somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব সত্য।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ব্হস্পতিবার।
হাফ বেলা আফিস শেষে দুইটায় বাসায় ফিরলো প্রতিবাদ। বাসায় কেউ নেই। চাবি দিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকে পড়লো প্রতিবাদ। পাগলীটা বাসায় নেই। পাগলীটা থাকলে হয়তো বাপ্রতিবাদকে জড়িয় ধরতো। হালকা করে একটা চুমো খেতো প্রতিবাদের ঠোটে। তারপর ঠোট ফুলিয়ে অভিমান করে বলতোএতো দেরী করে আসলে যে। এই পাগলীটা হলো অধরা। প্রতিবাদের প্রিয়তমা স্ত্রী। অধরাকে পাগলী বলে ডাকে প্রতিবাদ। আর অধরা তাকে পাগল বলে। অধরা একমাস ধরে বাপের বাড়িতে। এই একমাসে একটা খোজঁ ও নেয়নি প্রতিবাদের। শুনেছে অধরা প্রতিবাদ ডিভোর্স দিতে চায়।
জামা প্যান্ট না চেইন্জ করেই বিছানায় শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ। বড্ড টায়ার্ড লাগছে। অধরার জন্য নীল রংএরশাড়ি কিনে এনেছে প্রতিবাদ। দাম পনের হাজার টাকা। চিন্তা করছে শাড়িটা কিভাবে অধরাকে পৌছে দেয়া যায়। অধরাশাড়িটা পছন্দ করে রেখেছিলো। প্রতিবাদ কিনে দিতে পারে নি। মাত্র বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরী করে প্রতিবাদ। তাই পনের হাজার টাকা দামের শাড়ির কথাশুনে মাথা ঠিক রাখতে পারে নি। অধরাকে বলেছে কিনে দিতেপারবে না। এটা নিয়েই অধরার সাথে প্রতিবাদের ঝগড়া। ঝগড়ার পরদিন রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে অধরা।একমাস পরে সেই শাড়িটা অধরার জন্য কিনে এনেছে প্রতিবাদ। অধরার কথা আজ খুববেশী মনে পড়ছে প্রতিবাদের। ড্রয়ার থেকে সবুজ রংএর ডায়েরীটা বের করে প্রতিবাদ। প্রতিবাদ নিয়ম করে ডায়েরী লেখে। প্রতিদিন না লিখলেও সপ্তাহে দুই তিনদিন লেখে। আজও ডায়েরী লিখতে বসেছে প্রতিবাদ। ডায়েরীর কিছু পাতা উল্টাতেই একটা পাতায় চোখ আটকে যায় প্রতিবাদের।
লেখাটা ডায়েরী থেকে হুবহ তুলে দেয়া হল।
২৩. ১. ১৩ বুধবার
"" আজ আমার জন্মদিন। অধরার সাথে বিয়ের পরে প্রথম জন্মদিন। সকালে আমার গায়ে পানি ছিটিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে জাগালো পাগলিটা। এরপরে আমায় একটা চুমো খেয়ে দৌড়ে অন্য রুমে চলে গেলো। এখনো সেই পাগলামোটা রয়ে গেছে পাগলীর। বিছানা থেকে উঠে অবাক হয়ে রুমটা দেখছে প্রতিবাদ। চার পাচঁ ধরনের ফূল আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে রুমটা। প্রতিবাদ বুজতে পারে একটা অধরার কাজ। পাগলী বলে ডাক দিতে যাবে তখন অধরা এসে হাজির। লাল রঙের শাড়ি পড়েছেঅধরা। অদ্ভূত রকমের সুন্দর লাগছে অধরাকে। যেন স্বর্গের কোনো পড়ি প্রতিবাদের সামনে দাড়িয়ে আছে। অধরা একটা প্যাকেট তুলে দেয় প্রতিবাদের হাতে। প্যাকেটা খুলে দেখে ভিতরে হলুদ রংএর পান্জাবী। প্রতিবাদের হলুদ রংএর পান্জাবী খুব পছন্দের। প্রতিবাদ অবাক হয়ে বললো তুমি টাকা পেলে কোথায়। তুমিআমায় মাঝে সাঝে যে টাকা দিতে সেটা থেকে জমিয়ে এই পান্জাবীটা কিনেছি বলল অধরা। প্রতিবাদের কেমন যেনো লজ্জা লাগছে। বড়লোকের সেই আদুরে মেয়েটা সংসার করতে শিখেছে। ...........""
ডায়েরীর পুরো পাতাটা পড়তে পারে না প্রতিবাদ। চোখ ঝাপসা করে জল এসে যায় প্রতিবাদের। অবাক হয়ে ভাবে এই কি সেই অধরা যে তার কোটিপতি বাবাকে ছেড়ে পরিবারের সবাইকে ভুলে মধ্যবিত্ত ঘরের বেকার ছেলে প্রতিবাদের হাতে ধরে পালিয়ে বিয়ে করেছিল। আজকে আর ডায়েরী লেখা হল না। অধরাকে একটা চিঠি লেখে প্রতিবাদ। চিঠিটা পকেটে ঢুকিয়ে অধরার জন্য কেনা শাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে প্রতিবাদ। গন্তব্য পত্রিকাঅফিস। প্রতিবাদের লেখালেখির হাত ভালো। মাঝে সাঝে লেখালেখি করতো। যদি পত্রিকা অফিসে লেখালেখি করে বাড়তি কিছু টাকা ইনকাম করা যায় তাহলে অধরা নিশ্চয়ইখুশি হবে।
গ্রীষ্মের দুপুরের তপ্ত রোদে রাস্তায় হাটছে প্রতিবাদ। পকেটে রিকশা ভাড়া নেই যে রিকশা নিবে। পকেটে মাত্র ১০ টাকা আছে। রাস্তার পাশের টঙের দোকান থেকে একটা গোল্ডলীফ সিগারেট কিনে প্রতিবাদ। আজ খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। প্রতিবাদ আগে সিগারেট খেলেও বিয়ের পরে অধরার কথা রাখার জন্য খায় নি। পকেটের পুরো টাকা দিয়েইঅধরার জন্য শাড়ি কিনেছে। তাই সকাল থেকে না খেয়ে আছে প্রতিবাদ। খালি পেটে সিগারেট একেবারে কলিজায় গিয়ে আঘাত করছে। প্রতিবাদের মাথা ঘুরছে। চশমাটা খুলে রাস্তায় পড়ে গিয়ছে। চশমা খুজেঁ পাচ্ছে না প্রতিবাদ। চোখে সব কিছু কেমন ঝাপসা দেখছে। চারিদিক থেকে গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছে প্রতিবাদ। কোথা থেকে একটা ট্রাক এসে প্রতিবাদকে চাপা দিয়ে চলে গেল। প্রতিবাদের রক্তে ভিজে গেছে অধরার জন্য কেনা নীল শাড়িটা। কোনো অসুবিধে নেই। অধরার লাল রং খুব পছন্দের। নীল শাড়িতে রক্তের লাল রং লেপ্টে গিয়েছে। অধরাকে এই শাড়িটায় বেশ সুন্দর মানাবে। রাস্তার লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তূ ততক্ষনে প্রতিবাদ বেচেঁ নেই। প্রতিবাদের পকেট থেকে প্রতিবাদের বন্ধু বিবেকের ফোন নাম্বার পাওয়া গেল। বিবেক প্রতিবাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানে না। তাই লাশটা অধরাদের বাড়ি পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। বিশাল বাড়ি অধরাদের। সন্ধা হয়ে গেছে তবু লাশ নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না বাড়ির দাড়োয়ান। অধরাদের বাড়িতে আজ নানা রকমের আলোকসজ্জা। আজ অধরার বিয়ে। অধরার বাবা মা আরেকটা বিয়ে দিচ্ছে অধরার। রাত এগারটা বাজে। বিয়ে পর্ব শেষ। গাড়ি করে বরের বাড়িতে যাবে অধরা। গেটের সামনে আসতেই অধরার কাছে দৌড়ে গেল বিবেক। মুখে কিছু বলতে পারলো না। শুধু হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রতিবাদের লাশটা। অধরার হাতে প্রতিবাদের লেখা শেষ চিঠিটা। আর রক্তে ভেজা নীল শাড়িটা। অধরার চোখের কোনে এক ফোটা জল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
আজ যে অধরার বিয়ে।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×