somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতা দিবসঃ “মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হল বলিদান- লেখা আছে অশ্রুজলে...”

২৪ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কাগজে কলমে বলা হয়ে থাকে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা পেয়েছি আমাদের মহান স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা নামক এই মুক্ত স্বাদটি পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল হয়তো শতবছর! কে জানে এই বীজ হয়তো রোপণ করা হয়েছিল, ৪৭ এর দেশ বিভাজনের সময়, কিংবা আরও আগে- বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দোলা যখন পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত হয়েছিল!!

সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শক্তি দুশ বছর তৎকালীন ভারতবর্ষ শোষণ করার পর ১৯৪৭ এর আগস্টে, ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতবর্ষ কে দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে পরিণত করে দিয়ে গেল। ভারত-পাকিস্তান। তার পর থেকেই সেই অভিন্ন পাকিস্তান, বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের উপর শুরু হল পশ্চিম পাকিস্তানের হর্তাকর্তা সুলভ আচরণ।

সেই রূপ খুব সুস্পষ্ট নিচের এই চার্টেঃ

বছর পশ্চিম পাকিস্থানের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায়
ব্যয় (মিলিয়ন) ব্যয় (মিলিয়ন) শতকরা হিসেব
১৯৫০-৫৫ ১১,২৯০ ৫,২৪০ ৪৬.৪
১৯৫৫-৬০ ১৬,৫৫০ ৫,২৪০ ৩১.৭
১৯৬০-৬৫ ৩৩,৫৫০ ১৪,০৪০ ৪১.৮
১৯৬৫-৭০ ৫১,৯৫০ ২১,৪১০ ৪১.২

Source: Reports of the Advisory Panels for the Fourth Five Year Plan 1970–75, Vol. I, published by the planning commission of Pakistan

পটভূমিঃ

পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর, কার্যত দেশটিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল মিলিটারি শাসন ব্যবস্থা। একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী এসব সেনা স্বৈরাচারক, আইয়ুব খান (২৭ অক্টোবর ১৯৫৮- ২৫ মার্চ ১৯৬৯), থেকে শুরু করে ইয়াইয়া খান (২৫ মার্চ ১৯৬৯- ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১) সবার প্রধান কর্ম ছিল, বাংলা ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তান শাসন ও শোষণ করা। বিপত্তি বাড়ে, যখন ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়। ১৬৯ টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ পায় ১৬৭ টি আসন!! অন্যায়-শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিরোধ ক্রমেই ফুঁসতে শুরু করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানী স্বৈরশাসকরা বেশ টের পেতে থাকে, এই জাতিকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, শেখ মুজিব কে প্রধানমন্ত্রী হবার সংবিধানিক অধিকার হতে একপ্রকার গায়ের জোরেই বঞ্চিত করে রাখে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ৩ মার্চ, ১৯৭১ এ দুই পাকিস্তানের এ দুই নেতা ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াইয়া খানের তত্ত্বাবধানে মিটিং করেন। কার্যতই বিফল হয় সেই মিটিং। প্রেসিডেন্ট ইয়াইয়া একটি গৃহযুদ্ধের আভাষ পান।

তিনি শেখ মুজিব কে প্রধানমন্ত্রী ও ভুট্টো কে প্রেসিডেন্ট করার আশ্বাস দেন। কিন্তু ভুট্টো একনীতি তে অটল থাকায়, এবং ক্রমগত চুক্তি ভঙ্গে শুরু হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানে গণ অসহযোগ আন্দোলন। পুরো পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠে প্রতিবাদের দেশে, কারফিওর দেশে, মিছিলের দেশে। শুরু হয় একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠ করার লড়াই!

ইতিমধ্যে জেনারেল টিক্কা খান গভর্নর হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বিচারপতিগণ তাঁকে শপথ বাক্য পড়াতে অনীহা জানান। ১০-১৩ মার্চ ঢাকার আকাশে পাকিস্তান তাদের সকল আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ রাখে। পাকিস্তানি খাকি পোষাকে আসতে থাকে একের পর এক সেনাদল। ঢাকা পূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী দ্বারা।

উত্তাল মার্চঃ

১-৬ মার্চ ১৯৭১

ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় জনগণ রেডিও তে ইয়াইয়া খান কি ভাষণ, কি দিক নির্দেশনা দেন জানার জন্য আকুল ছিল। কিন্তু তিনি মুখপাত্র ঘোষণা করলেন ইয়াইয়া খান “পাকিস্তান নেশেনাল আম্বেসি” পিছিয়ে দিয়েছেন।

শেখ মুজিবুর রহমান তৎক্ষণাৎ এক বেতার বার্তায় এই সিধান্ততে হতকারিতা বলে আখ্যা দেন। এবং তিনি ৭ই মার্চ এক জনসভার শোষণা দেন। বাঙালী যেদিনই প্রথম স্লোগান তুলতে থাকে “বীর বাঙালী অস্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো!”

২-৩ মার্চ ঢাকায় সকাল সন্ধ্যা কারফিও জারি করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ দেশের নানা প্রান্তে বীর বাঙালিরা কারফিও ভেঙে প্রতিরোধ গড়তে শুরু করে।
৪-৬ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে পাকিস্তানী বিমান উড়তে থাকে। পাকিস্থান ইয়াইয়ার আগমন উপলক্ষে সৈন্য বাড়াতে থাকে।
৭-২৪ শে মার্চঃ
তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন। তাঁর এই ১৫ থেকে ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেন পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ আর নিপীড়নের ইতিহাস। সে ভাষণে খুব সুস্পষ্ট ছিল, স্বাধীনতার জন্য একটি যুদ্ধ আসন্ন!! স্লোগান তুলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!”


ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ

৯ মার্চ মাওলানা ভাসানি তাঁর অনুসারী দের নিয়ে, এবং তাজদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল বের করে বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন করে।
পশ্চিম পাকিস্তনের অন্যায় গুলো জানিয়ে ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু UN Secretary General এর কাছে একটি বার্তা পাঠান।

ইতিমধ্যে জেনারেল টিক্কা খান গভর্নর হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বিচারপতিগণ তাঁকে শপথ বাক্য পড়াতে অনীহা জানান। ১০-১৩ মার্চ ঢাকার আকাশে পাকিস্তান তাদের সকল আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ রাখে। পাকিস্তানি খাকি পোষাকে আসতে থাকে একের পর এক সেনাদল। ঢাকা পূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী দ্বারা।


২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনের সামনে এক সভায় দেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

২৪ শে মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্রবাহী একটি পাকিস্তানী জাহাজ আসলে, সেগুলো যেন শহরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বীর জনতা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তলে। সেদিনের সংঘর্ষে প্রায় তিনশ মানুষ শহীদ হন।

এছাড়া এদিন ইয়াইয়ার মুখপাত্র বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
সুত্রঃ উইকি

“Operation Searchlight” তথা ২৫ মার্চ ১৯৭১!



Mr. Z. A. Bhutto’s Press conference in Dacca on March 25, 1971: Mr. Bhutto said that the quantum of autonomy sought by the Awami League was some thing which could be termed as “more than autonomy “. It was bordering on sovereignty.

তারপর ইয়াইয়া আর তার জেলারেল সেক্রেটারি সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকা ত্যাগ করে। তার পরপরি শুরু হয় ইতিহাসের এক কালো রাত। পাকিস্তান আর্মি সেই উন্মুত্ত- বর্বরোচিত হত্যা যজ্ঞের নাম দেয়, “অপারেশন সার্চলাইট!”



(১) According to the Asia Times,
At a meeting of the military top brass, Yahya Khan declared:
"Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands." Accordingly, on the night of 25 March, the Pakistani Army launched Operation Searchlight to "crush" Bengali resistance in which Bengali members of military services were disarmed and killed, students and the intelligentsia systematically liquidated and able-bodied Bengali males just picked up and gunned down
.



(২) In October 1997 R. J. Rummel published a book, which is available on the web, titled Statistics of Democide: Genocide and Mass Murder Since 1900. In Chapter 8, Statistics Of Pakistan's Democide - Estimates, Calculations, And Sources, he states:

“In East Pakistan (now Bangladesh) [General Agha Mohammed Yahya Khan and his top generals] also planned to murder its Bengali intellectual, cultural, and political elite. They also planned to indiscriminately murder hundreds of thousands of its Hindus and drive the rest into India. And they planned to destroy its economic base to insure that it would be subordinate to West Pakistan for at least a generation to come. This despicable and cutthroat plan was outright genocide."





মানবতা ভুলন্ঠিত হবার এক রাত! এ জাতি কোনদিনই ভুলবেনা সেই বর্বরোচিত হত্যাযোগ্য!! নিরস্র এবং ঘুমন্ত বাঙালীর উপর পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনীর হামলা, মুহূর্তে ঢাকাকে একটি ধ্বংসযোগ্য আবাসে পরিণত করে দেবার রাত ২৫ মার্চ! পিলখানা পুলিশের হেড কোয়ার্টারে হয় সেই প্রথম আক্রমণ!! ক্রমান্নয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো শহরে!



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তাদের পরবর্তী শিকার। কারণ তখন সেটা শুধু একটি বিদ্যাপীঠই ছিল না, সেখানে থাকতেন দেশকে স্বাধীন করার সব কারিগর আর তাঁদের পরিকল্পনা! স্বাধীনতা পিপাসু সেই সব ছাত্র/ছাত্রী নেতা/নেত্রী, শিক্ষক/শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারী নির্বিশেষে সবার প্রাণের উৎসে পরিণত ছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! তাই এ জাতিকে পঙ্গু করতে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পরই, পরবর্তী হামলা আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপেক্ষাকৃত হিন্দু ছাত্রাবাস “জগন্নাত হল” একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় সেই কালো রাতে! প্রায় ৬-৭ শত ছাত্রকে হত্যা করা হয় সে রাতে।



ভারী অস্র শস্র, ট্যাঙ্ক- গোলা বারুদের শব্দে ঢাকা পরিণত হয় এক মৃত্যু নগরীতে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম গুলোর বরাতে জানা যায়, সেদিন শুধু ঢাকায় প্রায় ৩৫- ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, এবং পুরো দেশে সব মিলিয়ে ২৫ শে মার্চ মধ্য রাতে প্রায় ৩- ৪ লক্ষ্য মানুষ মারা যায়। ইতিহাসে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে স্মরণ করা হয়, “জেনোসাইড অফ বাংলাদেশ” নামে।


ঢাকায় সেদিনের সেই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে অনেক বিদেশী সাংবাদিক স্বচক্ষে দেখেছেন।
পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম গুলোতে আমরা তার আভাস পাই। যেমনঃ


(1) On 13th June 1971, published an article in the Sunday Times describing the systematic killings by the military. The BBC writes:

"There is little doubt that Mascarenhas' reportage played its part in ending the war. It helped turn world opinion against Pakistan and encouraged India to play a decisive role", with Indian Prime Minister Indira Gandhi herself stating that Mascarenhas' article has led her "to prepare the ground for India's armed intervention".

(2) Time magazine reported on 2nd August 1971,

"The Hindus, who account for three-fourths of the refugees and a majority of the dead, have borne the brunt of the Pakistani military hatred.”

পাকিস্তানী আর্মি শেখ মজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহীতা সহ আরও নানারকম মামলা দেখিয়ে ইয়াইয়া খান ব্রিগেডিয়ার (পরবর্তীতে জেনারেল) রহিমুদ্দিন খান কে প্রধান করে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করেন।


শেখ মজিবুর রহমানের সাথে আরও অনেককেই সেদিন গ্রেফতার করা হয়।
ইয়াইয়া খান আওয়ামীলীগ এর সকল কর্মকাণ্ড ও সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কয়েকজন নেতা গ্রেফতার এড়াতে সে মুহূর্তে দেশ ছেড়ে যান।

২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ (স্বাধীনতার ঘোষণা)
২৫ শে মার্চের হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সশস্র সংগ্রামের পক্ষে সাইন করেন। ২৬ শে মার্চ সকালের দিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সারা পৃথিবীকে তিনি জানিয়ে বলেন,

“আজ থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সর্বভৌম জাতি। বৃহস্পতিবার রাতে এদেশের ঘুমন্ত এবং নিরস্র মানুষের উপর পাকিস্তানি আর্মি অতর্কিত ও নৃশংস হামলা চালিয়েছে। দেশের নানা জায়গায় হামলা হয়েছে, সাথে হামলা হয়েছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশের হেড কোয়ার্টার, পিলখানায় ইপিআর হেড কোয়ার্টারে। জানা- অজানা লাখো নিরীহ বাঙালী কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ, ইপিআর বাহিনীর সাথে পাকিস্তানি আর্মির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য আমাদের অকুতোভয় যোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করবে। দেশ কে স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত করতে আল্লাহ্‌ আমাদের সাথে থাকুন। জয় বাংলা।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন আনুমানিক রাত ১.০০-১.৩০ মিনিট ২৫-২৬ শে মার্চ। সেদিনই কিছু কর্মীদ্বারা স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পৌঁছে যায় চট্টগ্রামে অবস্থিত আগ্রাবাদের “রেডিও পাকিস্তান” নামক বেতার কেন্দ্রে। ইংরেজিতে লেখা সেই স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র বাংলায় অনুবাদ করেন, ডঃ মঞ্জুর আনোয়ার। কিন্তু প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে, রেডিও পাকিস্তান সেই ঘোষণা পত্র সম্প্রচার করতে অস্বীকার করে।



২৬ শে মার্চ সন্ধার দিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে, বঙ্গবন্ধুর বার্তা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন WAPDA এর প্রকৌশলী আসিফুল ইসলাম, এবং বাংলায় অনুবাদ করেন আবুল কাশেম। সূত্রঃ (Bangladesh Observer, April 23, 1972)


সেদিন আমেরিকান তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নিক্সনরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন,

“The West Pakistani army has moved to repress the East Pakistan secession movement. Our embassy believes that the military probably has sufficient strength to assert immediate control over Dacca and other major cities, but is not capable of maintaining control over an extended period.”


তার কিছু পরে ইউএস সংবাদে জানানো হয়,

“After reviewing the situation in East Pakistan, the WSAG agreed that the U.S. should continue its policy of non-involvement in the dispute between West and East Pakistan. In particular, the U.S. should avoid being placed in a position where it could be accused of having encouraged the break-up of Pakistan. The WSAG agreed that the U.S. should delay action on any request that might be forthcoming for recognition of an independent East Pakistani regime.”
সুত্রঃ Memorandum from Kissinger

২৭ শে মার্চঃ

পরবর্তীতে অপর রেডিও স্টেশন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র সহ আশেপাশের দায়িত্বে ছিলেন, ইস্ট রেজিমেন্ট ডিভিশনের সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান। তাঁর কাছে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষর সম্বলিত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র আসে। মুক্তিযোদ্ধারা বেতার কেন্দ্র ঘিরে রাখেন। ২৭ শে মার্চ আনুমানিক ৭.০০- ৭.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর হয়ে তিনি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।।



Major Ziaur Rahman broadcast the announcement of the declaration of independence on behalf of Sheikh Mujibur. On 28 March Major Ziaur Rahman made another announcement, which was as follows:


"This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, at the direction of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction, I have taken command as the temporary Head of the Republic. In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours. Joy Bangla."



Audio of Zia's announcement (interview – Belal Mohammed)

অনুবাদঃ “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আমি মেজর জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বরাত দিয়ে ঘোষণা করলাম, বাংলাদেশ আজ থেকে একটি স্বাধীন- সর্বভৌম দেশ। আরও ঘোষণা করলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে, পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে সশস্র যুদ্ধ করার। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ করে যাব। আল্লাহ্‌র রহমতে, বিজয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।“

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার ক্ষমতা তখন খুব সীমিত ছিল। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি জাপানিজ জাহাজে করে বার্তার অংশটি পরে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেটা পুনঃ সম্প্রচার হয়, “রেডিও অস্ট্রেলিয়া” – তে এবং সব শেষে যায় “বিবিসি” তে।
সুত্রঃ একাত্তরের মার্চের দিনলিপি

বিতর্কঃ

বলা হয়ে থাকে চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নান, ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর হয়ে প্রথম ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। কিন্তু বর্তমান বিএনপি দাবী করে থাকেন যে, ২৬ শে মার্চেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী সিদ্দিক সালেক, যিনি নিজেকে একজন সাক্ষী দাবী করেন, তিনি পরবর্তীতে বলেন যে, “অপারেশন সার্চলাইটের প্রাক্কালে, বঙ্গবন্ধুকে রেডিও তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে আমি শুনেছি।“


অপর একটি ভাষ্য মতে, মেজর জেনারেল হাকিম এ কোরাইশী তাঁর রচিত বই “The 1971 Indo-Pak War: A Soldier's Narrative,” - এ বলেন যে, মেজর জিয়া সেই স্বাধীনতার ঘোষণা করেন, ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যার দিকে।

এ সম্পর্কিত আরও দুটি ভিডিওঃ





যদিও আক্ষরিক অর্থে আমরা ২৬ শে মার্চ কেই আমাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি।

পরবর্তীতে দীর্ঘ নয় মাস সশস্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে, লাখো মা- বোনের আত্মত্যাগে আমরা ১৬ ই ডিসেম্বর অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। ছিনিয়ে এনেছি বিজয়। এ যুদ্ধে আমরা কেবল একটি দেশ ই পাইনি, হারিয়েছি তার চেয়েও বেশী। এবং চিনেছিও শত্রু এবং বন্ধু। দেখেছি চাটুকার স্বজাতির বিশ্বাসঘাতকতাও।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, রাজনৈতিক পটভূমি, গোড়াপত্তন ও বিভাজনের ফলে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও একটি বিতর্ক তৈরি হয়ে গেছে। নানা সময়ে আমরা নানা রকম করে ইতিহাস জানি। একেকটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে, আর স্বাধীনতার ঘোষণা, অবদান নিয়ে তৈরি করেন নানা বিতর্ক। তারা কেউ ই ভেবে দেখেন না, একটি দেশের স্বাধীনতা কোন একটি ব্যক্তির একক অংশগ্রহনে সম্ভব হয় না, কিংবা স্বাধীনতার ঘোষণা কে করলেন, সেটার উপরও নির্ভর করে না। দেশ কারও একার বা পারিবারিক সম্পত্তি নয়।

সেদিন কে কার আগে ঘোষণা দেবেন, কোন ধর্মের লোক, কি তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, কিংবা পরবর্তীতে কে কেমন সুবিধা পাবেন—এসব যদি তাঁরা চিন্তা করতেন, বোধ করি দেশটি স্বাধীন হত না। তখন ব্যক্তিগত স্বার্থ, রেষারেষি সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল, দেশপ্রেম! সম্মিলিত একটা ঐক্য ছিল বিধায়, ঘরে-বাইরে সব শত্রুকে পরাস্ত করে আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছি।

এ দেশ আমাদের সকলের। স্বাধীন একটা দেশ পেতে অবদান আছে প্রতিটি মানুষের। নারী-পুরুষ, যুবক- বৃদ্ধ, কৃষক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছেন, আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, জানা অজানা লাখো কোটি সাধারণ জনগন—সবার, এই সবার বদৌলতে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। “এক নদী রক্ত পেরিয়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা, আমরা তোমাদের কোনদিন ভুলবনা। ”


আমাদের স্বাধীনতা কে যদি আপেক্ষিক অর্থে একটি দিনের সাথে তুলনা করা হয়, তবে বলা যায়, সেই দিনের প্রথম প্রহরটি (২৫-২৬শে মার্চ ১৯৭১) শুরু হয়েছিল একটি বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে। “মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে, কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রু জলে।”

স্বাধীনতার সেই প্রথম প্রহরে জানা অজানা সেই সব শহীদের প্রতি জানাই সস্রদ্ধ সালাম ও ভালোবাসা। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এদেশে রক্ত প্রবাহিত হয় নি এমন কোন মাটি নেই। রক্তস্নাত এই স্বাধীনতা দিবসের প্রতি জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।।



_______________________________________________
** সূত্র, তথ্য এবং ছবি সবকিছুই ইন্টারনেটের নানা লিঙ্ক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
লিঙ্ক ১
লিঙ্ক ২
লিঙ্ক ৩
লিঙ্ক ৪
লিঙ্ক ৫
লিঙ্ক ৬

এমন কিছু নিয়ে লেখা খুবই কঠিন, যেখানে আমি ছিলাম না, যাতে আমার কোন অংশগ্রহণ নেই। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাপ্রার্থী এবং শুধরিয়ে দেবেন।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
১৬৫টি মন্তব্য ১৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×