১৯৯৬ সালে পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত মাতৃকোষের ক্লোনিং-এর মাধ্যমে মাতৃপ্রতিরূপ 'ডলি' নামক ভেড়ি জন্মগ্রহণ করে। ডলির জন্ম-প্রক্রিয়ায় নব পদ্ধতির উদ্ভাবক ব্রিটিশ এমব্রায়লজিষ্ট প্রফেসর আয়ান উইলমুট ও তার সহকর্মীবৃন্দ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ অবস্থিত রসলিন ইন্সটিটিউটে গবেষণাটি চালান। অযৌন প্রজননের ক্ষেত্রে তারা যে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন তা সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জগতে নিঃসন্দেহে একটি বিপ্লবাত্মক মাইলফলক।
কিন্তু লজ্জাজনক ও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কোন কোন প্রচার মাধ্যম ও পত্র পত্রিকায় উইলমুট সাহেব ও ডলির ছবি ছাপিয়ে তার নিচে 'ডলি ও তার স্রষ্টা প্রফেসর আয়ান উইলমুট' - এই ধরণের অতিশয় উক্তি করা হয়েছিল।
British embryologist Professor Ian Wilmut created "Dolly"
তাই না দেখে সঠিকভাবে বিচার বিবেচনা না করেই অতি উৎসাহী কতিপয় ব্যক্তি জীবনকে হাতের মুঠোয় ভরার বেসুরা গান গাইতে শুরু করে। যা খুবই আপত্তিকর। কারণ উইলমুট সাহেব তো মাতৃকোষের স্রষ্টা নন অথবা ডিম্বাণুও সৃষ্টি করতে পারেন নাই। বরং অযৌন প্রজননের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর বদলে একটি পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত কোষের নিউক্লিয়াসকে কাজে লাগিয়ে জন্মপ্রক্রিয়ার সূচনায় বিরাট পদ্ধতিগত সাফল্য অর্জন করেছেন মাত্র। সুতরাং তাকে সরাসরি 'ডলির স্রষ্টা' হিসেবে প্রচার করা মোটেই যুক্তিসঙ্গত হয়নি। ডঃ সাহেব যদি নিজের আয়ত্তাধীনে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে কোষ গঠন কোরে তাতে প্রাণ-সঞ্চার করতে সক্ষম হতেন এবং তা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডলি জন্মলাভ করত, তাহলে এই উক্তিটি মানানসই হত বটে। কিন্তু এর পূর্বে এ ধরণের অতিরঞ্জিত বক্তব্য প্রচার করা হলে প্রকৃত ঘটনা ও সত্যের অবমূল্যায়নই করা হয়।
আল-কোরআন- সূরা বণী ইস্রাঈল-আয়াত নং-৮৫
(১৭ : ৮৫):-তারা তোমাকে রূহ্ (প্রাণ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলে দাও, রূহ্ (প্রাণ) আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ সম্পর্কে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।
আল- কোরআনের এই আয়াতটির সাথে একাত্মতা ঘোষনা করার সাথে সাথে যারা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে, প্রতিটি অনুকণা থেকে শুরু করে এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল সৃষ্টির স্রষ্টা মাত্র একজনই এবং প্রাণ-সঞ্চার করা একমাত্র তাঁরই আয়ত্তাধীন এবং সেইসাথে বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান ও নব নব আবিষ্কারের প্রতিও যারা শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখেন তাদের কাছে কিন্তু প্রদত্ত উক্তিটি (ডলি ও তার স্রষ্টা প্রফেসর আয়ান উইলমুট) বর্তমান বৈজ্ঞানিক সাফল্য ও অগ্রগতির আলোকে মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়। ভেড়ি নিয়ে এরূপ ভাঁড়ামি ও বেখাপ্পা উক্তি চোরামির পর্যায়ে পড়ে বৈকি। তেমনি আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া বা মিথ্যা ভেবে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে না চাওয়াটাও গোঁড়ামি বটে।
এমন কতগুলো অলৌকিক ঘটনা রয়েছে যেগুলো মানব রচিত আজগুবি গল্প নয়; বরং স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালার আদেশেই ঘটেছে এবং অবিকৃত ও মূল উৎস থেকে উৎসারিত ঐশীবাণীও সেগুলোকে সমর্থন করে। বর্তমানে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির আলোকে এ ঘটনাগুলোর বাহ্যিক কারণ ও প্রক্রিয়া কিছুটা বোধগম্য হচ্ছে। তবে কোন অলৌকিক শক্তির নিখুঁত নিয়ন্ত্রণাধীনে সেগুলো ঘটছে তা পরোপুরি উদঘাটন করা না গেলেও স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে। সুতরাং অস্বীকার না করে গবেষণায় রত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পিতা ছাড়া অর্থাৎ শুক্রাণু ছাড়াও যে মাতৃগর্ভে সন্তান জন্ম নিতে পারে, এক সময় এ বিষয়টি অত্যন্ত বিতর্কিত ও অবিশ্বাস্য ছিল। তাই হযরত ঈশা (আঃ)-এর জন্ম রহস্য অনেকের কাছেই একটা অবান্তর এবং অবৈজ্ঞানিক গুজব হিসেবে পরিগণিত হত। অবিশ্বাসের ঘোরে নিমজ্জিত মানুষেরা তাই আল্লাহর স্বঘোষিত এই সত্য নিদর্শনটিকে কতিপয় মিথ্যে মতবাদের আড়ালে ঢেকে রাখতে চেয়েছে। এমন কি কুৎসা রটনা করতেও পিছপা হয়নি। বর্তমানে ক্লোন-পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে এ বিষয়টি তো অন্ততঃপক্ষে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিশেষ উপায়ে শুক্রাণুর বদলে একটি জীবন্ত স্ত্রী-প্রণীর পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত কোষ থেকে নিউক্লিয়াস সংগ্রহ করে তা একই জাতীয় অন্য একটি প্রাণীর ডিম্বাণুতে বিশেষ উপায়ে নিষিক্ত করলে ভ্রুণ গঠিত হয় এবং এতে ক্ষীণ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে ক্রিয়াশীল রাখা হয়। এরপর কয়েকদিন (৫ - ৬ দিন) কৃত্রিমভাবে কালচার করার সময় যে ভ্রুণগুলোকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দেখা যায়, সেগুলোকে মাতৃ-জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করলে এবং মহান স্রষ্টার ইচ্ছা ও অনুগ্রহ থাকলে গতানুগতিক জন্মপ্রক্রিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী জন্মলাভ করে।
আল-কোরআন-সূরা মরিয়ম- আয়াত নং-(১৬ - ২২)
সূরা নং-১৯, আয়াত নং-১৬:- বর্ণনা কর এ গ্রন্থে উল্লেখিত মরিয়মের কথা, যখন সে তার পরিবার বর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে একস্থানে আশ্রয় নিল, আয়াত নং-১৭:- অতঃপর ওদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে পর্দা করল। অতঃপর আমি তার নিকট আমার ( দূতকে ) জিব্রাঈলকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। আয়াত নং-১৮:- মরিয়ম বলল, ‘তুমি যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে আমি তোমা হতে দয়াময়ের স্মরণ নিচ্ছি।’ আয়াত নং-১৯:- সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার প্রতিপালক প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র সন্তান দান করার জন্য।’ আয়াত নং-২০:- মরিয়ম বলল, ‘কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি ও আমি ব্যভিচারিণীও নই ?’ আয়াত নং-২১:- সে ( ফেরেস্তা ) বলল, ‘এরূপই হবে।’ তোমার প্রতিপালক বলেছেন, ‘এ আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি তাকে এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’ আয়াত নং-২২:- অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল ও তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল ;
উপরের আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি যে, মহান আল্লাহতায়ালা এক বিশেষ ব্যবস্থাপায় কোন পুরুষের ঔরস ছাড়াই হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর পবিত্র গর্ভে পুত্র সন্তান দান করেছিলেন। আর তিনি হলেন অন্যতম নবী হযরত ঈসা (আঃ)। (১৯:২১) নং আয়াতে এই ব্যতিক্রমী ঘটনাটিকে মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও এক অনুগ্রহ হিসেবে প্রকাশও করে দিয়েছেন। যদিও ঈসা (আঃ) কে জন্মদানের জন্য ক্লোনিং পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছে এমনটি ভাববার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তাই বলে মানুষের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াও ঠিক নয়। যত হৈ চৈ-ই হোক না কেন বিবেকবান মানুষের দ্বারা ক্লোন-পদ্ধতির সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে মানবজাতির যে প্রভূত কল্যাণ সাধিত হতে পারে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি জেনেটিক্স-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিশেষজ্ঞগণ জীন-থেরাপির মাধ্যমে কতিপয় সুপ্ত ও বংশগত রোগের জন্য দায়ী জীনগুলোকে বদলে দিয়ে সেই রোগ থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারবে বলে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি ব্রিটেনের খাদ্য গবেষকরা ক্লোন করা গবাদি পশুর মাংশ ও দুধ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
*The Advantages of Cloning-
1) Solution to infertility? 2) Provide organs for transplantation. 3) Provide treatments for variety diseases. 4) Genetic modification / engineering. 5) The healthiness of infants. 6) Better understanding of genetic diseases. 7) Help improve lives
*Among the advantages offered by cloning are the following:
তবে ক্লোনিং এর যে বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই-
What are Some Disadvantages of Cloning?
1) One of the biggest disadvantages of cloning is that the technology is still so uncertain.
2) Losing gene diversity is another of the disadvantages of cloning.
3) There are a lot of ethical considerations that would cause most people to protest.
4) There is always a risk of cloning technology being abused. For example, imagine what a corrupt dictator could do with cloning.
5) However, the disadvantages of cloning are seen by many to far outweigh any benefits that might be seen. Because of the risk taking involved in cloning, it is a technology that many experts say may be better left alone, at least until it is better understood.
সুতরাং ক্লোনিং এর অকল্যাণকর ও অমানবিক প্রয়োগের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য যে খেসারত দিতে হবে- তাতে সন্দেহ নেই।
সুতরাং ক্লোনিং এর অকল্যাণকর ও অমানবিক প্রয়োগের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য যে খেসারত দিতে হবে- তাতে সন্দেহ নেই।
ক্লোনিং- পদ্ধতির আরও উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে শুধুমাত্র পিতৃ অথবা মাতৃ প্রতিরূপই নয়; বরং জেনেটিকাল ক্লেনিং এর মাধ্যমে সেক্স-ক্রোমসোমের জীনগুলোর পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সাধন করলে পুরুষ প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত কোষ থেকে স্ত্রী-লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যধারী অথবা স্ত্রী-প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত কোষ থেকে পুং-লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যধারী পূর্ণাঙ্গ জীব জন্মগ্রহণ করে কিনা, অথবা স্ত্রী প্রজনন কোষের অর্থাৎ ডিম্বকোষের ডিম্বাণূতে অবস্থিত সেক্স ক্রোমসোমের জীনগুলোর পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে তার কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটানো যে সম্ভব হতে পারে- আমার মনে হয় পবিত্র কোরআনের {৪ নং সূরা নিসা-এর-১ নং আয়াত, ৭ নং সূরা আরাফ-এর-১৮৯ নং আয়াত ও ২৩ নং সূরা মু’মিনন-এর-১২, ১৩ ও ১৪ নং আয়াত} ঐশী তথ্যগুলোর অনুবাদ সঠিকভাবে অর্থাৎ আরবী প্রত্যেকটি শব্দের মূল অর্থ ও ভাব অনুযায়ী করে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষনা করলে হয়ত এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনা লাভ করা যেতে পারে।
এভাবে আল-কোরআনের ঐশী-জ্ঞান ও খাঁটি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অন্তর-চক্ষু ও জ্ঞান-চক্ষুর উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে এবং এই সমন্বিত জ্ঞানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জহৎসমূহের স্রষ্টা ও পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এক আল্লাহতায়ালার প্রতি সব সময় অটল বিশ্বাস রাখতে হবে। স্রষ্টা কর্তৃক সৃষ্ট উপাদানসমূহের অহেতুক অপচয় ও ধ্বংস না করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সুষ্ঠু বন্টন ও ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জাতি তথা জগদ্বাসীর হিত সাধনে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল এই পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণ ও সুখময় পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন যতক্ষণ মানবকল্যাণে ও শরীয়ত সম্মত উপায়ে ব্যবহার করা হবে ততক্ষণ কোন আপত্তি নেই। কিন্তু মানবজাতিকে কলুষিত করার লক্ষে অমানবিক যে কোন কর্মকান্ড অত্যন্ত আপত্তিকর এবং তা অবশ্যই পরিহার করা উচিত। তা না হলে এর পরিণাম স্বরূপ ইহজগতে তো বটেই পরকালেও অশান্তি ছাড়া কিছুই মিলবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



