সেনা-সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা অনুষ্টিত নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে (২০০৯সাল) আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে।আওয়ামীলীগ সরকার ‘দিন বদলের’ রাজনীতির আশ্বাস দেয়।কিন্তু তাঁরা দিন বদল বা চরিত্রের বদল কোনো কিছুই করেনি।এবারের হাসিনা সরকারও আগের দিন গুলোর মতই বিদ্বেষপূর্ণ ও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি অব্যাহত রাখে।সাধারণ সমর্থক থেকে শুরু করে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বিরোদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি ও সংঘাত-সংঘর্ষকেই তাঁরা রাজনীতি মনে করেন বলে মনে হয়।কারণ,সরকার গঠনের পর বিরোধি দল গুলো নানা অযুহাতে সরকারের সমালোচনা করতে থাকবে,সেসব সমালোচনার অক্ষরে অক্ষরে জবাব দিতে হবে?সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বে থেকেও যত্রতত্র যা ইচ্ছা বলে বেড়াতে হবে? – এসব ধারণা আওয়ামীলীগের মত অভিজ্ঞ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কল্পনা করতেও আমাদের মত অতী নগন্য জনগণেরও কষ্ট হয়।বিএনপি-র বেলাও একই কথা প্রযোজ্য।বিএনপি-আওয়ামীলীগ দুই দলই এক-এগারর আগের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকেই ক্রমে অগ্রসর হচ্ছে।আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধিদের বিচারকার্য শুরু করে ভালো না মন্ধ কি করছে কেউ জানেনা,যদি ভালো হয় তবেতো ভালো,আর যদি মন্ধ হয় তাহলে এই দেশ ও জাতিকে কোথায় ঠেলে দেবে সেই আশঙ্কায় বুক কাঁপে।জামাতে ইসলামির নীতি আদর্শ যাইহোক তাদের রাজনীতি দলীয় নেতৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত।তাই সুদূর ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মত আদর্শ বিহীন,উচ্ছৃঙ্খল কর্মী-সমর্থক নির্ভর ও অযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত দল গুলো পরস্পর কলহের মধ্য দিয়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছে কে জানে।এমনও কোনো দিন আসতে পারে যেদিন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে জামাতে ইসলামি সরকার গঠন করবে।যদি এমন হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।তবে সেই দিন কোনো দিন যদি আসে তাহলে দেশের ভালো হবে না মন্ধ হবে সে'টি অন্য প্রসঙ্গ।
শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ, অন্যান্য জোটভূক্ত দল গুলো নিয়ে ২০০৯ সালে যখন নতুন সরকারের যাত্রা শুরু করে তখন শান্তিপ্রিয় জনগণ অনেক পরিবর্তনের আশা করেছিলো।সাধারণ জনগণের চাহিদার দিকে লক্ষ্য না দিয়ে রাজনৈতিক কিছু বিষয়কে অধিক গুরুত্ব বা প্রাধান্য দিয়ে তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ শুরু করলেন।গত সরকারের আমলে তাঁদের নেতা-কর্মিদের উপর যেসকল মামলা করা হয়েছিলো সেসব মামলা প্রত্যাহারের কাজটি প্রথমেই সম্পন্ন করা হলো।তার পর সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে গত তত্বাবদায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের ও দুদক চেয়ারম্যানকে অপমান-অপদস্ত করার চেষ্টা করা হলো; যদিও (হয়তো কারো চোখ রাঙানতে) শেষ পর্যন্ত সে কু-কর্ম সফল হয়নি। তবে দুদক চেয়ারম্যান বাইজ্জত পদত্যাগ করে দুদককে ‘ঢোলক’ বানানোর সুযোগ করে দিতে হয়েছে। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন সহ সকল রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে ‘গৃহপালিত’ করে নিশ্চিন্তে ‘আগে বাড়তে’ শুরু করলেন।তত্বাবধায়ক সরকারের ভয়ে পালিয়া যাওয়া ‘সোনার ছেলেরা’ দলে দলে ঘরে ফিরলো।‘নব উদ্যমে,নব উল্লাসে’ তারা তাদের লুকিয়ে রাখা ‘লগি-বৈটা’,রামদা-চাপাতি দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর,নিজেদের দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর এবং নিরীহ বিশ্বজিৎদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।আর ‘হাসিনা আপা এগিয়ে গেলেন তারা রইলো তাঁর সাথে’।তবে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেলো,জনগণ যাবে কার সাথে ?
এদিকে আরেক ‘দেশনেত্রী’ জনগণের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন সংগ্রাম দাঁড় করানোর পরিবর্তে ব্যাক্তিগত আক্রমন-আক্রোশ নিয়েই কাদাছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত রইলেন।সময় এগিয়ে গেলো।আওয়ামীলীগ কিছু দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিলো- ১/ নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জামাতে ইসলামি সহ উগ্র ইসলাম পন্থি সংগঠন গুলোকে ‘উপড়ে’ ফেলা।তবে একাজে যুক্তি তাঁদের পক্ষে,কারণ তাদের জনসভায় বোমা হামলা সহ পূর্ববর্তী ঘটনাবলী এর প্রয়োজনীয়তা প্রমান করে। ২/ যেহেতু বিএনপি জামাতে ইসলামির সাথে ঐক্যবদ্ধ পথ চলে এবং আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহযোগিতা প্রদান করে সেহেতু বিএনপিকে ধুমড়ে-মুচড়ে ফেলাই আওয়ামীলীগের লক্ষ্য হওয়া স্বাভাবিক। ৩/ বিএনপি যে আওয়ামীলীগের শত্রু বা শত্রুদের মহা-মিত্র এবং যে আওয়ামীলীগকে আঘাত করবে সেই বিএনপির আশ্রয় পাবে তা আওয়ামীলীগের কাছে যেমন প্রমানিত,জনগণের কাছেও স্পষ্ট।সুতরাং আওয়ামীলীগ বিএনপিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল কৌশল ও পন্থা অনুসরণ করবে এটাইতো রাজনীতিতে স্বাভাবিক। ৪/ যুদ্ধাপরাধিদের বিচার আওয়ামীলীগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়।কারন,একদিকে স্বাধীনতার পক্ষের দল হিসেবে একাজ সম্পন্ন করা তাঁদের নীতিগত দায়িত্ব,অন্যদিকে নিজেদের অস্থিত্ব ও নিরাপত্তার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৫