somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব কবিরাই কি পথভ্রষ্ট!? কাব্য/সাহিত্য চর্চা কি নিষিদ্ধ!?

২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শুধুমাত্র ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয়ে কাব্য রচনা করা একজন রাসূলের জন্য শোভা পায় না। রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে কখনো কবিতা রচনা করেন নাই অর্থাৎ তিনি যে কবি ছিলেন না তা আল-কোরআনেই স্পষ্ট বলে দেয়া আছে-
সূরা ইয়াসীন (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৬:৬৯) অর্থ- আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভন নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।
সূরা আল হাক্বক্বাহ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৬৯:৪০) অর্থ- নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রসূলের আনীত।
(৬৯:৪১) অর্থ- এবং এটা কোন কবির উক্তি নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর।
(৬৯:৪২) অর্থ- এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর।
(৬৯:৪২) অর্থ- এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।

নিজে কবিতা না লিখলেও ভাল কবিতা যে রাসূল (সাঃ) শুনতেন, বেশ কয়েকটি হাদিছে তার উল্লেখ আছে। এরপরও যারা কাব্য/ সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-
সবার জন্যই কাব্য/ সাহিত্য রচনা ও চর্চা করা যদি নিষিদ্ধ হত, তাহলে রাসূল (সাঃ) কবিতা শুনলেন কেন?
……………………………..
অধিকাংশ কবিদের কাজ হলো আপন আপন চিন্তন ও অনুমানের উপর নির্ভর করে কাব্য রচনা করা। যে কবি যেমন শিক্ষা-দীক্ষা পাবেন এবং সত্য-মিথ্যা, সুন্দর ও অসুন্দরের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করার ক্ষমতা যার যেমন হবে, তার কাব্যে তেমন ভাবের প্রতিফলন ঘটাই স্বাভাবিক। এ কারনেই ক্ষেত্র ও পাত্র ভেদে তাদের এই রচনার মাঝে ভুল-ভ্রান্তি ও ভাল-মন্দ বক্তব্যের সংমিশ্রণ ঘটে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। সুস্থ চিন্তার অধিকারী প্রজ্ঞা সম্পন্ন কবি/ সাহিত্যিকরা যেমন একটি ঘুণেধরা সমাজের দুর্বলতাকে জনগণের সামনে তুলে ধরে সঠিক পথের দিশা দিতে সক্ষম। অপরদিকে তেমনি শুধুমাত্র মনোরঞ্জন ও পয়সা কামানোর কৌশল হিসেবে হালকা ও সস্তা আবেগকে পুঁজি করে সাহিত্য রচনার দ্বারা বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠিকে ঘোরের মধ্যে বন্দি করে রাখলে সমাজের সর্বনাশ হতে বাধ্য। এই দুটি দিক বিবেচনায় কাব্য/ সাহিত্যের যথেচ্ছা ব্যবহার নয়, বরং যথাযথ প্রয়োগই কাম্য।

কাব্য চর্চা সম্পর্কে রাসূলের (সাঃ) মনোভাব বোঝার জন্য নিচের হাদিছগুলোর প্রতি লক্ষ্য করি-
865. 'Abdullah ibn 'Amr reported that the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace, said, "Poetry is in the same position as speech. The good of it is like good words and its bad part is like bad words."

866. 'A'isha said, "Poetry is both good and bad. Take the good and leave the bad. I have related some of the poetry of Ka'b ibn Malik. That included an ode of forty verses and some less than that."

865 নং হাদিছের বক্তব্য অনুসারে বোঝা যায় যে, "রাসূল (সাঃ) কবিতার ভাল অংশকে ভাল কথা/উক্তি/বক্তৃতা এবং খারাপ অংশকে খারাপ কথা/উক্তি/বক্তৃতার সাথে তুলনা করেছেন।" প্রথম অংশে সেই ধরনের কথা, বক্তৃতা, কবিতা, সঙ্গীত ইত্যাদিকে মন্দ উক্তি/বক্তৃতার সাথে তুলনা করা হয়েছে যার মাঝে ভাল কিছু তো নেই-ই বরং শয়তানি প্ররোচনা দ্বারা চালিত অশালীন বক্তব্য ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মিশ্রিত মিথ্যা উক্তির ফুলঝুরি যার মুখ্য বিষয়। 865 নং হাদছের দ্বিতীয় অংশ ও 866 অনুসারে বলা যায় যে, সত্যান্বেষী ও বিবেক সম্পন্ন পাঠক মাত্রই কাব্যের অন্তর্নিহিত ভাল ও মন্দ বক্তব্যকে বুঝে তা থেকে ভালকে গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করার মত মানসিকতা নিয়েই কাব্য চর্চা করতে হবে। তাই তো এরূপ কাব্য চর্চা সম্পর্কে নিচের হাদিছ দুটিতে সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে-

Abu Huraira reported Allah's Messenger (may peace be opon him) as saying: It is better for a man's belly to be stuffld with pus which corrodes it than to stuff) one's mind with frivolous poetry. Abd Bakr has reported it with a slight variation Of wording.
(Sunnah.com reference: Book 42, Hadith 8/ English reference: Book 28, Hadith 5609/ Arabic reference: Book 42, Hadith 6030)

874. 'A'isha reported that the Prophet, may Allah bless him and grant him peace, said, "The greatest of criminals is the poet who satirises the entire tribe and a man who disclaims his father."

অহেতুক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মিশ্রিত অসাড় কথামালা গাঁথা মানেই সুস্থ্য কাব্য চর্চা নয়, বরং এগুলোকে বড় রকমের অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই ইনিয়ে বিনিয়ে এরূপ অন্তঃসারশুণ্য হালকা/ হেঁয়ালি টাইপের কাব্য/সহিত্য চর্চা করার চেয়ে নিজের পেট পুঁজ দিয়ে ভরে রাখাও শ্রেয় বলে এই হাদিছ দুটিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
………………………………………..
কিন্তু তাই বলে রাসূল (সাঃ) সব কবি ও কাব্য সম্পর্কে ঢালাওভাবে কটাক্ষ করেন নাই কিংবা নেতিবাচক বক্তব্যও দেন নাই; বরং ভাল কবিতা তিনি শুনতেন। এমনকি নিচের হাদিছ থেকে জানা যায় যে, সে সময়কার বিশিষ্ট কবি "Abdullah ibn Rawaha" এর কিছু ভাল কবিতা তিনি নিজেও মাঝে মাঝে আবৃতি করতেন-

867. Shurayh said, "I ask 'A'isha, may Allah be pleased her with, 'Did the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace, recite any poetry?' She said, 'He used to recite some of the poetry of 'Abdullah ibn Rawaha: 'Someone to whom you have not given provision brings you news.'"
…………………………………………
আরবের আরেকজন প্রসিদ্ধ কবি "Umayya ibn Abi's-Salt" এর কবিতা শুনতে রাসূল (সাঃ) খুবই পছন্দ করতেন। নিশ্চয় তার কবিতার ভাষা এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে তিনি একনাগারে একশটি লাইন শুনেছেন এবং তার কাব্যের অন্তর্নিহিত জ্ঞানসমৃদ্ধ ভাবের কারনে তাকে মুসলিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলেও নিচের হাদিছ থেকে জানা যায়-

'Amr b. Sharid reported his father as saying: One day when I rode behind Allah's Messenger (may peace be upon him), he said (to me): Do you remember any poetry of Umayya b. Abu Salt. I said: Yes. He said: Then go on. I recited a couplet, and he said: Go on. Then I again recited a couplet and he said: Go on. I recited one hundred couplets (of his poetry). This hadith has been reported on the authority of Sharid through another chain of transmitters but with a slight variation of wording.
(Sunnah.com reference: Book 42, Hadith 1/ English reference: Book 28, Hadith 5602/ Arabic reference: Book 42, Hadith 6022)
-----------------
'Amr b. Sharid reported on the authority of his father that Allah's Messenger (may peace be upon him) asked him to recite poetry, the rest of the hadith is the same, but with this addition: "He (that is Umayya b. Abu Sharid) was about to become a Muslim and in the hadith transmitted on the authority, of Ibn Mahdi (the words are) "He was almost a Muslim in his poetry."
(Sunnah.com reference: Book 42, Hadith 2/ English reference: Book 28, Hadith 5603/ Arabic reference: Book 42, Hadith 6024)
…………………………………….
869. Ash-Sharid said, "The Prophet, may Allah bless him and grant him peace, asked me to recite the poetry of Umayya ibn Abi's-Salt and I recited it. The Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace, began to say, 'Go on, go on!' until I had recited a hundred lines.' The Prophet said, 'If only he had become Muslim.'"
…………………………………………
খাইবারের পথে যাত্রাকালে রাত ঘনিয়ে এলে রাসূলের (সাঃ) উপস্থিতিতে সাহাবারা তাদের সহযাত্রী কবি 'আমির বিন আল-আকওয়া'-কে কাব্য শোনানোর জন্য অনুরোধ করলে রাসূল (সাঃ) বাধা দেন নাই। বরং তিনি তা শুনেছেন এবং কাব্যের বক্তব্য ও মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে "তার প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার রহমত বর্ষিত হোক" এই বলে দোয়াও করেছেন-

Narrated Salama bin Al-Akwa`: We went out to Khaibar in the company of the Prophet. While we were proceeding at night, a man from the group said to 'Amir, "O 'Amir! Won't you let us hear your poetry?" 'Amir was a poet, so he got down and started reciting for the people poetry that kept pace with the camels' footsteps, saying:-- "O Allah! Without You we Would not have been guided On the right path Neither would be have given In charity, nor would We have prayed. So please forgive us, what we have committed (i.e. our defects); let all of us Be sacrificed for Your Cause And send Sakina (i.e. calmness) Upon us to make our feet firm When we meet our enemy, and If they will call us towards An unjust thing, We will refuse. The infidels have made a hue and Cry to ask others' help Against us." The Prophet on that, asked, "Who is that (camel) driver (reciting poetry)?" The people said, "He is 'Amir bin Al-Akwa`." Then the Prophet said, "May Allah bestow His Mercy on him." A man amongst the people said, "O Allah's Prophet! has (martyrdom) been granted to him. Would that you let us enjoy his company longer." Then we reached and besieged Khaibar till we were afflicted with severe hunger. Then Allah helped the Muslims conquer it (i.e. Khaibar). In the evening of the day of the conquest of the city, the Muslims made huge fires. The Prophet said, "What are these fires? For cooking what, are you making the fire?" The people replied, "(For cooking) meat." He asked, "What kind of meat?" They (i.e. people) said, "The meat of donkeys." The Prophet said, "Throw away the meat and break the pots!" Some man said, "O Allah's Apostle! Shall we throw away the meat and wash the pots instead?" He said, "(Yes, you can do) that too." So when the army files were arranged in rows (for the clash), 'Amir's sword was short and he aimed at the leg of a Jew to strike it, but the sharp blade of the sword returned to him and injured his own knee, and that caused him to die. When they returned from the battle, Allah's Apostle saw me (in a sad mood). He took my hand and said, "What is bothering you?" I replied, "Let my father and mother be sacrificed for you! The people say that the deeds of 'Amir are lost." The Prophet said, "Whoever says so, is mistaken, for 'Amir has got a double reward." The Prophet raised two fingers and added, "He (i.e. Amir) was a persevering struggler in the Cause of Allah and there are few 'Arabs who achieved the like of (good deeds) 'Amir had done."
(English reference: Vol. 5, Book 59, Hadith 509/ Arabic reference: Book 64, Hadith 4245)
…………………………………………
রাসূল (সাঃ) ভাল কবিতা শুধু শুনেতেনই না, এ সম্পর্কে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যও প্রকাশ করেছেন। ভাল কবিতার মাঝে যাদুকরি বাকপটুতার পাশাপাশি গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞান/ প্রাজ্ঞতা/ বিজ্ঞতা/ বিচক্ষণতার সংমিশ্রণ থাকে বলেও তিনি নিচের হাদিছে তাঁর মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেছেন-

Narrated Ubai bin Ka`b: Allah's Apostle said, "Some poetry contains wisdom."
(English reference: Vol. 8, Book 73, Hadith 166/ Arabic reference: Book 78, Hadith 6215)
……………………………
872. Ibn 'Abbas said that a man ­ or a bedouin ­ came to the Prophet, may Allah bless him and grant him peace, and spoke some eloquent words. The Prophet, may Allah bless him and grant him peace, said, "There is some magic eloquence and some wisdom in poetry."

সুতরাং তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কবিতা মানেই কিছু আবেগ মিশ্রিত অর্থহীন কথার ফুলঝুরি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ কিংবা মিথ্যে ও অশ্লীল বাক্যের মারপ্যাচ নয়। একজন মুসলিমের কবিতা অর্থাৎ ভাল কবিতার মাঝে মনকে আকর্ষণ করার মত বাকপটুতাই শুধু নয়, এর মাঝে বিচক্ষণতার সাথে জ্ঞানসমৃদ্ধ বক্তব্যও উপস্থাপিত হওয়া চাই। মোটকথা একজন সত্যপ্রিয় কবির কাব্য চেনার উপায় হলো- এতে অন্তরের আকর্ষণ সৃষ্টির করার মত রশদ যেমন থাকতে হবে, তেমনি সত্যকে ভাল করে উপলব্ধি করে প্রাজ্ঞতা/ বিজ্ঞতা/ বিচক্ষণতার সাথে তা সরল ও বিশ্বাসযোগ্য রূপে উপস্থাপন করার সাথে সাথে পাঠকের অন্তরে সুস্থ চেতনা জাগিয়ে তোলার মত উপকরণও থাকা চাই।
............................................
আল-কোআনের ২৬ নং সূরাটির নাম 'আশ শোয়ারা' অর্থাৎ 'কবিগণ'।
সূরা আশ-শো’আরা (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৬:২২১) অর্থ- আমি কি তোমাকে বলে দেব, কার উপরে শয়তানরা সওয়ার হয়?
(২৬:২২২) অর্থ- তারা সওয়ার হয় প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, পাপী মানুষের উপর।
(২৬:২২৩) অর্থ- তারা শোনার জন্য কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।
(২৬:২২৪) অর্থ- এবং কবিরা- যারা (অর্থাৎ কবিদের মধ্যে যারা) তাদেরকে (শয়তানদেরকে) অনুসরণ করে তারাই পথভ্রষ্ট। [এবং যে কবিরা তাদেরকে (মিথ্যাবাদী শয়তানদেরকে) অনুসরণ করে তারাই পথভ্রষ্ট।]
(২৬:২২৫) অর্থ- তুমি কি দেখ না যে, তারা (শয়তানদের অনুসারী কবিরা) প্রতিটি উপত্যকায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়?
(২৬:২২৬) অর্থ- এবং এমন কথা বলে বেড়ায়, যা তারা নিজেরা করে না।
(২৬:২২৭) অর্থ- তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে বেশী করে স্মরণ করে এবং কেবলমাত্র অত্যাচারিত হবার পরই প্রতিশোধ গ্রহণ করে; অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ।

নাম থেকেই বোঝা যায় যে, এখানে কবিদের সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে ২২৪ নং আয়াতটি বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করে অনেকেই সব কবিকে বিভ্রান্ত/পথভ্রষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেন এবং সব ধরনের কবিতা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কিন্তু (২৬:২২১ - ২২৭) নং আয়াত পর্যন্ত লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে, প্রকৃত অর্থে এখানে সত্যাশ্রয়ী ও মথ্যাচারী কবিদের ভাল-মন্দ বিষয় নিয়ে মৌলিক আলোচনা করা হয়েছে মাত্র। বিশ্বাসীদের সামনে কবি ও কাব্যের স্বরূপ উদ্ঘাটনই এই আলোচনার মুখ্য বিষয়।

নিচের হাদিছগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে-
'Beginning of Creation' of Sahih Bukhari.
432: Narrated 'Aisha: I heard Allah's Apostle saying, "The angels descend, the clouds and mention this or that matter decreed in the Heaven. The devils listen stealthily to such a matter, come down to inspire the soothsayers with it, and the latter would add to it one-hundred lies of their own."
…………………………….........
Al-Bukhari also recorded that Abu Hurayrah said, "The Prophet said: When Allah decrees a matter in heaven, the angels beat their wings in submission to His decree, a chain beating on a rock. And when the fear in their hearts subsides, they say: "What is it that your Lord has said'' They say: "The truth. And He is the Most High, the Most Great.'' Then when the Jinn who are listening out, one above the other) -- and Sufyan illustrated this with a gesture, holding his hand vertically with his fingers outspread -- (when they hear this, they throw it down from one to another, until it is passed to the fortune-teller or soothsayer. The shooting star may strike the Jinn before he passes it on, or he may pass it on before he is struck, and he adds to it one hundred lies, thus it is said: "Did he not tell us that on such and such a day, such and such would happen'' So they believe him because of that one thing which was heard from the heavens.
.......................................
Al-Bukhari recorded from `A'ishah, may Allah be pleased with her, that the Prophet said: The angels speak in the clouds about some matter on earth, and the Shayatin overhear what they say, so they tell it to the fortune-teller, gurgling into his ear like (a liquid poured) from a glass bottle, and he adds to it one hundred lies.
.....................................................
`Ali bin Abi Talhah reported from Ibn `Abbas that this means: "The disbelievers follow the misguided among mankind and the Jinn.'' This was also the view of Mujahid, `Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam, and others.
……………………………………
(২৬:২২১) নং আয়াতে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শয়তানরা মিথ্যাবাদী ও পাপী মানুষের উপরে চড়াও হয়। (২৬:২২৩) নং আয়াত এবং উপরে প্রদত্ত হাদিছের বক্তব্য অনুসারে জানা যায যে, জ্বীনদের মধ্যে যারা শয়তানের অনুসারী তারা আকাশ থেকে ভবিষ্যতের খবর সংগ্রহ করার ক্ষমতা রাখেলেও প্রতি পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে তারা যেটুকু সংবাদ সংগ্রহ করে তার সাথে বহুগুণে নিজেদের মনগড়া মিথ্যা উক্তি মিশ্রিত করে রটিয়ে বেড়ায়। (২৬:২২২) নং আয়াত অনুসারে বোঝা যায় যে, সৃষ্টিগতভাবেই মিথ্যাচারী ও পাপী মানুষের উপরে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে। কবিরা যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র আবেগ দ্বারা চালিত হন, তাই কবিদের মধ্যে যাদের অন্তরে দুর্বলতা রয়েছে তাদেরকে শয়তানরা সহজেই বশ করে ফেলে। সেই কবিরা তখন তাদের (দুষ্ট জ্বীন ও মানুষরূপী মিথ্যাবাদী গণক অর্থাৎ শয়তানের অনুচরদের) অনুসরণ করতে শুরু করে। তাই (الشعراء) 'আশ-শোয়ারা' সূরাটির (২৬:২২৪) নং আয়াতে (شعراء) - 'শোয়ারা' অর্থাৎ 'কবিগণ' শব্দটির পূর্বে ( ال) - 'আল' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে, এখানে নির্দিষ্ট একদল কবিদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য শুরু করা হয়েছে এবং জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সব কবি নয় বরং যে কবিরা 'তাদেরকে' অর্থাৎ 'শয়তানদেরকে' অনুসরণ করে এবং তাদের কাছ থেকে শেখা মিছে কথামালার ঝুলি রচনা করে (২৬:২২৫) যত্রতত্র রটিয়ে বেড়ায় তারাই পথভ্রষ্ট/ বিপথগামী। সেই কবিদের আরও একটি পরিচয় হলো যে (২৬:২২৬) তারা বড় বড় কথা বলতে ওস্তাদ। তারা মিথ্যাকে মিষ্টি ভাষার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়ায়। কিন্তু তাদের মনগড়া মতবাদের কোন ভিত্তি নেই বলেই হয়ত তারা নিজেরাই সেসব মানে না অর্থাৎ তাদের কথা ও কাজের মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ থাকে।

সুতরাং (২৬:২২৪ - ২২৬) নং আয়াত এবং হাদিছের বক্তব্য অনুসারে এটা স্পষ্ট যে, অন্তঃসারশুণ্য কাব্য চর্চা তো বটেই, সেই সাথে অন্তরে পাপবোধ জাগ্রতকারী যে কোন ধরনের অসাড় কথাবার্তা, বক্তৃতা, গান, কপট-প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনাকারীরা পথভ্রষ্ট। তাদের এই অপকর্ম মাত্রা ছাড়ালে তারা শাস্তি পাবার যোগ্য বটে। সুতরাং এসব অসুস্থ্য সাহিত্য রচনাকারীদের অনুসরণ করা এবং তা উপভোগ করা বিশ্বসীদের জন্য শোভা পায় না এবং এগুলো গোনাহের কাজ।

সবশেষে (২৬:২২৭) নং আয়াতে জানিয়ে দেয়া হলো যে, যারা বিশ্বাসী, সৎকর্মশীল এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার সম্পর্কে সচেতন- তাদের কথা ভিন্ন। শুধুমাত্র অন্যায় ও জুলুমের শিকার হলেই তারা তাদের সাধ্যমত প্রতিশোধ গ্রহণ করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে একজন বিশ্বাসী জুলুমের শিকার হলে ক্ষেত্র বিশেষে তার হাত এমনকি জিহ্বা দ্বারাও প্রতিশোধ নিতে পারেন।

'Beginning of Creation' of Sahih Bukhari.
434: Narrated Sa'id bin Al-Musaiyab: 'Umar came to the Mosque while Hassan was reciting a poem. ('Umar disapproved of that). On that Hassan said, "I used to recite poetry in this very Mosque in the presence of one (i.e. the Prophet ) who was better than you." Then he turned towards Abu Huraira and said (to him), "I ask you by Allah, did you hear Allah's Apostle saying (to me), "Retort on my behalf. O Allah! Support him (i.e. Hassan) with the Holy Spirit?" Abu Huraira said, "Yes."

সাহাবি কবি 'হাসান (রাঃ)' সম্পর্কে বর্ণিত হাদিছটি এর বাস্তব উদাহরণ। রাসূলের (সাঃ) পক্ষ নিয়ে তিনি তার কাব্যের মাধ্যমে যেভাবে শত্রুদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের জবাব দিয়েছেন তাতে মুগ্ধ হয়ে রাসূল (সাঃ) কবির জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। কাজেই বিশ্বাসীদের মধ্যে আল্লাহতায়ালা যাদেরকে কাব্য/সাহিত্য রচনার বিশেষ ক্ষমতা ও দক্ষতা দান করেছেন তারা সীমার মধ্যে এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারেন।

মুসলিম শরীফের আরও একটি হাদীছে বলা হয়েছে-
‘‘যে ব্যক্তি অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ভাষার মাধ্যমে জিহাদ করলো সেই তো মু'মিন।’’

রাসূল (সা:) তাঁর সময়কার বিশিষ্ট সাহাবা এবং কবি হাসসান বিন সাবিত, আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা এবং কা'ব বিন মালিকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
‘‘মুমিন ব্যক্তি তার তরবারী দিয়ে এবং তার মুখের ভাষা দিয়ে জিহাদ করে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সে মহান সত্তার কসম, তোমরা যে কাব্যাস্ত্র দিয়ে ওদের আঘাত হানছো তা তীরের আঘাতের মতই প্রচন্ড।’' (মিশকাত শরীফ)

এই সকল হাদিছ বক্তব্য অনুসারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সত্যাশ্রয়ী ও বিশ্বাসী কবিগণকে মুজাহিদ হিসেবে এবং কাব্য/ সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদের এই কৌশলকে জিহাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালাকে সদা স্মরণকারী, সৎকর্মশীল ও সত্যপ্রিয় কবি তথা সাহিত্যিকরা তাদের বিচক্ষণতা, বাকপটুতা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে সত্য ও শান্তির শাশ্বত বাণী ছড়িয়ে দেবার এবং অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ জানাবার অধিকার রাখেন।
.............................................
আল-কোরআনের শিক্ষা ও রাসূলের (সাঃ) আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে পরবর্তিতে যারা ইসলামি কাব্য ও সাহিত্যে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আল্লামা ইকবাল, জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদী, সাদি সিরাজী, মুজাফ্ফর ওজাক, রাবিয় আদাবিয়া, আবু বাকার আর হারুন, ইমরান আল সাফী প্রমুখ।

আমাদের দেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মতিউর রহমান মল্লিক, ফররুখ আহমদ, জসীম উদ্দিন প্রমুখ ইসলামি কাব্য ও সাহিত্য চর্চার ময়দানে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।

সমাজকে মিথ্যা ও অপসংস্কৃতির কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে জীবনের পরতে পরতে সত্যাশ্রয়ী সরল ও সুন্দর কাব্য ও সাহিত্যের শাশ্বত ফলগু ধারা অবারিতভাবে বর্ষিত হোক- সেই কামনাই করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:১৮
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×