সকালটা আমার খুবই অদ্ভুত। দাঁত মাজতে মাজতে কালাম মামার চায়ের দোকানে চলে যায় প্রতিদিন। যাওয়ার অবশ্য একটা কারন আছে। এক বিশেষ মানুষের টানেই যাওয়া হয়। মানুষটা মাঝ বয়সী। আমাদের উত্তর পাড়ার স্কুলের গণিতের শিক্ষক। সকালে তিনিও রোজ এখানে চা খেতে আসেন। তার আকর্ষনে অনেকেই ভোর সকালে কালাম মামার দোকানে ভীর জমায়। স্যার যখন কথা বলেন তখন সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত তা গিলতে থাকে। তার কথায় কেমন এক জাদু আছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ইনি।
.
যথারীতি আজকেও দাঁত মাজতে মাজতে গেলাম দোকানে। কিন্তু অবাক হতে হল। অন্যান্য দিন স্যার সবার আগে আসেন কিন্তু আজকে স্যারতো আসেনই নি এমনকি কালাম মামাও দোকান খোলা রেখে কোথায় চলে গেছে। আমি দোকানের বেঞ্চটাতে চুপচাপ বসে পাশের বাড়ির কাসেমের সাথে গল্প করতে লাগলাম। কিন্তু গল্প বেশী জমল না। আমিও বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছি কাসেমও বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে, স্যার আসে নাকি এই অপেক্ষায়।
.
অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ স্যারকে দেখলাম গুটি গুটি পায়ে দোকানের দিকে আসছেন। সবার মুখেই আনন্দের ঝিলিক বয়ে গেল। স্যার এসেই বিষন্ন মুখে বসে রইলেন। এটা দেখে আমি এমনকি সবাই খুব অবাক হল। কারন আমরা আজ পর্যন্ত স্যারকে কখনও মনমরা হয়ে থাকতে দেখি নি। তিনি সবসময় হাসি খুশি থাকেন। তার এই বিষন্ন অবস্থা দেখে সবাই উসখুস করতে লাগল। অবশেষে স্যার মুখ খুললেন।
আজকে তোমাদের আমি একটা গল্প শোনাব। স্যারের এই কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্যার আমাদের কখনও গল্প বলতেন না শুধু বিভিন্ন উপদেশমূলক কথা বলতেন। স্যারের মুখে একি শুনছি।
.
স্যার বলতে থাকলেন। "কাল বিচিত্র এক স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম আমি মাটিতে পড়ে আছি। আর কোথা থেকে চার পাঁচজন মানুষ এসে আমাকে কাঁমড়াচ্ছে। আমার চামড়া মাংস খুবলে খুবলে খাওয়া শুরু করেছে। আমি খুব চেষ্টা করছি বাঁধা দেওয়ার কিন্তু হাত পা এক ফোঁটা নাড়াতে পারছি না। খুব ভয়ঙ্কর দেখতে ছিল মানুষ গুলো, দাঁতগুলো খুব ধারালো। হঠাৎ ওদের একজন আমার ঘাঁড়ে কাঁমড় দিল। আমি দেখলাম গলগল করে রক্ত আমার গলা বেয়ে সামনের অংশ পুরো লাল করে দিয়েছে। রক্তের সাথে মুখের কষ বেয়ে কেমন পিচ্ছিল পদার্থ বের হচ্ছে। আরেকজন তার ধারালো নখ আমার একটা চোখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে চোখটা টান দিয়ে বের করে আনল। "
.
এইটুক বলেই স্যার উঠে দাঁড়ালেন বললেন আমার জরুরী কাজ আছে তোমরা থাক তাহলে। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাঁটা শুরু করলেন। স্যার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দেখলাম কালাম মামা দৌড়ে আসছে। এসেই বলল "তোমরা এখনও বসে আছ? জানোনা আমাদের উত্তর পাড়ার স্কুলের গণিতের শিক্ষক মারা গেছে কাল রাতে??"
আমরা সবাই হা হয়ে গেলাম। তাহলে এতক্ষণ কে গল্প করল? হঠাৎ করেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২৬