আমরা কতো অথর্ব জাতি, ভাবতেই কষ্ট লাগে। আমরা আমাদের মায়ের ভাষা তথা প্রাণের ভাষা "বাংলা" ভাষার ৫২ টি বর্ণ ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারি না। আর করতে গেলে দাত ভেংগে যাবার উপক্রম হয়। অথচ ইংরেজরা মাত্র ২৬ টি বর্ণ দিয়ে পুরো পৃথিবী শাষণ করে যাচ্ছে। আর আমরা তাদের শাষণের গোলামে পরিণত। আর একটি কথা না বললেই নয়, বর্ণসংখ্যা বেশি হবার কারণেই হয়তো বাঙালি জাতি হিসেবে একটু বেশিই কথা বলি বা বলতে পছন্দ করি আমরা।
বিষয়টি নিয়ে এ কারণেই লিখতে হলো-আমি প্রায়ই বিভিন্ন জনের সাথে বিভিন্ন কারণেই কথা বলি। যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় তাদের সাথে। এরা সবাই অনেক ক্ষেত্রে আমার চেয়ে অনেক উচ্চশিক্ষিত। সমাজে তাদের অনেক মূল্যায়ন। তাদেরকে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ এলিট শ্রেণীর মানুষ বলে প্রণাম করে কুহর্নিশ জানায়। কিন্তু তারাই দেখি বাংলা ভাষার একটিমাত্র বর্ণ উচ্চারণের কথা বললে আমতা আমতা করে উচ্চারণ করেন (অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ ইত্যাদি)। আবার এ-ও দেখি অনেকে ইংলিশ-বাংলিশ মিশ্রিত শব্দ উচ্চারণ করেন। এমনকি ইংরেজিতে ঠিকই একটি শব্দ বলতে পারেন, অথচ এটির বাংলায় কি রূপ সেটি জানেন না।
আমাদের দেশের এক রাজনীতিবিদ নাকি ইংল্যান্ড সফর শেষে বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তার অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছিলেন এভাবে, ব্রিটিশরা খুবই মেধাবী জাতি, শিক্ষাদীক্ষায় তারা এত আগায়া গেছে যে, তাদের দেশে পাঁচ বছরের বাচ্চাটাও অনর্গল ইংরেজি বলে। তবে আমি যে জিনিসটা দেইখ্যা সবচাইতে খুশি হইছি; গর্বে আমার বুকটা ফুইল্লা উঠছে, তারা সবকিছু ইংরেজিতে করলেও আজানটা দেয় বাংলায়।
একুশে ফেব্রুয়ারি এলে আমরা ঘটা করে ভাষা দিবস পালন করি অথচ সেই শ্রদ্ধাতেও মিশে থাকে ভেজাল। আমরা ইংরেজি তারিখ, সাল সবকিছু বলে দিতে পারি, কিন্তু বাংলায় আজ কতো তারিখ-বলতে গেলে জিহবা দিয়ে দাঁত কাটতে হয়। বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয় খুব। ভাবি, এজন্যই কি রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার নাম না জানা কতো শহীদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে...
তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা অবনত মস্তকে যাঁদের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি একটি ভাষা...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮