somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকার পরিচিতি:: মাওলানা ইউসুফ

২৭ শে মে, ২০০৮ সকাল ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দালাল আইনে সাজা হয়েছিল জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের
ওয়াসেক বিল্লাহ্
জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ দলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব নিয়েছেন। গতকাল বুধবার তিনি দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে সাংগঠনিক কাজ করেছেন। গত রোববার জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারের পরদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফকে ভারপ্রাপ্ত আমির নির্বাচিত করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালালি করার দায়ে মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে মাওলানা ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট দলিলপত্রে দেখা যায়, একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে গঠিত ডা. মালেকের মন্ত্রিসভায় বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর দুজন সদস্য ছিলেন। এঁদের একজন এই মাওলানা ইউসুফ ছিলেন রাজস্ব মন্ত্রী। অপরজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আব্বাস আলী খান বেঁচে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর এঁরা দুজনই গ্রেপ্তার হন। ওই মন্ত্রিসভার এক সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর মাওলানা ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে মাওলানা ইউসুফকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ, কথা বলতে পারব না।’ গত মার্চ মাসে মাওলানা ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে কিছুই তাঁর মনে নেই।

মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য ও খেলাফত মজলিসের একাংশের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর তিনিসহ ওই মন্ত্রিসভার সব সদস্য গ্রেপ্তার হন। আদালত তাঁকেও (ইসহাক) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মাওলানা ইসহাক আরও জানান, তাঁর মামলার রায়ের কয়েক দিন আগে জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফকেও একই সাজা দেন আদালত। ১৯৭২ সালের ১৭ ডিসেম্বর পত্রপত্রিকায় সে সংবাদ ছাপা হয়। বাংলার বাণী পত্রিকায় ওই সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘দালাল মন্ত্রী ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক এ এস এম সামছুল আরেফিন প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন, জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফই ওই ব্যক্তি। তিনি এরূপ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের একটি তালিকা করেছেন। তিনি জানান, মালেক মন্ত্রিসভার সব সদস্যেরই মুক্তিযুদ্ধের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট মালেক মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আগপর্যন্ত তৎকালীন জামায়াতের অন্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি মাওলানা ইউসুফও রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একাত্তর সালের মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামসহ সে সময়ের সব সংবাদপত্রে এ খবর ছাপা হয়।

গত মঙ্গলবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এসব আওয়ামী লীগের অপপ্রচার। সময়মতো এর জবাব দেওয়া হবে।’ সে সময় কবে হবে−জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ এটার জবাব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না। সময় এলে জানানো হবে।’

গবেষক এ এস এম সামছুল আরেফিনের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান বইয়ে (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ও ১৯৯৮ সালে পুনর্মুদ্রিত) এ কে এম ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (পৃ-৪২২)। ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আব্বাস আলী খান ও মাওলানা ইউসুফসহ মালেক মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা সংবর্ধনা দেন। পরদিন দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তা নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ হয় তাতে দেখা যায়, ওই অনুষ্ঠানে মাওলানা ইউসুফ বলেছিলেন, ‘যুব সমাজকে পাকিস্তান সৃষ্টির মূল লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি বলেই তারা আজ নিজেদের পাকিস্তানী ও মুসলমান পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে।’

একাত্তর সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের সংগ্রাম-এর প্রথম পাতায় তেজগাঁও থানা শান্তি কমিটি মালেক মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরে দেখা যায়, এ কে এম ইউসুফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ইসলামের দুশমনরা এর অস্তিত্ব ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে এবং বিভিন্ন পন্থায় তারা এই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। মার্চ মাসের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকেও ইউসুফ এই ষড়যন্ত্রের পরিণাম বলে উল্লেখ করেন।

একাত্তর সালের ১৮ অক্টোবর সংগ্রাম-এ প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য (রাজস্ব মন্ত্রী ইউসুফ) হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের সাহসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’

২৮ নভেম্বর করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে মাওলানা ইউসুফ বলেছিলেন, ‘রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মোকাবিলা করছে।’ তিনি রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান। পরদিন ২৯ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশ হয়।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২২ মে ২০০৮

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৮ সকাল ৭:৫৫
১৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×