somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“একলগে তিন তালাক ও হিল্লা”- নাউযুবিল্লাহ

২১ শে মে, ২০১১ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল-কোরআনে তালাকের বিষয়ে যে বিধান দেয়া হয়েছে- মানুষের জীবনে পারিবারিক জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ও বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটির প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে তুচ্ছ কারণে তালাক দেয়া বা নেয়া আল্লাহতায়ালার কাছে খুবই অপছন্দের।

'Divorce (Kitab Al-Talaq)' ofSunan Abu-Dawud .
2172: Narrated Muharib: The Prophet (peace be upon him) said: Allah did not make anything lawful more abominable to Him than divorce.

2173: Narrated Abdullah ibn Umar: The Prophet (peace be upon him) said: Of all the lawful acts the most detestable to Allah is divorce.

তারপরও পারিবারিক জীবনের দুর্বিসহ কলহ ও যাতনা নিরসনের স্বার্থে পুরুষের পক্ষ থেকে (৬৫:০১) 'তালাক' দেয়াকে এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে (০২:২২৯) বিবাহ বিচ্ছেদ করে নেয়াকে জায়েজ রাখা হয়েছে।

অর্থনৈতিক দায়িত্ব চাপানোর পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সৃষ্টিগতভাবেই পুরুষের উপরে কিছুটা বেশি দায় দায়িত্ব ও রক্ষণাবেক্ষণের ভার অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু এর অযুহাতে তারা যেন কথায় কথায় তালাক দেয়ার মাধ্যমে নারীদের হাতের পুতুল বানিয়ে না ফেলতে পারে সেইজন্য কঠিন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তালাক দেবার বিভিন্ন পর্যায় আল-কোরআনে বিষদভাবে বলে দেয়া হয়েছে এবং তা মেনে চলা প্রতিটি ইমানদার মানুষের ইমানি দায়িত্ব। এর বিন্দুমাত্র বরখেলাপ করা মানেই কুফরী করার নামান্তর এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। প্রতিটি পর্যায় ঠিক ঠিক মেনে সঙ্গত কারনে যদি কোন পুরুষ তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া স্ত্রীকে ৩য় বার অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তাহলে সেই স্ত্রীকে পূণরায় ফিরে পাবার পথটি বড়ই কঠিন অর্থাৎ এটিকে 'Playful play let' বানাবার কোন অবকাশ নেই। তালাকের মত ঘৃন্য সিদ্ধান্ত দেবার আগে কোন বিবেক সম্পন্ন ইমানদার স্বামীকে শতবার ভাবতেই হবে। আর অতিরঞ্জিতভাবে কর্তৃত্বের অযুহাত দেখিয়ে সামান্য কারণে কথায় কথায় তালাক দিতে যারা কুণ্ঠাবোধ করেনা তাদের জন্যই এরূপ শক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

৪ নং সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯২)
৩৪: পুরুষেরা নারীদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী, কারণ আল্লাহ তাদের (পুরুষদের) কতককে অপরদের (নারীদের) উপর তা (এই দায়িত্ব) অর্পণ করেছেন এবং যেহেতু তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, শয্যায় তাদেরকে পরিত্যাগ কর এবং (হালকাভাবে) প্রহার /আঘাত কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ (তালাক) অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।

Quran Tafsir Ibn Kathir-
(beat them) means, if advice and ignoring her in the bed do not produce the desired results, you are allowed to discipline the wife, without severe beating. Muslim recorded that Jabir said that during the Farewell Hajj, the Prophet said;
(Fear Allah regarding women, for they are your assistants. You have the right on them that they do not allow any person whom you dislike to step on your mat. However, if they do that, you are allowed to discipline them lightly. They have a right on you that you provide them with their provision and clothes, in a reasonable manner.) Ibn `Abbas and several others said that the Ayah refers to a beating that is not violent. Al-Hasan Al-Basri said that it means, a beating that is not severe.

ধর্মীয় বিধি নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে একজন সৎকর্মশীল নারী যত্নশীল থাকেন। কিন্তু কোন স্ত্রীর অবাধ্যতা (০৪:৩৪) যদি এমন সীমায় পৌঁছে যে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বেহায়াপনা থেকে সে নিজেকে বিরত রাখার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। তাহলে তাকে ভাল কথা বলে বোঝাতে হবে। এতে কাজ না হলে এরপর একটু কঠিন মনোভাব প্রকাশের জন্য একই শয্যায় অবস্থান করলেও স্ত্রীর সংসর্গ থেকে দূরে থাকতে হবে যেন সে বুঝতে পারে যে স্বামী তার প্রতি খুবই অসন্তুষ্ট। এতেও তেমন কোন কাজ না হলে বাঁকা পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আঙ্গুল কিছুটা বাঁকা করে প্রয়োজনে মৃদুভাবে প্রহার করার মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে বলা হয়েছে। করান দেখা গেছে কখনো কখনো মানুষ এতটাই উদাসীন হয়ে যায় যে মিষ্টি কথা ও নরম শাসন কারো কারো অন্তর ছুঁতে পারে না। তখন দু' চারটা চপেটাঘাত করলে অনেক সময় তারা সম্বিত ফিরে পায়। তবে হালকা প্রহার/আঘাত কিংবা চপেটাঘাত ইত্যাদি যাই করা হোক না কেন- এটি একটি প্রক্রিয়া মাত্র। একটি সাজানো পরিবার ভাঙ্গার চরম সিদ্ধান্ত নেবার আগে প্রয়োজনে এমনটি করেও যদি ভাল ফল পাওয়া যায়- এই আশায় যা প্রয়োগ করা বা না করা পরিস্থিতি ও মন-মানসিকতার উপর নির্ভরশীল। আর এগুলো তালাকের মত চরম সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনের বিপর্যয় নয়, বরং সন্তান-সন্ততির জীবনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্যই প্রযোজ্য। একেবারে নিরূপায় না হলে ঘৃণ্য ব্যবস্থা তালাক না দেয়াই ভাল।

৪ নং সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯২)
(০৪:১২৮) অর্থ- যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, অতঃপর শান্তির শর্তে পরস্পর মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন পাপ নাই। মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসার পন্থাই উত্তম। মনের মধ্যে লোভ বিদ্যমান থাকে; যদি তোমরা সৎকর্ম কর ও ভয় কর (আল্লাহকে), তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তার সব খবর রাখেন।
(০৪:১২৯) অর্থ- আর তোমরা কখনই (একাধিক) স্বাধীন নারীদের প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হবে না, যদিও এর আকাঙ্খা করে থাক। অতঃপর প্রবৃত্ত হইও না এ সকল আসক্তিতে এবং তাকে (এক স্ত্রীকে) দোদুল্যমান অবস্থায় একাকি ফেলে রেখে। আর যদি সমঝোতা করে নাও এবং খোদাভীরু হও, তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
(০৪:১৩০) অর্থ- আর যদি তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় প্রশস্ততা দ্বারা প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।

স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ বা উপেক্ষার বিষয় ঘটলে (০৪:১২৮ নং আয়াতে) প্রথমত শান্তির লক্ষ্যে পরস্পর মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসা করে নেয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সততা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। (০৪:১২৯) নং আয়াতের বক্তব্যে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, মানুষ হিসেবে যেহেতু সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও চাওয়া পাওয়া এক রকম নয়, তাই যারা বিয়ে করা এক স্ত্রীকে ছেড়ে সখের বসে একাধিক স্বাধীন নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাবার বাসনা করে, সেক্ষেত্রে তারা মনে মনে এমনটি চাইলেও একসাথে একাধিক স্বাধীন নারীদের বিয়ে করে তাদের (স্ত্রীদের) প্রতি কখনই সুবিচার করতে সক্ষম হবে না। তাই একজন স্ত্রীকে একাকি দোদুল্যমান অবস্থায় ফেলে রেখে এ ধরনের আসক্তিতে প্রবৃত্ত না হওয়ার নির্দেশই দেয়া হয়েছে। অতঃপর কোন প্রকার লোভ-লালসার মোহে পড়ে নয়, বরং বিশেষ ও সংগত কারনে যদি (স্বামী ও স্ত্রী) একে অপরকে পছন্দ নাই হয় অথবা কোন লম্পট স্বামীর দুর্ব্যবহার যদি চরম সীমায় পৌছে কিংবা কোন স্বামী/স্ত্রী যদি একে অপরের মর্যাদা তো রাখেই না, বরং ভীষণভাবে উপেক্ষা ও অসহনীয় আচরণ করতেই থাকে এবং অগত্যা সংসার করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে ঝুলিয়ে না রেখে বিধিমত পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদ করে নেয়াই উত্তম। তারপর চাইলে পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করায় কোন দোষ নেই। (০৪:১৩০) নং আয়াতে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এরূপ সততা রক্ষাকারীদের জন্য অভাবমুক্ত করে দেবার অঙ্গিকার করা হয়েছে।

২ নং সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৮৭)
২২৬: যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষামাকারী দয়ালু।
২২৭: আর যদি তালাক দেওয়ার সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞানী।
২২৮: আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা নিজেদেরকে (অন্যত্র বিবাহ করা থেকে) অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েজ (তিন স্ত্রী-রজ/ মাসিক ঋতু) পর্যন্ত। আর তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়, যা আল্লাহ তাদের জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন, যদি তারা আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাকে। আর তাদের স্বামীরা তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার ক্ষেত্রে অধিক অধিকার সংরক্ষণ করে, যদি তারা (স্বামীরা) মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসা করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং তাদের (স্ত্রীদের) জন্য সেইরূপ হওয়া চাই যা তাদের বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত হয়। আর নারীদের উপর পুরুষদের এক মাত্রা (কিছুটা গুরুত্ব) রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
২২৯: তালাক হলো দুবার- তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।
২৩০: অতঃপর যদি সে (স্বামী) তাকে (স্ত্রীকে) তালাক (পুরোপুরি তালাকের সিদ্ধান্ত) দিয়েই দেয়, তারপর সে (সেই স্ত্রী) তার (সেই স্বামীর সাথে বিয়ের) জন্য বৈধ নয়, যে পর্যন্ত না সে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী) তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হবে। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
২৩১: আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দতকালে পৌছে যায়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভুতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে, যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময়।
২৩২: আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দতকালে পৌছে যায়, তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।

তালাক দেয়ার মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য চার মাস সময় নিতে পারেন। এক্ষেত্রে শপথ করার চার মাসের মধ্যে মিল-মিশ করে নিতে পারলে ভাল। তা না হলে অযথা ঝুলিয়ে না রেখে তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে।

আল-কোরআনের ভাষ্য অনুসারে (০২:২২৯) আল্লাহতায়ালা দুই তালাকের বেশি অগ্রসর হতে নিষেধ করেছেন। কারণ ভালভাবে ভাবনাচিন্তা না করে চূড়ান্তভাবে তালাকের মত কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে পরে আফসোস হতে পারে। তাছাড়া ৩য় বার অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সময়টাও সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ইদ্দতের প্রতি (৬৫:০১) খেয়াল রেখে ও ইদ্দত গণনা করে তালাক দেবার বিধান দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো, ঋতুস্রাব চলাকালে তালাক দেয়া যাবে না এবং পবিত্র অবস্থায় সহবাস করে থাকলে পরবর্তী ঋতুস্রাব সমাপ্ত হয়ে পবিত্র হলে তখন প্রথমবার তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো যেতে পারে। এর মধ্যে যদি মিটমাট হয়ে যায় তাহলে ভাল। তা না হলে পরবর্তী ঋতু সমাপ্ত হয়ে পবিত্র হলে দ্বিতীয়বার তালাক বহাল রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে বা মিটমাটও করে নেয়া যেতে পারে। যদি মিটমাট না হয় তা হলে তৃতীয় মাসিক ঋতু সমাপ্ত হবার পর ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং এরপর চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হয় স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে হবে, তা না হলে মুক্ত করে দিতে হবে। যেহেতু ঋতুবতী তালাকপ্রাপ্তা নারীকে (০২:২২৮) তিন হায়েজ অর্থাৎ তিন মাসিক ঋতু সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলে তিন মাসিক ঋতু সমাপ্ত হবার পর মনে চাইলেও তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকবে না। (০২:২৩০, ২৩২) এমনকি পুনরায় সেই স্ত্রীকে বিয়ে করাও তার জন্য বৈধ হবে না। তবে তালাকপ্রাপ্তা সেই নারী অন্যত্র বিয়ে করার পর নিয়মিত বিবাহিত জীবন কাটানোর কোন এক পর্যায়ে যদি সেখানেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, সেক্ষেত্রে উভয়ের সমঝোতায় পূর্বের সেই স্বামী আবার তাকে বিয়ে করতে পারবেন।

৪ নং সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯২)
২০: অর্থ- যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করবে?
২১: অর্থ- তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন কর এবং নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।
৩৫: যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।

৬৫ নং সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯৯)
০১: হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিও ইদ্দতের (অপেক্ষার সময় অর্থাৎ তিন মাসিক ঋতুর) প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত (অপেক্ষার সময় অর্থাৎ তিন মাসিক ঋতু) গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।
০২: অতঃপর তারা যখন তাদের নির্ধারিত ইদ্দতকালে পৌছে যায়, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।
০৩: এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।

সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, (০৪:৩৫) স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করে আপোষ মিমাংশার জন্য চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। অগত্যা যদি সম্পর্কচ্ছেদ করতেই হয় তাহলে (৬৫:০১) ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। কারন প্রায়ই দেখা যায় পারিবারিক জীবনে জেদের বশে সামান্য বিষয় নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু দেখা গেছে কিছুটা সময় পেলে একে অপরের ভুল বুঝতে পারে এবং সাময়িক মন কসা-কসির পরে আবার সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। স্বামীর পক্ষ থেকে মৌখিক বা লিখিতভাবে প্রথমবার তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবার পর (০২:২২৯) স্ত্রী যদি তার স্বামীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থেকে ১ম ও ২য় মাসিক ঋতু সমাপ্ত করেন এবং স্বামী যদি পরিশেষে স্বজ্ঞানে চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তারপরও ৩য় মাসিক ঋতু সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। চুড়ান্তভাবে অর্থাৎ ৩য় তালাক দিয়ে দিলে এই সময়ের পর সেই স্ত্রী চাইলে অন্যত্র বিয়ে করতে পারবেন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে তালাক দেবার সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকলে, (০২:২২৯, ২৩১), (৬৫:০২) ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যত শীঘ্র সম্ভব (স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করার আগে পর্যন্ত) উভয় পক্ষের সমঝোতায় স্ত্রীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার বা মুক্ত করে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্বামীকে কতটা সময় দেয়া যেতে পার? (০২:২২৬ ও ২২৭) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে, স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার সংকল্প সাক্ষীর সামনে প্রকাশ করার পর থেকে সর্বোচ্চ চার মাস পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সময় পেতে পারেন। এই সময়ের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোন সুযোগই থাকবে না। আবার চূড়ান্তভাবে তালাক না দেয়া হলেও ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর স্ত্রী যদি আর স্বামীর কাছে ফিরে আসতে না চান তাহলে ফিরিয়ে নেবার জন্য তার উপরে কোনরূপ জোরজবরদস্তি করা যাবে না। স্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগে কোনরূপ সিদ্ধান্ত না দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে (০২:২২৯, ২৩১) আটকে রেখে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর বিদায় দেবার সময় তাকে যা কিছু দেয়া হয়েছে (০৪:২০) তার কোন কিছুই ফেরত নেয়া যাবে না এবং সহবাস করে থাকলে মোহরানাও অবশ্যই পরিশোধ করে দিয়ে সহানুভূতির সাথে তাকে মুক্ত করে দিতে হবে। তাছাড়া বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের লোকজন যদি (০২:২২৯) বিচ্ছেদ করে নেয়াই মন্দের ভাল মনে করেন তাহলে স্ত্রী বা তার পক্ষ থেকে সাধ্যমত কিছু বিনিময় দিয়েও স্বামীর কাছ থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করে নেয়ার অর্থাৎ 'খোলার' অপশন রাখা হয়েছে।

৬৫ নং সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯৯)
০৪: তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা হায়েজ/ ঋতুস্রাবের ব্যপারে নিরাশ হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুবতী হয়নি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।
০৬: তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।
০৭: বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিক প্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর স্বস্থি দেবেন।

তালাকপ্রাপ্তা (০২:২২৮) ঋতুবতী নারীদের মধ্যে যাদের নিয়মিতভাবে মাসিক ঋতু হয় তাদের ক্ষেত্রে তিন হায়েজ অর্থাৎ তিন মাসিক ঋতু সমাপ্ত হলে ইদ্দতের (যে সময়ের মধ্যে কোন তালাকপ্রাপ্তা নারীর অন্যত্র বিয়ে করা নিষেধ) সময় শেষ হয়ে যাবে। (৬৫:০৪) আর যারা এখনও ঋতুবতী হয়নি কিংবা যারা ঋতুস্রাব হওয়ার ব্যাপারে কোন ধরনের অনিশ্চয়তা/ অনিয়মে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে তিন মাস অতিক্রান্ত হলে এবং যারা অন্তঃসত্ত্বা তাদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসব করার পর ইদ্দতের সময় শেষ হয়ে যাবে। (০২:২৩০) ইদ্দতকাল পূর্ণ করার পর চূড়ান্তভাবে তালাকপ্রাপ্তা কোন নারী পছন্দমতো অন্যত্র বিয়ে করতে চাইলে যেমন তাকে বাঁধা দেয়া যাবে না। তেমনি তালাকপ্রাপ্তা কোন নারী (০২:২৩০, ২৩২) অন্যত্র বিয়ে করার পর নিয়মিত বিবাহিত জীবন কাটানোর কোন এক পর্যায়ে যদি সেখানেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, সেক্ষেত্রে পূর্বের সেই স্বামীকে বিয়ে করতে চাইলেও তাকে বাঁধা দেয়া যাবে না, যদি উভয়ে মনস্থির করেন যে তারা পরস্পর সমঝোতায় এসে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা (ইদ্দত পালন করার বিধান) মেনে চলতে পারবেন।

ইদ্দতের প্রতি (৬৫:০১) খেয়াল রেখে ও ইদ্দত গণনা করে তালাক দেবার বিধান দেয়া হয়েছে এবং যেহেতু স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত। তাই আল-কোরআনের বক্তব্য ও আল্লাহতায়ালার শুভাশয় অনুসারে এ সময় চূড়ান্তভাবে তালাক দেয়া যে বিধিসম্মত হবে না তা স্পষ্ট। কোন নারী অন্তঃসত্ত্বা হবার পরও অনেক সময় ইমপ্ল্যান্টেশন ইউটেরাইন ব্লিডিং হতে পারে এবং এই রক্তস্রাবকে অনেক সময় ঋতুস্রাব ভেবে ভ্রম হতে পারে। তাই এ সময় সাময়িকভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও পরবর্তীতে যদি প্রেগনেন্সি কন্টিনিউ করে তাহলে চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য ইদ্দত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর পরস্পর সমঝোতায় আসতে পারলে সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত যে কোন সময়ে, এমনকি চূড়ান্তভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকলে সন্তান প্রসব করার পরও যত শীঘ্র সম্ভব (স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করার আগে পর্যন্ত) স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সমঝোতায় আসতে না পারলেও সেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে (৬৫:০৬) সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত তত্বাবধানে রেখে সাধ্যমত খোরপোষ দেবার জন্য স্বামীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সন্তান প্রসবের পর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী দুধপান করাতে চাইলে সেক্ষেত্রেও সন্তানের পিতা হিসেবে উক্ত স্বামীকেই সেই খরচ বহন করতে হবে। আর দুধপান করাতে অপারগ হলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু সন্তান প্রসবের পর তালাকপ্রাপ্তা কোন নারীর ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যায়। তাই এরপর চাইলে তিনি অন্যত্র বিয়ে করতে পারবেন।

৩৩ নং সূরা আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৯০)
৪৯: হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা বিশ্বাসী নারীদেরকে বিবাহ করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের থাকবে না। তোমরা তাদেরকে কিছু দেবে এবং সৌজন্যের সাথে তাদের বিদায় দেবে।

যদি কোন অনভিপ্রেত কারণে বিয়ের পর (৩৩:৪৯) স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দেয়ার মত ঘটনা ঘটে যায়। সেক্ষেত্রে ইদ্দত পালনের প্রয়োজন নেই এবং সেই তালাকপ্রাপ্তা নারীকে ইদ্দত পালনের জন্য বাধ্যও করা যাবে না। বরঞ্চ কিছু উপহার দিয়ে তাকে সম্মানের সাথে বিদায় দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এরপর মনে চাইলে সেই তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দত পালন না করেই বিধিমত অন্যত্র বিয়ে করতে পারবেন।

স্বামী তার স্ত্রীর উপর ব্যভিচারের দোষারোপ করলে (হাদিছ:185) ‘লিয়ান’ করতে হয়। শুধুমাত্র এরূপ চরম পরিস্থিতিতে যখন একসাথে ঘর করার মত অবস্থা থাকে না, সেক্ষেত্রে বিবাহ ভেঙ্গে দেবার জন্য একসাথে তিন তালাক দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া অন্য কোন অবস্থায় একসাথে তিন তালাক উচ্চারণ করলে এক তালাক হিসেবে গন্য হবে এবং এরূপ হটকারী সিদ্ধান্ত নেয়া আল-কোরআনের বিধান মতে অবৈধ, পাপ এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আর যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করে তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করেত হবে বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে।

'লিয়ান' কিরূপে করতে হয় সে সম্পর্কে আল-কোরআনের বিধান-
২৪ নং সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-১০২)
০৬: অর্থ- এবং যারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে এবং তারা নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নেই, তখন প্রমাণ স্বরূপ তাদের প্রত্যেকে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দেবে, যে সে (স্বামী নিজে) অবশ্যই সত্যবাদী।
০৭: অর্থ- এবং পঞ্চমবার (স্বামী নিজে) বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লানত।
০৮: অর্থ- এবং স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চার বার সাক্ষ্য দেয় যে, সে (তার স্বামী) অবশ্যই মিথ্যাবাদী;
০৯: অর্থ- এবং পঞ্চমবার বলে যে, যদি সে (তার স্বামী) সত্যবাদী হয় তবে তার (স্ত্রীর) ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসবে।
১০: অর্থ- তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে এবং আল্লাহ তওবা কবুল কারী, প্রজ্ঞাময় না হলে কত কিছুই যে হয়ে যেত।
১১: অর্থ- যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।

'Divorce' of Sahih Bukhari-
185 : Narrated Sahl bin Sad As-Sa'idi: Uwaimir Al-'Ajlani came to 'Asim bin Adi Al-Ansari and asked, "O 'Asim! Tell me, if a man sees his wife with another man, should he kill him, whereupon you would kill him in Qisas, or what should he do? O 'Asim! Please ask Allah's Apostle about that." 'Asim asked Allah's Apostle about that. Allah's Apostle disliked that question and considered it disgraceful. What 'Asim heard from Allah's Apostle was hard on him. When he returned to his family, 'Uwaimir came to him and said "O 'Asim! What did Allah's Apostle say to you?" 'Asim said, "You never bring me any good. Allah's Apostle disliked to hear the problem which I asked him about." 'Uwaimir said, "By Allah, I will not leave the matter till I ask him about it." So 'Uwaimir proceeded till he came to Allah's Apostle who was in the midst of the people and said, "O Allah's Apostle! If a man finds with his wife another man, should he kill him, whereupon you would kill him (in Qisas): or otherwise, what should he do?" Allah's Apostle said, "Allah has revealed something concerning the question of you and your wife. Go and bring her here." So they both carried out the judgment of Lian, while I was present among the people (as a witness). When both of them had finished, 'Uwaimir said, "O Allah's Apostle! If I should now keep my wife with me, then I have told a lie". Then he pronounced his decision to divorce her thrice before Allah's Apostle ordered him to do so. (Ibn Shihab said, "That was the tradition for all those who are involved in a case of Lian."

২ নং সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম-৮৭)
২২৫: তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না, কিন্তু সেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন, তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী ধৈর্য্যশীল।

প্রায়ই বিভিন্ন ওয়াজ মহফিলে একসাথে যেন-তেন ভাবে তিন তালাক দেয়াকে বন্দুক বা কামানের গুলি/ গোলা ছোঁড়ার সাথে তুলনা করতে শোনা যায়। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত যে গায়ের জোরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ট্রিগারে চাপ দিয়ে গুলি/ গোলা ছুড়লেই লক্ষ্য ভেদ করা যায় না। এর জন্য প্রথমত বন্দুক/ কামান অনুসারে ঠিকমত গুলি/ গোলা ভরতে হয় এবং তারপর ঠিকমত নিশানা তাক করে ট্রিগারে চাপ দিলে তবেই লক্ষ্য ভেদ করা সম্ভব। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিরর্থক কোন শপথ বা কসম করার জন্য তিনি ধরবেন না। আর তাই তালাকের বিষয়ে নির্দেশনা দেবার শুরুতে (০২:২২৫) নং আয়াতে এই ইংগিত দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মাতাল অবস্থায় বা প্রচন্ডরাগের মাথায় অবুঝের মত নিরর্থকভাবে তিন তালাক একসাথে উচ্চারন করলেই তা কার্যকর হয়ে যাবে না। বরং আল- কোরআনের বিধান লংঘন করে একসাথে তিন তালাক দেয়ার অপরাধে স্বামীকে ভৎসনা ও সাবধান করে দেয়া কর্তব্য। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ধর্মের নামে বিচ্ছেদ তো নয়ই, বরং স্বামী-স্ত্রীর মিলনের পথে বাধা দেয়াটা মোটেই উচিত নয়। অগত্যা যদি বিচ্ছেদের পথে এগুতেই হয়, তাহলে তিন তালাককে এক তালাক হিসেবে গন্য করাই বিবেকের দাবি এবং আল-কোরআন ও রাসূলের (সাঃ) শিক্ষাও তাই।

অনেকে নিচের রেফারেন্সে উল্লেখিত হাদিছ মতে হযরত ওমর (রাঃ) এর আমলের দোহাই দিয়ে এখনো যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক না কেন যেনতেনভাবে 'একলগে তিন তালাক' দিলেই তালাক জারি হয়ে যাবার জোর দাবি তোলেন-

মুফতি তকি উসমানীর -মুসলিম শরীফের ব্যখ্যা- তাকমিলা ফাতহুল মুলহিমের ভলিয়ুম ১ এর ১৫১ পৃষ্ঠা-

Sahih Muslim, Book 009, Number 3493
Abu al-Sahba' said to Ibn 'Abbas: Enlighten us with your information whether the three divorces (pronounced at one and the same time) were not treated as one during the lifetime of Allah's Messenger (may peace be upon him) and Abu Bakr. He said: It was in fact so, but when during the caliphate of 'Umar (Allah be pleased with him) people began to pronounce divorce frequently, he allowed them to do so (to treat pronouncements of three divorces in a single breath as one).

Sahih Muslim, Book 009, Number 3491
Ibn 'Abbas (Allah be pleased with them) reported that the (pronouncement) of three divorces during the lifetime of Allah's Messenger (may peace be upon him) and that of Abu Bakr and two years of the caliphate of Umar (Allah be pleased with him) (was treated) as one. But Umar b. Khattab (Allah be pleased with him) said: Verily the people have begun to hasten in the matter in which they are required to observe respite. So if we had imposed this upon them, and he imposed it upon them.

Sahih Muslim, Book 009, Number 3492
Abu Sahba' said to Ibn 'Abbas (Allah be pleased with them): Do you know that three (divorces) were treated as one during the lifetime of Allah's Apostle (may peace be upon him), and that of Abu Bakr, and during three (years) of the caliphate of Umar (Allah be pleased with him)? Ibn Abbas (Allah be pleased with them) said: Yes.

আমি জানি, আমার বাক্যালাপ হয়ত অনেক ভাই-ব্রাদার ও আলেম সাবেহদের কাছে গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু তারপরও, বলতে তো আমাকে হবেই ভাই-

3493 নং হাদিছের বক্তব্যটি কিছুটা কন্ট্রাডিক্টরি মনে হলেও (3492) নং হদিছে কিন্তু রাসূল (সাঃ) এর আমলে, হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের পুরোটা সময় এবং হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম তিন বছর 'তিন তালাককে' 'এক তালাক' হিসেবে গণ্য করা হত কিনা তার উত্তরে- Yes অর্থাৎ 'হাঁ' শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে। আর (3491) নং হদিছে তিন তালাককে যে এক তালাক হিসেবে গণ্য করা হত তা স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে।

ধরে নিলাম হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের কোন এক সময়ে হয়ত কোন বিশেষ কারন সাপেক্ষে 'একলগে তিন তালাক' দিবার পারমিশন পুরুষ জাতিকে দেয়া হয়েছিল। (তবে এ ব্যাপারে যদিও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে)

কিন্তু ওমর (রাঃ) এর সেই একক সিদ্ধান্তের উপর ভর করে আল্লাহর কালামের নির্দেশ এবং স্বয়ং রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহ এবং ২য় খলিফা হযরত আবুবকর (রাঃ) এর সময়কার ইসলামের মৌল বিধানকে কিয়ামত পর্যন্ত উপেক্ষা করা কি ইমানদারদের শোভা পায়?

187: Narrated 'Aisha: A man divorced his wife thrice (by expressing his decision to divorce her thrice), then she married another man who also divorced her. The Prophet was asked if she could legally marry the first husband (or not). The Prophet replied, "No, she cannot marry the first husband unless the second husband consummates his marriage with her, just as the first husband had done."

আল-কোরআনের বিধান অনুসারে (০২:২৩০) তালাক প্রাপ্ত কোন মহিলা যদি স্ব-ইচ্ছায় অন্য কোন পুরুষকে বিয়ে করেন এবং প্রথম স্বামীর সাথে যেমন ভাবে বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন, দ্বিতীয় স্বামীর সাথে (হাদিছ:187) ঠিক সেরূপ স্বাভাবিক বৈবাহিক জীবন যাপনের কোন এক পর্যায়ে কোন কারনে যদি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে বা দ্বিতীয় স্বামী মৃত্যুবরন করেন, তাহলে সেই মহিলা ইদ্দতপূর্ন করা সাপেক্ষে এবং তিনি ও সেই আগের স্বামী চাইলে দুজনে আবার বিয়ে করতে পারবেন। এ রকম বিয়েকে যদি হিল্লা বিয়ে বলা হত, তাহলে তো কোন আপত্তি বা সমস্যা ছিল না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে 'হিল্লা বিবাহ' নামের এমন এক ধরনের হারাম উপায় উদ্ভাবিত হয়েছে, যার বিন্দুমাত্র ইংগিতও আল-কোরআনে নেই। অবাক লাগে যখন দেখি যে, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীধারী আলেম সাহেবদের মধ্যে কেউ কেউ তা প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেন না। শুধু তাই নয়, অনেকে হালাল শব্দের সাথে 'হিল্লা' শব্দটির মিলঝুল খোঁজার ব্যার্থ চেষ্টা করেন এবং সৌদি আরবের সেই সব বর্বরদের উপমাও টানা-হেচড়া শুরু করেন যারা মানুষকে মানুষ ভাবতেও ভুলে গেছে। এই সব অ-ইসলামিক কাজ-কারবার আল্লাহর আইনের শুধু পরিপন্থি নয়, বরং পাপও বটে। সত্যিকার অর্থে 'হিল্লা বিবাহ' ধরনের কোন প্রকার ''Playful play let'' এর অস্তিত্ব প্রকৃত ইসলামে নেই। দেখা যায় প্রচলিত এই 'হিল্লা টাইপ হারাম কর্মে' একই বাক্যে একত্রে তিন তালাক দেয়ার অবৈধ পন্থাকে জায়েজ বানাবার ফন্দিফিকির করা হয়। তারপর বেদাতি ফতোয়া দিয়ে তালাক দেয়া স্ত্রীকে পুণরায় তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেবার টালবাহানা করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই সব নামকাওয়াস্তে বিয়ের আয়োজন করা হয়। এক্ষেত্রে সেই তালাকপ্রাপ্ত নারীর সম্মতি বা পছন্দ-অপছন্দের ব্যপারে কোন তোয়াক্কা করা তো দূরে থাক, অনেক সময় তাদের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে এমন একটি হারাম কর্ম করার জন্য নয়-ছয় বুঝিয়ে একরকম তাদেরকে বাধ্য করা হয়। একজন নামধারী আলেম কর্তৃক তা আবার জায়েজও দেখানো হয় এবং এক্ষেত্রে সেই জালেম রূপী আলেম মহাশয় টু-পাইস হারাম কামাই করে নেবার সুযোগটাও হাতছাড়া করতে চান না।

194: Narrated Abu Huraira: The Prophet said, "Allah has forgiven my followers the evil thoughts that occur to their minds, as long as such thoughts are not put into action or uttered." And Qatada said, "If someone divorces his wife just in his mind, such an unuttered divorce has no effect.:

অন্তরের খবর সর্বজ্ঞ মহান স্রষ্টাই ভাল ভাবে অবগত আছেন। (হাদিছ: 194) তবে পার্থিব বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন মন্দ কর্মের বিষয়ে শুধু অন্তরে ভাবলেই বা মুখে প্রকাশ করলেই তা কার্যকর হিসেবে ধরে নেয়া ঠিক নয়, বরং তা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করার ও মুখে বলার সাথে সাথে (put into action) কাজে-কর্মে ঠিক ঠিক ভাবে প্রকাশিত ও পালিত হলে তখনই কেবল তা কার্যকর হিসেবে ধরে নেয়াটা যুক্তিসংগত হতে পারে। পার্থিব কোন সিদ্ধান্ত ও বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম পন্থা। প্রমাণহীন শুধুমাত্র মুখের কথায় বাড়াবাড়ি করা মানুষের কাজ নয়। বরং এসবের বিচারের ভার সূক্ষ্ম-দ্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার উপরে ন্যস্ত করাই শ্রেয়। অথচ কোন পুরুষ মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় হোক বা রাগের মাথায় হোক, হঠাৎ তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক সাথে তিন-তালাক উচ্চারন করলেই নাকি তালাক কার্যকর হয়ে যাবে বলে ফতোয়া দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর ফলে যে কত সরল মনের মানুষ ধোকা খাচ্ছে, তাদের জীবনে শান্তি নয় বরং অশান্তির বীজ রোপিত হচ্ছে এবং ছেলে-মেয়ে নিয়ে এতদিনের সাজানো সংসার, পরিবার পরিজনের সাথে সম্পর্কের বাধন, সব মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে!!?? আল্লাহর বিধানে এভাবে তালাক দেবার কোন অধিকার যে পুরুষকে দেয়ো হয়নি- তা কি তথাকথিত সেই আলেম সাহেবরা বোঝেন না? শুধু তাই নয়, সুযোগ সন্ধানী মাতবর ও মোড়লদের কু-বুদ্ধিতে তখন সেই তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ফিরে পাবার আশায় অন্যের সাথে বিয়ে দেবার নাটকের আয়োজন করা হয় এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভাড়া করা দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবার কথা মাথায় রেখে এমনতর হারাম কর্মটি করা হয়ে থাকে। অথচ এই ধরনের ঘৃণ্য পন্থার নির্দেশনা আল- কোরআনের কোথাও বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই। কিন্তু ধর্মান্ধ ও ধর্ম-ব্যাবসায়ীদের এসব ধর্মহীন কর্মকান্ডের কারনে একদিকে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞরা অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। অপরদিকে ইসলাম বিদ্বেষীরা কুৎসা রটানোর ও মিথ্যাচারের সুযোগ পেযে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝে মনে হয়- শুধু অজ্ঞরাই নয়, শিক্ষিত জ্ঞানী- গুণীজনেরাও যেন এক অজানা পাপের ভয়ে ভীত হয়ে ধর্মান্ধ ও ধর্ম-ব্যাবসায়ীদের বেড়াজালে বিবেক হারিয়ে অন্ধ সাজার ভান করে বেসুরে সুর মেলাতে ব্যস্ত। আমাদের ভুললে চলবে না যে, আল্লাহর বিধান জীবনকে জটিল ও কঠিন নয়, বরং সরল, সহজ ও অর্থবহ করে গড়ে তোলার জন্যই প্রেরিত হয়েছে। আল- কোরআন স্বার্থবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি নয় যে তারা মনগড়া যা বলবে ও চাইবে তাই ধর্মীয় বিধান হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালার কিতাব হলো মুসলিমের জীবন পরিচালনার মূল উৎস এবং সেই উৎসের সাথে সম্পৃক্ত রাসূলের (সাঃ) সকল আদর্শ আমাদের জীবন পথের পাথেয়। তাই আসুন- মহান স্রষ্টার বাণী আল-কোরআনের রশি শক্ত করে ধরি এবং রাসূলের (সাঃ) আদর্শকে সঠিকভাবে চিনে ও মেনে জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে গড়ে তুলে।

বিজ্ঞ ও বিবেকবান আলেম সমাজের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনাদের মুখের পানে চেয়ে থাকা সরল মানুষগুলোর জীবনকে সহজ, সরল ও শান্তিময় করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যে বিধান দিয়েছেন তা সঠিকভাবে প্রকাশ করুন। অযথা কাঠিন্য আরোপ ও মনগড়া রীতির উদ্ভব ঘটিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে হাস্যস্পদ ও জটিল করে তুলবেন না। ইহকাল ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তি প্রাপ্তিই যেন আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৩
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×