somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

গলির পাগল কাইকর! ( ছোট গল্প)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিকেল গড়িয়ে নগরীতে সন্ধ্যা নামে। ভোরের আবছা অন্ধকার গড়িয়ে নেমে আসে আলো। কিন্তু কাইকরের জীবনে নেই সম্প্রতি আলো বা আধার! কিন্তু কেন?

খুব অল্প মাইনের চাকরি করে কাইকর। এক বিষন্ন বাতাসের সন্ধায় মা-বাবাকে হারিয়ে অবলীলায় ঘুরে বেড়ায় এখন পুরোটা শহর। শীত এসে শীত যায় কিন্তু একটিবার খোঁজ নেবার মতো কেউ নেই তার।

কাইকরের মাইনে অল্প তাই তার স্বপ্ন অল্প। এক সন্ধ্যায় ভাড়া মিটাবার সময় দু'টাকার জন্য রিকশাওয়ালার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়। ভাবটা এমন যেন রোজকার রিকশাওয়ালাদের গালে নিয়ম করে চড় বসিয়ে বেড়াই। হাজার তিনেক টাকার বিনিময়ে রাতে মাথা গোঁজার জন্য একটা ছোট্ট রংহীন রুম নিয়ে থাকে। বেতনের অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে কোনরকম মোটা চালের ভাতের সঙ্গে কিচমিচু তরকারি দিয়ে মাস পার করে।

মেঘহীন বৃষ্টির মতই তার জীবনে আগমন ঘটে অপ্সরার! দেখতে শেষ বিকেলের শেষ রোদের মতো। কপালে ছোট্ট কালো টিপের সঙ্গে কায়দা করে কুচি দিয়ে শাড়ি পরে। নিয়ম করে রোজকার তারা টিএসসি চত্বরে বসে খুনসুটির প্রেম করে। কখনোসখনো অপ্সরার কপালে উপচে পড়া গুটিকয়েক সোনালি চুলের মাঝবরাবর ঠোঁট চুবিয়ে চুমু খাই। কাছেপিঠের কিছু মানুষ ওদের চুমু খাওয়া দেখে অল্প সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে আবার হাটা শুরু করে। দুষ্টুমির ছলে অপ্সরা মুখভার করে বলে, কাইকর সাহেব! আমি যদি তোমাকে রেখে এক জীবনের জন্য চলে যাই তাহলে কি করবে? অপ্সরার মুখে অমন কথা শুনে, সে ভরা মানুষের ভিড়ে চোখের জল ফেলে খুব করে। কাইকরের শিশুসুলভ আচরণ দেখে অপ্সরা লোকলজ্জার ভয় ফেলে তার ঠোঁটে ঠোঁট পুরে দেয় শহরের সমস্ত কিছুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে।

মাস শেষে মাইনে হাতে পাবার পর খুশিমনে শাহবাগের আজিজ মার্কেট থেকে গোটা কয়েক নীল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও গিয়া কালারের একটা শাড়ি কিনে অপ্সরার জন্যে।
ছোট স্বপ্নের ছোট মানুষটা ছোট ছোট কিছুমিছু তার জন্য কিনতে পেরে একপৃথিবী খুশি। ধুলিমাখা শহরের সুরুচিসম্পন্ন বাতাস গিলতে গিলতে সে বড় শহরের ছোট গলির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অপ্সরার জন্য।

অদূরে থেকে আসা অপ্সরার আগমনী গন্ধ পেয়ে কাইকর সবুজ শ্যাওলাযুক্ত দেয়ালের সঙ্গে মিটিমিটি হাসতে হাসতে জড়োসড়ো ভাবে হেলান দিয়ে বসে।
সেদিন খোলা আকাশে বড় সাইজের একখানা সাদা চকচকে চাঁদ ভরা জোৎস্নার যৌবনে ভাসিয়ে দিচ্ছে পুরোশহর। ল্যাম্পোস্টের হলুদ আলো লম্বাটে হয়ে গলির মোড়ের মাঝবরাবর পড়েছে। পাশের পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে কিছু পাখির দল বেসুরা গলায় গান গাই।

অপ্সরা গলির মোড়ে পা রাখতেই তার মন গহীনের প্রেমের বাতাস উথালপাতাল ভাবে দোলা শুরু করে। খানিকটা সময়ের জন্য যান্ত্রিক নগরী ল্যাম্পপোস্টের আলো অন্ধকারে রূপ নেয়! কিছু মুখোশধারী নরপশুর দল অপ্সরাকে কষে-টষে বেঁধে নিয়ে যায় দূর দেশের দূরে কোথাও!

জান্তব নগরীর জান্তব উল্লাসগুলো বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনা। কোনো এক শহরীক ঝরে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে থাকে নর্দমার এক কোণে!

তার কিছুদিন পর থেকেই কাইকর শহরের ছোট-ছোট গলির মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কিছু সময় হাসে, কিছু সময় কাঁদে আবার কিছু সময় চোখ বুজে থাকে। নগরীর মানুষজন এখন তাকে গলির পাগল কাইকর হিসেবে চেনে।

ময়লা গন্ধযুক্ত ছেঁড়া শার্ট-প্যান্ট ও উস্কোখুস্কো জটলা চুল নিয়ে পড়ে থাকে শহরের অলিতে গলিতে। পেটের দায়ে শহরের বউওয়ালা পুরুষদের চাহিদা মেটানো নাসরিন ভাই ডেকে রাতের খাবার দেই। তা দেখে চোখে জল জমে কাইকরের। ল্যাম্পপোষ্টের আলো ও চাঁদের জোসনা আড়াল করে চোখের জল ফেলে নিরবে।

ভোর সকালের সোনালী রোদ প্রথম এসে পড়ে তার চোখের উপরে। কাইকর তারপরেও চোখ বুজে, পেট বুঝে ঘুমিয়ে থাকে বিচক্ষণ।
এখন আর চোখের কোণে লেপ্টে থাকা জলের দাগ দেখবার কেউ নেই! নেই বাবা-মা ও সেই অপ্সরা।

কাইকর এখনো রোজ স্বপ্ন দেখে, একদিন খুব সকালে অপ্সরা এসে তার জটলা চুলগুলো ছাড়িয়ে দিয়ে নতুন করে নতুন ভাবে জড়িয়ে ধরে বেঁচে রবে আজীবন।

~আব্দুল্লাহ আল মামুন(কাইকর)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×