somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল-কোরআন সম্পর্কিত আজব অভিযোগ! এবং তার জবাব-

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
"আল-কোরআন সর্বদাই নির্ভুলভাবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং হবে"- আমি কেন এমনটি বিশ্বাস করি?
১/ আমি এখন পর্যন্ত আল-কোরআনের মাঝে বিন্দু মাত্র অসামঞ্জস্যতা খুঁজে পাইনি। তাই এটি সংরক্ষণের বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহতায়ালার অঙ্গীকার এবং আল-কুরআনের আয়াতকেই আমি এটির নির্ভুলতা প্রমানের মূল রেফারেন্স হিসাবে বিবেচনা করি। এরপর পূর্ণাঙ্গ আল-কোরআনের সবচেয়ে প্রাচীনতম কপি গুলোই এটির নির্ভুলতা প্রমাণের পার্থিব দলিল হিসেবে গ্রহনযোগ্য।
২/ রাসূল (সাঃ) এর সময় থেকেই ওয়াহী নাজিলের সাথে সাথে তিনি নিজে তা মুখস্ত করতেন। শুধু তাই নয় তাঁর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে বেশ কয়েকজন কাতেবীনে ওয়াহী সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে লিখে রাখতেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আমলে একটি বিশেষ কমিটি করে সকল ওহী লেখকদের কাছ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে অনারবদের পঠন, শুদ্ধ উচ্চারণ ও বোঝার সুবিধার্থে নুকতা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই নুকতা কিভাবে দিতে হবে তা হযরত আলী (রাঃ) এবং তখন যে সাহাবাগণ (রাঃ) ছিলেন তারা অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সাবধানতার সাথে এবং সুন্দরভাবেই সমাধা করেছিলেন। আল-কোরআন নাজিলের সময় থেকেই এভাবে অনুগত সাহাবাগনের পঠন, লিখন ও মুখস্ত করার মাধ্যমে কোরআন সংরক্ষন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সেইভাবেই চলছে এবং চলবে। হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে পূর্ব থেকে সংগৃহীত আল-কোরআনের লিখিত কপিগুলোকে বিশেষ কমিটি করে পুস্তকাকারে সংকলনের ব্যবস্থা করেন এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রেরণ করেন।

৪/ সুতরাং আল-কোরআন সংরক্ষণের বিষয়ে to the point উত্তর হচ্ছে: শুধু মৌখিক নয়, বরং মৌখিক ও লিখিতভাবে যে কুরআন চলে এসেছে তা অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং সেই যুগের সর্বোত্তম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

সুতরাং শুধু বিশ্বাসই নয়, ইতিহাসও আমাদের জানাচ্ছে যে, মোহাম্মদ (সাঃ) কাছে যখন ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) ওহি নিয়ে আসতেন এবং এমনভাবে পড়ানো হতো যে রসুলে (সাঃ) মুখস্ত হয়ে যেত [ সূরা আলা- (৮৭:০৬) আমি আপনাকে এমনভাবে পড়াবো যে আপনি ভুলতে পারবেন না, (৮৭:০৭) অবশ্য আল্লাহ যা ভুলাতে চান তার কথা আলাদা।]। উপস্থিত সাহাবাগণকে (রাঃ) মুখস্ত ও লিখে রাখার পরামর্শ ও নির্দেশ দিতেন। এর পর থেকে সেই সিল সিলা এখনো জারি রয়েছে। যা মানব ইতিহাসে অনন্য , বেনজির। তাই রাসূল (সাঃ), তাঁর চার খলিফা (রাঃ) এবং তাঁর অনুগত ও বিশ্বস্ত সাহাবাগণ (রাঃ) নিরলস প্রচেষ্টার মধ্যমে যা সংরক্ষণ করেছেন এবং মহান আল্লাহ যা সংরক্ষণের জন্য অঙ্গিকার করেছেন এবং এখন পর্যন্ত যে ঐশী গ্রন্থটি কোটি হাফেজে-কোরআনের সিনায় সিনায় ও পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিমের ঘরে ঘরে একই আরবী গ্রন্থ রূপে বিরাজ করছে, সেই অলৌকিক মহাগ্রন্থের সঠিকতা প্রমানের জন্য আর কোন প্রমানের প্রয়োজন নেই।

* সর্বোপরি আল-কোরআন সংরক্ষণের বিষয়ে আল্লাহতায়ালার বাণীকে যদি কেউ গুরুত্ব না দেন, তাহলে তারা তাদের অহেতুক অবিশ্বাস নিয়েই থাক। আমি আমার জানা, বোঝা ও বিশ্বাস নিয়েই থাকতে চাই।
মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং শান্তি ও মুক্তি দেন-
………………………………………………
আল-কোরআন সম্পর্কিত আজব অভিযোগ! এবং আমার জবাব-

অভিযোগকারীর প্রশ্ন ও অভিযোগ-
১। নবিজির অফাতের পর পরবতি ৪০ হিজরি পর্যন্ত ৪ খলিফার ৩ খলিফাকে কেন হত্যা করা হল? ৪০ বসরেই মুলিম আরব জাতি কান বরবর হত্তাকারিতে পরিনত হল? মুসলিম জাতি বিভক্ত হয়ে শিয়া, খারেজি হল? একাধিক জুধ কেন সঙ্ঘটিত হল?
২। অসমান (রা) দারা সঙ্কলিত কোরান আর আজকে আমরা যে কোরান পাই তা কি হুবুহু এক!! ১২ টী আঞ্চলিক ভাসাতে লিখিত কোরান কেন আজ এক্তিতে পরিনত হল!! নবী, খলিফা, তাবেইন্রা কি তার নিরদেশ দিএসিল?
৩। আপনি সত্য কার পথে খুজে জাছেন? শিয়া মতবাদ ও অদের হাদেসের আলোকে নাকি সুন্নি মতবাদ ও অদের হাদিসের আলোকে?
৪। যদি উপরের বিষয় গুলা ইতিহাসের আলোকে সত্য হয়ে থাকে (জদিও প্রমান করার আর কোন পথা নাই) তবে নবিজির অফাতের ২০০/৩০০ বসর পরে ইরাক ইরানের লকের আরবে এসে নবির কথাবানি হাদিস সঙ্কলন কততা সত্য হতে পারে? যেখানে কোরান গ্রহন্তই বিতরকের উরধে নয়?
উত্তর গুলা একটু বিস্তারিত দিলে উপকৃত হব!!! আশা করি এরিএ জাবেন না!!!
……………………………………………
আমার জবাব-
আপনি একসাথে অনেক কেন??? এর উত্তর চেয়েছেন। এতকাল পরে ইতিহাস নির্ভর এসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবার ক্ষমতা আমার নেই। কেন নেই, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। এরপরও বুঝতে না পারলে আমার আর কিছুই করার নেই। হেদায়েত দেবার মালিক তো মহান আল্লাহতায়ালা।

আপনি যে ইতিহাসের কথা জানতে চেয়েছেন, সে সম্পর্কে আমি যতই বেশি বেশি জানতে চেষ্টা করেছি, ততই পিছিয়ে পরেছি। সে সময়কার পারিপার্শিক অবস্থার কিছু রসদ পাওয়া গেলেও এই ইতিহাসের মাঝে যে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই। তাই সত্যের সন্ধান পাবার পরিবর্তে অসত্যের আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে অবশেষে এসব গৌণ জ্ঞানকে একপাশে রেখে মূল সোর্স অর্থাৎ মহান স্রষ্টা প্রেরিত আল-কোরআনের দিকেই মুখ ফেরাতে বাধ্য হয়েছি। সেই সাথে আল-কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন হাদিছগুলোকেও আমি প্রাধান্য দিতে চাই। কারন আল-কোরআনের সঠিক প্রয়োগের জন্য রাসূলের (সাঃ) কর্মপদ্ধতি, আদর্শ ও আচার-আচরণ সম্পর্কেও সঠিক ধারনা থাকা জরুরী। আর এজন্যই সহী হাদিছ অনুশীলনেরও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।

হাদিছ সংকলনের ব্যাপারে আপনি যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা যদিও সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কিন্তু তারপরও যেহেতু বিষয়টি বিতর্কের উর্ধে নয়, তাই হাদিছগ্রন্থকে সঠিকতার মানদন্ডে কখনই আল-কোরআনের সাথে তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। যারা এমনটি করেন, তারা অবশ্যই ভুল করেন। তাই আল-কোরআনের বক্তব্যের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক নয় এরূপ সহী হাদিছগুলো যাচাই বাছায়ের সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন বিবেকবান ও জ্ঞানী মুসলিম কাজ করতে চাইলে আমি অবশ্যই তাকে সমর্থন করব।

তিন খলিফার হত্যাকারীরা ইসলামের দুশমন ও কুচক্রী মহলের মদদপুষ্ট ছিল এবং মুসলিমদের উদাসীনতার কারনেই এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। এখনও সেই সিলসিলা জারি রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজও মুসলিম নামধারী একটি দল তাদের আজ্ঞাবহ। এমনকি তাদের কুমন্ত্রণায় আল-কোরআনকে ভুল হিসেবে প্রচার করতেও কুণ্ঠিত নয়।

একজন সত্যান্বেষী হিসেবে ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটিকে মুসলিমদের জন্য চরম টানাপড়েনের একটি অধ্যায় বলতে আমার লজ্জা /দ্বিধা নেই। এই ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনা অনুধাবনের মাধ্যমে তা স্বীকার করলে যেমন ইসলামের মূল স্পিরিটের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। তেমনি এটি জানা বা না জানার কারনেও একজন মুসলিম তার বিশ্বাসের পথ থেকে এক বিন্দুও বিচ্যুত হবেন না। তবে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলে ক্ষনিকের জন্য হলেও হয়ত বিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অপরদিকে বলা যায়, এটির সঠিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মধ্যে মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে বলে আমি মনে করি। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, এই পর্বটি আল-কোরআন সংরক্ষণের আগে নয়, বরং পরেই সংঘটিত হয়েছে। নিজেদের মধ্যে এইসব বিবাদ, রক্তপাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহগুলো প্রকৃত অর্থে নানা চক্রান্ত প্রসূত ভুল বুঝাবুঝি ও সঠিক তথ্য আদান প্রদান জনিত সীমাবদ্ধতার ফসল। তবে সেই ক্রান্তিকালেও প্রকৃত মুসলিমরা কখনই মহান স্রষ্টা প্রেরিত মূল গ্রন্থ আল-কোরআনের উপর বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করেনি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি, ভিন্ন মতের অনুসারী হওয়া সত্বেও এ যুগেও পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা মুসলিম সমাজের প্রতিটি স্তরের অতি সাধারন মুসলিমও জীবন থাকতে আল-কোরআনের উপর বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করেনা এবং ভবিষ্যতেও করবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি।

সত্যিকার অর্থে আল-কোরআন ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক নয় এরূপ কোন মতামত বা মতবাদকে আমি অবজ্ঞা করিনা। বরং ভালকে ভাল এবং মন্দকে মন্দ বলে চেনার পাশাপাশি সে সম্পর্কে কিছূ বলার জন্য স্বচেষ্ট থাকি।
………………………………………………………….
অভিযোগকারীর অভিযোগ-
১। আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্বারীগণ কোরানের আয়াতের সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন: কুফীদের মতে: ৬,২৩৬টি আয়াত; বসরাবাসীদের মতে: ৬,২১৬টি আয়াত; সিরীয়াবাসীদের মতে: ৬,২৫০টি আয়াত; ইসমাইল ইবনে জাফর মদনীর মতে: ৬,২১৪টি আয়াত; মক্কীদের মতে: ৬,২১৮টি আয়াত; হযরত আয়শার মতে: ৬,৬৬৬টি আয়াত”। [দ্র: সং. ই. বিশ্বকোষ,১ম খ. ৩য় মুদ্রণ ‘আয়াত’ অধ্যায়; পৃ: ৭০; ই. ফা.
২। বেশি দিনের কথা নয়, প্রায় ৫০ বৎসর পূর্বের অনুদিত ও প্রকাশিত যে কোন কোরানের প্রারম্ভে কয়টি সুরা, কয়টি পারা, মনজিল, রুকু, সেজদা ও আয়াত, শব্দ, জের, জবর, পেশ, তাসদিদ সংখ্যার হিসাবসহ একটি স্বতন্ত্র তালিকা থাকতো এবং তাতে আয়াতের সংখ্যা ৬,৬৬৬টি উল্লেখ থাকতো। কিন’ আধুনিক প্রকাশিত কোরানে সবই থাকে কিন’ আয়াত সংখ্যা থাকে না। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত কোরান অন্যতম। এর কারণ অজ্ঞাত ও রহস্যজনক বটে! বলাবাহুল্য, মোবারক করীম জওহর অনুদিত কোরানে আজও ৬,৬৬৬টি আয়াত লেখা আছে; লেখা আছে আশরাফ আলী থানভীর অনুদিত কোরানসহ অধিকাংশ কোরানে। কিন’ কোরানখানির আয়াত সংখ্যা একুন করলে পাওয়া যায় মাত্র ৬,২৩৬টি; অর্থাৎ ৪৩০ টি আয়াত কম! বিবি আয়শার মতে আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬টি। তার স্ব-পক্ষে একটি ঐতিহাসিক দুর্দান্ত- প্রমাণ রয়েছে:
তৎকালে তুরস্কের শাষণকর্তা আরবের খলিফা নামে রাজা-বাদশাদের শুভ দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কোরানের ৬,৬৬৬টি আয়াতের প্রমাণ ও প্রতীক স্বরূপ ৬,৬৬৬টি স্বর্ণের মোমবাতি সংবলিত মহা মূল্যবান একটি বাতিদানী তৈরী করেন কাবা ঘরে উপহার দেয়ার জন্য। কিন্তু’ বিধি বাম, হঠাৎ মুসলিম বীর কামাল আতাতুর্কের আগমণে তুর্কী মৌলবাদ লন্ড-ভন্ড হওয়ার ফলে সে পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। অতঃপর কামাল পাশা তোপকাপী মিউজিয়ামে ঐ বাতিদানীটি রক্ষণ করেন, যা আজও সেখানে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, হযরত ওসমানের লিখিত কোরানও সেখানে রয়েছে। [ দ্র: সরাসরি তোপকাপী মিউজিয়াম অথবা এ্যাম্বেসীতে খোঁজ নিতে হবে
....................................................
আমার জবাব-
*উপরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি অল্প কথায় একটি উদাহরনের মাধ্যমে উত্তর দিতে চাই-
আল-কোরআন পাঠের সময় বিশেষ কিছু স্থানে ওয়াকফ করতে হয় অর্থাৎ থামা জরুরী এবং না থামলে গোনাহ হয়। আবার কিছু কিছু স্থানে থামা ও না থামা উভয়ই অনুমোদিত অর্থাৎ না থামলেও চলে। আর এ কারনেই অনেকে একসাথে একের অধিক আয়াত/বাক্যকে একসাথে ধরে গুনেছেন। আবার অনেকে প্রতিটি ওয়াকফ/থামার স্থানকে এক একটি বাক্য হিসেবে ধরে গুনেছেন।
বাংলা ভাষাতেও কোন বিষয়কে একই সংখ্যক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে যেমন বিভিন্ন সংখ্যক বাক্য রূপে প্রকাশ করা যায়। আরবী ভাষার ক্ষেত্র্রেও এটি প্রযোজ্য এবং আরও সহজ বটে। তবে এক্ষেত্রে শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনরূপ অসামঞ্জস্যতা ও বিকৃত অর্থ পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়।
উদাহরন স্বরূপ-
১/ আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন রোগী দেখলাম। তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউ-তে স্থানান্তর করি, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এখন আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ।
(এখানে পাঁচটি আয়াত/বাক্য রয়েছে)
এবার দেখুন-
২/ আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন রোগী দেখলাম যিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউ-তে স্থানান্তর করি এবং সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এখন আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ।
(এখানে দুইটি আয়াত/বাক্য রয়েছে)

আয়াত/বাক্যের পার্থক্য হওয়া সত্বেও উভয় বক্তব্যে তথ্য ও ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে মৌলিক কোন পার্থক্য আছে কি? আরবী ভাষায় বিষয়টি আরও সহজবোধ্য।
যারা আকলমান্দ, এই উদাহরন থেকে প্রকৃত বিষয়টি তারা ঠিকই বুঝে নেবেন।
...............................................
অভিযোগকারীর অভিযোগ-
৩। তফসিরে বায়দবীতে বলা হয়েছে যে, সুরা বাকারাতে ২৮১ টি আয়াত আছে। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, অধিকাংশের মতে কোরান মজিদের অবতীর্ণ শেষ আয়াতটি সম্বন্ধে হযরত (দ) বলেন, “ইহাকে বাকারার ২৮০তম শেষ আয়াতের পরে সন্নিবেশিত কর।” [ সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খ. ৩য় মুদ্রণ; ‘আয়াত’ অধ্যায়; পৃ: ৭০; ই. ফা.]
..................................................
আমার জবাব-
*হাসালেন। আপনি এখানে যে অভিযোগটি করলেন তা তো আপনার জন্য শোভা পায় না। কারন একদিকে তো আপনি আল-কোরআনের সঠিকতা সম্পর্কে সন্দেহের মধ্যে আছেন। তার উপর আবার হাদিছ অস্বীকারকারীদের দলের লোক। ক্ষেত্র বিশেষে হাদিছ অস্বীকার করেন, আবার ঝোপ বুঝে হাদিছ ঝাড়েন!! এরূপ চরিত্রের লোকেরাই আল-কোরআন সম্পর্কে ভুল ধরার অপচেষ্টা ও পাঁয়তারা করে।
তারপরও বলছি, এই অভিযোগের ক্ষেত্রেও উপরে দেয়া একই উত্তর ও উদাহরন প্রযোজ্য-
.................................................
অভিযোগকারীর অভিযোগ-
৪।পাঠ বিচারের এই মান অনুযায়ী সপ্তকারীর পাঠ ইসলামী সমাজে প্রচলিত ছিল। বর্তমান কালে ইহাদের দু’জনের পাঠ মাত্র প্রচলিত আছে-। মিশর ব্যতীত আফ্রিকার সর্বত্র নাফি’র পাঠ এবং মিশরে ও পৃথিবীর বাকি অংশে হাফ্সে’র পাঠপ্রচলিত। [সং. ই. বিশ্বকোষ, ১ম খ. ৩য় মুদ্রণ, পৃ: ৩৩৬, ৩৩৮; ই. ফা.
.................................................
আমার জবাব-
*তাতে অসুবিধার কি আছে!!?? বাংলা ভাষাতেও কোন ঘটনার বর্ণনা বা খবর কেউ গদ্য এবং কেউ পদ্যের ছন্দে পড়লেই কি পুরো বক্তব্যকে ভুল বলা যুক্তিসঙ্গত? আবারও অবাক করলেন।

যদি কেউ আল-কোরআন ছাপাতে গিয়ে ভুল বশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে সূক্ষ বিচ্যুতি বা বিকৃতি ঘটায় এবং আকর্ষণীয় মলাট লাগিয়ে তার শত শত কপি বাজারে ছেড়ে দেয়, তবে তার জন্য কে দায়ী হবে? পৃথিবীর আনাচে কানাচে হয়ত মনুষ্যকৃত ভুল বা বিকৃত কিছু কপি সাময়িকভাবে থাকতে পারে। কিন্তু সেই ভুল বা বিকৃত কপিগুলোকে ধরার ও সংশোধন করার মত আল-কোরআনের মূল কপি এখনও বর্তমান। শুধু তাই নয়, কোটি কোটি হাফেজ এ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। যারা পবিত্র কোরআনকে মুখস্ত করে তাদের অন্তরে সংরক্ষণ করছেন।

আঞ্চলিক ভাষা ও উচ্চারণগত তারতম্যের কারণে হয়ত কিছু কিছু অঞ্চলে মানুষের দ্বারা কাঠামোগত কিছু বিভিন্নতা দেখা যায়। কিন্তু তা সত্বেও এগুলোর মর্মার্থ কিন্তু একই থাকে। যেমন- (আমি এখন ভাত খাব)। এই কথাটিকে রংপুর জেলার গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরা বলে-(মুই এলা ভাত খাইম)। নোয়াখালী ও চিটাগাং অঞ্চলেও এর ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু মূল অর্থ তো পাল্টাবে না। তেমনি আরবী ভাষার ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক বৈপরীত্যের কারণে এবং সে সমস্ত এলাকার মানুষদের বোঝানোর স্বার্থে আল-কোরআনের বক্তব্যগুলো হয়ত সাময়িকভাবে তাদের মত করে বলা ও লেখা হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ অজ্ঞতা হেতু সেগুলো নিয়েই মাতামাতি করতে পারে। তবে পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমান আগেও আল-কোরআনের মূল কপিকে অনুসরণ করত, এখনও করে এবং ভবিষ্যতেও কেয়ামত পর্যন্ত তাই করবে। এই বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ঘরে ঘরে সেই পবিত্র কোরআনই পঠিত হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাঁকা মন ও একচোখা লোকেরা তা বুঝেও না বোঝার এবং দেখেও না দেখার ভান করে। নিজে না জেনে অন্যের ধার করা যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়।
.................................................
অভিযোগকারীর অভিযোগ-
৫। স্বর চিহ্নসমূহ প্রথমে বর্ণের বিভিন্ন স্থানে নুক্তারূপে লিখিত হইত। অষ্টম শতাব্দির মধ্যভাগে এই ব্যবস্থা পরিবর্তীত করিয়া ‘আলিফ’, ‘ওয়াও’, এবং ‘য়্যা’ এর অনুকরণে বর্তমানে ব্যবহৃত যবর, পেশ ও যের প্রবর্তিত হয়। কেহ কেহ কোরানের লিপিতে এগুলির ব্যবহার সঙ্গত মনে করেন নাই। [ সং. ই. বিশ্বকোষ, ১ম খ. ৩য় মুদ্রণ, পৃ: ৩৩৬-৩৩৮; ই. ফা..]
...............................................
আমার জবাব-
*কেউ নুকতার ব্যবহার সঙ্গত মনে না করলে কার কি? এর জন্য মহান আল্লাহতায়ালার ইশারাই যথেষ্ট। যাদের মাতৃভাষা আরবী তারা নুকতা ছাড়াই স্বাচ্ছন্দে আল-কোরআন পাঠ করতে ও অর্থ বুঝতে সক্ষম। সৎ উদ্দেশ্যেই নুকতার ব্যবহার শুরু হয় এবং এর ফলে মৌলিক কোন পরিবর্তন তো ঘটেইনি, বরং বিশেষ করে অনারবদের জন্য উচ্চারণ ও ভাব শুদ্ধরূপে পঠন ও অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা এমনটি চান বলেই তো নুকতার সুষ্ঠ প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে।
...................................................
অভিযোগকারীর অভিযোগ-
আর অনেক অনেক বলা যায়.। আগে এইগুলা মিথ্যা প্রমান করুন।
ইতিহাসের কথাতে লজ্জা পেয়ে সেই ইতিহাসের দোহাই দিএ কোরানের সংরক্ষণ বলবদ করা কি বোকামি না জ্ঞানীর পরিচয় বুঝতে কষ্ট হছে!!!
কোরানের বিরুধে এত গুলা কথা বলার পরেও আমি মন থেকে বিশ্বাস করি কোরান আমাদের বিশজগতের পালন করতার কাছ থেকে এসেছে। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জনাব বাসার কে দিতে হয়। তার লেখা না পরলে হয়ত আল্লাহ্, নবী, কোরানকে অন্তরের গভির থেকে সম্মান করতে পারতাম না।
.....................................................
আমার জবাব-
*একদিকে কোরআনের বিরুদ্ধে বলেন, আবার কন, 'বিশ্বাসও করি'!! বকধার্মিকরা এমনই হয়। 'অল্পবিদ্যা যে ভয়ঙ্কর' তা আপনাদের দেখলে বোঝা যায়। শয়তানের ধোঁকায় যারা যুগ যুগ ধরে ভুলের আবর্তে ঘুরপাক খায়-
……………………………………………………..
মহান আল্লাহতায়ালা যেন সবাইকে সঠিক বুঝ দেন এবং সরল ও সত্য পথে চলার তৌফিক দান করেন-
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×