somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠি ( টিপুর জন্য শোকগাথা)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় সহযাত্রী বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছো?? এত তাড়াতাড়ি আসতে হবে বেঁচে থাকতে কখনো ভাবতে পারিনি। এমনকি এতো মানুষ আমাকে এত ভালবাসে, বেঁচে থাকতে সেটাও কখনো বুঝিনি। তোমাদের এত এত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, সহমর্মিতা এগুলো যদি চোখে দেখে যেতে পারতাম!!

আজই আমি তোমাদের অনেক কে আমার ব্লগে প্রথম দেখলাম!! কত জন যে প্রথম আমার ব্লগে মন্তব্য করল!! আমায় ক্ষমা করো, তোমাদের কে ধন্যবাদ জানাতে পারলাম না। কেও কেও আমার জন্য অশ্রুবর্ষণ ও করলো। এদের বেশীর ভাগ কেই আমি চিনি না, জানি না, দেখি নি চেহারা, জানি না তাদের জাত, ধর্ম, বর্ণ, কিংবা দর্শন। তবুও আমি বেশ বুঝতে পারি, তোমাদের নিখাদ ভালোবাসাটা।

আহা রে!! মানুষের দোয়ায়ও নাকি আয়ু বাড়ে। কি বোকামি টাই না করলাম আমি। শরীরের ঐ মরণব্যাধি টার কথা যদি তোমাদের ঢাক ঢোল করে জানিয়ে দিতাম আগে! ক্যান্সার এর চিকিৎসা তো অনেক খরচের। আমার বাবা মা যে হাঁপিয়ে উঠছিল, ওটা যদি আমি তোমাদের জানিয়ে দিতাম, আমায় নিশ্চয় তোমরা এভাবে নিভৃতে যেতে দিতে না! হাল ছেড়ে দিতে না!!

এই প্রকাশ বিমুখ, গর্তমানব তরুণতাকে ক্ষমা করে দিও। আমি একটু ঐ রকমই। তোমাদের একটা গল্প বলি, আমার নাম নিয়ে। আমার বন্ধুদের নামগুলো খুব সুন্দর, আধুনিক। আমার নামটা দেখো, টিপু!! কত্তো পুরানো, মাল্ধাতা আমলের। টিপু সুলতান নামের এক সুলতান ছিল নাকি ভারত বর্ষে। মা বলেছিল, সে নাকি খুব সাহসী ছিল,একেবারে বাঘের মতো, তাঁকে নাকি “শের খা” ডাকা হত। কাওকে ভয় করত না। হারতে হারতে সব কিছু নাকি সে হারিয়ে ফেলেছিল, শুধু হারায়নি আত্মসম্মান বোধ। মরার আগ পর্যন্ত নাকি সে যুদ্ধ করে গেছে, তবুও হার স্বীকার করেনি।

সেই সুলতান নাকি বলতো, “সূর্য আমি। ঐ দিগন্তে হারাবো। অস্তমিত হব, তবু ধরণীর তলে চিহ্ন রেখে যাব।”

আমার এই দর্শন টা খুব ভালো লাগতো। আমিও খুব চাইতাম, খুব বিখ্যাত হব, চারিদিকে আমার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়বে। নোবেল টা যদি জয় করে ফেলতে পারতাম, তবে কাজটা মনে হয় খুব সোজা হত, তাই না?? তাই, নামের আগে নিজেই জুড়ে দিলাম নোবেলবিজয়ী_টিপু !

আমার ঘুম পাচ্ছে, তাছাড়া বড় লেখা লিখতে আমার ভালো লাগে না। মানুষজনও আজকাল খুব অস্থির। বড় লেখা কেও পড়তে চায় না। মানুষের দোষ ই বা দিই কি করে!! আমাদের সময় কই, সময় নষ্ট করার। জীবন টা যে খুব ছোটই। মহাকালের একটা পলক কেবল। তাই আমিও চেয়েছি, ছোট্ট এই সময়টাকে আনন্দে কাটিয়ে দিতে। কাওকে বিরক্ত করতে আমার একদম ই ভালো লাগেনা। কারও গলার ফাঁস হয়ে, কাওকে বিপদে ফেলে, টেনশনের কারণ হয়ে বেঁচে থাকার মাঝে কি আনন্দ আছে, বলো??

তাইতো তোমাদের, বন্ধুদের জানাইনি। আমার খুব একটা কষ্ট হত না সহ্য করতে, বিশ্বাস করো। বরং, আমার জন্য আরও শত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, আমার জন্য ভিক্ষা করছে, তহবিল বাড়ানোর জন্য ছুটোছুটি করছে, কেও দুটাকা দিচ্ছে, কেও বা ভণ্ড বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে, ওগুলোই বরং সহ্য করতে কষ্ট হতো। থ্যাঙ্ক গড, যে উনি আমাকে সহি সালামতে নিয়ে গেছেন।

দুঃখ করো না। সবাই কি আর শতবর্ষী হয় বলো!! আমার মতো স্বপ্নবাজ, আড্ডাবাজ, বন্ধুপাগল, আর নিজের প্রতি প্রচণ্ড উদাসীন সব যুবকেরই কি সব স্বপ্নগুলো পূরণ হয়!! কেই বা পারে তার সব স্বপ্ন পূরণ করে যেতে। স্বপ্ন যে ধারাবাহিক এক প্রক্রিয়া, সারা জীবন চলতে থাকে।

আমি খুব ক্লান্ত। খুব ধকল গেছে, তোমরা সবাই চিশ্চয় বুঝতে পারছ এখন। ঘুমাব আমি। চির শান্তির একটা ঘুম। তোমাদের এক একজনের দোয়া, ভালোবাসা আমার মাটির বিছানাকে কি যে আরামদায়ক করে দিয়েছে, তোমরা তা ভাবতেও পারবে না। আমি কৃতজ্ঞ তোমাদের কাছে। তোমরা সবাই একে অপরকে ভালো রেখো, এবং তবেই ভালো থেকো।

ইতি,
তোমাদের স্নেহধন্য টিপু।




** এটি একটি কাল্পনিক চিঠি। এই টিপু ছেলেটাকে আমি দুদিন আগেও চিনতাম না। কখনো যাইওনি ওর ব্লগে। আজ সকালে ফেসবুকে দেখি, সবাই শোক করছে এই বলে যে, দুরারোগ্য ক্যান্সারে একজন ব্লগার মারা গেছেন (ইন্নানিন্নাহিওইন্নালাহি রাজিওন); যার বয়স মাত্র বাইশ বছর!! আমার ছোট ভাইটার বয়সও ঠিক বাইশ বছর। এই একই বয়স দেখেই বুকটা যেন মোচড় দিয়ে উঠল। আশ্চর্যের বিষয়, তার এই ভয়ানক আসুখের কথা নাকি কেওই জানতো না। উল্টো নিজের সমস্যাটা চেপে রেখে সে সবার জন্য ব্লাডক্যান্সার বিষয়ক কিছু কথন ; এই পোস্টটা দিয়েছিল। এই ছেলেটা আমার কেও হয়না, কিন্তু যে সাহস আর শিক্ষাটা ও আমাদের শিখিয়ে গেছে, তাতে ওর নোবেল জয়ী হবার দরকার নেই, আজন্ম আমাদের হাজার হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।

হে মৃত্যু, তোমাকে বধ করার ক্ষমতা আমাদের কারও নেই। আর তাই, সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা, শুধু সাহসটা দিও, শক্তি টা দিও- যখন আমিও এর মুখোমুখি হব।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৪
৩৬৭টি মন্তব্য ১৪৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×