somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিএসসির তুঘলকি কাণ্ড ও চোখে জল আসা দুটি চিঠি

১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ায় মেধাবী পরীক্ষার্থীদের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা খুশি হতে পারেননি পাবলিক সার্ভিস কমিশন তথা পিএসসির একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে। আগে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি থাকলেও তা বিবেচনা করা হতো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।
সেখানেও বৈষম্য ছিল। একজন সাধারণ পরীক্ষার্থী ৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও কোটাধারী পরীক্ষার্থী ৭৫ পেয়েও উত্তীর্ণ হতেন। কিন্তু এবারে পিএসসির তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে মেধাবীরা দারুণভাবে বঞ্চিত হলেন। যেখানে ৮০ পেয়েও একজন সাধারণ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি, সেখানে ৫০ পেয়েও আরেকজন কোটাধারী অনায়াসে উত্তীর্ণ হয়েছেন।


পিএসসি যদি এই কাণ্ডই করবে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার কী দরকার ছিল? তারা সোজা বলে দিতে পারত, পরীক্ষা-টরিক্ষার দরকার নেই। আমরা যাদের যোগ্য মনে করব, তারাই পাস করবে এবং চাকরি পাবে।
দেশের জনপ্রশাসনে যে যোগ্যতা ও মেধার দুর্ভিক্ষ চলছে, তার জন্য পিএসসির কোটা পদ্ধতিও কম দায়ী নয়। একটা বিশেষ সময়ে বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে। তাই বলে অনন্তকাল চলতে পারে না। আর কোন কোটা ন্যায্য, কোনটি অন্যায্য—তাও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।
আর পিএসসির মহামহিম কর্তাব্যক্তিরা পদে থাকতে টুঁ শব্দ করেন না। চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার পর কোটা নিয়ে বিবেকি বয়ান দিয়ে থাকেন। এই আত্মপ্রতারণাই দেশটির সর্বনাশের মূলে।
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ হতে না-পারা মেধাবী তরুণেরা শাহবাগে দুই দিন ধরে আন্দোলন করছেন। পিএসসি পরীক্ষার ফল স্থগিত ঘোষণা করার পরও তাঁরা রাস্তা ছাড়েননি। তাঁরা চাইছেন মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হোক। কোটা প্রথার অবসান হোক।
নিচের দুটি চিঠি পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে—কোটা পদ্ধতি কীভাবে আমাদের মেধাবী তরুণদের অগ্রাহ্য ও অপমান করছে। কীভাবে রাষ্ট্র তাঁদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কুমার সাহা নামে একজন অনলাইনে লিখেছেন, ‘অতি দুঃখ ভারাক্রান্ত হূদয়ে লিখছি। আমি সুনীতি কুমার সাহা। আমি ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত (সাধারণ ও কারিগরি) ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার রেজি: নম্বর ০২২৫২৭। আমার প্রথম পছন্দ ছিল কৃষি ক্যাডার। কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে আমাকে পিএসসি কর্তৃক কোনো পদে সুপারিশ করা হয়নি (উল্লেখ্য, কোটা প্রার্থী না থাকায় পিএসসি ৭০টি পদ খালি রাখে)। গত ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কৃষি ক্যাডারে ২২০টি পদের বিপরীতে ১৩৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পিএসসি কর্তৃক ১৫০ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল। যে ১৪ জন বাদ পড়েছেন, হয়তো তাঁদের কেউ কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি বা পুলিশ প্রত্যয়ন পাননি বা ৩১তম বিসিএসের আগে অন্য কোনো ভালো পদে কর্মরত আছেন। আমার দুঃখ, এই জায়গায় ৮৪ পদ খালি থাকা সত্ত্বেও আমার চাকরি পাইনি। আমার সমস্ত পরিশ্রমের ফলাফল কোটা সংরক্ষণজনিত নিয়মের কারণে শূন্য। যাঁরা এসব নিয়ম তৈরি করেন, তাঁরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন আগামী ১০-২০ বছর পর আমাদের দেশের প্রসাশনের কী অবস্থা হবে?’
পার্থ নামে আরেকজন লিখেছেন: ‘আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গতকাল প্রকাশিত বিসিএস ৩৪তম প্রিলিমিনারির ফল বের হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৭৫+ পেয়েও সাধারণ পরীক্ষার্থী চান্স পায়নি অথচ কোটার কারণে ৫৯+ পেয়েও অনেকে চান্স পেয়েছে। মেধার বিচারে ৫৯=৭৫ হতে পারে না। ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়ে চরম হতাশ ও বিপথগামী হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ একসময় মেধাশূন্য হয়ে যেতে পারে।
সদ্য প্রকাশিত বিসিএস রেজাল্ট, ৩২তম স্পেশাল বিসিএস এবং সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে (সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, আইসিবি ইত্যাদি) শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের আবেদন করার যোগ্যতা কি সাধারণ প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক নয়? কোটা কি শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির জন্য দায়ী নয়?’
দুই তরুণের আবেগ ও বেদনায় ভরা চিঠি দুটি পড়লে যেকোনা পাঠকের চোখে জল আসবে। কিন্তু পিএসসির পণ্ডিতদের বোধোদয় হবে কী?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×