somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'একলগে একাধিক বিয়া করা'- বৈধ কি?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আল-কোরআনের কাঠ-গড়ায় একাধিক বিয়ে- বৈধ কি??

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, নিচের শানেনযুল উল্লেখ করে পুরুষদের জন্য যেকোন অযুহাতে খেয়াল-খুশি মতো একের অধিক বিয়ে করায় কোন বাধা নেই বলে প্রচার করা হয়। পুঁথিগতভাবে সমব্যবহারের গান গাইলেও বাস্তব জীবনে তা মানা হচ্ছে কিনা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেদিকে কারোরই তেমন খেয়াল নেই। কেউ কেউ তো এটিকে সুন্নত পালনের বড় পাল্লায় মাপতে উঠে পড়ে লেগে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, সেই আবেগে আপ্লুত হয়ে বৃদ্ধ বয়সে বালিকা বধুকে ঘরে তোলার ভীমরতি যেন পাগলকেও হার মানায়-

[** শানে নুযুলঃ এক ইয়াতিম মেয়ের ধনসম্পদ ও বাগান ছিল । জনৈক পুরুষ সে গুলি দেখভাল করত। ঐ ব্যাক্তি সম্পদ সম্পত্তির লোভে কোনো রকম মোহর নির্ধারন না করেই মেয়েটিকে বিয়ে করে। এর পরিপেক্ষিতে আয়াতটি নাযীল হয়েছে। –মুখতাসার ইবনে কাসীর
*** এই স্থানে নারী বলতে স্বাধীনা নারী, কারন এর পরেই দাসীর উল্লেখ রয়েছে ।
**** শানে নুযুলঃ ইয়াতিমের সম্পর্কে ইন্সাফের জোরালো তাকীদ নাযীল হওয়ার পর সাহাবীগণ ইয়াতিমের বিষয়ে বিব্রত বোধ করলে এই আয়াত নাযীল করে বলা হল যে, ইয়াতিম মেয়ের ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে না পারার আশঙ্কা থাকলে ইনসাফের ভিত্তিতে অন্য মেয়েদেরকে অর্থাৎ স্বাধীনাদের অনুর্ধ চার পর্যন্ত বিবাহ করতে পারো । আবার এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যদি স্বাধীন নারীদের সাথেও সুবিচার করতে না পারো তবে বিবাহ কর একজনকে অথবা তোমাদের অধিকার ভুক্ত দাসীকে (দাসী অর্থে ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধ বন্দিনী উভয়কেই বোঝায়।)]

স্বভাবিকভাবে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে-
(****ইয়াতিম মেয়ের ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে না পারার আশঙ্কা থাকলে ইনসাফের ভিত্তিতে অন্য মেয়েদেরকে অর্থাৎ স্বাধীনাদের অনুর্ধ চার পর্যন্ত বিবাহ করতে পারো!!??
আলোচ্য শানে-নযুলের এই বক্তব্যটা কি সঠিক হলো?

তার মানে কি এই দাঁড়াল না যে, স্বাধীন নারীদের প্রতি ইনসাফ না করতে পারলেও সমস্যা নেই। যে ব্যক্তির ইনসাফ করার আশঙ্কা রয়েছে, সে আবার কেমন করে ৪ জন স্বাধীন নারীর প্রতি ইনসাফ করতে পারে!!?

ভাই, আল্লাহর কালামের বক্তব্য এতটা প্যাঁচালো/কন্ট্রাডিক্টরী নয়, বরং স্ট্রেটকাট।
ভাল করে লক্ষ্য করুন-
(**শানে নুযুলঃ এক ইয়াতিম মেয়ের ধনসম্পদ ও বাগান ছিল। জনৈক পুরুষ সে গুলি দেখভাল করত । ঐ ব্যাক্তি সম্পদ সম্পত্তির লোভে কোনো রকম মোহর নির্ধারন না করেই মেয়েটিকে বিয়ে করে। এর পরিপেক্ষিতে আয়াতটি নাযীল হয়েছে। –মুখতাসার ইবনে কাসীর)

এই গল্পটিকে যদি সত্য বলেও ধরে নেই, তাহলে তার পরিপ্রেক্ষিতে (০৪:০৩) নং আয়াত নয়, বরং নিচের (০৪:১২৭)নং আয়াতের বক্তব্যটি বেশি গ্রহণযোগ্য-

(০৪:১২৭) তারা তোমার কাছে স্বাধীন নারীদের বিধান সম্পর্কে জানতে চায়। বল, আল্লাহ তোমাদের কাছে তাদের সম্পর্কে বিধান দেন এবং এই কিতাবের মধ্যে যা তোমাদের কাছে পাঠ করে শোনানো হয় সেই সব (ইয়াতিমা-উননিসা-ই) এতিম (স্বাধীন) নারীদের সম্পর্কে যাদেরকে তোমরা তাদের জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রদান কর না, অথচ বিয়ে করার বাসনা রাখ এবং শিশুদের মধ্যে যারা অসহায় তাদেরও (তাদের জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রদান কর না), আর ন্যায্যভাবে তোমরা এতিমদের পাশে দাঁড়াও এবং তোমরা সৎকর্ম যা কিছু কর- আল্লাহ তো সে সব বিষয়ে সবই জানেন।

তাছাড়া (০৪:০২) নং আয়াতে স্পষ্টভাবে এতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ সেই এতীম নারীকে বিয়ে করলেও যেমন প্রযোজ্য, না করলেও একইভাবে প্রযোজ্য-
(০৪:০২) অর্থ- এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।

রাসূলের (সাঃ) নেতৃত্বে তৎকালীন মুসলিমগণ একের পর এক যুদ্ধ জয় করছিলেন। তাদের মধ্যে অসংখ্য নারীও বন্দী হয়। যাদের পিতামাতা, স্বামী সকলেই মুসলিমদের হাতে নিহত হয়। অপরদিকে বিপক্ষের হাতেও অসংখ্য মুসলিম নারী তাদের স্বামী, মাতাপিতা তথা অভিভাবক হারায়। আল-কোরআনের ভাষ্যমতে তাদের বেশির ভাগই এতীম ছিলেন এবং (০৪:০৩) নং আয়াতে ঐ সকল অসহায় এতীমদের ব্যাপারেই বিয়ের নির্দেশনামা দেয়া হয়েছে।

তৎকালীন যুদ্ধের নিয়ম বা রাজনৈতিক বিধান অনুযায়ী যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ বিজয়ীদের মধ্যে বন্টন করা হত। যেহেতু তখন কারাগারের সু-ব্যবস্থা ছিল না, তাই এতীম বা অধিকৃতদের সহায় সম্পদসহ তাদের নিরাপত্তার জন্য সমাজের ক্ষমতাধর কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে বন্টন করা হত। এদের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ও নিরাপত্তাসহ যৌন ভোগেরও অধিকার ছিল। কিন্তু নারীদের স্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হত না। এরূপ বিবিধ কারণে ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে নব্য মুসলিমগণ পূর্বের প্রথামত সীমাহীন ও অবাধ নারী ভোগের সুযোগ পায়। এরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অচিরেই আল্লাহতায়ালা নির্দেশ নাযিল করেন। একটি কঠিন শর্তের অধীনে (সমব্যবহার) ঐ এতিম নারীদের মধ্য থেকে ২, ৩ বা ৪ জনকে বিয়ে করার অধিকার দিয়া হয়। এভাবে তাদের স্ত্রীর-মর্যাদা প্রদান করার মাধ্যমে সীমাহীন অত্যাচার ও যৌনাচার সুকঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের ন্যায্য অধিকার দেবার তাগিদ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন-

আল-কোরআন, সূরা নিসা-
(০৪:০৩) আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, এতিম/ অনাথদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হবে না, তবে বিয়ে করে নাও যাকে উপযুক্ত মনে হয় সেই এতীম/ অনাথ (Helpless; Shelter less; unprotected) নারীদের মধ্যে থেকে দুই বা তিন কিংবা চারটি। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তোমরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তবে একটিই অথবা তোমাদের ("মা-মালাকাত-আইমানুকুম"- যুদ্ধবন্দীনি/দাসীকে) ডান হাতের অধিকারভূক্তকে; এমনটিই তো অন্যায় রোধের জন্য উত্তম।

(০৪:০৩) নং আয়াতে এতিম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং যার অর্থ শুধু পিতৃহীন শিশুই নয়, বরং পিতৃহীন দূর্বল, অসহায়, অনাথ (Helpless; Shelter less; unprotected) স্বাধীন নারী এবং পিতৃহীন ও স্বামীহারা বিধবা/ তালাকপ্রাপ্ত স্বাধীন নারীরাও এর আওতায় পড়েন। তাছাড়া সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক প্রতিকূল অবস্থার জন্য কোন রাষ্ট্রে অবিবাহিত নারীদের সংখ্যা বেড়ে গেলে 'অসহায়' অবস্থায় পতিত হবার কারণে তারাও এতিম হিসেবে গন্য হতে পারেন। যেহেতু এখানে এতিমদের প্রসংগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বিয়ের অনুমতির ক্ষেত্রে এখানে স্পষ্টভাবে (مِنَ النِّسَاءِ) -'মিনা উননিসা-ই' অর্থাৎ 'সেই নারীদের মধ্য থেকে' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং এখানে নির্দিষ্টভাবে 'সেই এতিম স্বাধীন নারীদের' কথাই বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে আমদেরকে এর পরের (০৪:১২৭) নং আয়াতের বক্তব্যের প্রতি খেয়াল করতে হবে। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, রাসূলের (সাঃ) কাছে স্বাধীন নারীদের বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে মহান আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বিধান জানিয়ে দিয়েছেন এবং এই কিতাবে সেই ইয়াতিমা-উননিসা-ই অর্থাৎ স্বাধীন নারীদের মধ্যে যারা এতিম তাদের সম্পর্কেও বিধান জানিয়ে দিয়েছেন এবং তা পাঠ করে শোনানো হয়। কিন্তু তারপরও এতিম নারী ও অসহায় শিশুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়ে থাকে। তাই এই অসহায় ও এতিমদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা এই ধরনের সৎকর্ম করেন- মহান আল্লাহ তা সবই জানেন। তাছাড়া (০৪:০৩) নং আয়াতে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে, উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হলে তবেই সেই (এতিম/অনাথ- Helpless; Shelter less; unprotected) নারীদেরকে মোহরানা নির্ধারণ করেই বিয়ে করতে হবে। সুতরাং এখানে 'বিয়ের উপযুক্ত নয় এরূপ কোন এতিম শিশুকে বিযে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে'- এমনটি ভাববার অবকাশ নেই। এতিম (অনাথ- Helpless; Shelter less; unprotected) নারীদের দূর্বলতার সুযোগে তাদের সাথে অসৎ (এক্ষেত্রে যেহেতু নারী হিসেবে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের সম্ভাবনাই বেশি থাকে, তাই সেই ধরনের) আচরণ করার কোন স্কোপ যেন না থাকে, সেই পথ বন্ধ করার নির্দেশই এখানে দেয়া হয়েছে। অগত্যা তাদেরকে যদি খুব ভাল লেগেই যায় সেক্ষেত্রে কোনরূপ ছলচাতুরী নয়, বরং সেই পিতৃহারা বা স্বামীহারা দূর্বল, অসহায়, অনাথ, বিধবা/ তালাকপ্রাপ্তা বিয়ের জন্য উপযুক্ত এতিম নারীদের মধ্যে থেকে ২, ৩ ও সর্বোচ্চ ৪ জনকে পর্যন্ত বিয়ে করার পারমিশন দেয়া হয়েছে। সুতরাং ইসলামের প্রাথমিক যুগের সেই ক্রাইসিস মোমেন্টেও এতিমের দোহাই দিয়ে দূর্বল, অসহায়, অনাথ, (Helpless; Shelter less; unprotected) বিধবা/ তালাকপ্রাপ্তাদের মধ্য থেকে ইচ্ছেমত অগনিত নারীকে বিয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার একাধিক এতিম নারীকে বিয়ে করলে যদি তাদের প্রতি ন্যায় বিচারের অন্যথা হবার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেই এতিম নারীদের মধ্য থেকে ১ জনকেই বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তা না হলে "মা-মালাকাত-আইমানুকম" অর্থাৎ 'ডান হাতের অধিকারভুক্তকে' বিয়ে করতে বলা হয়েছে। এখানে ৪ জন নারী বিয়ের প্রসঙ্গে এতিম নয় এরূপ একাধিক অবিবাহিতা স্বাধীন নারীদেরকে টেনে আনার কোন স্কোপই নেই। সুতরাং এই আয়াতের বক্তব্য অনুসারে স্বাভাবিক কিংবা বৈরি কোন পরিস্থিতিতেই একসাথে ১ জনের বেশি অর্থাৎ একাধিক এতিম নয় এরূপ অবিবাহিতা স্বাধীন নারীদেরকে বিয়ে করার বৈধতা আছে বলে প্রমাণিত হয় না। তবে পারিবারিক কিংবা সামাজিক প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামাল দেবার নেক উদ্দেশ্য নিয়ে এবং ইনসাফ করার আশঙ্কা না থাকলে ও সামর্থ্য থাকলে ৪ জন পর্যন্ত এতিম স্বাধীন নারীকে অথবা ১ জন অবিবাহিতা স্বাধীন নারীর সাথে আরও ৩ জন পর্যন্ত এতিম স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার অপশন রাখা হয়েছে। এছাড়াও যে কোন ধরনের বৈরী পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে কোন মুসলিম রাষ্ট্রে যদি এতিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে প্রথমত সেই রাষ্ট্রের সরকারকে তাদের সকল দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি সরকারের পক্ষে আদৌ সম্ভব না হয় এবং সরকারের অপারগতার কারণে তাদের প্রতি ন্যায় বিচার না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সামর্থবানদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো যেতে পারে। সেই অসহায় নারীদেরকে জনগণের সম্পত্তি বানানোটা মোটেই সম্মানজনক ও সুখকর হতে পারে না। বরং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে সেই ক্রান্তিকালের জন্য নিষ্ঠাবান ও সামর্থবান পুরুষের ঘরে ইনসাফের ভিত্তিতে অন্য দু-একজনের সাথে স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে বসবাস করাই তো উত্তম। জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে সেই ঘরের স্ত্রীরা যদি একজন অপরজনকে বোন ভেবে সমঝোতা করে নেন, তাহলে আল্লাহর কিতাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধৈর্য ধারন ও পার্থিব স্বার্থকে ত্যাগ করার মাধ্যমে অবশ্যই মহান আল্লাহকে খুশি করতে সক্ষম হবেন। এই ত্যাগ স্বীকারের কারনে ছোট-খাট ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে পরকালীন অনন্ত প্রতিদান থেকে নিশ্চই মহান স্রষ্টা তাদেরকে বিমুখ করবেন না।

এবার নিচের আয়াতের বক্তব্যর দিকে ভাল করে লক্ষ্য করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে-
সূরা নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:১২৮) অর্থ- যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, অতঃপর শান্তির শর্তে পরস্পর মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন পাপ নাই। মিটমাট/ পুন-মিত্রতা/ মিমাংসার পন্থাই উত্তম। মনের মধ্যে লোভ বিদ্যমান থাকে; যদি তোমরা সৎকর্ম কর ও ভয় কর (আল্লাহকে), তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তার সব খবর রাখেন।
(০৪:১২৯) অর্থ- আর তোমরা কখনই (একাধিক) স্বাধীন নারীদের প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হবে না, যদিও এর আকাঙ্খা করে থাক। অতঃপর প্রবৃত্ত হইও না এ সকল আসক্তিতে এবং তাকে (এক স্ত্রীকে) দোদুল্যমান অবস্থায় একাকি ফেলে রেখে। আর যদি সমঝোতা করে নাও এবং খোদাভীরু হও, তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
(০৪:১৩০) অর্থ- আর যদি তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় প্রশস্ততা দ্বারা প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।

(০৪:১২৮) নং আয়াতে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ বা উপেক্ষার বিষয় ঘটলে নিজেদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্ত সাপেক্ষে আপোস-নিষ্পত্তি করে নেয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই সততা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। (০৪:১২৯) নং আয়াতের বক্তব্যে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, মানুষ হিসেবে যেহেতু সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও চাওয়া পাওয়া এক রকম নয়, তাই যারা বিয়ে করা এক স্ত্রীকে ছেড়ে সখের বসে একাধিক স্বাধীন নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাবার বাসনা করে, সেক্ষেত্রে তারা মনে মনে এমনটি চাইলেও একসাথে একাধিক স্বাধীন নারীদের বিয়ে করে তাদের (স্ত্রীদের) প্রতি কখনই সুবিচার করতে সক্ষম হবে না। তাই একজন স্ত্রীকে একাকি দোদুল্যমান অবস্থায় ফেলে রেখে এ ধরনের আসক্তিতে প্রবৃত্ত না হওয়ার নির্দেশই দেয়া হয়েছে। অতঃপর কোন প্রকার লোভ-লালসার মোহে পড়ে নয়, বরং বিশেষ ও ন্যায় সঙ্গত কারনে যদি (স্বামী ও স্ত্রী) একে অপরকে পছন্দ নাই হয় এবং অগত্যা সংসার করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে ঝুলিয়ে না রেখে বিধিমত পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদ করে নেয়াই উত্তম। তারপর চাইলে পছন্দ মত অন্য কাউকে বিয়ে করায় কোন দোষ নেই। (০৪:১৩০) নং আয়াতে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এরূপ সততা রক্ষাকারীদের জন্য অভাবমুক্ত করে দেবার অঙ্গিকার করা হয়েছে।

প্রায়ই দেখা যায় যে, সন্তান বিশেষ করে পুত্র সন্তান হচ্ছে না এই অযুহাতে একাধিক বিয়ের পাঁয়তারা করা হয়। অনেক সময় স্ত্রীর মারাত্মক কোন অসুস্থতার দোহাই তোলা হয়। এরূপ বিভিন্ন কারন দেখিয়ে এক স্ত্রীকে অসহায়ভাবে ফেলে রেখে তারই চোখের সামনে আরেক নারীকে স্ত্রী বানিয়ে নিয়ে এসেই শুধু ক্ষান্ত হয় না। বরং বৈধতার লাইসেন্স পেয়ে নুতন স্ত্রীর সাথে ফস্টিনস্টির মাত্রাটা এমন আকার ধারন করে যে তা নির্লজ্জের মত প্রদর্শন করতেও যেন তাদের বিবেকে বাধে না। ইসলামের নামে অসমব্যবহারের এরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করাটা কোন নিরেট ধর্মান্ধ কিংবা অজ্ঞ ধর্মহীনেরা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যারা আল্লাহকে সত্যিই ভয় করেন, তারা এ পথে পা বাড়াতেই পারে না। এরূপ আচরণ করা অমানবিক এবং অত্যন্ত গুণাহের কাজ। অনেকে পাশ্চাত্যের উপমা টেনে ব্যভিচার রোধের জন্য একসাথে একাধিক বিয়ে করার পক্ষে গান গায়। কিন্তু তাদের এই যুক্তি সত্যিই হাস্যকর। প্রকৃত অর্থে যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই তারা বিয়ে করার পরও ব্যভিচার করে। আর যারা ইমানদার তারা একটি বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকে। আর যাদের বিয়ের সামর্থ নেই তারা সামর্থ না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখে ও ধৈর্য ধারন করে।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বা খলিফাদের সমস্ত বিয়ে গুলোই সেই সময়ের পরিস্থিতি অনুসারে আল্লাহর ওহী নাজিল হওয়ার মাধ্যমে যেমন সঠিক ছিল। তেমনি এখনও যদি সেরূপ পরিস্থিতি এরাইজ করে, তাহলে আল্লাহর ওহী সেরূপই কার্যকর হবে। কোন নির্দিষ্ট সময় বা পরিস্থিতির দোহাই দেয়া নয়, বরং কিয়ামত পর্যন্ত সকল সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিমদের জন্য আল্লাহর আইন খুবই যুক্তিসংগত এবং কার্যকর বৈকি?

তবে সৌদি বাদশা বা ধনীরা বা অন্য কে কি করেছে বা করছে, তা কখনই মুসলিমদের আদর্শ নয়- আমি সব সময়ই এসবের ঘোর বিরোধিতা করি।

অতএব সামর্থ থাকলেই বৃহত্তর কোন বিশেষ কারণ ছাড়া আপন খেয়াল-খুশিমত একসাথে একাধিক বিয়ে করা কখনও বৈধ ছিলনা এবং এখনও তা হতে পারে না।

মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করেন-
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮
২৭টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×