somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যদের জন্য লীলাখেলা, সব দোষ শুধু মুসলমানদের বেলা

১১ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরাবরের মতই নিশ্চুপ বনে গেছে বিশ্ব মিডিয়া। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কিংবা জাদরেল গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও তেমন কোন সাড়া শব্দ নেই। শুধুমাত্র হামলার পরপরই সিআইএ কর্তৃক ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে তথা আল কায়েদার উপর চাপানোর চেষ্টা চালানো হলেও সেটা সফল হয় নি। একজন মাত্র ইহুদি চর ও খ্রিষ্টান মৌলবাদীর দ্বারা এতগুলো নিরীহ মানুষ হত্যার পরও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ব মিডিয়ার নিরবতা অনেক প্রশ্নেরই জন্ম দেয়। এত বিশাল এবং স্পর্শকাতর একটি ঘটনা ঘটলেও মিডিয়া এবং সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি এটাকে নিতান্তই একটি তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। অথচ কোন মুসলমানের এই ঘটনার সাথে দূরতম সম্পর্ক থাকলে মিডিয়া কি করত না সে জিজ্ঞাসা অনেকের। অসলো হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ফেইসবুকে এক বন্ধুর একটি মন্তব্য পড়েই মূলত আজকের এই কলম ধরা। তার মন্তব্যটি ছিল এরকম, "নরওয়েতে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ হত্যা করা লোকটি যদি মুসলমান হত, তাহলে সংবাদপত্র তাকে সন্ত্রাসী এবং এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে আক্ষায়িত করত। অথচ এখন সে শুধুমাত্র একজন গুপ্তঘাতক, হামলাকারী (রয়টার্স), বন্দুকধারী (বিবিসি, সিএনএন এবং আল জাজিরা)। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় "সন্ত্রাসী" শব্দটি একমাত্র মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত? যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এটাকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহি্ত করেছে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে নয়।"

নৈরাজ্যবাদীদের দারুণ বিচার! যেখানে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন দেশের নিরীহ মুসলমানদের উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়, পানির দরে মানুষ হত্যা করা হয়; সেখানে সুস্পষ্ট অপরাধ করার পরও মানুষের দৃষ্টি আড়াল করার নগ্ন প্রয়াস। শুধু মানুষ হত্যা কিংবা হামলা নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশ্ব মিডিয়া এবং পাশ্চাত্য পূজিপতিদের লজ্জাজনক পক্ষপাতের স্বীকার মুসলমানরা। সারা বিশ্বের অগণিত অমুসলিম রকমারি সাঁজে দাড়ি গোঁফ রাখলে কোন দোষ নেই। কোন মুসলমান দাড়ি রাখলেই যত সমস্যা। তখন সে মৌলবাদী কিংবা জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী। হিন্দুরা মন্দিরে গেলে কারও কোন মাথাব্যাথা নেই, খ্রিষ্টানরা গীর্জায় গেলে কেউ দেখে না, বৌদ্ধরা প্যাগোডায় গেলে কারও কিছুই এসে যায় না; অথচ মুসলমানরা মসজিদে গেলেই মৌলবাদী হয়ে যায়, সন্ত্রাসী হয়ে যায়। ইহুদীরা তাদের ধর্মীয় বই পড়লে কোন সমস্যা নেই, হিন্দুরা তাদের দেব দেবী নিয়ে রচনা পড়লে কারও তোয়াক্কা নেই; মুসলমানরা ইসলামী বই পড়লেই জিহাদী বই বলে উস্কানী দেওয়া হয়। সারাজীবন মাইকেল জ্যাকসন টাকনুর উপর প্যান্ট পরে গেছে, সেটা ফ্যাশন। অথচ কোন মুসলমান টাকনুর উপর প্যান্ট পরলে ইসলামকে "আনস্মার্ট" ধর্ম বলে গালি দেওয়া হয়। শক্তিশালী বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে জনপদ ধ্বংস করা হলেও কোন অন্যায় হয় না; অথচ মুসলমানদের দ্বারা ভাঙ্গা চোরা লাঠি নিয়ে মিছিল করলেও সেটা জঙ্গি কর্মকান্ড হয়। অমুসলিম নারীদের ইচ্ছেমত হাফ প্যান্ট পরা তাদের অধিকার, কিন্তু স্বেচ্ছায় মুসলমান নারীদের নেকাব পরা ধর্মীয় গোড়ামি। একজন মাত্র অমুসলিম পুরুষের একাধিক গার্লফ্রেন্ড থাকা তার যৌন অধিকার, অথচ একজন মুসলমান পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকা নারীর অধিকার হরণ। বড়ই আজব মূল্যায়ন সভ্যতার লেবাসধারী পশ্চিমা অসভ্য জনগোষ্ঠির এবং তাদের দোসরদের।

অসলোর হামলা যদি কোনভাবে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে দেখা যেত দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের সীমাহীন তৎপরতা। অনেকেরই ঘুম হারাম হয়ে যেত। আরেকটি দেশে হামলা করার ছক কষাও শুরু করত কেউ কেউ। টেলিভিশনে বিশেষ টকশো, ডকুমেন্টারি, খবরসহ সারা দিনরাতই শোনা যেত নিত্য নতুন কিচ্ছা কাহিনী। সারাবিশ্বের মুসলমানদের চরমভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হত। পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের কথা বাদই দিলাম, আমাদের দেশের মিডিয়াও উঠেপড়ে লাগত এটার পেছনে। এটা নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা হত, নামিদামি কলামিস্টদের নিবন্ধ প্রকাশ হত; সর্বোপরি সারাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় রেড এ্যালার্ট জারি করতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অথচ একজন চরম মুসলিম বিদ্বেষী এবং উগ্রবাদী খ্রিষ্টান কর্তৃক এ ধরনের নৃশংস ও অমানবিক ঘটনা ঘটার পর মিডিয়া তাকে পাগল সাব্যস্ত করার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। সারা বিশ্বব্যাপী এধরনের অসংখ্য ঘটনা মিডিয়ার বদৌলতে আড়ালেই রয়ে গেছে।

এফবিআই (FBI) এর Terrorism 2002-2005 রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০-২০০৫ সাল পর্যন্ত মোট ৩১৮ টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মধ্যে শতকরা মাত্র ৬ ভাগ ঘটনার সাথে মুসলমান নামধারীরা জড়িত। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অপরাধ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইউরোপোল (Europol) এর EU Terrorism Situation and Trend Report অনুযায়ী, ২০০৭-২০০৯ সালে সমগ্র ইউরোপে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাত্র ০.৪ ভাগ হয়েছে মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা, বাকি ৯৯.৬ ভাগ সংঘটিত হয়েছে অমুসলিমদের দ্বারা। ৮৪.৮ ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কট্টর ইসলামবিদ্বেষী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠি। এছাড়া ইউরোপোল এর EU Terrorism Situation and Trend Report 2010 অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ইউরোপ জুড়ে ২৯৪ টি সন্ত্রাসী ঘটনার মধ্যে মাত্র একটি এবং ২০১০ সালে ২৪৯ টি ঘটনার মধ্যে মাত্র তিনটি ঘটনার সাথে মুসলমান নামধারী সন্ত্রাসীরা জড়িত যা শতকরা হিসেবে যথাক্রমে ০.৩৪ এবং ০.৪ ভাগ। উল্লেখ্য ইউরোপের মোট জনসংখ্যার শতকরা তিনভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টত দেখা যায় সারা বিশ্ব ব্যাপী সংঘত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে মুসলমানদের চেয়ে অমুসলিমরা যোজন যোজন এগিয়ে। অথচ মিডিয়ার বদন্যতায় মুসলমানদেরকে অনেকটা "সন্ত্রাসী" খেতাবটা ওয়াকফ করে দেওয়া হয়েছে।

মুসলমান নামধারী কতিপয় লোকের অপকর্মের কারণে সমগ্র মুসলমান জাতিকেই সন্ত্রাসী হিসেবে সাব্যস্ত করতে মরিয়া মিডিয়া। হলুদ সাংবাদিকতায় লিপ্ত বাংলাদেশের সুশীল পত্রিকাগুলোও ইসলামকে তুলোধুনো করতে মহাব্যস্ত। পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় তাদের জঙ্গি-জঙ্গি আর জিহাদ জিহাদ খেলা। দিয়াশলাই আর ম্যাচকে আগ্নেয়াস্ত্র বানানোটাও এদের কাছে মামুলি ব্যাপার। রামদা, চাইনিজ কুড়াল, পিস্তলসহ হরেক রকম অস্ত্রের মহড়া তাদের চোখে তুচ্ছ অথচ দাড়ি টুপিওয়ালা লোকেরা আত্মরক্ষার্থে ইট পাটকেল ছুড়লেও সেটা জঙ্গি হামলা।

এমন অন্যায় অবিচারের স্বীকার হয়েও মুসলমানরাই উল্টো সকলের লক্ষ্যবস্তু। সারা দুনিয়ার অমুসলিমরা সীমাহীন অন্যায় অপকর্ম করার পরও সকল দোষ চাপানো হয় মুসলমানদের ঘাড়ে। সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে ইসলামকে বলা হয় মানবতাবিরোধী ধর্ম। হিরোশিমা-নাগাসাকির খলনায়কেরা, আবু গারিব কারাগারের মহাজনেরা মুসলমানদের আসে মানবতার ছবক দিতে। মানুষরূপী এই সকল বন্য প্রাণীদের জেনে রাখা উচিত মানবতার জন্ম দিয়েছে ইসলাম আর মানবতার রক্ষক হচ্ছে মুসলমান। প্রকৃত মুসলমানেরা বিনা দোষে কাউকে চিমটিও কাটে না। বাবরী মসজিদ ধ্বংসকারী প্রাণীগুলো আসে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার চেতনা শেখাতে। মানবতার শত্রু এই চক্রের জানা প্রয়োজন সকল ধর্মের স্বাধীনতা দিয়েছে ইসলাম। মসজিদ ভেঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করা যায় না। সীমান্তে পাখির মত মানুষ মেরে বন্ধুত্ব দাবি অপশক্তির। ওদের বিবেককে বলা হত্যা করে নয়, বন্ধুত্ব হয় ভালবাসার বিনিময়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও সারা বিশ্বের অমুসলিমরা সুখে শান্তিতে দিনানিপাত করছে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে। পক্ষান্তরে ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ অমুসলিম দেশগুলোতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাটে অনেক মুসলমানের। তবুও ফ্যাসিস্টদের প্রপাগান্ডা থামছে না। ইসলাম আর মুসলমানদের নিঃশেষ করতে তাদের ষড়যন্ত্রেরর অন্ত নেই। বাতিল শক্তি ষড়যন্ত্র করে আর মহান আল্লাহ কৌশলে সেটার মোকাবেলা করেন। শান্তির ধর্ম ইসলামকে রক্ষা করতে আল্লাহর কৌশলের জয় অনিবার্য।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×