somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপেক্ষিকতা ও সান্তা, বিজ্ঞান ও বিভ্রমের কথোপকথন—২য় পর্ব

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম পর্ব: Click This Link


ম্লান বিষণ্ণ অপরাহ্ন। মহাকালের পথে চলে যায় বিষাদের দিন। তবু পথ চলা নিরন্তর আমাদের, আনন্দ-আশায়। বাড়ির সামনে বাগানে বসে গল্প করছি আমি, মেয়ে সারাকা, আর আমার বন্ধু পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আবি। লালচে বৃদ্ধটি আসল এমন সময়।
"সময় প্রসারণ ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে আমাদের আলোচনাটুকু এগিয়ে নেয়ার জন্য এসেছি আবার," প্রাণবন্তভাবে বলল বুড়ো।

সান্তার গল্প করেছিলাম আমি পূর্বেই, তাই কেউ অবাক হলো না তেমন। চায়ের একটি কাপ সান্তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে সারাকা বলল, "আপনার সময় প্রসারণের মানসপরীক্ষায় যুক্তির মারাত্মক কিছু লঙ্ঘন খুঁজে পেয়েছি আমি, জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন আমার মনে। এদের যথাযথ উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি গাণিতিক বিভ্রম, হিসেব-নিকেশের মারপ্যাঁচ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।"
"কী বলছ তুমি, সারা," বিস্ময় প্রকাশ করে আবি। "আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রতি সন্দেহ পোষণ করছ তুমি, অথচ স্টিফেন হকিং-এর মতো বিজ্ঞানী তাঁর The Grand Design গ্রন্থের The Theory of Everything অধ্যায়ে কী লিখেছেন, শোন: 'বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, যে পর্যবেক্ষক কোনো ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির রয়েছে, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে দ্রুততর। অন্যদিকে যে পর্যবেক্ষক ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির নয়, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে ধীরে। আমরা যদি বিমানের লেজ থেকে নাকের দিকে ভ্রমণরত একটি আলোক রশ্মিকে ঘড়ির এক টিকের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে ভূমিতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে বিমানের ঘড়িটি ধীরতর গতিতে চলছে, কারণ পর্যবেক্ষকের নিজের প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলো দীর্ঘতর দূরত্ব অতিক্রম করছে। কিন্তু এ ফলাফল ঘড়ির নির্মাণকৌশলের উপর নির্ভর করে না; সকল ঘড়ির জন্য এটি প্রযোজ্য, এমনকি আমাদের দেহঘড়ির জন্যও। তারপর এ ছবিটির নিচে কী লিখেছেন হকিং, পড়:

'গতিশীল ঘড়ি ধীরে চলে বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু ব্যাপারটি দেহঘড়ির জন্যও প্রযোজ্য, সেহেতু গতিশীল মানুষের বয়সও বাড়ে তুলনামূলকভাবে ধীরে। কিন্তু খুব বেশি আশাবাদী হয়ো না তোমরা—প্রতিদিনের সচরাচর গতিতে কোনো সাধারণ ঘড়িই পার্থক্যটুকু ধরতে পারবে না।'
তুমি কি, মা, স্টিফেন হকিং-এর চেয়েও বড় বিজ্ঞানী?" শেষের দিকে কিছুটা শ্লেষ ঝরে পড়ে যেন আবির কণ্ঠে।

"অধ্যায়টি পড়লাম, চাচা," মোটেও উদ্বিগ্ন না হয়ে বলল সারাকা। "হকিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আপাতত দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমতঃ, আমার ছোট বোন ফারিন যেরকম নিজেকে প্রশ্ন করে করে যত্নের সঙ্গে হোমওয়ার্ক করে থাকে, হকিং সেরকম যত্ন করে আলোচ্য অনুচ্ছেদগুলো লিখেননি। তাঁর বর্ণনা, ছবি, গতিশীল মানুষের বয়স নিয়ে বক্তব্য, সব মিলিয়ে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের মতোই গৎবাঁধাভাবে সময় প্রসারণ ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন মাত্র, বাজিয়ে গিয়েছেন একই বাদ্য, মেনে নিয়েছেন কোনোরূপ সমালোচনা কিংবা গভীর পর্যলোচনা ছাড়াই। আমার প্রশ্নগুলোর উল্লেখ কিংবা উত্তর নেই তাতে, ফলে পড়ার পরও বিশেষ আপেক্ষিকতার ব্যাপারে আমার প্রশ্ন কমেনি। এ বিষয়ে শীঘ্রই ফিরে আসব আমরা।

দ্বিতীয়তঃ, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যেহেতু জগৎ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী ও উপলব্ধির মৌলিক পরিবর্তনের দাবী রাখে, আমাদের স্বাভাবিক বিচারবোধ ও যুক্তির বিপরীতে কাজ করে, সেহেতু এমনি এমনি এটি মেনে নিতে ইচ্ছুক নই আমি, খ্যাতনামা বিজ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞানলেখকগণ অলস-আনন্দে যা-ই লিখুন না কেন। এ প্রসঙ্গে মধ্যযুগের মহান বিজ্ঞানী ইবনে আল হাতেমের প্রজ্ঞাপূর্ণ ও চির-প্রাসঙ্গিক একটি উক্তি তুলে ধরতে চাই, যা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এ বিষয়ে: 'একজন সত্য-সন্ধানী তিনি নন যিনি প্রাচীন মানুষের লেখা পাঠ করেন, এবং নিজের প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সেগুলির উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন, বরং তিনিই সত্য-সন্ধানী যিনি সেগুলির উপর নিজের বিশ্বাসকে সন্দেহ করেন এবং সেখান থেকে যা আহরণ করেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন—তিনি এমন একজন মানুষ যিনি যুক্তি ও নিরীক্ষার আশ্রয় নেন, নিছক আবদ্ধ হন না মানুষের বক্তব্যে যার প্রবৃত্তি ভরপুর নানা অপূর্ণতা ও ত্রুটিবিচ্যুতিতে। অতএব যে ব্যক্তি অধ্যয়ন করেন বিজ্ঞানীদের লেখা, তার দায়িত্ব, যদি সত্য উপলব্ধি করাই অভীষ্ট লক্ষ্য হয় তার, নিজেকে বৈরী করে তোলা সেসবের প্রতি যা তিনি পাঠ করেন এবং বিষয়বস্তুর মূল থেকে প্রান্তভাগে মনোনিবেশ করে তাদের আক্রমণ করা চতুর্দিক থেকে। উক্ত বিষয় নিগূঢ় পর্যবেক্ষণকালে নিজেকেও সন্দেহবিদ্ধ করতে হবে তাকে, যেন পূর্বসংস্কার কিংবা উদারতার ফাঁদে পতিত না হন তিনি নিজেই।' "

আমরা একমত হলাম, সান্তা ক্লজের সঙ্গে যুক্তিতর্কের নিরিখে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমই বিষয়টি স্পষ্টতর হতে পারে। সুতরাং সারাকা তার প্রশ্ন শুরু করল, "আমার প্রথম প্রশ্ন, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে আপনি সময় প্রসারণের এই যে সমীকরণটি প্রতিপাদন করলেন, এটি কি বাস্তবতা বিবর্জিত নিছক গাণিতিক সমীকরণ, নাকি বাস্তবতাকে প্রকাশ করে পদার্থবিদ্যার এমন তত্ত্ব?"
"বাস্তবতা বিবর্জিত গাণিতিক সমীকরণ বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছ?" অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে সান্তা।
"ধরুন, আমাদের পুকুরে রুই মাছের পোনা চাষ করা হচ্ছে। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে নিয়মিত মাছের খাবার দেই আমি। ফাঁকে ফাঁকে আমার চুলেরও যত্ন নেই। লক্ষ করি দিনে দিনে সুন্দর বেড়ে উঠছে মাছগুলো এবং, বিস্ময়কর ভাবে আবিষ্কার করি, চুলের দৈর্ঘ্যও বাড়ছে আমার। নিবিড় পর্যবেক্ষণের দ্বারা হিসেব করে দেখলাম, আমার চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি রুইপোনার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সমানুপাতিক

অতএব কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে আমার চুলের দৈর্ঘ্য h এবং রুইপোনার দৈর্ঘ্য r হলে, গাণিতিকভাবে
,
যেখানে k একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক এবং C একটি সমাকলন ধ্রুবক, ব্যবহারিক পরীক্ষণের মাধ্যমে যাদের মান নির্ণয় করা সম্ভব।
আমার চুলের সঙ্গে রুই মাছের দৈর্ঘ্যের এ সম্পর্কটি হচ্ছে বিশুদ্ধ গাণিতিক সমীকরণ, কিন্তু বাস্তবতা বিবর্জিত।"

উদাহরণটি ব্যাপক হাস্যরসের উদ্রেক করল আমাদের মধ্যে। নিরীহ একটি সরল সমীকরণ, যা নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগণও চমৎকার উপলব্ধি করবে, তার প্রতিপাদনে ডিফারেন্সিয়াল ও ইন্টেগ্র্যালের প্রয়োগ কতই না রহস্যমণ্ডিত ও গুরুগম্ভীর এবং প্রায় দুর্বোধ্য করে তুলেছে তাকে! আমার হঠাৎই মনে পড়ল আইনস্টাইনের কথা। শিক্ষক মিনকফস্কি যখন বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে স্থান-কালের দুর্বোধ্য চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিতে ক্রমাগত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন, আইনস্টাইন কৌতুকভরে বলে উঠেছিলেন, "আপেক্ষিকতা তত্ত্বে গণিতবিদগণ হস্তক্ষেপ করার পর, আমি নিজেও একে আর বুঝে উঠতে পারছি না।"

সারাকার সমীকরণটি যত হাস্যকরই হোক, আমাদের স্বীকার করতেই হলো, তার বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণটি যথার্থ। জগতের সব নিয়মকেই হয়তো গণিতের সাহায্যে প্রকাশ করা সম্ভব, তা যত সরল কিংবা দুর্বোধ্যভাবেই হোক, কিন্তু বিপরীতক্রমে সব গাণিতিক সম্পর্কই বস্তু জগতের নিয়মকে প্রকাশ করে না।

হাসি থামলে সান্তা বলল, "তুমি নিশ্চিত থাকতে পার, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব জগতের একটি বাস্তব, ভৌত ঘটনাকে প্রকাশ করে।"
সারাকা বলল, "ধন্যবাদ, সান্তা। তাহলে আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের দিকে যাই। আপনি বলেছেন প্ল্যাটফর্মের সাপেক্ষে গতিশীল ট্রেনে ভ্রমণকালে মেঝে ও ছাদের আয়না দুটোর মধ্যে ফোটনের আপতন-প্রতিফলনের পথটি আপনি দেখবেন ক্রমাগত খাড়া উপরে-নিচে, কিন্তু প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে বাবা দেখবেন আপতন-প্রতিফলনটি কোনাকুনি সরলরৈখিক পথে হচ্ছে?"

চিত্র: সান্তার যুক্তি অনুসারে, সান্তা ফোটনটিকে দেখবে বাম দিকের ছবির মতো খাড়া উপর-নিচে, কিন্তু আমি দেখব ডানদিকের ছবির মতো কোনাকুনি পথে

"হ্যাঁ," স্মিত হাসিতে জবাব দেয় সান্তা।
"কিন্তু আমরা জানি, আপনি যদি ফোটনের পরিবর্তে একটি টেনিস বল ছুঁড়তেন ট্রেনের মেঝে থেকে ছাদের দিকে, আর বলটি যদি আলতো করে ছাদ স্পর্শ করেই নেমে আসত, তাহলে আপনি ঠিকই দেখতেন বলটি ফোটনের মতোই খাড়া উপরে-নিচে গমন করছে, কিন্তু বাবা দেখতেন কর্ণের মতো সরলরৈখিক পথে নয়, বরং বাঁকানো উপবৃত্তাকার পথে বলটি ভ্রমণ করছে।

কারণ আপনার সাপেক্ষে বলটির শুধু একমাত্রিক গতি রয়েছে—প্রথমে অভিকর্ষের বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী গতি, তারপর অভিকর্ষের দিকে নিম্নমুখী গতি; অতঃপর আবার অভিকর্ষের বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী গতি, ...। আপনার সাপেক্ষে বলের সব গতিই একই সরলরেখা বরাবর হচ্ছে।

অন্যদিকে বাবার সাপেক্ষে বলটির উপর একই সঙ্গে ক্রিয়াশীল দুটো গতি বিদ্যমান—একটি ট্রেনের সঙ্গেসঙ্গে ডানদিকে v সমবেগে চলমান গতি, অন্যটি আপনার মতোই অভিকর্ষসম্পর্কিত উপর-নিচ বরাবর পরিবর্তনশীল গতি; এ দুয়ের সম্মিলনে বাবা দেখবেন বলটির গতিপথ ক্রমাগত বেঁকে যাচ্ছে, উপবৃত্তের মতো।
চিত্র: স্বাভাবিক ক্ষেত্রে, ট্রেনের ভেতর সান্তা উপরে একটি বল ছুঁড়ে দিলে, বলের গতিপথটি প্ল্যাটফর্মের ভূমি থেকে আমি দেখব উপবৃত্তাকার, কৌণিক সরল পথে নয় মোটেও (যদিও ট্রেনের ভেতর সান্তা দেখবে খাড়া উপর-নিচে)।

অথচ বিমানের ভেতর বল ছুঁড়ে দেয়ার ছবিতে, ভূমিতে দণ্ডায়মান একজন মানুষের সাপেক্ষে বলের গতিপথটিকে কোনাকুনি সরল পথেই হকিং দেখিয়েছেন বলে প্রতিভাত হয়। আমি বলছি না এটি বড় কোনো ভুল, কিন্তু এ ছবি প্রকৃত ঘটনার অসম্পূর্ণ ধারণা দেয়, যা অনেক পাঠককে বিভ্রান্ত করবে।" এক নাগাড়ে বলে থামল সারাকা।


"সারাকা, তুমি সম্ভবতঃ বলতে চাচ্ছ তোমার বাবা বলটিকে দেখবেন পরাবৃত্তাকার পথে, উপবৃত্তাকার পথে নয়। কারণ প্রক্ষেপের সমীকরণের সাহায্যে আমরা দেখতে পাই, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাপেক্ষে গতিশীল ট্রেনের ভেতর এরূপ নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথ হবে পরাবৃত্তাকার। আমি স্বীকার করছি, হকিং আরেকটু সতর্ক হতে পারতেন এবং পূর্বশর্তগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারতেন," আবি বলল।
"না, চাচা। স্বল্প দূরত্বে ব্যবহারিক হিসেবে যথেষ্ট হলেও, পরাবৃত্ত প্রকৃত গতিপথের আসন্ন রূপমাত্র। সত্যিকারভাবে পরাবৃত্ত তখনই হতো যখন ভূপৃষ্ঠ সমতল এবং প্রক্ষিপ্ত পথের প্রতিটি বিন্দুতে প্রক্ষেপকের উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষ বলের পথগুলো পরস্পর সমান্তরাল হতো। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হবার কারণে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষ বলের পথগুলো সমান্তরাল নয়, বরং সেগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে মিলিত হয়। পৃথিবী নিখুঁত গোলক না হওয়ায় উপবৃত্তাকার পথটিও ১০০% সত্য নয়, কিন্তু তা পরাবৃত্ত থেকে সত্যের অধিকতর নিকটে। এখন পরাবৃত্ত বা উপবৃত্ত যা-ই বলি, অভিকর্ষের কারণে বাবার সাপেক্ষে এসব গতিপথ হবে বক্রাকার; ফোটনের পথটি যদি কৌণিক সরলপথে না হয়, তাহলে সান্তার সময় প্রসারণের সমীকরণটি তো আর সঠিক থাকে না।"

চিত্র: প্রক্ষেপের গতিপথ বর্ণনায় উপবৃত্ত অধিকতর যথার্থ। ভূপৃষ্ঠের উপরে প্রক্ষেপের আপাত দৃশ্যমান পরাবৃত্তীয় গতিপথটি আসলে একটি বৃহৎ উপবৃত্তের ক্ষুদ্র অংশ, যদিও প্রক্ষেপটি খানিক দূরে ভূপৃষ্ঠে আঘাত করায় পৃথিবীর অভ্যন্তরের পথটুকু এটি কখনো অতিক্রম করতে পারবে না। তবে আমরা যদি কল্পনা করি, প্রক্ষেপটি কোনোভাবে পৃথিবীর ভেতর দিয়ে কেন্দ্রের দিকে মুক্তভাবে পড়ছে ক্রমাগত, অভিকর্ষের মানও তখন ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকবে, ফলে ছবির উপবৃত্তাকার পথটিও আর সুষম থাকবে না।

মনে মনে আমাকে স্বীকার করতেই হলো, চিন্তা-ভাবনা কিংবা পড়াশোনায় মেয়ে আমার পরিশ্রমী বটে। পদার্থবিদ্যার ক্লাসে আমাদের শিক্ষকগণ কখনো চমকপ্রদ এ বিষয়টি উল্লেখ করেননি যে তথাকথিত পরাবৃত্তটি আসলে কার্তেসীয় সমতলে উপবৃত্তের আসন্নরূপ মাত্র।

"টেনিস বলের ব্যাপারে তোমার যুক্তি সঠিক, সারা," সহাস্যে জবাব দেয় সান্তা। "এমনকি ফোটন ভরশূন্য কণা হলেও, এবং ফলশ্রুতিতে ভরযুক্ত টেনিস বলের সঙ্গে তার মৌলিক পার্থক্য থাকলেও, ফোটনের গতিপথ অভিকর্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। সুতরাং আমি দুঃখিত, বিষয়টি অনেক আগেই পরিষ্কার করে দেয়া উচিত ছিল আমার, সময় প্রসারণকে আমি ব্যাখ্যা করেছি শুধু বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মাধ্যমে, যা কেবলমাত্র এরূপ পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য যেখানে অভিকর্ষ অনুপস্থিত। যেখানে অভিকর্ষ ও বেগ দুটোই বিদ্যমান, সেখানে বেগসংক্রান্ত সময় প্রসারণ ছাড়াও অভিকর্ষীয় সময় প্রসারণ নামে আরেক ধরণের ঘটনা ঘটে। এ দুটো মিলিয়ে আমরা মোট সময় প্রসারণ পেয়ে থাকি। তবে আমাদের বর্তমান আলোচনা আমরা কেবল বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে সীমাবদ্ধ রাখতে পারি।"
"ঠিক আছে। তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, বিশেষ এ পরস্থিতিতে, অর্থাৎ অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে, বাবা ফোটনের গতিপথটিকে কোনাকুনি সরলরৈখিক দেখবেন, তাই তো?" সারাকা বলল।
"হ্যাঁ," সায় দেয় সান্তা।"
"আচ্ছা, এবার তাহলে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের দ্বিতীয় স্বীকার্যটি একটু বলুন আমাদের," অনুরোধ করে সারাকা।
"যেকোনো প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে আলো শূন্য মাধ্যমে সর্বদা V গতিতে গমন করে, এবং উক্ত গতি উৎসের গতির উপর নির্ভরশীল নয়। ১৯০৫ সালে এভাবেই আইনস্টাইন স্বীকার্যটি প্রকাশ করেন। আলোর গতি নির্দেশ করতে V-এর পরিবর্তে বর্তমানে অবশ্য আমরা c প্রতীকটি ব্যবহার করি। এছাড়া পরবর্তীতে স্বীকার্যটিকে আরেকটু পরিবর্ধিত করা হয় এ বলে যে, শুধু উৎসই নয়, পর্যবেক্ষকের গতির উপরও আলোর গতি নির্ভর করে না।"
"আলোর গতি উৎসের গতির উপর নির্ভর করে না, বিষয়টি দয়া করে ব্যাখ্যা করুন," সারাকা বলল।
"মনে কর, প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে আছেন তোমার বাবা, তার সাপেক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ২০ মিটার গতিবেগে চলমান একটি ট্রেনে বসে আছি আমি। হঠাৎ ট্রেনের ভেতর পিস্তল থেকে একটি গুলি ছুঁড়লাম আমি সামনের দিকে, ট্রেনটি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে। চলন্ত কিংবা স্থির ট্রেনে গোলাগুলি ভয়ঙ্কর ব্যাপার, তবে বিজ্ঞানের খাতিরে বিষয়টি আমরা কল্পনা করছি মাত্র। এখন আমার সাপেক্ষে বুলেটটির গতি যদি সেকেন্ডে ৫০০ মিটার হয়, তোমার বাবার সাপেক্ষে সেটির গতি কত?" প্রশ্ন রাখে সান্তা।
"বাবার সাপেক্ষে গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ মিটার থেকে অবশ্যই বেশি হবে, যেহেতু ট্রেনের গতি বুলেটের গতির উপর প্রভাব রাখবে।"
"ঠিক বলেছ," একমত হয় সান্তা। "এবার মনে কর, বুলেটের পরিবর্তে টর্চ থেকে আলো ফেললাম সামনের দিকে। আমার সাপেক্ষে আলোর গতি যদি প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার হয়, তোমার বাবার সাপেক্ষে আলোর গতি কত?" রহস্যময়ভাবে প্রশ্ন করল সান্তা।
"কেন, প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটারই?" নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল সারাকা, মুচকি হাসি তার ঠোঁটের কোণে। "যদিও সাধারণভাবে আলোর ধ্রুব গতি বলতে কী বুঝায়, এবং বিশেষভাবে তার মান ঠিক ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ড কীভাবে পরিমাপ করা হয়েছে, সে বিষয়েও আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে; যথাসময়ে সেগুলো উত্থাপন করব।"

সান্তা ও আবি দুজনেই সম্ভবতঃ আশা করছিল উত্তরটি ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটারের চেয়ে বেশি বলবে সারাকা, আর সঙ্গেসঙ্গে তার ভুলটি ধরে দিয়ে চমকে দিবে তারা। অনেক বিজ্ঞান লেখকের ভেতর এ প্রবণতাটি দেখেছি আমি। তারা প্রথমে এরূপ বুলেট বা গোলার উদাহরণের মাধ্যমে আপেক্ষিক গতিটি ব্যাখ্যা করেন। তারপর হঠাৎ আলোর উদাহরণ টেনে নিয়ে আসেন, চমকে দেয়ার চেষ্টা করেন পাঠককে যে বুলেট বা গোলার মতো উৎসের গতির উপর আলোর আপেক্ষিক গতি নির্ভর করে না। আলোর গতিপ্রকৃতিতে নিঃসন্দেহে চমক্প্রদ কিছু বিদ্যমান, তবে তা উৎসের গতি থেকে স্বাধীন, এ কারণে নয়।

কিছুটা যেন হতাশ হয়ে প্রশ্ন করল আবি, "কিন্তু বুলেটের ক্ষেত্রে তো ৫০০ মিটারের চেয়ে বেশি বলেছিলে, মা? এবার কেন সমান বললে?"
"আলো তো তরঙ্গ চাচা, আর তরঙ্গের গতি তার উৎসের গতির উপর নির্ভর করে না। যেমন, আপনি স্থির দাঁড়িয়ে কথা বলেন আর জোরে দৌঁড়ে দৌঁড়েই কথা বলেন, আপনার শব্দ শ্রোতার কানে একই গতিতে গমন করবে—অর্থাৎ বাতাস যে গতিতে শব্দ পরিবহন করে নিয়ে যাবে, সে গতিতে। সুপারসনিক বিমান থেকে যে আওয়াজ উৎপন্ন হয়, সে আওয়াজ তো বরং বিমানের পেছনেই পড়ে থাকে, কারণ এক্ষেত্রে শব্দের গতির চেয়েও উৎস বিমানের গতি বেশি।" সারাকা ব্যাখ্যা করে।
"কিন্তু, সারা, ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ড গতিটি তো শূন্য মাধ্যমে আলোর গতি। অর্থাৎ আলোকে পরিবহন করার জন্য এখানে কোনো মাধ্যমই নেই। তারপরও যে বিজ্ঞানীগণ বলেন, তোমার বাবা এবং আমার দুজনের কাছেই আলোর এ গতিটিই হবে!" সান্তা বলল।
"সেক্ষেত্রে আলোর ব্যাপারটি চমকপ্রদ স্বীকার করতেই হবে। কারণ বুলেটও বাতাস কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে, সুষম সুন্দরভাবেই চলে বরং, কিন্তু বুলেটের গতি তার উৎসের গতি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। অন্যদিকে, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বানুসারে, আলোর গতি উৎসের গতি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় না; এটিও অস্বাভাবিক নয় যদি আলো পরিবহনের জন্য সর্বদা একটি বাস্তব মাধ্যম থাকে, এবং আলোর গতি তখন শুধু তার মাধ্যমের উপর নির্ভর করবে। কিন্তু মাধ্যমও নেই, আবার উৎসের গতিও প্রভাবান্বিত করে না, এ নিঃসন্দেহে অত্যাশ্চার্য ঘটনা!" সারাকা বলে।
"যথার্থ বলেছ," সারাকার বিস্ময়টুকু উপভোগ করে যেন সান্তা ও আবি।

"তার মানে অভিকর্ষহীনতা ছাড়াও আরেকটি পূর্বশর্ত ধরে নিতে হচ্ছে আমাদের মানসপরীক্ষায়—ট্রেনের ভেতরটি পুরোপুরি ফাঁকা, বাতাস কিংবা অন্য কোনো গ্যাসীয় পদার্থ নেই তাতে। নচেৎ আলোর গতি আর c থাকে না। এছাড়া মাধ্যমের ভেতর আলোর প্রতিসরণও তার গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।" সারাকা বলল।
"ঠিক বলেছ," সায় দেয় সান্তা।
"এইমাত্র আমার মনে উঁকি দিল আরেকটি প্রশ্ন ও সন্দেহ, পরে তুলে ধরব তা। আপনার মানস পরীক্ষাটিতে ফিরে যাই আবার," সারাকা বলল। তারপর আচমকা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, "আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন, ট্রেনের ভেতর আলোর গতিপথটি আপনি ঠিক খাড়া উপর-নিচ বরাবরই দেখবেন?"
হঠাৎ এ প্রশ্নটি খানিকটে চমকে দেয় যেন সান্তা আর আবিকে।
খানিকটে নিরব থেকে সান্তা বলে, "কেন, নিচ থেকে উপরের দিকে আলো ফেলছি আমি। আলো সোজা গিয়ে আপতিত হচ্ছে উপরের আয়নায়, সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার খাড়া নিচে আপতিত হচ্ছে নিচের আয়নায়— সহজ ব্যাপার।"
"কিন্তু আপনি তো বললেন উৎসের গতি দ্বারা ফোটনের গতি প্রভাবান্বিত হয় না।"
"আমি এখনও তা বলছি," উদ্বিগ্ন হয়ে সান্তা বলে।
"কিন্তু ফোটনটি নিচের আয়না থেকে যাত্রা শুরু করে উপরের আয়নায় যাবার অন্তবর্তীকালীন সময়ে, তা সময়টুকু যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, আয়না, ট্রেন, আপনি সবই তো কিছুটা ডানদিকে সরে গিয়েছিল। তারপরও ফোটন খাড়া উপরে, আয়নার ঠিক মাঝখানে কীভাবে প্রথম টিক দিল? ফোটনটি কি জানত যে উপরের আয়নাটি ক্রমাগত ডানে সরে যাচ্ছে, এবং উপরের আয়নার নাগাল তাকে পেতেই হবে, সুতরাং শুধু খাড়া উপরে গেলেই হবে না, ক্রমাগত ডানেও সরতে হবে? এমনকি ট্রেনের গতি যদি প্রচণ্ড রকমের বেশি হয়, উচ্চতা যদি সুবিশাল হয়, তারপরও ফোটন উপরের আয়নার মাঝখানেই টিক দিবে! ফোটনের এমন বিশেষ কী দুর্বলতা উপরের আয়নার প্রতি যে, উপরের আয়না যত উঁচুতেই থাকুক, ডানদিকে যত গতিতেই সরুক, সেও রহস্যময়ভাবে ডানদিকে একই বেগে প্রাপ্ত হয়ে প্রতিবার আয়নার ঠিক মাঝখানে গিয়ে পড়বে?" একনাগাড়ে আবেগদীপ্তভাবে বলে থামল সারাকা। দম নিয়ে আবার বলতে লাগল, " বরং ফোটনটি যদি আপনার পেছনে পড়ে থাকত, ট্রেনসহ আপনি যদি ক্রমাগত ফোটন থেকে দূরে সরে যেতেন, তা-ই হতো স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ফোটন যদি সত্যি সত্যি ট্রেনের সঙ্গে ডানে অগ্রসর হতেই থাকে, তাহলে তো বরং আমরা আরও সহজভাবে বলতে পারি, উৎসের গতিজড়তার দরুন ফোটনের গতি প্রভাবান্বিত হচ্ছে এবং বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সাধারণ যুক্তির নিরিখে অন্তর্গতভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং ভুল।।"
"এ মানসপরীক্ষায় আরেকটি শর্ত রয়েছে, সারা, আলোর গতিপথ উৎসের গতিবেগ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় বটে, কিন্তু উক্ত গতিপথে আলোর গতির মান, অর্থাৎ c-এর মান ২৯৯৭৯২৪৫৮ মিটার/সেকেন্ডেই অপরিবর্তিত থাকে।"
"বড় অদ্ভুত শর্ত! তার মানে ট্রেনের গতির উপর নির্ভর করে একেক সময় আলোর একেক কৌণিক গতিপথ দেখবেন বাবা, যদিও গতির মান পাবেন সব সময় ধ্রুব।" সারাকা বলল।
"ঠিক তাই," সান্তা জবাব দেয়। "বিজ্ঞানীরা পরীক্ষণের মাধ্যমে এরূপ ফলাফলই পেয়েছেন বলে আমরা জানি।"
"কিছু প্রজাতির গিরগিটি যেমন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিজের বর্ণ পরিবর্তন করে ফেলে, আলোও সেরকম উৎসের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে নেয়, অথচ মানে ঠিক থাকে"! দার্শনিকভাবে বিড়বিড় করে সারাকা। "যদিও উপরের আয়নার প্রতি ফোটনের বিশেষ দুর্বলতার যৌক্তিক কারণটি বোঝা গেল না এতে। এবং আশা করি বিশেষ আপেক্ষিকতার দ্বিতীয় স্বীকার্যটিকে গোঁজামিল দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন না বিজ্ঞানীগণ। যাহোক, এটিও মেনে নিচ্ছি। এবার মানস পরীক্ষাটি বিপরীত দিক থেকে সম্পন্ন করা যাক, সান্তা:

ধরুন, ফোটন ঘড়ির পরীক্ষাটি প্ল্যাটফর্মে স্থির দাঁড়িয়ে বাবা সম্পন্ন করছেন, আর আপনি তা ট্রেন থেকে দেখছেন, তাহলে সময় প্রসারণ সমীকরণের কী হবে? আগের পুরো ঘটনাটি তো এবার উল্টে যাচ্ছে, বাবা দেখবেন আলো উপর-নিচে গমন করছে, কিন্তু আপনি দেখবেন আলো কৌণিকপথে ট্রেনের বিপরীত দিকে গমন করছে। সমীকরণ তো উল্টে গেল, পরস্পর সমতুল্য ঘটনায় এবার
আপনার পরিমাপকৃত সময় = γ.বাবার পরিমাপকৃত সময়,
কারণ আপনার প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলো এবার দীর্ঘতর পথ পাড়ি দিচ্ছে। সুতরাং যে ঘটনা বাবার ক্ষেত্রে হয়তো ১ মিনিটে, আপনার ক্ষেত্রে তা ঘটবে ১ ঘন্টা, ১ দিন, কিংবা ১ বছরে!"

সারাকা এবার আবির দিকে ফিরে বলে, "স্টিফেন হকিং ও অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানী এখানে নীরব থাকেন, চাচা। তারা যখন বলেন, 'যে পর্যবেক্ষক কোনো ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির রয়েছে, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে দ্রুততর। অন্যদিকে যে পর্যবেক্ষক ঘড়ির সাপেক্ষে স্থির নয়, তার সাপেক্ষে ঘড়িটি চলবে ধীরে।'—আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী এ সঠিক। কিন্তু এর মানে হচ্ছে, বাবা দেখবেন সান্তার ঘড়ি ধীরে চলছে, সান্তা দেখবে বাবার ঘড়ি ধীরে চলছে। সুতরাং হকিং যখন বলেন, 'ভূমিতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে বিমানের ঘড়িটি ধীরতর গতিতে চলছে' তা অর্ধসত্য, ভুলের নামান্তর, কারণ পাঠকরা এতে ধরে নেবেন, ভূমির সাপেক্ষে গতিশীল ঘড়িটিই কেবল ধীরে চলবে। এমনকি হকিং উপরে প্রথম ছবির নিচেও বললেন, গতিশীল মানুষের বয়স বাড়ে ধীরে, অথচ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে গতিশীলতার কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না বলা হচ্ছে কার সাপেক্ষে এ গতি!"
____________
দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
২৬টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×