somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্না, তৃষিত সমুদ্র আর মানুষের গল্প

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৪ ডিসেম্বর, সন্ধ্যে ৭টা। মিডওয়ে বাসে ঠেলাঠেলি করে কমলাপুর নেমেছি। সাথে আসিফ উদ দৌলা। টার্গেট - কুমিরা। জায়গাটা সীতাকুন্ডে; মুল লক্ষ্য সন্দ্বীপে যাওয়ার জন্য সাগর পাড়ি দেওয়ার ঘাট ওখানে। রাত ১১টার বাসের টিকেট কেটে চেপে বসেছি। ড্রাইভার সাহেবের বোধহয় ঢাকা ছাড়ার কোন রকম ইচ্ছেই ছিল না। একবার ব্রিজের খাম্বার সামনে নিয়ে বাস দাঁড় করান তো আরেকবার গ্যাস স্টেশনে। রাত ১টার বেশি বাজে; উনি তখনও ঢাকা পার হতে পারেন নি। বাসের ভেতরে যাত্রীদের সুমধুর গালিগালাজে রাতের চুপচাপ পরিবেশ শরগরম হয়ে উঠল। এই গালিগালাজের ফলাফল অবশ্য পাওয়া গেল শেষ রাতে; একেবারে হাতে নাতে। "ওস্তাদের মার শেষ রাইতে" প্রবাদটাকে সত্য করার ব্রত থেকেই বোধকরি, ড্রাইভার সাহেব যেন উড়ে যেতে চাইলেন। ফলাফল? আরেকটু হলেই উনার দুর্দান্ত স্টান্টবাজির কল্যাণে একবার প্রায় উলটে যাওয়া থেকে রক্ষা পেল বাস। কোনরকমে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বাস কোন বিপদ আপদ ছাড়াই কুমিরায় পৌছালো ২৫ তারিখ সকালে।

একটু পেছনে যাওয়া যাক। বরাবরই যেভাবে শুরু হয়; এবারও তাই। ২২ তারিখের দিকে হটাতই মুঠোফোনে দৌলার ফোন - "সন্দ্বীপ যাবি?" রাজি হয়ে গেলাম সাথে সাথে। তখনও পুরোপুরি জানা ছিল না যাত্রাটা "সন্দ্বীপ সাক্ষরতা অভিযান" এর অংশ হয়ে; বিশাল এক দলের সাথে। শুরুতেই ইভেন্টের কিছুটা বর্ণনা দিয়ে নেওয়া যাক; তাতে বাকি গল্পটার সাথে মিশে যাওয়া সহজ হবার কথা। উনাদের অনলাইনে খুব সমৃদ্ধ কোন তথ্যবহুল কিছু আমার চোখে পড়ে নি; পুরোটাই এর ওর মুখ থেকে শুনে নিজের স্মৃতি থেকে লেখা- তাই কিছু ভুলত্রুটি থেকে গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিপ্রত্যাশী।



সন্দ্বীপ সাক্ষরতা অভিযানের শুরু বেশ কিছুদিন আগে; এই বছরের সেপ্টেম্বর অক্টোবরের দিকে। স্থানীয় স্কুল কলেজের ছেলেপেলেরা একত্রিত হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে। বাইরে থেকে ভলান্টিয়ার নিয়ে এসে একটা রেসিডেনশিয়াল ক্যাম্প করাটা মুলত একটা মোটিভেশনাল ইনফ্লুএন্সের জন্য; সেটা একই সাথে সংগঠনের কর্মীদের যেমন; তেমনি স্থানীয় লোকজনের জন্যও। এই ইভেন্টে হিউম্যান এইড বাংলাদেশ, চেইঞ্জের মতন বেশ কিছু সংগঠন সহায়তা করেছে নানাভাবে। এই পাইলট ক্যাম্পেইনের জন্য এবার বাছাই করা হয় সন্দ্বীপের ১৫টা ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম এলাকা দীর্ঘাপাড়কে; যেখানে সাক্ষরতার হারও বেশ কম। মোট ৬টা দলে ভাগ হয়ে ৯টা ওয়ার্ড এর প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে একই সাথে সাক্ষর এবং নিরক্ষরদের তথ্য সংগ্রহ, স্থানীয় লোকজনের সাথে মত বিনিময় আর নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞানে হাতে খড়িতে দুই দিন পার করেন ভলান্টিয়াররা।



দুই দিন থাকা খাওয়ার আর বাড়ি বাড়ি ঘোরার বর্ণনা দিয়ে আপনাদের বোরডমের চুড়ান্ত সীমায় না নিয়ে যাই। তার চেয়ে বরং এই ভ্রমনে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক। :D:D

- লোকজন প্রচন্ড রকমের অমায়িক এবং সাধাসিধে। যে জায়গাতেই গিয়েছি সেখানেই বেশ চমৎকার সম্মান এবং আতিথেয়তা পেয়েছি। ক্যাম্পে আমাদের খাওয়া দাওয়ার সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান রীতিমত ভাতের বল হাতে রুমের এই মাথা থেকে ওই মাথায় ছুটে বেড়িয়েছেন কারো কিছু লাগবে কি না দেখতে। ব্যাস্ততার মাঝেই দুইদিনই বেশ অনেকটা সময় ধরে এখানে সেখানে গিয়েছেন; দৌড়াদৌড়ি করেছেন। ভদ্রলোককে বেশ পছন্দ হয়েছে। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজন - সবার আচরণই ছিল মন ভাল করে দেওয়ার মতন। :)



- প্রথম দিন সন্ধায় কালাপানিয়া গিয়েছিলাম সূর্যাস্ত দেখতে। ওখানে নাকি ৪৫০ বছরের পুরনো একটা মসজিদ আছে; সেটাও দেখা উদ্দেশ্য ছিল একটা। চর ভাঙ্গার কবলে পড়ে মসজিদের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই সমুদ্রে; বাকিটাও দুই এক বছরের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে। অন্ধকার হয়ে আসা সন্ধ্যায় সেই মসজিদের সীমানায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সামনে সমুদ্রের বিশালতা আর পেছনে ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকা জীর্ণ স্থাপনাটা জীবনটাকে নিয়ে একটু হলেও নতুন করে ভাবিয়েছে। কিছু কিছু মুহূর্ত আসলে নিজে ফিল করতে হয়; এইটা ছিল তেমনই একটা মুহূর্ত। :)

- রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে দুই পাশে ঘন জঙ্গলের মাঝের রাস্তা দিয়ে গান গাইতে গাইতে হাটার অভিজ্ঞতাও ছিল অন্যরকম। সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমিষে শেষ হয়ে গিয়েছিল যেন। মাঝে গানের স্টক সাময়িকভাবে ফুরিয়ে যাওয়ায় যখন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু হল, তখন পাশ দিয়ে পার হয়ে যাওয়া এক চাচা সাইকেল থামিয়ে গান শুনে যে চমৎকার হাসিটা দিলেন সারা জীবন মনে থাকবে। :D




- ক্যাম্পের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত বোধহয় হয়ে থাকবে দ্বিতীয় দিনে ফিরে আসার সময়ের একটা মুহূর্ত। আমাদেরকে দেখে এক দোকান থেকে এক দোকানদার বেড়িয়ে এলেন, হাতে চক আর স্লেট। দোকানে বসেই প্র্যাক্টিস করছিলেন বোধকরি। আগের দিন উনাকে উনার নিজের নাম লেখা শিখায় দিয়ে এসেছিলাম। উনি আমাদেরকে দেখে দোকান থেকে বেড়িয়ে খুব আগ্রহভরে "দেখেন তো, দেখেন তো" বলে স্লেটে গোটা গোটা অক্ষরে লিখলেন "সোহেল"। পুরো দুই দিনের অর্জন বোধহয় ওই এক মুহূর্তেই সাম আপ করে ফেলা যায়। :)

- শেষ দিনে ফেরার সময়। দুপুরে ৩.১৫। দিনের একমাত্র ট্রলার ছেড়ে গেসে একটু আগে। সন্দ্বীপ ছাড়ার উপায় এক্টাই - স্পীডবোট। কেউ একজন আগের দিন কোথাও একটা ট্রলার ডুবির খবর জানাতেই অনেকেই লাইফ জ্যাকেটের আবদার জানালেন। প্রায় নদীর মতন শান্ত সমুদ্রে এই অনুরোধে স্পীডবোটের চালক বোধহয় খানিকটা বিরক্তই হলেন। সেই বিরক্তিতেই হোক কিংবা সমুদ্র আগের দিনের চেয়ে একটু বেশি অশান্ত হওয়াতেই হোক, যাত্রাটা হল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। এরকম একটা ভ্রমণের উপযুক্ত সমাপ্তিই বলা চলে !! :D



২৭ তারিখ সন্ধায় ঢাকায় ফিরে এলাম। তবে সন্দ্বীপ তার সাধাসিধে মানুষগুলোকে নিয়ে; গুপ্তছড়া, হারামিয়া, দির্ঘাপাড়, বাউরিয়া আর কালাপানিয়া নামগুলো নিয়ে; সমুদ্র আর সৌন্দর্য নিয়ে আরও বেশ অনেকদিনই আমার মনে গেঁথে থাকবে; একথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়াই যায় ! :) :)

(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আসিফ উদ দৌলা)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×