গত বছরের অক্টোবরে রাজনৈতিক দলগুলির গুন্ডারা যখন জানোয়ার এর মত রাজপথে গরু ছাগলের মত তাদের সহকর্মী রাজনৈতিক গুন্ডাদের পিটিয়ে হত্যা করা শুরু করল, তখন দেশের সাধারন মানুষ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের বিতর্কিত কেয়ারটেকার সরকারকে মেনে নিল সেই পরিস্থতি থেকে মুক্তি পাবার জন্য। এবার রাজনৈতিক দলের বড় বড় রুই কাতলারা পরবর্তী নির্বাচন এ নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য 'সব মানি কিন্তু তালগাছটা আমার' নীতিতে অটল থেকে ইয়াজউদ্দিনের সরকারের বারোটা বাজিয়ে দিল। ঠিক সেই সময় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে আগমন ঘটল ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকারের (অনেক আদর করে বলেন শ্যাডো সামরিক সরকার)।
তারপরের ঘটনাতো আপনারা সবাই জানেন। আমাদের দূর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতারা আসলে বুঝতে পারেননি যে নিজেদর মধ্যে কামড়া-কামড়ি করার ফল এরকম হতে পারে। যারা দেশটাকে বাপের বা স্বামীর সম্পত্তি জেনে লুটপাটে ব্যস্ত ছিলেন, তাদেরকে প্রাসাদ থেকে জেল এ যেতে দেখে সাধারন মানুষ বাহবা দিল সরকারকে। রাতারাতি বর্তমান সরকার হয়ে গেল পপুলার সরকার। ৯০ দিন এর জায়গায় ২ বছর এর টাইমলাইন নিয়ে খুব বেশী প্রশ্ন উঠলোনা। সবাই আশা করতে লাগলো এইবার বোধহয় কিছু হবে, আর এবার না হলে আর কখনোই হবেনা।
কিন্ত সমস্যা রয়ে গেছে। ফখরুদ্দীনের সরকার গঠিত হয়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে। তাদের পক্ষে দেশের সিংহভাগ নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগণের অবস্থা বোঝাটা কঠিন। দু:খজনকভাবে তারা তা বুঝলেনওনা। তারা কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই হকার উচ্ছেদ করলেন, অস্থায়ী হাট বাজার ভাঙলেন, বস্তি ভাঙলেন। মধ্যবিত্ত বাহবা দিল কিন্তু নিম্নবিত্তের পেটে লাথি পড়ল। সরকার সেটা বুঝলোনা।
আমাদের উচ্চ শিক্ষিত বর্তমান সরকার আই এম এফ ও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আর বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ভবিষ্যত সুদিনের আশায় মেনে নিচ্ছে সবকিছু বা মানিয়ে নিতে তাদের খুব কষ্ট করতে হচ্ছেনা। এবারো যথারীতি পেটে লাথি পড়ছে নিম্ন আয়ের লোকজনের। তাদের কথা জানাতে পারতো যারা, সেই রাজনৈতিক দলগুলোতো এখন নিজেদের অস্তিত্ব বাচাতে ব্যস্ত, ফলে অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে দেশের সিংহভাগ মানুষের দুরবস্থার কথা।
সর্বশেষ বন্য মোকাবেলায় সরকারের সমন্বয়হীনতা এবং বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ। একটি ব্যাপার খোলাসা করা দরকার। এমন নয় এই সরকারের সদিচ্ছা নাই। কিন্তু সদিচ্ছা থাকা আর বাস্তবে তার প্রয়োগ এর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
জনপ্রিয়তা অর্জন করা সহজ কিন্তু সেটা ধরে রাখা বড়ই কঠিন। ফখরুদ্দীনের সরকার বা আর্মি সরকার যেটাই বলেন, সেই বিতর্কের মধ্যে না যেয়েই বলা যায়, বর্তমান সরকার দেশের একটা বড় জনসাধারণের সমর্থন হারাচ্ছে। মানুষ অবশ্যই দূর্নীতিবাজদের বিচার চায়, সুশাসন চায়, নিরাপত্তা চায় কিন্তু সবার আগে দু বেলা খেতে চায়। অল্প করে হলেও আয় রোজগার করতে চায়। সারাজীবন গাড়ি চড়া আমাদের এই বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার যদি তাদের নাড়ির কথা বুঝতে না পাড়েন তাহলে সামনে দুর্দিন আসছে। এখনই কিছু বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, নাহলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে।
আমরা সবাই চাই বর্তমান সরকার সফল হোক। রাজনৈতিক নেতা নামধারী গুন্ডাদের হাত থেকে আমরা রেহাই পাই, সর্বোপরি দেশে সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হোক। কিন্ত বর্তমান সরকার এমন কিছু ভুল করছে, যেগুলির মুল্য চড়াদামে শোধ করতে হবে আবারো এই সাধারন জনসাধারনকেই। আশা করি সরকার বুঝতে পারবেন, যেখানে বুঝবেননা সেখানে পরামর্শ নিবেন।
এই সরকার ব্যর্থ হলে সামনে আরো বড় বিপদ। আর যাই হোক দেশে আরেকটি সামরিক শাসন চাই না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ১:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



