somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘকুমারীর বৃষ্টিকাব্য

২২ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটা বসে আছে একা; দরজার উলটো পাশের চেয়ারটাতে। বার বার বিরক্ত হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তার সামনে একটা পেপ্সির গ্লাস; কিন্তু সে সেটাতে চুমুক দিচ্ছে না। তার চোখ এবং মন দুটোই দরজার দিকে।

"এতো তো দেরি হবার কথা না" বিড়বিড় করে বলল সে।

তাদের পরিচয় অনেক দিনের। নাতাশার প্রায় সব বন্ধুদেরই চেনে অহম। সেই বন্ধুদের মাধ্যমেই আসলে পরিচয় দুইজনের। দুইজনই বেশ মিশুক,চমতকার,হাসিখুশী। খুব অল্পদিনেই একজন আরেকজনকে বেশ পছন্দ করে ফেলে। নাতাশার বান্ধবীদের আড্ডায় নিমন্ত্রণও পেয়েছিল অহম; কিন্তু নানান ঝামেলায় আর যাওয়া হয় নি তখন। শেষমেশ অনেক দরকষাকষি করে আজকের দিনে দেখা করতে রাজি করাতে পেরেছে সে। প্রকৃতিই বোধহয় চাচ্ছিল খুব স্পেশালভাবে তাদের দেখা হবে।

সে ভাবছে নাতাশাকে আরেকবার কল দিবে কিনা। গত রাত থেকেই সে খুব টেনশনে আছে। নানান লোকজনকে জিজ্ঞেস করে অনেক হিসাব নিকাশ করে এই রেস্টুরেন্টটা পছন্দ করেছে সে; ছিমছাম, নিরিবিলি, সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ।

অহম ভাবতে থাকে আজ তাদের দেখা হবেই; কিন্তু... ও যদি শেষ মিনিটে সিদ্ধান্ত নেয় না আসার?
হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে অহম।
"না না, ও আসবে" - ভাবতে ভাবতে বাইরে তাঁকায় অহম।

ঝিকিমিকি সূর্য মেঘের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে বারবার।

৮ তালার কাঁচে ঘেরা রেস্টুরেন্ট থেকে নীচের যান্ত্রিক পৃথিবী দেখে সে।
হঠাৎ পেছন থেকে মিহি কণ্ঠের কাশির শব্দ। মানুষের কাশিও কী এত সুন্দর হয়!

অহম একটু রাগ লুকিয়ে বলে এত দেরী কেনো? কিন্তু সেই লুকোনো রাগ যেনো নাতাশা ধরে ফেলে।বলে ঘড়ি দেখো তুমি। অহম ঘড়ি দেখে বুঝতে পারে তার ঘড়ি যে ২০ মিনিট ফাস্ট।
"ইশ ভুল হয়ে গেছে। রাগ দেখিয়ে ফেললাম কি?"
নাতাশা ভাবে কি আদুরে করে সরি বলে ছেলেটা। একদম যেনো একটা টেডি বিয়ার। অহমকে দেখতেও টেডি বিয়ারের মতন লাগে যেন।

নাতাশা সামনে এসে হরবর করে বলতে লাগলো আসতে কি ঝামেলা হয়েছে, রাস্তায় কি জ্যাম, অহমের কি আর সে দিকে মন আছে? সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটাকে দেখতে লাগলো।
মেয়েটার এই উচ্ছাস, জীবনের আনন্দ খুজেঁ নেওয়া এসব দেখেই তো অহম তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো।
যদিও সে কথা আজো বলা হয় নি নাতাশাকে; বলবে কি করে, দেখাই তো হল না এতোদিন !

সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের পরিচয়, অহম সোশ্যাল মিডিয়াতে কাউকে এত আগ্রহ দেখায় না কারণ সে জানে সবই মেকি। সবাই সেখানে ভান ধরে থাকে যেন।কিন্তু এই একটি মেয়ে ব্যতিক্রম মনে হয়েছে তার কাছে।
এরপর কত কথা, কত রাত জেগে পার করা, ফোন নাম্বার বিনিময়, ফোনে এক অপরকে নিঝুম রাতে গান শোনানো !
ওহ! বলেছি কি? নাতাশা চমৎকার গানও গায় !

অহম তাকে দেখে এখন ভাবছে নাতাশা সামনা সামনি আরো সুন্দর।
একটা মানুষ এত চমৎকার ব্যক্তিত্ব, এত চমৎকার গলা, সেন্স অফ হিউমার, সাথে সাথে এত সুন্দর! কি করে সম্ভব!

টুংটাং একটা সুর ভেসে আসছিলো চারপাশ থেকে। সবার আবছায়া কথাবার্তার একটু দূরে সুরে মূর্ছনায় দুজন বসে ছিলো মুখোমুখি।

সেদিন যেনো সময় এত দ্রুত গেলো অহম টের ই পেলো না। মনে হলো মুহূর্তেই চলে গেলো তিনটি ঘন্টা। এর মাঝে অহমের স্প্যানিশ ভাষার জাদু দেখিয়ে নাতাশাকে অবাক করে দিলো সে বার বার। নাতাশা বলে, তুমি এত কিছু পারো কি করে? আমি কিচ্ছু পারি না। তোমাকে দেখে এত হিংসে লাগে।

অহম ভাবে, তুমি যে কত স্পেশাল এটা যদি জানতে !
এর মাঝে একে ওকে খেপানো, দুষ্টুমি তাও চললো। অহম সুযোগ বুঝে নাতাশাকে খেপাতে লাগলো তার প্রোফাইল পিকে খুব কমেন্ট করা ছেলেটাকে নিয়ে।
নাতাশা যেনো রেগে গেলো, বার বার বললো আরে ও কেউ না। বিশ্বাস করো! অহম মুচকি মুচকি হাসে।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা হয়ে এলো, এখন উঠতে হবে। নাতাশা বললো অনেক ভালো লাগলো অহম দেখা করে। অহম বললো আমারো। নাতাশা তার চঞ্চলতায় অবলীলায় বলে ফেললো এই আসো তো একটা সেলফি তুলি।

সেলফি তুলে রাস্তায় যখন দুজন দুজনার পাশাপাশি হাঁটছিলো। সাই সাই করে হেডলাইট চালিয়ে গাড়িগুলো তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন অহমের কাছে মনে হচ্ছে এ হচ্ছে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। অথচ কিনা ঘন্টাখানেক আগেই সে এই শহরটাকে ভাবছিলো যান্ত্রিক।

অবশেষে বিদায় জানানোর পর অহম যখন বাড়ির পথে হাঁটা দিলো তখন মনে পড়লো -

"ইশ!! হাতটা ধরা হলো না!"

... চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×