somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবের প্রেম নিয়ে নির্মিত অসাধারণ কিছু সিনেমা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ছোটবেলায়, একেবারেই শৈশবে প্রেমে পড়েন নি এমন মানুষ কমই আছেন। সেটা বেশিরভাগক্ষেত্রেই কোন সিনেমা বা টিভি ক্যারেক্টার, বইয়ের চরিত্র, কোন সুপারহিরো...আর একটু বড় হওয়ার পরে হয়তো ক্লাসমেট বা পাশের বাসার বড় আপু কিংবা ভাই। শৈশবের প্রেম নিয়ে কিছু অসাধারণ মুভি শেয়ার করবো আজ, যেগুলো দেখলে মনে হবে আরেকবার ফিরে যাই শৈশবে, প্রেমে পড়ি আরেকবার!

Little Manhattan (2005)



শুধু শৈশবের প্রেম বলে নয়, রোমান্টিক মুভির মধ্যেও আমার দেখা অন্যতম সেরা একটা মুভি Little Manhattan। পৌনে এগার বছরের গেইব হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে যায় তার ক্লাসের রোজমেরির। এমন না যে গেইব রোজমেরিকে চিনতো না, কিন্তু তার এবং তার ক্লাসের অন্য ছেলেদের ভাষ্যমতে "মেয়ে মাত্রই...they are just girls..."। সুতরাং কিন্ডার গার্টেন থেকে একসাথে পড়া রোজমেরিকে পাত্তা দেয়ার কিছু ছিল না। অঘটনটা ঘটল যখন রোজমেরি গেইবের কারাতে ক্লাসে এসে হাজির হল, এবং দুর্ভাগ্যবশত: তার স্পারিং পার্টনারও হয়ে গেল। হঠাৎ করেই গেইব আবিষ্কার করল ক্লাসের প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই সুন্দরীকে ছাড়িয়ে গেছে তৃতীয় রোজমেরি এবং তার সুন্দর ছন্দে চলা পৃথিবী বদলে গেছে পুরোপুরি।

এরপর খুব ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে রোজমেরির কাছাকাছি আসা, গেইবের ভিতরে তৈরি হওয়া অদ্ভুত কিছু অনুভূতি, যার সাথে আগে তার কোন পরিচয়ই ছিল না...এভাবেই এগিয়ে যায় সিনেমার কাহিনী। মুভির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হল রোজমেরির সাথে ঝগড়ার পর গেইবের বিলাপ করে কান্না..."রোজমেরিইইইই......"। কোন কান্নার দৃশ্য দেখে এত হাসি আমি কখনোই হাসি নি।

সিনেমাটা ভাল লাগবে ছোট ছোট অসম্ভব সুন্দর কিছু অনুভূতিময় দৃশ্যের জন্য, প্রতিটি চরিত্রের, বিশেষত গেইব চরিত্রে জোশ হাচারসনের অসাধারণ অভিনয়ের জন্য, আর ভালবাসাকে নতুন চোখে দেখতে পারার জন্যও।

মুভিটির imdb রেটিং ৭.৫, তবে আমি এটাকে ১০ই (দশেতো এর বেশি দেয়া যাচ্ছে না) দিয়েছি।

ডাউনলোড লিংক

I Give My First Love to You (2009)



শৈশবের প্রেম, যা টিকে ছিল কৈশোরেও...এমন কি অনন্তকাল...এমনি একটি অসাধারণ প্রেমের সিনেমা জাপানি I Give My First Love to You. আট বছর বয়সী তাকুমার হার্টে একটা জটিল রোগ ধরা পড়ে, জানা যায় সে বাঁচবে বড়জোর বিশ বছর পর্যন্ত। কিন্তু এরইমধ্যে তার প্রেম হয়ে যায় তার ডাক্তারের মেয়ে মাইয়ূর সাথে। এবং সে মাইয়ূকে প্রমিজ করে যে, বিশ বছর বয়স হলে তারা বিয়ে করবে।

কিন্তু বড় হবার পর, যখন তাকুমার আয়ু ফুরিয়ে আসছে খুব দ্রুত, সে বুঝতে পারে মাইয়ূকে দেয়া কথাটা তার বাস্তবতার তুলনায় কতটাই হাস্যকর! আর তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সরে আসার। তবে মাইয়ূর কাছ থেকে সরে যাওয়াটা এত সহজ ব্যাপার ছিল না। তাকুমা যখন সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল বদলের, দুর্বল ছাত্রী মাইয়ূ প্রচন্ড পরিশ্রম করে শহরের সবচেয়ে ভাল স্কুলটিতে নিজের জায়গা করে নেয়, উদ্দেশ্য একটাই তাকুমার কাছাকাছি থাকা। নতুন স্কুলে সেরা ভর্তি পরীক্ষায় সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে মাইয়ূকে কিছু বলতে বলা হয়। হল ভর্তি শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সামনে মাইয়ূ কঠিনভাবে তাকুমাকে হুমকি দিতে থাকে, "কি ভাবো, এতই সহজ আমাকে ছেড়ে যাওয়া!" আমার দেখা সবচেয়ে ক্রেজি প্রেমিকা, সবচেয়ে ক্রেজি দৃশ্য এটা। প্রায়ই এই অংশটা দেখা হয় আমাদের।

এভাবেই এগিয়ে চলে মুভির কাহিনী। কখনো তারা ছেড়ে যায় পরস্পরকে, কখনো আবার ফিরে এসে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে, শুধু মাইয়ূ নয়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তাকুমাও তার নিয়মে বাঁধা জীবনে অনেক অনিয়ম করে ফেলে। একটা সময় মনে হতে পারে খামোখাই মুভিটা টেনে-টুনে লম্বা করা হচ্ছে, কিন্তু তারপরও মুভিটা ভাল লাগবে। ভাল লাগবে দুই কিশোর-কিশোরীর নিষ্পাপ সৌন্দর্য আর অসাধারণ অভিনয়ের জন্যই। আমার দেখা কিউটেস্ট কাপল এই তাকুমা-মাইয়ূ।

মুভিটার imdb রেটিং ৭.১। অনেক ভুলচুক, কিছু অবাস্তবতা সব সত্ত্বেও শুধুমাত্র এই দুই কিশোর-কিশোরীর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য আমার রেটিং ১০।

ডাউনলোড লিঙ্ক

Flipped (2010)



জুলি বেকার, এক অসাধারণ কিশোরী, সেকেন্ড গ্রেড থেকেই প্রেমে পড়ে তার প্রতিবেশী এবং ক্লাসমেটে ব্রাইসের। সে প্রথম দিন থেকেই কল্পনা করে যায়, কোন একদিন ব্রাইস তাকে চুমু খাবে। প্রতিটা কাজেই সে ব্রাইসকে যুক্ত করতে চায়, আক্ষরিক অর্থেই ঘুর ঘুর করে তার পেছন পেছন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ব্রাইস সেভাবে চিন্তা করে না কখনো। বরং জুলিকে তার মনে হয় এক মূর্তিমান আতংক। তাদের বাসস্টপের বিশাল সিকামোর গাছটার উপরে উঠে জুলির প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া, বা সায়েন্স প্রজেক্টে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরুনো দেখানো...সমস্তই ব্রাইসের কাছে হাস্যকর এবং অর্থহীন মনে হয়। যে কারণে জুলিও তার কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায় না।

তবে এইটথ গ্রেডে এসে পরিস্থিতি বদলে যায় হঠাৎ করেই। ব্রাইস আবিস্কার করে খুব সিম্পল বিরক্তিকর জুলি বেকার আসলে খুব অন্যরকম একজন মানুষ। তার মধ্যে ব্রাইস স্পেশাল কিছু খুঁজে পায়, তার অনুভূতির পরিবর্তন আসতে থাকে, জুলির মত সেও স্বপ্ন দেখতে থাকে 'ফার্স্ট কিস' এর। কিন্তু জুলির বেলায় ঘটে উল্টোটা। ব্রাইসের কিছু বিরক্তিকর, দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য এতকাল বাদে তার হঠাৎ করেই মনে হয়, ব্রাইসের যে উজ্জ্বল নীল চোখদুটো দেখে সে মুগ্ধ হয়েছিল, সেগুলো আসলে ব্রাইসের মতই অন্তঃসারশূণ্য।

এভাবেই দুই কিশোর-কিশোরীর পরিবর্তিত অনুভূতির জগৎ নিয়ে এগিয়ে যায় মুভিটির কাহিনী। জুলি বেকার চরিত্রে মেডেলিন ক্যারল অসাধারণ অভিনয় করেছে, মুভিটির চিত্রায়ণও খুব সুন্দর। বিশেষ করে সিকামোর গাছে চড়ে জুলি চোখে বিস্তীর্ণ মাঠের সৌন্দর্য দেখলে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে।

মুভিটির imdb রেটিং ৭.৬, আমার রেটিং ৮।

ডাউনলোড লিংক

Moonrise Kingdom (2012)



বার বছর বয়সী খাকি স্কাউট স্যাম তার দলের সাথে অপেরা দেখতে গিয়ে প্রেমে পড়ে র‍্যাভেনরূপী সুজির। সেখান থেকেই তাদের পত্র-মিতালী চলে পুরো একটা বছর এবং চিঠিতেই তারা পরিকল্পনা করে পালিয়ে যাওয়ার। স্যাম পালায় তার স্কাউট দল থেকে আর সুজি বাড়ি থেকে। যে দ্বীপে তারা বাস করে তার এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটতে থাকে তারা, পেছনে পুরো স্কাউট দল, দ্বীপের পুলিশ, সুজির বাবা-মা। একসময় তারা ধরাও পড়ে, কিন্তু হাল ছেড়ে দেয় না। পালায় আবারো, এবার স্যামের পক্ষে থাকে তার স্কাউট ট্রুপের সবাই। এবার আর তারা কোন ঝুঁকি নেয় না, পালানোর পরে প্রথম কাজ হয় বিয়ে করে ফেলা।

এদিকে তখনও পিছু নিয়ে চলেছে খাকি স্কাউটের পুরো বাহিনী, দ্বীপ পুলিশ, সোশ্যাল সার্ভিসের লোকজন।

মুভিটির imdb রেটিং ৮, তবে দেখতে বসলে মনে হতেই পারে ওভার রেটেড। আমার রেটিং ৫। ভাল লাগবে দুই কিশোর-কিশোরীর প্রেমের প্রতি দৃঢ় মনোভাব, সকল বাধা উপেক্ষা করে একসাথে থাকার চেষ্টা।

ডাউনলোড লিংক

৭৩টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×