লেখাটা নভেম্বর ১, ২০১৭ সনে আমার ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করেছিলাম। মানে খুব বেশীদিন আগের নয়। তখন থেকেই আলী বানাতকে আমি ফলো করতাম তার বিভিন্ন কর্মকান্ডে ইউটিউবে। আজ আর আলী বানাত নেই কিন্তু তার শিক্ষা, তার উপলব্ধি সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
.
(মৃত্যুর দুইদিন আগে তার করা ভিডিও দেখে কাঁদলাম নিরবে।)
.
This is Ali Banat's story
.
কে এই আলী? আমরা কি তাকে চিনি? চলুন চিনে নেই। আলী বানাত অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে জন্মগ্রহণ করেন বিপুল আভিজাত্য আর ঐতিহ্যমন্ডিত একটি পরিবারে। জীবনটাকে উপভোগ করতে করতে যৌবনে পদার্পণ করেন। এবং বিশাল বিজনেসম্যান হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন খুব অল্প বয়সে। দুই দুইটা হিউজ বিজনেস দাঁড় করান একক প্রচেষ্টায়। চলেন দেখে আসি তার লাইফ স্টাইলের কিছু নমুনা।
।
তিনি ফেরারি স্পাইডাল গাড়ি ব্যবহার করেন যার মুল্য $600000।
তার প্রিয় ব্র্যান্ড Louis Vuitton. তার স্পোর্টস সু এর মুল্য ৯৫০০০ টাকা। যে ব্রেসলেটগুলো ব্যবহার করেন সেগুলোর মুল্য ৪৫-৫৫ লাখ। এবং নরমাল যে স্পঞ্জ স্যান্ডেল ব্যবহার করেন তার মুল্য ৫০০০০ টাকা। মনে হতেই পারে এই লোকটির জীবনে কিসের অভাব থাকতে পারে?
।
এভাবেই লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করতেন আলী বানাত। কিন্তু হঠাৎ ২০১৫ সালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং এটা ক্যান্সারের ৪র্থ স্টেজ। তার বাঁচার মেয়াদ সর্বোচ্চ সাত মাস।
অর্থাৎ এখন মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া তার আর কোন কাজ নেই। যখন তার রোগ ধরা পড়ার পর চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে তখন Mufti Muhamed Hoblos তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। কথোপকথনের এক পর্যায়ে যখন মুফতি জিজ্ঞাস করেন," ক্যান্সার সনাক্ত হওয়ার চার মাস পর আপনার এখনকার অনুভুতি কেমন?"। আলী বানাত উত্তর দেন "আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল আছি।" এবং সাথে সাথে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এরকম একটা রোগ দেওয়ার কারণে। বলেন,"এই ক্যান্সারের সংবাদ পাওয়ার পরই আসলে আমি জীবনের অর্থ বুঝতে পেরেছি, স্রষ্টাকে চিনেছি। এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রহর গুনছি। কখন আসবে সেই মুহূর্ত এটা নিয়ে আমি অস্থির হয়ে আছি। " আলী আরও বলেন " ক্যান্সার ধরা পড়ার কয়েকমাস পরে একদিন একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমার পাশে আমার পরিবার দাঁড়িয়ে আছে আর আমি উপরে উঠে যাচ্ছি। পরম প্রশান্তিতে মনে হল এইতো আল্লাহর সাক্ষাৎ পেলাম বুঝি! কিন্তু ঘুম ভেঙে গেলে দেখি আমি নিজের বিছানাতেই আছি। তখন খুব আফসোস হল ইস! আল্লাহ আমাকে নিলেন না ভেবে। "
।
মুফতি বের হয়ে আসার সময় আলীকে জিজ্ঞাস করলেন, " এই দামী গাড়ি, দামী পোশাক এগুলো এখন আপনার কাছে কেমন লাগে?"
আলী উত্তর দিলেন "আমার প্রিয় এই ফেরারি গাড়ির চেয়ে যদি আমি আফ্রিকান একটি শিশুর মুখে নতুন জুতা পাওয়ার আনন্দ দেখতে পাই সেটাই আমার কাছে অধিক মুল্যবান মনে হবে।"
তিনি তার অর্থ সম্পদ, লাক্সারিয়াস লাইফ একে একে সাদকাহ করতে থাকেন এবং একজন মানুষ মৃত্যুর সময় যেমন কবরে কর্ম এবং সাদকাহ ছাড়া কিছু নিয়ে যেতে পারে না ঠিক সেরকমভাবে নিজেকে আল্লাহর পথে সঁপে দেন। তার প্রতিষ্ঠা করা MATW project (Muslim around the world) চ্যারিটি সংগঠন হিসাবে আফ্রিকান অভাবী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করছে।
।
বিঃদ্রঃ- সুখটা আপেক্ষিক। আসলেই আপেক্ষিক। তবে স্রষ্টার কৃতজ্ঞতায় নিজেকে নিমজ্জিত করার মাধ্যমে যে সুখ পাওয়া যায় তা একেবারেই বাস্তবিক। ১০০% বাস্তবিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫