স্পষ্টবাদী মৌ নানাভাবে আমাকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়।কারণে-অকারণে আমার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করতে পছন্দ করে। অসম্ভব রাগী।এককালে আমাকে ভালোবাসতো।রাগলে তার শ্যামলা গায়ের রংখানি বেগুনি রং হয়ে যায়। কখনো তার চোখে চোখ রেখে দুখানা কথা বলিনি। আমার মেয়ে বন্ধু ছিল অনেক। সে আমাকে খারাপ উপাধি দিয়ে আমার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করে চলে যায়। আমি চোখ থেকে আড়াই ফোটা জল ফেলে আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি। মনে মনে মনকে জিজ্ঞেস করি, নারী জাতি এমন কেন? কারণে-অকারণে মৌ আমার হৃদয় পুরাতে ভালবাসে।
দুদিন পর মৌর ফোন। বালিশের নিচে থাকা মুঠোফোন কাঁপছে। কানে দিয়ে বলি, হ্যালো। সে ১২০ডিগ্রি তাপমাত্রার রাগে আমাকে উত্তর দিলো, এই নিষ্ঠুর খানি কোনহানের। এই দুদিন তুই আমার খোঁজ নিলি না ক্যান? তুই আমারে ভালোবাসোস না? না কি অন্যকিছু? আমি গলা খিকরে নিচু গলায় উত্তর দিলাম, ভালোবাসি। মৌ শুনে বললো, রাখ তোর ভালোবাসা। আমি উত্তর দিলাম, সত্যি ভালোবাসি তোমাকে। এক পৃথিবী ভালোবাসি! সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, এত ঢং কিসের? মতলব কি! এসব বুঝি আমি বুঝি! আমার সাথে ফ্লার্ট করার জন্য এত কাসুন্দি! শুনে আমার শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো। যে নারীর চোখে চোখ রেখে কখনো কথা বলার সাহস পাইনি। যাকে দেবীর মত দেখি। সেই নারীর সাথে ফ্লার্ট করবার চিন্তা ভাবনা ভাবতেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। শাড়ী পড়ে আসলে এক বিকেলে তার নাভির কিয়দংশ দেখতে পেয়েছিলাম।তাতেই ঘুম হয়নি আড়াইরাত। তার নিরাভরণ শরীর কল্পনা করার সাহস করিনি স্বপ্নেও।আহা..... আমার সরল হৃদয়টাকে সে যদি বুঝতো!
এক বিকেলে সংসদ ভবনের সামনে বকুল গাছটার নিচে বসে আমি আর মৌ আইসক্রিম খাচ্ছিলাম খুব করে। হঠাৎ করে মৌ আমার চুল টেনে আমার ঠোটে ঠোট পুরে দেয়। আমি তখন জীবন যৌবনের সবটুকু তাকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম। মৌ সব নারী থেকে আলাদা। তাকে এখনো বুঝিনি আমি।ক্ষণেইই কাছে টেনে নেয় আবার ক্ষণেই দূরে।
একদিন মৌ নিজে থেকেই আমাকে বলল,তোমার দাঁড়ায় না নাকি? বুঝলাম মৌ গভীর সোহাগ চাচ্ছে। আমি নিম্নমধ্যবিত্ত মনমানসিকতা নিয়ে তাকে বলি, যাবে নাকি বরিশাল? লঞ্চে করে। এক কেবিনে ডাবল খাট। নদীর উপর শুয়ে শুয়ে একজন আরেকজন কে আবিষ্কার করব। কেউ জ্বালাবে না। মৌ কটাক্ষের একটা হাসি দিয়ে আমাকে বলল,লম্পট! এইভাবে আর কত মেয়ের সাথে লঞ্চে করে বরিশাল গেছিস তুই! শুনে আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয়। এই হল মৌ। পাগল কিসিমের।
আমি আর মৌ মাঝেমধ্যে শহরের বড় বড় অভিজাত হোটেলে সময় কাটাই। সুইমিংপুলে দুজন মিলে গোসল করি। যদিও আমি সাতার জানিনা। মৌ আমাকে গোসল করিয়ে দেয়।
আজ আমি আর মৌ সুইমিংপুলের পাশে বসা। দুজনেই মদ খেয়ে চোখ লাল করেছি। খানিক পর পর আমাকে অলস বুনো আদর করছে মৌ।আকাশ থেকে চুইয়ে পড়ছে গা ভর্তি চাঁদের আলো। হোটেলের উপরে সুইমিংপুল হওয়ায় যানচলাচলের শব্দ শোনা যাচ্ছিল না।হঠাৎ করে মৌ আমার গালে কষে একটা থাপ্পর দিয়ে বলল, যদি ভালোবেসে থাকিস আমাকে তাহলে এখন দৌড়় দিয়ে পানির মধ্যে ঝাপ দিবি। মৌ ভালভাবেই জানে আমি সাঁতার পারিনা। কোন কিছু জানিনা আজ তোকে করে দেখাতেই হবে!
তিন প্যাক মদের নেশা আমার এক নিমিষেই কেটে গেল। আরামদায়ক আবহাওয়াতে ঘামতে থাকি আমি। চোখ বন্ধ করে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেই। পানি খেতে খেতে এক পর্যায়ে যখন আমার যায় যায় অবস্থা,তখন মায়ের মুখখানা খুব মনে পরতে লাগলো। যখন বাঁচবার জন্য পানি থেকে উপরে উঠার চেষ্টা করছিলাম, তখন দেখি মৌ আমাকে বাঁচাবার জন্য পানিতে নেমে এসেছে। আমাকে কোলে তুলে উপরে তুলে নিয়ে আসে মৌ। কটাক্ষের একটা হাসি দিয়ে বলে, তুমি যে এই তারছিরা নারীকে কিভাবে বাকি জীবন সামলাবে! সে আমার বোঝা হয়ে গেছে ভালভাবে!
আমাকে রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। আমি তখন থরথর করে কাঁপছি। সে আবার পুরো একটা মদের বোতল শেষ করে আমার উপরে উঠে বসে কিভাবে যেন আদর দেওয়া শুরু করে। ওর যাতা বুনো কর্মকাণ্ডে আমার থরথরানি কেটে যেতে থাকে। আমি পুরো উপলব্ধি করলাম, এই ক্রেজি নারীর সাথে বাকি জীবন কাটাতে হলে ম্যাড়মেড়ে স্টাইল চলবেনা!
মৌ সবটুকু আদর শেষ করে আমার কোলে বসেই একটা সিগারেট ধরায়। আমি খেতে মানা করলে, নগরের সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে এক অদ্ভুত হাসি হাসে।এক ঈশ্বরী হাসছে। মৌ অসম্ভব সুন্দরী। চাইলেই গোটা পুরুষ জাতিকে সে হাতের মধ্যাঙ্গুলির ইশারায় ডুবিয়ে ভাসিয়ে ছারখার করে দিতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১০:৪৮