somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যাটিকান সিটিতে একদিন ও স্বল্পবসনা নারী (এক্সক্লুসিভ ছবিসহ)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪ জুলাই ২০১২। সকালের সোনা রোদ দীপ্তি ছড়িয়ে ক্রমেই সতেজ হয়ে উঠছে রোমের (Rome) আকাশ। হরেক রকম মানুষদের স্বাগত জানাতে পসরা সাজিয়ে বসেছে রোম শহরের পাথুরে মাটি। আমার গন্তব্য রোমের ওলিগলি হয়ে শহরের ঠিক মাঝখানে ঠায় দাড়িয়ে থাকা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ, ভ্যাটিকান সিটি। সারাবিশ্ব জুড়ে ভ্যাটিকান সিটি একটি বহুল আলোচিত নাম। ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রীয় নাম ভ্যাটিকান সিটি স্টেইট (Vatican City State)। জানা যায় ১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন ইতালির (Kingdom of Italy) কাছ থেকে ভ্যাটিকান সিটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১১০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র এ দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৮৪২ জন। আয়তন, জনসংখ্যা, পদ্ধতি ছাপিয়ে ভ্যাটিকান সিটির পরিচয় মূলত দেশটির মূল স্থাপনাটি ক্যাথলিক (Catholic) সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (Church বা গীর্জা)।

ত্যারমিনি (Termini) নামক রোমের সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে বসবাসরত কাজিন সুলতান ভাইয়ের সাথে হেটে এবং সিটি বাসে চড়ে ভ্যাটিকান সিটির প্রবেশমুখে পৌছাতে বিকাল ৪টা বেজে গেল। রোমের নানাবিধ চোখ জুড়ানো ঐতিহাসিক স্থাপনা এড়িয়ে বিকালের আগে কোনভাবেই পৌছানো সম্ভব হল না। প্রবেশমুখে পৌছাতেই বেশকজন বাংলাদেশীর দেখা মিলল। বেশভূষা আর গায়ের রং দেখে তাদের চিনতে মোটেও বেগ পেতে হল না। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেখলাম পাতলা চারকোনা বড় রুমাল বা স্কার্ফ জাতীয় কাপড় (নিচের ছবি) বিক্রি করতে। কাপড়গুলোর বিশেষত্ব সম্মন্ধে তেমন কিছু আন্দাজ করতে পারলাম না।



দু-চারজন বাংলাদেশীর সাথে কুশল বিনিময় এবং আয় রোজগার সম্পর্কিত টুকটাক কথা সেরে ডুকে পড়লাম গীর্জার মূল আঙ্গিনায় যেটা সেন্ট পিটার'স স্কয়ার (St. Peter's Square - নিচের ছবি) নামে অভিহিত। সেন্ট পিটার'স স্কয়ারে প্রবেশ করার আগেই বেশ দূর থেকেই চোখে পড়ে সুউচ্চ একটি স্মারকস্তম্ভ (Obelisk)। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তৎকালীন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার (Julius Caesar Augustus Germanicus) তার রাজত্বকালে (AD 37-41) স্মারকস্তম্ভটি পিরামিডের দেশ মিশর থেকে এনেছিলেন।



স্কয়ারের এদিক সেদিক লক্ষ্য করতেই কয়েকজন তরূনীর হাতে পূর্বে উল্লেখিত স্কার্ফ জাতীয় কাপড় দেখতে পেলাম। তখনও সেই বিশেষ কাপড়ের ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞতা কাটে নি।




সেন্ট পিটার'স স্কয়ারের প্রবেশমুখ থেকে সোজা যে ভবনটি খালিচোখে প্রতীয়মান হয় সেটিই মূল গীর্জা যাকে বলা হয় সেন্ট পিটার'স বাসিলিকা (St. Peter's Basilica)। এখান থেকেই ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বা আধ্নাতিক গুরু যিনি পোপ (Pope) হিসেবে পরিচিত, ধর্মীয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বর্তমান গীর্জার পোপের দ্বায়িত্ব পালন করছেন পোপ ফান্সিস বা ফ্রান্সিসকো (Fransisco)।





নিরাপত্তার চাদর ডিঙ্গিয়ে সারিবদ্ধভাবে সেন্ট পিটার'স বাসিলিকা সংলগ্ন বাম দিকের ভবনের ভেতর দিয়ে গীর্জার প্রবেশমুখে পৌছে গেলাম। নানান দেশের নানান বর্নের মানুষের আগমনে বেশ জমজমাট জায়গাটি। প্রবেশমুখের সম্মুখভাগে দু-চারজনের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের বেশ কয়েকটি জটলা চোখে পড়ল। সুনির্দিষ্টভাবে জটলাগুলোতে চোখ দিতেই ভ্যাটিকান সিটির প্রবেশপথে বিক্রি করা পাতলা সেসব স্কার্ফ কয়েকজন তরুনীকে তাদের পরিহিত হাফপ্যান্টের উপর দিয়ে জড়িয়ে নিতে দেখলাম (নিচের ছবি)।






দৃষ্টি আরেকটু প্রসারিত করতেই বেশ কয়েকজন স্বল্পবসনা তরূনী এবং মধ্যবয়সী নারীকে দেখা গেল পলিথিন জাতীয় প্ল্যাস্টিক জড়িয়ে গীর্জার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে। পুরুষ সঙ্গীদের কেউ কেউ নারী সঙ্গীর এরকম বিশেষ অভিজ্ঞতা ক্যামেরায় ধারন করতে হয়ে গেলেন বিশেষ তৎপর।






পুরুষ সঙ্গীর গায়ের সোয়েটার জড়িয়ে কোমরের নিচের উম্মুক্ত স্থান ঢাকতে ব্যস্ত অর্ধনগ্ন কতিপয় তরূনীর সচেতন প্রচেষ্টা ক্ষনিকের জন্য হলেও আমার দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হল। বেশ কিছুক্ষন ধরে এ দৃশ্য সতর্কতার সাথে ক্যামেরায় ধারন করছিলাম। ইতিমধ্যে মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নের অবতারনা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত কোন অবস্থায় জড়ানোর ইচ্ছে না থাকায় চুপ থাকা শ্রেয় মনে করলাম। ভিতরে জিজ্ঞাসু মনের হাজারো প্রশ্ন সামাল দিতে একেবারেই পেরে উঠছিলাম না।





সেন্ট পিটার'স বাসিলিকার ডানদিকে একটি প্রবেশদ্বারে দেখা গেল ঐতিয্যবাহী ঝকঝকে পোষাক পরিহিত দুজন দারোয়ানকে। এটা হচ্ছে পোপ এবং ভ্যাটিকান সিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বাসভবনে যাওয়ার প্রবেশপথ।



বেরিয়ে আসার সময় সাহস নিয়ে কয়েকজনকে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম নারীদের জন্য হাফ প্যান্ট পরিধান করে ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত মূল গীর্জার অভ্যন্তরে প্রবেশ করা গর্হিত কাজ এবং সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ। অগত্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রবেশদ্বারে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করা পাতলা কাপড় দিয়েই চালিয়ে দিতে হচ্ছে অনেককে। তা নিয়ে বেশ ব্যবসাও জমিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশীরা। আগ্রহটা আরেকটু বেড়ে গেল। ভ্যাটিকান সিটি পরিভ্রমন শেষে স্কার্ফ বিক্রিরত কয়েকজন বাংলাদেশীর ছবি তুলতে চাইলে তাদের সম্মতি মিলল না। তবে হৃদয় গভীরে ব্যাপড় সারা জাগানো বহুল ব্যবহৃত পন্যের (স্কার্ফ বা রুমাল) ছবি তুলতে কোন বাধা না দেওয়ায় ভাল লাগল।



ভ্যাটিকান সিটির পোষাকসংক্রান্ত বিধি বা Papal Audience & visiting the Vatican Dress Code অনুযায়ী পোপের জনসভায় অংশগ্রহন, এবং ভ্যাটিকান সিটির গীর্জা সেন্ট পিটার'স বাসিলিকা ও ভ্যাটিকান জাদুঘরে প্রবেশে পোষাক পরিধানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন রয়েছে। নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাটিকান গীর্জা পরিদর্শনকালে এমন পোষাক পরিধান করা বাধ্যতামূলক যা কাধ (সহ) থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখতে সক্ষম।



পরের পোস্ট: রোম শহরের উলঙ্গ মূর্তি: বিস্ময় ও একটি রাজনৈতিক শিক্ষা (ছবিসহ)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×