somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

বুক পকেটের স্বপ্ন।(ছোট গল্প)

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রাম থেকে শহরে এসে মেসে থাকি।দারিদ্র্য মানুষকে স্বপ্ন দেখায়।আমি এক বুক স্বপ্ন বুক পকেটে ভরে এসেছিলাম এই জাদুর শহরে।লেখা-লেখি ছাড়া তেমন অন্য কিছু পারিনা।শহরের বড় বড় পত্রিকায় গল্প,কবিতা দিয়ে যা পাই তা দিয়ে সিগারেট, চা আর মেস ভাড়া মিটে যায় কোনরকম। জাদুর শহরে জাদুর সব কারবার! কেউ স্বপ্ন দেখে ইট-সিমেন্টে গড়া বিশতলা অট্টালিকায় বসে আবার কেউ রাস্তার ফুটপাতের ময়লা ঘেষা কোন এক জায়গায় বসে।দারিদ্র্যের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। মাঝে মাঝে বুক পকেট থেকে উঁকি দিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়।এক বুক স্বপ্ন।নতুন করে ভাবায় ।কিন্তু দিনশেষে ওই বুকপকেটেই পড়ে থাকে বুক পকেটের স্বপ্ন।

মাঝেমাঝে মুঠোফোনে খবর নেই আম্মার। সে তিন মাসের শয্যাশায়ী। ছোট বোন সংসারের যাবতীয় কাজ করে।মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়।এক অকর্মক পেটে ধরে শেষ বয়সে এসে কতনা কষ্ট করতে হচ্ছে তাকে।বুকে চাপা কষ্ট নিয়েও বড় লেখক হবার আশায় বেচে আছি।খুব ঘুরে টুরে একটা সংবাদপত্রে চাকরি নিয়েছিলাম।তিন মাস বেতন না দেওয়ায় রাগ করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় নিজের উপর, লেখার উপর।রাগ করে লেখালেখি ছেড়ে দিতে মন চায়।কিন্তু এভাবে নিজের আত্মাকে মেরে ফেলা কি ঠিক হবে!দু-মুঠো ডাল ভাতের জোগাড় ছাড়া যেন কেউ যেন সাহিত্যচর্চা করতে না আসে ।

শীতের মধ্যে ছোটবোন চাদর চেয়েছিল। দিতে পারিনি।সিকান্দার চাচা সিগারেট চাবার সাথে সাথে মুখের উপর না করে দেয়।সে নাকি আমার কাছে আর বাকিতে সিগারেট বেচবেনা।আমি বিষন্ন মুখে আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার অন্যদিকে চাই।সেও মন্দ বলেন নি।বাকি পড়েছে চার হাজার ৪২ টাকা।এই ছোট পান সিগারেটের দোকানে এই টাকা নেহাত কম নয়।

মাস তিনেক সংবাদপত্রে কাজ করার সময় পরিচয় হয়েছিল অপ্সরার সাথে।এক সন্ধ্যায় আমার শ্যামলা রঙের হাতের উপর হাত রেখে কথা দিয়েছিল,"তোমাকে ছেড়ে যাবো না কোনদিন। বিয়ে করলে তোমাকেই করবো।না হলে আর কাউকে নয়।"দিন পনেরো আগে সে মুঠোফোনে আমাকে জানালো,"আগামীকাল আমার বিয়ে।দাওয়াত রইল।ভুলেও আসবে না।আই হেটু।"চোখ থেকে দু'ফোটা জল বের হবার আগেই বুঝতে পারলাম আর যাই হোক হাজার দুয়েক টাকায় সংসার চলে না।দারিদ্রদের কান্না করে চোখের জল শেষ করতে নেই। চোখের জলের দাম তো অট্টালিকায় থাকা দুলালদের আছে। আমাদের ওসব নিয়ে ভাবতে নেই।

আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে বন্ধু কাইকর পাশে এসে বসলো ।এক মেসে থাকি ।দারিদ্র দারিদ্র্যের মন বুঝে।কাইকর নাট্যকার ।দারিদ্রদের সবার সামনে কাঁদতে নেই।কান্না করার জন্য খোলা মাঠ আছে ,নদীর পাড়ের ঘাট আছে ,পুকুরপাড়ের গাছ আছে।

কাইকর আর আমি দুজন মিলে খোলা আকাশের নিচে বসে ভেতরে জমে থাকা বুকের চাপা কষ্ট গুলো বের করে দেই ।একজন গল্পকার আরেকজন নাট্যকার ।আমরা দুজনেই পথ হারা পথিক।বিষয় মন্দ নয়।

তবুও বেলাশেষে যেন দুজনের চোখের তারা আজও নিভে যায়নি।ভয় নেই,নতুন করে হারানোর কিছু নেই ।খোলা আকাশের নিচে বসে মানুষের মঙ্গল কামনা করি।শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে।রাতের আধারে চাঁদমামা গায়ে আলো ঢেলে দেয়।মাঝে মাঝে মানুষ এসে ভালবাসার গান শুনিয়ে যায়।মাঝে মাঝে পাগল নামের ভালো মানুষগুলো সিগারেটে দম দেবার যোগান দিয়ে যায়।কম দামি সিগারেট খেয়েও হাসি।জাদুর শহরে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা স্বার্থ ছাড়াই গাছের মতো উপকার করে।তবে তারাও নীরিহ ।এখনো আদাপেটে শুয়ে বসে মাজায় গামছা কষে বেঁধে গল্প,কবিতা বুনি।নতুন কোন স্বপ্নের আশায়।জাদুর শহরে বুকপকেটে স্বপ্ন পুষে রাখা, পাগল নামের ভালো মানুষগুলো একসাথে মিলে ভালোই আছে ।সুন্দর আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×