#সবার_জন্য_শিক্ষা
প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ফাইভে ক্লাস চলাকালীন সময় একদিন স্কুলের পাশের বাড়ির একই পরিবারের দুইজন মেম্বারের তুমুল ঝগড়া লাগছিল। একে অপরকে চিৎকার চেঁচামেচি করে গালা-গালি করতেছিল।
সেদিন আমাদের ক্লাসে ছিলেন হেডমাস্টার স্যার! স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে স্মীত হাসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন--‘‘তোমাদের কি ধারনা? মানুষ যখন রেগে যায় তখন একে অপরের সাথে চিৎকার করে কথা বলে কেন?’’
ক্লাসের সবাই চুপ করে ভাবতে লাগলো, কিছুক্ষন পর ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের থেকে আমি উত্তর দিলাম --"স্যার! কারন আমরা তখন মনের শান্তি হারিয়ে ফেলি এবং চিৎকার করি।’’
স্যার তখন প্রশ্ন করলেন--‘‘কিন্তু আমরা চিৎকারই বা করি কেন? যাকে আমরা রাগ দেখাই সে তো আমাদের সামনেই আছে, তাকে যা বলার তাতো আমরা শান্ত ভাবেও বলতে পারি।’’
ক্লাসের একজন একরকম উত্তর দিলাম, কিন্তু স্যার আমাদের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।
শেষে স্যার ব্যাখ্যা করলেন--‘‘যখন দুইজন মানুষ একজন আরেকজনের সাথে রাগারাগি করে তখন তাদের হৃদয়ের মধ্যকার দূরত্ব বেড়ে যায়। এই দূরত্বের জন্য তারা চিৎকার করে কথা বলে, যাতে একে অপরের কথা বুঝতে পারে। তারা যত বেশি রেগে যায় এই দূরত্ব তত বেশি বেড়ে যায়, আর তখন তারাও তত বেশি চেঁচামেচি করে ঝগড়া করে।"
স্যারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব খোলামেলা, তাই ওনি ভালভাবে তাদের ব্যাপারটা বোঝাতে পারছিল।
--‘‘কি ঘটে যখন দুইজন মানুষ একে অপরকে ভালবাসে? তারা কিন্তু নিজেদের সাথে চিৎকার করে কথা বলেনা বরং মোলায়েম স্বরে কথা বলে। কারন তাদের ভালবাসা দুইজনের হৃদয়কে খুব কাছে নিয়ে আসে।''
স্যার আবারও বললেন--‘‘যখন দুইজন মানুষের ভালবাসা আরও গভীর হয় তখন কি হয়? তখন তারা একে অপরের সাথে চাপাস্বরে কথা বলেও সব কিছু বুঝতে পারে এবং এক পর্যায়ে নিজেদের দিকে তাকিয়েই তারা সবকিছু বুঝতে পারে।’’
এবার স্যার আমাদের কে উদ্দেশ্য করে বললেন--‘‘তোমরা যখন একে অপরের সাথে তর্ক করো, ঝগড়া করো তখন এমন কোন শব্দ ব্যবহার করো না, যা তোমাদের হৃদয়ের মাঝে দূরত্ব বৃদ্ধি করে। যদি এভাবে চলতেই থাকে তবে হয়তো এমন একদিন আসবে যখন এ দূরত্ব এত বেশি হয়ে যাবে যে আর কোন শব্দই সেখানে পৌছুবে না, সেখান থেকে ফিরে আসারও হয়তো আর কোন পথ থাকবে না...
(সংগৃহীত)