somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আসবে বলে আমার এ অপেক্ষা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূচী দাঁড়িয়ে আছে। বিব্রত চেহারা, ভিতরের উত্তেজনা ওর প্রতিটা নড়াচড়ায় টের পাওয়া যাচ্ছে। এক মূহুর্তের জন্যও স্থির হতে পারছে না। একবার ডান পায়ে তো একটু পরেই বাম পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বারবার তাকাচ্ছে ডানে-বামে, সামনে-দূরে... । অস্থির হাতে চুল ঠিক করছে, টিস্যু দিয়ে মুছছে নাকের ডগাটা, বারবার মুছতে মুছতে লাল হওয়ার জোগাড়! ভাবছে একবার আয়না বের করে চেহারাটা দেখে নেবে কিনা। পরমূহুর্তে আবার সংকোচ হচ্ছে রাস্তার মাঝখানে... কত লোক আশপাশে। এমনিতেই তাদের দৃষ্টিতে কৌতুহলের অভাব নেই।

আজ নিরবের সাথে দেখা হওয়ার কথা। নিরব, নামটাই শুধু নিরব। মানুষটা যে কতখানি সরব! আনমনে একটু হাসে সূচী। কথা, হাসি, কৌতুক, গল্প, গান, আবৃত্তি অথবা ফোনের ওপাশে নি:শব্দ উপস্থিতি, হালকা নি:শ্বাস...সবকিছুতেই নিরব নিজের অস্তিত্বকে সরবে জানান দেয়। খেয়াল করে ওপাশ থেকে মুড়িওয়ালাটা হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে সূচীর দিকে। একা একা হাসছিল বলে? ধুর এটা একটা জায়গা হল দাঁড়নোর! আর ছেলেটা যে কি...এখনও আসছে না। নিরব বলেছে, '’আমরা দেখা করবো রমনায়। তুমি দাঁড়াবে অস্তাচল গেটের সামনে, একসাথে ভেতরে ঢুকবো।'’ '’ওখানে কেন?'’ '’কারণ ঐ জায়গাটা আমার সবচেয়ে পছন্দ।’'

সূচী ভাবে সত্যিই জায়গাটা সুন্দর। সামনের রোডটা, দুপাশ থেকে গাছ ডালপালা ছড়িয়ে রাস্তার ওপর ছাদ বানিয়ে রেখেছে। গাছের ছায়ায় রোদটা অতখানি কড়া না বরং কেমন মায়াময় একটা আলো চারদিকে! গাড়িগুলো সাঁ সাঁ করে চলে যাচ্ছে। শুধু আশপাশে ফেরিওয়ালাগুলো যদি না থাকতো! সূচীর অস্থির অপেক্ষা দেখে তারা খুব মজা পাচ্ছে, তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে, নিজেদের মধ্যে কিসব বলছে আর মিচকি মিচকি হাসছে। রাগ হয়ে যাচ্ছে সূচীর।

দূরে একটা ছেলে হেঁটে আসছে। লম্বা, ঝাকড়া চুল, চোখে সানগ্লাস। ’'এই ছেলেটাই নাকি?'’ ভাবে সূচী। ছেলেটার হাতে একটা গোলাপ। ভাল লাগে দেখে। প্রথমদিন দেখা করতে আসছে, ফুল আনবে না...এটা কেমন কথা? ’'গুড বয়’'। সূচী ভাল করে দেখে। কিন্তু ছেলেটা ওর দিকে কোন মনোযোগই দিচ্ছে না। ’'আশ্চর্য! না তাকালে চিনবে কি করে!’' ওরা কেউই কাউকে আগে দেখেনি। এমনকি ছবিও না। সূচী কতদিন বলেছে তোমার একটা ছবি আমাকে মেইল করে দাও। কিন্তু নিরব কিছুতেই রাজি হয়নি। ওর যুক্তিটা অবশ্য খুবই সুন্দর। ও যে কতটা কল্পনা প্রবণ ছেলে এটা শুনলেই বোঝা যায়। ও বলে, '‘তোমার কণ্ঠই তোমার অস্তিত্ব আমার কাছে। তোমার প্রতিটা কথা, হাসিতে আমি তোমাকে নতুনভাবে অনুভব করি। আমি কল্পনা করি তোমার চোখ, চোখের তারার ঝিকিমিকি, তোমার হাসি...প্রতিবার তুমি নতুন করে ধরা দাও আমার কাছে। কিন্তু যদি তোমার একটা ছবি দেখে ফেলি, তাহলে তুমি সেই ছবিটাই হয়ে থাকবে শুধু। যতই তোমাকে ভাবতে চাই না কেন তোমার ছবিটা একইভাবে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে। আমরা নিজেদের মত করে নিজেদের গড়ে নেবো কল্পনায়। ছবি পাঠিয়ে সেটা নষ্ট করো না।'’ ভাল লেগেছিল সূচীর কথাগুলো। তাই আর জোর করেনি। সূচী আবার আগ্রহ নিয়ে তাকায় ছেলেটার দিকে। অনেকখানি কাছে চলে এসেছে। সূচী ভাবে, '‘কে আগে কথা বলবে? আমি না, কক্ষণো না।’' গম্ভীর হবার চেষ্টা করে সূচী অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। আর ছেলেটা ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ‘'ওহ, এ নয় তাহলে!’' সূচী যেন কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এই ছেলেটা দেখতে ভাল হলেও সূচীর কল্পনার সাথে কিছুতেই মেলে না। কিন্তু নিরব যে কেন আসছে না এখনো!

আজকের এই দিনটার জন্য যে সূচীর কত অপেক্ষা, কত প্রস্তুতি। ওরা আরো আগেই দেখা করতে পারতো কিন্তু সূচীর পরীক্ষা, নিরবের আম্মার অসুস্থতা এমন একটার পর একটা ঝামেলায় দেরি হয়ে গেল। ছয় মাস! পরিচয় হওয়ার ছয় মাস পর দেখা করছে ওরা। সূচীর এখনো অবাক লাগে। রঙ নাম্বারে চলে যাওয়া একটা ফোন কলের সূত্র ধরে যে পরিচয় তা আজ কতদূর গিয়ে পৌঁছেছে। ও যে কখনো এমন অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবে তাইতো ভাবে নি। নিরবের কথায় কেমন যেন একটা যাদু আছে। এমন করে কাছে টেনে নেয়! সূচী কিছুতেই পারল না এড়াতে। জড়িয়ে গেল। ঘন্টার পর ঘন্টা, রাতের পর রাত ওরা কথা বলে পার করেছে। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে এঁকে গেছে রঙিন স্বপ্ন। ভালবাসার জোয়ারে ভেসেছে দুজন। শুধু দেখা করাটাই হয়ে উঠেনি। ‘দেখা কর, দেখা কর’ বলে অস্থির করে ফেলেছে নিরবকে। এবং অবশেষে আজকেই সেই দিন। রাজি হয়েছে নিরব দেখা করতে।

সারারাত উত্তেজনায় ঘুম হয়নি সূচীর। ছাড়া ছাড়া অস্থির ঘুমে কেটে গেছে রাত। সকাল সাতটায় এলার্ম দেয়া ছিল ঘড়িতে। কিন্তু ঘুম ভেঙে গেছে আজানের সাথে সাথেই। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে শেষ পর্যন্ত উঠেই পড়েছে বিছানা ছেড়ে। গোসল সারল, শ্যাম্পু করল চুলে। যত্ন করে চুল শুকালো। ধীরে ধীরে বেশ সময় নিয়ে সাজল। ঠিক যেভাবে নিরব ওকে দেখতে চেয়েছিল। নিরব বলেছিল, ‘'এত সেজো না যে আমি তোমাকেই দেখতে পাবো না’।' এত সাজেনি সূচী। লাল-সাদা জামাটা পরেছে, হাল্কা কাজলের রেখা টেনেছে চোখে, ছোট্ট একটা সাদা পাথর বসানো লাল টিপ কপালে, হাল্কা একটু লিপস্টিক, কানে লাল পাথরের ছোট্টো একটা দুল আর হাতভর্তি লাল চুড়ি। এই-ই। সাজ শেষে যখন আয়নায় তাকাল সূচী নিজেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সারারাতের জাগরণ এতটুকু ছাপ ফেলেনি মুখে। বরং অনেক স্নিগ্ধ, সুন্দর দেখাচ্ছে। নিজেই নিজেকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিল।

সাড়ে দশটায় আসার কথা। সবসময় নিরব বলেছে, ‘'আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রেখো না’'। অপেক্ষা করিয়ে যাতে রাখতে না হয় তাই সূচী সোয়া দশটায় চলে এসেছে। অথচ বাবুর দেখা নেই। কখন যে আসবে কে জানে! অস্থির হয়ে ঘড়ি দেখল সূচী। পৌনে এগারটা বাজে। আবার তাকাল রাস্তার দুপাশে, যদি দেখা যায়। একবার ভাবল ফোন করবে কি না। কিন্তু আবার গাল ফুলিয়ে ভাবল, '‘কেন আমি ফোন করবো? গরজ কি আমার একার?’' ভীষণ অভিমান হচ্ছে সূচীর। আশপাশের লোকগুলো কেমন সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ওর ইচ্ছে করছে চলেই যায়। এভাবে অপেক্ষা করিয়ে রাখার কোন মানে হয়? তবু নিরবের আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকল সূচী।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৫২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×