somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রদর্শন, চাঁদনী রাত, রম্য অথবা একটা আবেগী গল্প লেখার অপচেষ্টা কিংবা কিছু আগডুম বাগডুম অথবা নেফ্রোদিতি – পর্ব ১

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাবরের মতই খোমাখাতায় আড্ডা চলিতেছিল। হটাত করিয়া দুলুদা বলিয়া উঠিলেন, “লও, এই ফাঁকে পবিত্রভুমি সিলেট দর্শন করিয়া আসি।“ ক্যাবলা এবং প্যাড়া বেশ কিছুদিন ধরিয়াই কোথাও যাইবার জন্য হা পিত্যেশ করিতেছিল। উহারা খুশি হইয়া বলিয়া উঠিল, “উত্তম প্রস্তাব, চলুন যাওয়া যাক।“ কিন্তু বাদ সাধিল কানাই। উহার নাকি বাড়ি যাইবার জন্য প্রাণ আনচান করিতেছে উহাও আবার কক্সবাজার। গোবরাও নাকি উহার সাথে যাইবার বায়না ধরিয়াছে। ক্যাবলা প্যাড়া চিন্তা করিল, “ খারাপ কি? এ যে রথ দেখা আর কলা বেচা একসাথে; চাই কি দু চারটে কলা গলধকরনও হয়ে যাবে।“ দুলুদাকে রাজি করাইতে বেশি বেগ পাইতে হইল না। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঠিকুঞ্জি মানিয়া ২৯ তারিখ দিবাগত রাত ১১.৩০ ঘটিকায় কমলাপুর হইতে রওয়ানা দিল পাঁচ যুবক – দুলুদা, ক্যাবলা, প্যাড়া, কানাই আর গোবরা। সবেধন নিলমণি দুলুদার একখানা মাত্র ছবি উত্তোলনকারী যন্ত্র থাকায় যাত্রার প্রারম্ভেই উহার সামনে নিজেদের চেহারা প্রদর্শনের হুড়োহুড়ি পড়িয়া গেল।


রাত্রি তখন আড়াই ঘটিকার ন্যায়। হটাত করিয়া প্রবল শব্দে বাতাস ছাড়িয়া থামিয়া গেল ট্রেন। সকলেই উৎকণ্ঠিত। অভিজ্ঞ লোক মারফত জানা গেল ইহা নাকি ডাকাতির চেষ্টা। কি হ্য কি হয় – সেই ভাবনায় সকলেই কিঞ্চিত উৎকণ্ঠিত এবং সেই সাথে কিঞ্চিত রোমাঞ্ছিতও। এরই মধ্যে দুলুদা খোমাখাতায় বন্ধুদের জানাইয়া দিলেন, “ ট্রেনে ডাকাত। একলাই লড়ে যাচ্ছি। সব কটা অপদার্থ।“ কিছুক্ষন পর ট্রেন ছাড়িয়া দিল। কিন্তু কিছু বুঝিয়া উঠিবার আগেই দুই মিনিটের মাথায় আবার আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি, এইবার শিকল টানিয়া ট্রেন থামানো হইল। যাত্রীদের আলোচনায় মুটামুটি ট্রেন ডাকাতির উপর একখানা শর্ট কোর্স সমাপ্ত হইয়া গেল যুবকগনের। প্রবল উৎকণ্ঠায় দুলুদা পুনর্বার তাহার অবস্থার বিবরণী খোমাখাতার বন্ধুদের জানাইতেও ভুলিয়া গেলেন। কিন্তু সকলকেই যুগপৎ হতাশা এবং স্বস্তির মধ্যে রাখিয়া এই বেলাও কোন ঘটনা ছাড়াই ঘটনাবহুল রোমাঞ্চ সম্পাত হইল। খবরে প্রকাশ, তার পরের দিনই একই সময় একই জায়গায় ডাকাতের হাতে চার যাত্রী নিহত হয়।


সকাল ৭টা নাগাদ ট্রেন চট্টগ্রাম পৌছাইয়া গেল। দুলুদা এবং কানাই ঢাকা হইতে টিকিট কাটিবার সময় চট্টগ্রাম এর টিকিট না পাইয়া ফেনির টিকিট কাটিয়া গাড়ি ধরিয়াছিল। ভাবিয়াছিল, বঙ্গদেশ, কি আর হইবে? কিন্তু যেইখানে বাঘের ভয়, সেইখানে আঁধার করিয়া রাতও হয়; সাথে ম্যাচ হারিকেন কিছুই থাকে না। অতঃপর টিকিট চেকারের হাতে ধরা এবং কচকচে চারখানা ১০০ টাকার নোট হস্তান্তর করিয়া মুক্তি এবং যুবকগনের একজনকে আরেকজনের গালাগালি করিয়া রাগ প্রশমনের বৃথা চেষ্টা।

ভগ্ন হৃদয় যুবকগন পেটের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা ছুচোগুলোকে ঠান্ডা করিতে নিকটেই একখানা হোটেলে গিয়া বসিল। সস্তায় হইয়া যাবে – এই আশা বুকে নিয়া পরোটা আর ডালভাজির অর্ডার দিলেন দিলুদা। খাবার মাঝখানেই বিল চলিয়া আসিল। ৯ খানা পরোটা আর ৫ খানা ডালভাজির বিল সাকুল্লে ১৯৪ টাকা দেখিয়া সকলের গলার পরোটা গলায়ই আটকাইয়া রহিল।


অতঃপর আর কি? চট্টগ্রাম হইতে বাসে করিয়া কক্সবাজার রওয়ানা দিল সকলে। আধো ঘুম আধো জাগরনে দুপুর ২টা নাগাদ কানাই এর বাসায় পৌছাইয়া গেল সকলে।

কানাই মানুষ ভাল, হৃদয় বিশাল; তার পৈতৃক সম্পত্তির পরিমাণও নেহাতই কম নহে। কক্সবাজার সিটিতে উহাদের নিজস্ব বাড়ি। তবে কানাইয়ের পিতামাতার আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতার বর্ণনা দিবার চেষ্টা কিঞ্চিত বিপদ আছে। একমাত্র যারা সকাল বিকাল ঘর দখল করিয়া একের পর এক খাবার সাঁটিয়াছে উহারা ছাড়া বাকিদের এই বর্ণনা শুনাইয়া ঈর্ষায় আমার এই গল্পের পাঠক কমাইয়া ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই; এম্নিতেই পাঠক সংখ্যা ইতিমধ্যে মেলা কমিয়া যাওয়ার কথা। তার চেয়ে বরং সে বর্ণনা থাক। আমাদের আপাতত শুধু এইটুকুই জানিলে চলিবে যে কানাইয়ের বাড়িতে ৪ টা মানুষ রাজার হালে খাওয়া দাওয়া করিয়াছে, ঘুমাইয়াছে এবং আনন্দ করিয়াছে।


এলাকায় কানাইয়ের বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী নেহায়েতই কম হওয়ায় এবং উহা দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হওয়ায় এলাকায় ভাল ছাত্র হিসেবে কানাইয়ের ব্যাপক সুনাম রহিয়াছে। সেই ধারাবাহিকতায় আসিবার পথেই একখানা কোচিং সেন্টারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপদেশ প্রদান অনুষ্ঠানের আমন্ত্রন পাইয়া বসিল কানাই। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর উক্ত অনুস্থানে উপস্থিত হইয়া কানাই এবং ক্যাবলা দুইখানা বক্তৃতাও দিয়া বসিল। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা উহাদের অহেতুক বকবকানির চেয়ে কিছুক্ষণ পর শুরু হওয়া ইংরেজি স্যার এর ক্লাসের প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিল বলিয়াই কারো কারো মনে হইতে পারে, উহাকে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয় ।


দেশ ও জাতিকে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করিয়া বিকেলে যুবকগন গেল লাবণী পয়েন্টে। সেইখানে সকলে পা এবং ক্যাবলা পা ও প্যান্ট যুগপৎ ভিজাইয়া ( সমুদ্রের পানিতে; অন্য কিছু মনে করিবার কোন অবকাশ নাই এইখানে :P :P) সমুদ্রপাড়ে চা খাইয়া হাটিয়া হাটিয়া বাড়ি ফিরিল। চা খাইতে খাইতে যুবকগনের কথোপকথনের চুম্বক অংশঃ
ক্যাবলাঃ "বিপিএল দেখতিছিস?"
প্যাড়াঃ "হ; বাড়িত গিয়া দেখলাম। চ্যানেল নাইনের ক্যামেরাম্যান মনে হয় চেইঞ্জ করসে। আগে একটা ছেলে মানুষও দেহাইত না; এহন চিয়ারলিডারদেরও ভাল কইরা দেহায় না। খেলা দেইখা মজা নাই।“
দুলুদাঃ "এই ক্যামেরাম্যানডা তাইলে মনে হয় মাদ্রাসা লাইনের।“
!!!!!

( চলবে )

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×