনকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি নয়, বরং এই অমানবিক বন্দীদশা থেকে মুক্তির পদক্ষেপ নিন

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিষিদ্ধ পল্লীর সেই সব হতভাগা নারীদের (তথাকথিত যৌনকর্মী বা পতিতা) জীবনকে আমি অসুস্থ জীবন তুল্য মনে করি। এরূপ অবমাননাকর ও কষ্টকর কর্মের মাধ্যমে কি কেউ সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে? এমনটি আমি কল্পণাও করতে পারি না। কিন্তু অনেকেই যে এরূপ অন্ধকার জগতে অসুস্থ জীবন যাপন করছেন, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। এই অসহায় নারীদের গর্ভে যারা জন্ম নিচ্ছে তারা নিষ্পাপ হওয়া সত্বেও অন্ধকার জগতেই হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য লাগে যখন দেখি, ভদ্র ও শিক্ষিতের মুখোশ পরে একদল কুচক্রি এই অসহায় মা ও শিশুদের মুক্তি ও স্বাভবিক জীবনে ফিরিয়ে দেবার কথা না ভেবে বরং ঘৃণ্য নেশা চরিতার্থ করার পথটা যেন পোক্ত করারই পাঁয়তারা করছে। ধিক্ শত ধিক্ এই সব স্বার্থপরদের জন্য।

পতিতা
আগার তাহার বিভীষিকাভরা, জীবন মরণময়!
সমাজের বুকে অভিশাপ সে যে – সে যে ব্যাধি, সে যে ক্ষয়;
প্রেমের পসরা ভেঙে ফেলে দিয়ে ছলনার কারাগারে
রচিয়াছে সে যে, দিনের আলোয় রুদ্ধ ক’রেছে দ্বার!
সূর্যকিরণ চকিতে নিভায়ে সাজিয়াছে নিশাচর,
কালনাগিনীর ফনার মতন নাচে সে বুকের পর!
চক্ষে তাহার কালকুট ঝরে, বিষপঙ্কিল শ্বাস,
সারাটি জীবন মরীচিকা তার প্রহসন-পরিহাস!
ছোঁয়াচে তাহার ম্লান হয়ে যায় শশীতারকার শিখা,
আলোকের পারে নেমে আসে তার আঁধারের যবনিকা!
সে যে মন্বন্তর, মৃত্যুর দূত, অপঘাত, মহামারী-
মানুষ তবু সে, তার চেয়ে বড় – সে যে নারী, সে যে নারী!
'জীবনানন্দ দাশ'

তারা মানুষ এবং নারী। অসুস্থ মানুষকে অসুস্থতার সার্টিফিকেট হাতে ধরিয়ে দিলেই সে সুস্থ হয়ে যায় না, বরং তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যে সু-চিকিৎসার দরকার হয় তা সবাই বোঝে। তা না হলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং কষ্ট নিয়ে বাঁচা-মরার সাথে লড়াই করতে করতে এক সময় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেবে। সুস্থ জীবনের স্বাদ আস্বাদন করার সৌভাগ্য তার কপালে আর হয়ত নাও জুটতে পারে।

তাদের মধ্যে অনেকে হয়ত প্রতারিত ও বাধ্য হয়ে এরূপ অবমাননাকর ও অসুস্থ কর্মে লিপ্ত হয়েছে। পতিতাবৃত্তিকে স্বীকৃতি দিলে এই হতভাগা নারীদের জীবন নিয়ে যারা ব্যাবসা করছে তারাই লাভবান হবে। তাই এই অমানবিক কর্মকে সামাজে প্রতিষ্ঠা করার অযুহাতে তাদেরকে আরও অসুস্থ বাননোর পক্ষপাতি আমি নই। বরং আসুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই হতভাগা মা, বোন ও নিষ্পাপ শিশুদেরকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার সাথে সাথে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করি।

শুধুমাত্র যৌনকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করা কোন মানুষের জন্য সম্মানের হতে পারে না। সুতরাং স্বেচ্ছায় যদি কোন নারী এ ধরনের অবমাননাকর কর্মকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় তবে তাকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ নয় বলেই আমি মনে করি। মাদকসেবিদের মত তাদের জন্যও কাউন্সিলিং ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে আমি দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করছি।

অনেক কাল থেকেই ভোগ-লালসা চরিতার্থ করার ও ব্যবসায়ীক ফায়দা হাসিলের জন্য শুধু পুরুষই নয়, পাশাপাশি নারীরাও এই হতভাগা নারীদের ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে নারীদের জন্য অনেক পেশার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি এখন সময় এসেছে পতিতা বৃত্তিকে- 'না' বলার

সস্তা সেন্টিমেন্টের ফক্কা ইমেজের চালে তাদের মগজ ধোলাই করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার বানাবার জন্য অর্থাৎ কোন পক্ষকে শুধুমাত্র ভোটে জেতাবার বা হরাবার ট্রামকার্ড হিসেবে তাদেরকে ব্যবহার করার কুটচিন্তা হচ্ছে কিনা তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। কারন ভোটযুদ্ধে একটি ভোটের মূল্যই অনেক। সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাই- "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অপমানকর পরিস্থিতি থেকে নারীদের উদ্ধার করে তাদের পুণর্বাসন করার পাশাপাশি পতিতা বৃত্তির সাথে জড়িতদের (নারী ও পুরুষ উভয়ের) বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান করা হোক।"

এই হতভাগা নারীদের অপমানকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তির কথা না বলে যৌনকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার নামে কেউ কেউ মিষ্টি কথার মারপ্যাচে বিষ ঢেলে দেয়ায় যে খুবই পটু- তাদের লেখায় তার স্বাক্ষর তারা রেখেছে। এই বিষ পান ও হজম করে তাদের লেখার বক্তব্যকে যারা সায় দিয়েছেন- "দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় কখনও ভুলিতে নাই" এই প্রবাদ বাক্যটি ক্ষণিকের জন্য হলেও হয়ত তারা ভুলে গেছেন। কিন্তু আমার পক্ষে এই বিষ গলধকরন করা তো দূরে থাক, তার ঘ্রাণ নিতেও ঘৃনা বোধ করি। তাদের মধ্যে একজন খাতা-পেন্সিলধারীর লেখার স্টাইলটি বাহবা পাবার যোগ্য বটে। কলমে ধর্মনিরপেক্ষতার ঢোল পেটালেও মানসিকতায় ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং ধর্মহীনতার হাতছানি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। কারন আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন ধর্মেই যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাদের ফাঁকা-বুলিতে "মানবতার উপর ধর্ম নাই" ভাবটা প্রকাশ করার চেষ্টা করলেও শেষতক অমানববিক দিকটিই কিন্তু ধরা পড়েছে।

তাদেরই একজন একদিকে বলে:- সমাজে পুরুষ নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি আর পরিচয়ের জন্যে রেখেছে স্ত্রী, আর ভোগ ও লালসার জন্যে রেখেছে যৌনকর্মী।

তাই যদি হয় তাহলে সে নিজেও একজন পুরুষ হয়ে তো একই কথাই ভাবছে। বিকৃত রুচরি পুরুষের ও যৌন ব্যাবসায়ীদের লালসার স্বীকার হতভাগা নিরুপায় নারীদের এই আঁধার জগত থেকে মুক্তির কথা না ভেবে উল্টো যৌনকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার কথা বলে পরোক্ষভাবে তো হতভাগাদের স্থায়ীভাবে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপের ব্যবস্থাটাই পাকা করা হচ্ছে। আঁধারজগতের বাসীন্দাদের আলোর মুখ দেখাবার কথা না বলে বরং সেই আঁধারেই কবর দেয়ার বা চিতা জ্বালানোর অমানবিক পরিকল্পণাকে আমি ধিক্কার জানাই। যারা এ পেশাকে স্বীকৃতি দেয়ায় ধেই ধেই করে নাচছে তারা খুব মুক্তমনা ভাব দেখালেও আসলে তাদের বক্রমনের পরিচয়টা অনেক চেষ্টা করেও তারা ঢাকতে পারেনি। আদিম কাল থেকে অনেক অপকর্মই তো অনেক পুরুষ, নারীরা চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে তো মানবতার ধ্বজাধারীরা সব অপকর্মকেই ধীরে ধীরে স্বীকৃতি দেবার কথা বলতে পারে।

তাদেরই একজন আরও বলে:- ধর্মপ্রবণ এবং মোটামুটি অশিক্ষিত এই জনপদে গিজ গিজ করছে মাথা, সেই মাথায় চুল গজায় আবার ঝরে পড়ে টাক বিস্তৃত হয় কিন্তু খুলির ভেতরে ধূসর-বস্তুতে খুব বেশি আলোড়ন ওঠে না। যে খুলিগুলোতে কিছুটা রসদ থাকে, সেগুলো ড্রেন দিয়ে বা প্লেনে চড়ে পাচার হয়ে যায় ফর্সা-চামড়ার দেশে।

যিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন তিনিও তো নিশ্চয় এ জনপদেরই বাসিন্দা। নাকি অন্য কোন ভিন দেশের? যদি এদেশেরই বাসিন্দা হয়ে থাকেন তবে সে তার বর্ণীত দুটি দলের প্রথমটিতে, নাকি ড্রেন দিয়ে বা প্লেন দিয়ে খুলির রসদ পাচারকারির দলে? এদেশে নারী পাচারেরও যে একটি দল আছে তা মোটামুটি সবাই জানে । তাদের মতে যারা নারী পাচারের ব্যবসা করে- তাদের পেশা তো নারী পাচারকর্মী হবার কথা। মনে হয় ওদের ব্যবসা এখন বেশ মন্দা যাচ্ছে। তাই খাতা-পেন্সিল হাতে নেমে পড়েছে। ভাবটা এমনই যেন এই সুযোগে ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের কু-কর্মের পেশাটাও নারী পাচারকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে ছাড়বে।
আগে যারা পড়েছেন-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৫৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×