তাহানী, রজনী, সুনীল, নজুদ, জারকা এবং আমাদের রুমানা- এই নামগুলোর সাথে ভিন্ন ভিন্ন জাতি, ধর্ম ও স্থান-কালের সম্পর্ক কিংবা পরিচিতি ফুটে উঠলেও তাদের নিয়তি যেন একই সূত্রে গাঁথা। তাদের অমানবিক অবস্থার কথা মনে হলেই যে ধরনের আন্ধা-রীতি বা দুর্গতির চিত্র ফুটে ওঠে, প্রকৃত অর্থে তার সাথে ধর্মের কি আদৌ কোন সম্পর্ক থাকতে পারে? মানবতা রক্ষার স্বার্থে এবং ধর্মান্ধতা দূর করার জন্য এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। ধর্মের নামে স্বার্থবাদী প্রতারণা কিংবা অতিরঞ্জিত আরোপ করলে অথবা ধর্মীয় স্পষ্ট বিধানকে উপেক্ষা করলেও যে শান্তির পরিবর্তে জীবনে অশান্তি ছাড়া আর কিছুই জোটে না, এমনকি বিপর্যয় নেমে আসতে পারে- এই ঘটনাগুলো থেকে পরোক্ষভাবে সে শিক্ষাই মেলে।
এ পৃথিবীর কোন স্থানের মানুষ ধর্ম মানুক বা না মানুক, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সর্বকালেই এবং সর্বস্থানেই জাগ্রত বিবেক ও আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগের বিকল্প নেই । কোন অন্যায় ও অত্যাচারের কারনে মানবতা যখন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে তখন কঠোর হাতে আইন প্রয়োগ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। আপাত দৃষ্টিতে দোষীকে সাজা দেবার আইনটি যতই কঠোর মনে হোক না কেন তা অমানবিক মনে করাটা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি অমানবিক কর্মকে ধর্ম কিংবা মানবতার গান গেয়ে প্রশ্রয় দেয়াটাও ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন অমানবিক কর্মকে আইনের মারপ্যাচে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা হলে যেমন তাকে আন্ধা-কানুন বা কালা-কানুন বলা যেতে পারে। তেমনি ধর্মের নামে নিষ্পাপ মানুষকে নিষ্পেষিত করার যে কোন রীতিকে অধর্মই বলতে হবে। ধর্মীয় বিধান হোক কিংবা ধর্ম-নিরপেক্ষ আইন হোক- তার অবস্থান সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে হলে মানবতা রক্ষা পাবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক। ধর্মের সাথে সরাসরি স্রষ্টার নিগূঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান, আর স্রষ্টা সর্বদা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও মানবতা রক্ষার পক্ষে মানুষের জন্যই ধর্মের অবতারণা করেছেন। সুতরাং ধর্মের নামে মানবতা বিবর্জিত যে কোন রীতির সাথে স্রষ্টা প্রদত্ত খাঁটি ধর্মের কোন সম্পর্কই থাকতে পারেনা। যদি সমাজে ধর্মের নামে এরূপ কোন রীতি চালু থকে, তবে সেটিকে স্বার্থবাদী মানুষের রচিত কুসংস্কার অর্থাৎ অধর্মই বলতে হবে।
মানুষের মন বৈচিত্রময়। কথায় বলেনা- "যার মনে যারে লাগে ভাল"। বয়সের বড় ব্যবধান সত্বেও যদি কোন নারী বা পুরুষ একে অপরকে পছন্দ করে এবং বিয়ে করে সুখি হতে চায় বা পারে, তাতে তো কারও কোন আপত্তি থাকার কথা না। আপত্তির প্রশ্ন আসে তখনই, যখন বিকারগ্রস্ত যৌন বাসনা মেটানোর জন্য বালিকাবিবাহ করাকে ধর্মীয় রীতি বানিয়ে পুণ্য অর্জনের ঢেকুর তোলার পায়তারা করা হয়। অনেক সময়ই দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহ কি জিনিস তা বোঝার মত জ্ঞান-বুদ্ধি হবার আগেই বিয়ের নামে কচি অবুঝ শিশুকে বলতে গেলে এক রকম জোর করেই কোন এক মাঝবয়সী কিংবা বৃদ্ধের গলায় ঝুলিয়ে দিতে আপনজনেরা কুন্ঠাবোধ করে না। হায়! এক্ষেত্রে কনের সম্মতি বা অসম্মতির কোন তোয়াক্কা তো করাই হয় না, বরং ধর্মের নামে পুণ্য কামাই করার নেশায় তাদের অধিকার হরণের সকল পন্থা অবলম্বন করা হয়। ধর্মান্ধ মানুষ এতটাই অন্ধ হয়ে যায যে, বিয়ের শর্ত অনুসারে সম্মতি/অসম্মতির তোয়াক্কা তো করাই হয় না, এমনকি একটা হারাম উপায় অবলম্বন করে তদের পায়ে যৌন বেড়ি পরিয়ে গুনাহের পথ বেছে নিতেও কুন্ঠিত হয়না। বরং ধর্মের নামে পুণ্য কামাই করার নেশায় তাদের অধিকার হরণের সকল পন্থা অবলম্বন করা হয়।
যেহেতু একজন মুসলিম হিসেবে আপন সমাজের এই অন্ধকার দিকটি আমাকে খুবই পীড়া দেয়। তাই অন্য কোন সমাজের রীতি সম্পর্কে বলার আগে আমার সমাজে বিরাজমান এই ভ্রান্ত রীতির রহস্য উন্মোচন করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আশা করি এ সম্পর্কে অন্য ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণও তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করবেন। মূল পোষ্টটি এখানে দেখুন-
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:০৬