somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে আসুন বরিশালের ভাসমান বাজার থেকে

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যারা থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেট নিয়ে আগ্রহ দেখান, যারা কেরালার ব্যকওয়াটার এর ছবি দেখে হা পিত্যেস করেন তারা দেখে আসুন বরিশাল আর পিরোজপুরের জলের এক স্বর্গ রাজ্য। গ্যারান্টি দিচ্ছি ভুলে যাবেন জীবনের সব আক্ষেপ, গর্ব ভরে যাবে বুক দেশে এমন সুন্দর একটি জায়গা আছে বলে। ট্রিপ টু বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি ট্রাভেলারদের প্রতিমাসে ৫-৬ টি ট্যুর পরিচালনা করছে এ জলরাজ্যে জন্য। এ ট্যুর করে তাদের অনেকেই বলেছেন জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটি ট্যুর করেছেন তারা।

বলছিলাম বরিশাল- পিরোজপুরের- ঝালকাঠির নদী আর গ্রামের ভেতর বয়ে যাওয়া খালগুলোর কথা। ধান- নদী- খাল এই তিনে বরিশাল- একথাতো অনেকেই জানে। কিন্তু অনেকেই জানেননা এ নদী-খালের মধ্যে কি অপরিসীম স্বর্গীয় সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। বরিশালে প্রতি এলাকায়ই একটি নদী নিদেন পক্ষে একটি খাল রয়েছে। ভরা বর্ষায়তো বটেই, শীতকালেও এসব খালে পানি প্রবাহ থাকে। তাই বছর ভর ঘুরে বেড়ানো যায় শান্ত স্নিগ্ধ এ এলাকায়। ছোট খালের দুপাশে কোথাও ফসলের মাঠ, কোথাও পতিত ভুমি কোথাও বা বসতবাড়ি- সব কিছুই ছবির মতো মনে হবে আপনার কাছে। কিচুক্ষন পর পর আছে গ্রামীন ছোট বাজার। আর সে বাজারের আছে টাটকা সব শাক সবজি। দুপুরে খেতে চাইলে আছে তারও ব্যবস্থা।


সবচে আকর্ষনীয় যে জিনিষটি আপনার মন কেড়ে নেবে তা হল ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার। পানিপ্রধান অঞ্চল বলে স্বভাবতই এখানকার জীবনযাত্রায় নৌকার ভুমিকা প্রবল। কতোটা প্রবল তা এখানে না এলে বোঝা যাবেনা। কিছু কিছু এলাকার অধিবাসীদের বাণিজ্যের বেশ বড় অংশ চলে জলে বসে। আর এ কারনেই বরিশাল, পিরোজপুরে আর ঝালকাঠিতে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো ভাসমান বাজার। বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার বসে বিশাল ধান আর চালের ভাসমান বাজার। খুব সকাল থেকেই কয়েকশ নৌকায় করে কারবারি এবং গৃহস্থরা ধান চাল নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। অনেকে আসেন খালি নৌকা নিয়ে চাল কিনতে। পুরো প্রক্রিয়াটাই চলে নদীতে বসে।

ধানের বাজার ছাড়াও আছে ভাসমান সবজি বাজার। নাজির পুর এর বৈঠাকাঠা, উজিরপুর এর হারতা, মাহমুদকাঠি সহ বেশ কটি জায়গায় আছে এ সবজি বাজার। এখানেও স্থানীয় মানুষজন তাদের শাক সবজি নৌকায় করে নিয়ে এসে নৌকায় করেই বিক্রি করে থাকেন। সকাল থেকেই জমে ওঠে এ বাজার। স্থানীভাবে উৎপাদিত লাল শাক, পালং শাক, পুই শাক, কলা, চিচিংগা, বরবটি, শশা, টমেটো, ঢেরশ, মুলা ইত্যাদি নানান সবজি দিয়ে ভরপুর থাকে এসব নৌকায়। অসাধারন ফটোজেনিক জায়গা এটি। বলা যায় ফটোগ্রাফারদের স্বর্গরাজ্য। শান্ত জলের মাঝে সবজি বোঝাই নৌকাগুলোতে বেচা কেনা চলে হরদম।


আর আপনি যদি যান জুলাই থেকে অক্টোবর এর মাঝে তবে দেখা পাবেন অপার্থিব এক সুন্দর বাজারের। সেটা হল ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার। বাংলাদেশের উৎপাদিত মোট পেয়ারার প্রায় ৮০ ভাগই উৎপাদিত হয় ঝালকাঠির বিভিন্ন গ্রামে। আটঘর, কুরিয়ানা, ডুমুরিয়া, বেতরা, ডালুহার, সদর ইত্যাদি এলাকার প্রায় ২৪,০০০ একর জমিতে পেযা়রার চাষ হয়।আর এ পেয়ারা বেচা কেনার জন্য ঝালকাঠির ভিমরুলিত জমে ওঠে বাংলাদেশের সবচে বড় ভাসমান বাজার। প্রতি মৌসুমে এ বাজারে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে কেনা বেচা। অনেক দুর দুরান্ত থেকে পেয়ারা চাষীরা তাদের ক্ষেতের পেয়ারা নিয়ে আসেন এ বাজারে। আর ক্রেতারাও আসেন অনেক দুর থেকে। সাধারনত নৌকায় থাকা পুরো পেয়ারাই এক লটে কেনা বেচা হয়। ভরা মৌসুমে এ নৌকা পেয়ারা মা্ত্র ৩০০ টাকায়ও কিনে নেয়া যায়।

তো যদি স্রেফ ২ রাত ১ দিন সময় পান হাতে, দেখে আসুন দক্ষিন বাংলার অপার সে সৌন্দর্য, অনুভব করে আসুন বাংলার রুপ।
কি বারে কি বাজার :

- বানারীপাড়ার চালের বাজার : শনিবার এবং মঙ্গলবার
- উজিরপুরের হারতার সবজি বাজার : রবি এবং বুধবার
- নাজিরপুর এর বৈঠাকাঠা সবজি বাজার : শনি এবং মঙ্গলবার
- ঝালকাঠির ভিমরুলির পেয়ারা বাজার : প্রতিদিন (জুলাই থেকে অক্টোবর)

বাজার দেখতে হলে উপরের এ দিন মিলিয়ে যাওয়াই ভালো। সবগুলো বাজারই খুব সকালে বসে এবং দুুপরের মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাই সকালে যাওয়াই উত্তম। আর শুধু জলভ্রমণ করতে হলে যে কোন দিনই যাোয়া যায়।


কি করে যাবেন: ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টায় ঞুলারহাট এর উদ্দেশ্যে ২-৩ টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এতে উঠে পরদিন সকাল ৬ টার দিকে বানারীপাড়া নেমে যাবেন। ভাড়া নেবে ডেক ১৮০ টাকা, কেবিন : ১০০০ টাকা (সিংগেল) আর ডাবল ১৮০০ টাকা।

এছাড়া ঢাকার গাবতলি থেকে স্বরুপকাঠির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এতে উঠে বানারীপাড়া যাবেন। ভাড়া নেবে ৫০০ টাকা।
বরিশাল হয়েও যেতে পারেন। লঞ্চ এ বা বাসে বরিশাল গিয়ে আবার বাসে বা অটোতে করে বানারীপাড়া।

কি করে ঘুরবেন : বানারীপাড়া পৌছাবেন সকাল ৬ টার মধ্যে। এরপর যে কেন একটি রেষ্টুরেন্ট এ নাস্তা করে আবার নদী তীরে চলে আসুন। একটি বড় ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করুন। বলবেন আপনি ৬-৭ ঘন্টা ঘুরবেন এভাবে : বানারীপাড়া,আটঘর-কুড়িয়ানা, ভিমরুল ও মাহমুদকাঠি অথবা বানারীপাড়া-হাড়তা বা বৈঠাকাঠা। ১০-১৫ জন বসার মত একটি ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া নেবে ১৫০০ টাকার মত। দুপুরে কুড়িয়ানার বিখ্যাত বৌদির রেষ্টুরেন্ট (সকাল সন্ধ্যা) এ খেয়ে নিতে পারেন। আগে অর্ডার করলে ভালো খাবার রান্না করে রাখবেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ বাজারটির ছোট বৌদির রেষ্টুরেন্ট এ কয়েকশ বিদেশী খাবার খেয়েছেন। বৌদির রেষ্টুরেন্ট এর ফোন নম্বর : ০১৯২৩-৭৪৪৯৩৭ (সন্ধ্যা রানী)


ফেরার সময় বানারীপাড়া থেকে বাসে করে চলে আসুন গুঠিয়া। গুঠিয়ার বিখ্যাত বায়তুল আমান জামে মসজিদ দেখে অটো নিয়ে চলে যান দুর্গাসাগর। দুর্গাসাগর দেখে বাসে উঠে চলে যান বরিশাল শহরে। এখানে আপনি প্রতি আধা ঘন্টা পরই বাস পাবেন। নথুল্লাবাদ নেমে রিক্সা বা অটো নিয়ে লঞ্চ ঘাট। এ ঘাট থেকে ৮.৩০ থেকে ৯ টার মধ্যে ৩-৪ টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×