প্রথম দিকে সৌদি আরব নিহতের সংখ্যা নিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইলেও সৌদি আরবের ডিপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন নিহতের সংখ্যা ৪,১৭৩ ! বেসরকারী হিসাবমতে নি:সন্দেহে এ সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বেশি হবে । ঘটনার পরিক্রমায় যা দেখা যাচ্ছে তা হল সৌদি আরব যেমন মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের গোলাম তেমনি দুই তিনটি মুসলমান প্রধান দেশ বাদে বাদবাকি সবাই সৌদি আরবের গোলাম ! সবদেশেরই কমবেশি হাজী মারা গেছে অথচ ইরান, ইন্দোনেশিয়া বাদে আর কোনো দেশের তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই ! ধর্মান্ধ ও মুর্খরা যেমন সৌদি আরবের সমালোচনাকে পাপ বলে জ্ঞান করে তেমনি এদের সরকার প্রধানদের অবস্থাও তাই ! তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর-দোকান তো বলেই দিয়েছেন, মিনা ট্রাজিডি নিয়ে যারা সৌদি আরবের সমালোচনা করতেছে তাদের প্রতি তাঁর কোনো সহানুভুতি নেই ! দালাল কাকে আর বলে ! এত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানিতে তাঁর অন্তর কাঁদল না কাথচ এই ব্যক্তি মাছের মায়ের পুত্র শোক করতে সিদ্ধহস্ত ।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে নিহতের সংখ্যা ৪,১৭৩ উল্লেখ করা হয়।
সৌদি আরবে নিহত ও আহত হাজিদের মধ্যে সম্ভবত ইরানি হাজিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি আবার বাংলাদেশের মত অন্য কোনো দেশেরও নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হতে পারে। আমি হতে পারে এবং সম্ভবত শব্দ এজন্যই ব্যবহার করেছি কারণ এপর্যন্ত নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি ! তবে যতটুকু জানা গিয়েছে তাতে ইরানি হাজীর নিহতের সংখ্যাই সর্বাধিক ! পাকিস্তানের সাবেক ধর্মমন্ত্রী হামিদ সাঈদ কাজেমি তাঁর নিজ দেশের সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সরকার পাকিস্তানী নিহত নাগরিকের সংখ্যা গোপন করে প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের ’আরব নিউজ’ জানিয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ ৭৪ হাজার কবর খনন করেছে !!! মিনার এই বিয়োগান্তক ঘটনার সময় ৭৪ হাজার কবর খনন কি জন্য সৌদি আরব তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ! তাই বলছি মিনা ট্রাজেডিতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কোনোদিন জানা নাও যেতে পারে !
ইরানের সবচেয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত ইরান ও সৌদির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থান পরষ্পর বিপরীত মেরুতে। দ্বিতীয়ত আদর্শগত ভিন্নতা, তৃতীয়ত ইরানই একমাত্র মুসলিম প্রধান দেশ যে দেশটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরেও মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের কঠোর বিরোধী অন্যদিকে সৌদি আরব মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের গোলাম, চতুর্থত সাম্প্রতিক ক্রেন দুর্ঘটনাসহ মিনা ট্রাজিডিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি হল ইরান। নিহতের শুধু সংখ্যাগত দিক দিয়ে নয় ইরানের কয়েকজন সিনিওর কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও উচু পর্যায়ের কুটৈনীতিকও নিহত ও নিখোঁজের তালিকায় আছেন। ক্রেন দুর্ঘটনায় ইরানের একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী নিহত হন ! মিনা ট্রাজিডির নিখোঁজের মধ্যে লেবাননে নিয়োজিত ইরানের সাবেক রাস্ট্রদূত গজনফার রোকনাবাদীও আছেন । জঙ্গী গোষ্ঠী আইএসআইএলকে ঠেকাতে যার ভূমিকা ছিল অনন্য ! এই তুখোড় ও জাদরেল কুটনীতিক রোকনাবাদীকে নিয়ে ইরান ও সৌদির বাকযুদ্ধ চরম পর্যায়ে পৌছেছে। ইরান সরকারের মুখাত্র সৌদি আরবকে আমেরিকার ফাই পরমাশ খাটা চাকর ( Lackey) হিসাবে অভিহিত করেছেন । নিহত ও আহতের তালিকায় এই জাঁদরেল কুটনীতিককে পাওয়া যায়নি । সৌদি আরব দাবি করছে তিনি হজ্ব করতে মক্কায় আসেননি অথবা যদি হজ্ব করতে এসে থাকলেও তাহলে অবৈধভাবে এসেছিলেন । ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি অবৈধভাবে হজ্ব করতে যাননি। তিনি একজন কুটনীতিক। তিনি তাঁর পাসপোর্ট ব্যবহার করেই হজ্ব করতে গেছেন। ইরানি মিডিয়া রোকনাবাদীর পাসপোর্টের ছবিসহ সৌদি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া সকল কাগজপত্রের ছবিও প্রকাশ করেছে।মূলত সৌদি আরবের কথা ডাহা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পররাস্ট্র উপদেষ্টা ও সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর বেলায়াতি অব্যবস্থাপনার ফলে সৌদি আরবের এ দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা নয় বরং সৌদি-ইসরায়েলী ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন! ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানিসহ ইরানের অন্যান্য সিনিওর কর্মকর্তাগণও একই সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন। তাদের প্রশ্ন হল অব্যবস্থাপনার ফলে যদি দুর্ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে ইরানের সিনিওর কুটনীতিকসহ ইরানি সরকারী সিনিওর কর্মকর্তাগণের কোনো খোঁজ নেই কেন ? উল্লেখ্য যে কয়েকজন ইরানি সিনিওর কর্মকর্তা এবার হজ্ব করতে গিয়েছিলেন তারা সবাই নিখোঁজ !!! এটা কি বিষ্ময়কর নয় ? একই অভিযোগ করেছে ইরাকও । তাদেরও কয়েকজন কর্মকর্তা নিখোঁজ ! ধারণা করা হচ্ছে দুর্ঘটনার অন্তরালে সৌদি আরব এসকল কর্মকর্তাদের কিডন্যাপ করে ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে অথবা নিজেরাই গুম করেছে ইরানি ও ইরাকি এসব কর্মকর্তা ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের শয়তানী নীতির বিরুদ্ধে । হজ্ব মৌসুমে কিডন্যাপ করে ইসরায়েলের হাতে ইরানী কর্মকর্তা তুলে দেওয়া সৌদি আরবের নতুন কিছু নয়। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহা্ম্মদ খাতামির ডিপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হজ্ব করতে যেয়ে আজ পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ! ইরানের বিপ্লবের পর থেকে হজ্ব করতে যেয়ে প্রচুর ইরানি কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন । লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া আলেম মুসা সদর গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়া সফরে গেলে সঙ্গী সাথিসহ নিখোঁজ হন যার খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ! কথা হল: দুর্ঘটনা বা ঘটনা যাই ঘটুক ইরানি সরকারী কর্মকর্তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না কেন ? আর সৌদি আরবও এ নিয়ে শাক দিয়ে মাছ চেষ্টা করছে কেন ? ঠাকুর ঘরে কে রে ? কলা আমি খাইনি-তাই নয় কি ?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০২